• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১
বেরোবি উপাচার্য সম্পর্কে বিদেশি শিক্ষার্থীর মন্তব্য

‘ভাইস চ্যান্সেলর ইজ নট এ গুড পার্সন’


মোবাশ্বের আহমেদ, বেরোবি প্রতিনিধি এপ্রিল ১৬, ২০১৯, ০২:৪২ পিএম
‘ভাইস চ্যান্সেলর ইজ নট এ গুড পার্সন’

বেরোবি : উচ্চ শিক্ষা লাভের আশায় গত ডিসেম্বর মাসে আফ্রিকার সোমালিয়া থেকে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে এসেছেন ৪ শিক্ষার্থী। স্কলারশীপ হিসেবে টিউশন ফি ও আবাসিক সুবিধা পাবার শর্তে প্রায় ৫ মাস আগে বিশ্ববিদ্যালয়ে এসে প্রশাসনিক জটিলতার কারণে এখনো ভর্তি হতে পারেনি তারা। আর, ভর্তি প্রক্রিয়া সম্পন্ন হবার সম্ভাবনা না থাকায় দেশে ফেরার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন সোমালিয়ানরা।

জানা যায়, গোপালগঞ্জের বঙ্গবন্ধু বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে গত বছরের ডিসেম্বর মাসে সোমালিয়া থেকে বাংলাদেশে আসেন আহমেদ মুহাম্মদ (রাষ্ট্রবিজ্ঞান, মাস্টার্স), শাফি আহমেদ (সিএসই, অনার্স), আব্দুল ফাতাহ (সিএসই, অনার্স) ও আব্দুর রহমান (ফিন্যান্স, বিবিএ)। পরবর্তীতে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ডক্টর নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহ-এর অনুরোধে ওই বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি না হয়ে ওই মাসের শেষের দিকে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির উদ্দেশে রংপুরে আসেন তারা। পরে তাদের ভর্তি প্রক্রিয়া চলমান আছে জানিয়ে তাদেরকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের ১০১ নং কক্ষে অবস্থান করতে বলে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। তারা ক্যাম্পাসে আসার প্রায় ৫ মাস অতিক্রম করলেও এখনো তাদের  ভর্তি প্রক্রিয়া শেষ হয়নি।

পাঁচ মাস পরেও ভর্তি কার্যক্রম সম্পন্ন না হওয়ায় গত তিনদিন আগে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি তুষার কিবরিয়াকে সাথে নিয়ে ভর্তির বিষয়ে কথা বলতে উপাচার্যের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগে মাস্টার্স করতে আসা সোমালিয়ান শিক্ষার্থী আহমেদ মুহাম্মদ। সেখানে তাদের জন্য কিছুই করতে পারবেন না বলে পরিস্কার জানিয়ে দেন উপাচার্য ড. নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহ।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে আহমেদ মুহাম্মদ বলেন, ‘ভাইস চ্যান্সেলর ইজ নট এ গুড পার্সন।’ আমি তার সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির বিষয়ে কথা বলতে গেলে তিনি কিছুই করতে পারবেন না বলে জানিয়ে দেন। অথচ আমাদেরকে স্কলারশীপসহ পড়াশুনা করার সুযোগ দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে এখানে আনা হয়েছে। গত ৫ মাসেও আমাদের ভর্তি প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়নি। আর, তিনি এখন বলছেন আমাদের জন্য কিছুই করতে পারবেন না। তাই রমজানের আগে চলে যাবার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। তিনি আরও বলেন, আমি সাক্ষাৎ করতে গেলে ভাইস চ্যান্সেলর আমার সঙ্গে পশুর মতো আচরণ করেন এবং তার চোখের সামনে থেকে চলে যেতে বলেন।

বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি তুষার কিবরিয়া বলেন, ওই শিক্ষার্থীকে সঙ্গে নিয়ে আমি উপাচার্যের কাছে গিয়েছিলাম। কিন্তু, সেখানে তার সঙ্গে অসৌজন্যমূলক আচরণ করা হয়। উপাচার্য তাদের জন্য কিছুই করতে পারবেন বলে জানিয়ে দেন। তুষার কিবরিয়া বলেন, বিদেশি শিক্ষার্থীদের ডেকে এনে এ ধরনের আচরণ করা দুঃখজনক। এ ধরনের কর্মকাণ্ডের জন্য বিশ্বব্যাপী বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় তথা বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হবে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের ১০১ নং রুমে গিয়ে দেখা যায়, ওই রুমে মানবেতর দিন কাটাচ্ছেন বিদেশি চার শিক্ষার্থী। রুমটিতে কোনো সিলিং ফ্যানের ব্যবস্থা নেই। রুমের সামনে ময়লার স্তুপ ও জঙ্গল। সন্ধ্যা নামার সঙ্গে সঙ্গে মশায় পূর্ণ হয়ে উঠে রুমটি। এ ছাড়া, রুমটি বেসিন, বাথরুম ও টয়লেটের সঙ্গে লাগানো। প্রতিনিয়ত দুর্গন্ধ আসছে সেখানে।

অপর শিক্ষার্থী শাফি আহমেদ বলেন, আমাদেরকে যে রুমে রাখা হয়েছে সে রুমে পশুকেও রাখা হয় না। আমরা বঙ্গবন্ধু বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে এসেছিলাম। পরে অনুরোধ করে আমাদেরকে এ বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়ে আসা হয়। আসার পাঁচ মাস পরেও আমাদের ভর্তি কার্যক্রম শেষ হয়নি। এমনকি ভর্তি প্রক্রিয়া সম্পন্ন হওয়ার কোনো সম্ভাবনাও নেই। ইতিমধ্যে কিছু করতে পারবেন না জানিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে চলে যেতে বলেছেন উপাচার্য প্রফেসর ড. নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহ।

এ বিষয়ে বঙ্গবন্ধু হলের প্রভোস্ট, জনসংযোগ, তথ্য ও প্রকাশনা বিভাগের সহকারী প্রশাসক আলহাজ তাবিউর রহমান বলেন, তাদের ভর্তির বিষয়টি মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। সেখান থেকে ক্লিয়ারেন্স না আসায় ভর্তি প্রক্রিয়া সম্পন্ন হচ্ছে না। আবাসনের বিষয়ে তিনি বলেন, হল প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাদেরকে সর্বোচ্চ সুবিধা দেয়ার চেষ্টা চলছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার আবু হেনা মোস্তফা কামাল বলেন, এটি একাডেমিক বিষয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক কাউন্সিল বিষয়টি দেখবে। এ বিষয়ে জানতে উপাচার্য প্রফেসর ড. নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহর মুঠোফোনে কল দেওয়া হলে তাঁর মুঠোফোনটি বন্ধ পাওয়া যায়।

সোনালীনিউজ/ঢাকা/এইচএআর

Wordbridge School
Link copied!