• ঢাকা
  • মঙ্গলবার, ১৯ মার্চ, ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

বয়স্ক-বিধবা-প্রতিবন্ধী ভাতা কার্ড দিতে টাকা আদায়ের অভিযোগ


নিজস্ব প্রতিবেদক জুন ২৬, ২০২০, ০৬:৫৩ পিএম
বয়স্ক-বিধবা-প্রতিবন্ধী ভাতা কার্ড দিতে টাকা আদায়ের অভিযোগ

ঢাকা : বাংলাদেশ সরকারের সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের নিয়ন্ত্রণাধীন সমাজসেবা অধিদফতররের মাধ্যমে বয়স্ক, স্বামী নিগৃহীতা মহিলা (বিধবা) ও শারীরিক সমস্যা প্রতিবন্ধীদের ভাতা স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সহযোগিতায় ডাটাবেইজ তৈরি করে দেওয়া হচ্ছে। ১০টাকার বিনিময়ে সকল ভাতাভোগীরা নিজ নামে ব্যাংক হিসাব খুলে ভাতা সুবিধা ভোগ করার কথা থাকলেও প্রতিটি ব্যাংক হিসাব খোলার জন্য ৫’শ টাকা করে নেওয়া হচ্ছে। যারা দাবীকৃত টাকা দিতে পারছেনা তাদের নাম তালিকা থেকে বাদ দেওয়ার হুমকি দেওয়া হচ্ছে। এমনই অভিযোগ উঠেছে নোয়াখালীর কবিরহাট উপজেলার চাপরাশিরহাট ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মহি উদ্দিন টিটুর বিরুদ্ধে।

উপজেলা সমাজ সেবা কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, চাপরাশিরহাট ইউনিয়নের মোট ১হাজার ৬জন বয়স্ক, বিধবা ও প্রতিবন্ধীদের জন্য ভাতা কার্ডের চুড়ান্ত তালিকা করা হয়েছে। লোকজ বেশি হওয়ায় ওই সুবিধাভোগীদের টাকা প্রদানের জন্য একটি করে ব্যাংক হিসাব খুলে দিতে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি চেয়ারম্যানের সহযোগিতা চাওয়া হয়েছে। যার বেশির ভাগ একাউন্ড সোনালী ব্যাংকে খোলা হচ্ছে। এছাড়া উপজেলার কয়েকটি ইউনিয়নে কৃষি ব্যাংকেও একাউন্ড খোলা হচ্ছে।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গত ২৩জুন মঙ্গলবার থেকে চাপরাশিরহাট পশ্চিম বাজার জনতা বাজার সড়কের ড্রীম লাইন কাউন্টারে ভিতরে ইউনিয়নের বয়স্ক, বিধবা ও প্রতিবন্ধীভাতা কার্ডের চুড়ান্ত তালিকার সুবিধাভোগীদের ব্যাংক হিসাব খুলে দেওয়ার কাজ করছে চেয়ারম্যানের সহযোগি সাহব উদ্দিন। নিজে বসে ব্যাংকের ফরম পূরণ করে দিয়ে জন প্রতি ৫’শ টাকা করে নিচ্ছে। যদিও চেয়ারম্যান বলেছে প্রতি ফরমে ২’শ টাকার করে নেওয়ার জন্য। যারা কম দিচ্ছে তাদের অশালিন ভাষায় গালমন্দ এবং যারা দিতে পারছেনা তাদের তালিকা থেকে নাম বাদ দেওয়ারও হুমকি দিচ্ছে। টাকা কেন নেওয়া হচ্ছে হিসাব খুলতে আসা কয়েকজন জিজ্ঞেস করলে বিভিন্ন খরচ আছে বলে জানায় সাহাব উদ্দিন। দিন শেষে এই টাকা চেয়ারম্যানের কাছে জমা দেওয়া হয় বলেও অভিযোগ রয়েছে।

ভুক্তভোগীরা জানান, মঙ্গলবার সকাল ব্যাংকের হিসাব খোলার জন্য জাতীয় পরিচয় পত্রের ফটোকপি, ছবি ও টাকা নিয়ে লাইনে দাঁড়াতে হয়। সাহাব উদ্দিন ও তার সাথে থাকা লোক একজন একজন করে সিরিয়ালে ডেকে কাগজ পত্র নিয়ে ফরমে স্বাক্ষর ও টিপ নিয়ে টাকা নিয়ে যায়।

বিধবা ভাতার কার্ডের হিসাব খোলার জন্য এসে হাতে টাকা নিয়ে লাইনে দাঁড়ানো এক নারীর সাথে কথা বললে তিনি বলেন, ‘টাকা-ত দন লাইগবো, ওই এগিন হাডাইবো যে হিয়ার লাই (টাকা দিতে হবে, কারণ কাগজ পত্র পাঠাবে)। টিয়া কিল্লাই নের হেতারা জানে বাবু আমরা কি জানিনি, কাগজ-হত্র রেডি কইত্তে লাইগবো কইছে (টাকা কেন নেওয়া হচ্ছে বাবা আমি বলতে পারবো না,  কাগজ পত্র প্রস্তুত করতে লাগবে বলছে)।’

বিধবা ভাতার ব্যাংক হিসাব করা ১নং ওয়ার্ড হানু মিয়ার ট্যাক এলাকার এক নারী বলেন, ৩৮০টাকা নিয়ে একাউন্ট খুলতে গেলে সাহাব উদ্দিন ফরম দেয়নি। পরে বাজারের একজন থেকে ১২০টাকা ধার করে মোট ৫’শ টাকা মিলিয়ে দেওয়ার পর ফরম পূরণ করে দিয়েছে।

ফরম পূরনে ৫’শ টাকা করে নেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে চেয়ারম্যানের সহযোগী সাহাব উদ্দিন বলেন, অত-টাকাতো নেওয়া হচ্ছে না। বর্তমান পরিস্থিতির কারণে ব্যাংকে সবার একাউন্ড করা সম্ভব হচ্ছেনা। ১০টির বেশি একাউন্ড ব্যাংক করতে পারবে না। তাই আমরা ফরমগুলো নিয়ে একাউন্টগুলো করে দিচ্ছি। ফরম পূরণ করার পর কেউ ১’ কেউ ২’শ টাকা করে দিচ্ছে, আবার কেউ কেউ দিচ্ছেও না। ১০টাকার একাউন্টের জন্য ব্যাংককে ১০টাকা দিতে হয়। চেয়ারম্যান একাউন্টগুলো করতে আমাকে সহযোগিতা করতে বলেছে।

চাপরাশিরহাট ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মহি উদ্দিন টিটু তার বিরুদ্ধে আনা সকল অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, সাহাব উদ্দিন আমার দলের কোন কর্মী না। ব্যাংককের ফরম পূরণ করার কোন দায়িত্ব সাহাব উদ্দিনকে দেওয়া হয়নি। সে ড্রীম লাইন কাউন্টারে কাজ করে। ফরম পূরণে সাহাব উদ্দিন যদি কোন টাকা নিয়ে থাকে তার বিরুদ্ধে তদন্ত করে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।  গত দু’দিন ধরে ফরম পূরণে টাকা নেওয়ার অভিযোগ পেয়ে ড্রীম লাইন কাউন্টারে সাহাব উদ্দিনের ফরম পূরণের কাজ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।শুক্রবার থেকে ইউনিয়ন পরিষদে ফরম পূরণের কাজ করা হবে। আমি নিজে বসে থেকে নিজের খরচে ব্যবস্থা করবো। 

কবিরহাট উপজেলা সমাজ সেবা কর্মকর্তা মো. জসিম উদ্দিন বলেন, ১হাজার ৬জন হওয়ায় ব্যাংক হিসাব খুলতে স্থানীয় জনপ্রতিনিধির সহযোগিতা চাওয়া হয়েছে। কিন্তু ব্যাংকের ফরম পূরণ করতে কোন প্রকার টাকা নেওয়ার সুযোগ নেই। যদি কেউ ফরম পূরণে টাকা লেনদেন করে থাকে তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

সোনালীনিউজ/এএস

Wordbridge School
Link copied!