• ঢাকা
  • শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

ভাগাভাগিতে ঐক্যফ্রন্টে জটিলতা


বিশেষ প্রতিবেদক নভেম্বর ৩০, ২০১৮, ০৮:২০ পিএম
ভাগাভাগিতে ঐক্যফ্রন্টে জটিলতা

ঢাকা : ২০ দলীয় জোট ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট মিলে দুই শতাধিক আসন দাবি করলেও, তাদেরকে সর্বোচ্চ ৬০ টি আসন ছাড়ছে বিএনপি। তবে ৩শ’ আসনে ৯০০’র বেশি প্রার্থীকে দলীয় মনোনয়ন দিয়েছে বিএনপি। আসন বাড়াতে বিএনপির সঙ্গে এখনও দরকষাকষি চালিয়ে যাচ্ছে দুই জোটের নেতারা। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নেয়ার ঘোষণার পরই আসন ভাগাভাগি নিয়ে ত্রিমুখী সঙ্কটে পড়ে বিএনপি-বিশ দলীয় জোট ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট।

এদিকে, ঐক্যফ্রন্টের সাথে বিএনপির আসন বণ্টনে ৩টি আসন নিয়ামক হয়ে দাঁড়িয়েছে। রাজধানী ঢাকার ওই ৩টি আসনের মধ্যে ২টি আসনে বিএনপির হেভিওয়েট প্রার্থী রয়েছেন। কিন্তু আসন দুটি ছাড় দিতে নারাজ ঐক্যফ্রন্টের অন্যতম শরিক গণফোরাম। যদিও ঢাকার ১টি আসন গণফোরামের সাধারণ সম্পাদকের জন্য ছাড় দিতে রাজি বিএনপি।

ঐক্যফ্রন্ট নির্বাচনে অংশ নেয়ার ঘোষণা দেয়ার পর গণফোরাম এর কার্যকরী সভাপতি অ্যাডেভাকেট সুব্রত চৌধুরী জানান, তারা একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ১৬০টি আসন দাবি করেছেন। তবে পরে ১১টি আসন ছাড়ার সিদ্ধান্ত নেয় জোটের অন্যতম শরীক বিএনপি। আর এলডিপি সভাপতি অলি আহমেদ বলেন, ‘গণতন্ত্ররক্ষায় আমরা কেউ অন্যায় আবদার করবো না।’

তবে, ২০ দলীয় জোটকে ৪০ থেকে ৪২ টি আসনে ছাড় দিচ্ছে বিএনপি। জামায়াতকে ২৫টি আসন ছাড়ার আভাস দিয়েছে বিএনপি। এছাড়া এলডিপিকে ৪টি, জাতীয় পার্টি (কাজী জাফর) ৫টি, বিজেপি- ১টি, এনপিপি- ১টি, কল্যাণ পার্টিকে ১টি, খেলাফত মজলিস- ১টি, জমিয়তে উলামায়ে ইসলামকে ২টি, জাগপাকে ১টি আসনে ছাড় দিচ্ছে বিএনপি। তবে এসব আসনেও, জোটের পাশপাশি বিএনপির প্রার্থীও আছেন।

জাতীয় ঐক্যফ্রন্টকে ১৮টি আসন ছাড়বে বিএনপি। যার মধ্যে গণফোরাম ১১টি, জেএসডি ২টি, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগকে ২টি, আর নাগরিক ঐক্যকে ২টি আসন দিতে সম্মত হয়েছে বিএনপি। তবে, আসন ভাগাভাগি নিয়ে এখনও দরকষাকষি চলছে।

এ বিষয়ে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর জানান, ‘২০ দলীয় জোটের প্রকৃত সংখ্যাটা বলতে পারছি না। তবে প্রায় ১৫টি আসন হতে পারে। আর ঐক্যফ্রন্ট তারা তাদের দল থেকেই মনোনয়ন দিচ্ছেন।’

এদিকে, আসন ভাগাভাগি নিয়ে ২০ দলীয় জোট নমনীয় হলেও, ঐক্যফ্রন্ট শরিকরা এখনও বেশ শক্ত অবস্থানে। আসন ভাগাভাগি নিয়ে দফায় দফায় বৈঠকেও বসছেন তারা।

জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট ও গণফোরামকে একাদশ নির্বাচনে আসন ছাড়ার বিষয়ে গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেন জানান, ‘সব রকম সম্ভাবনা মাথায় রেখেই আমরা প্রার্থী দেবো। যে মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্য হবে এবং দায়িত্বশীল হবে আমরা তাকেই প্রার্থী করবো।’ জোট ও ঐক্যফ্রন্টকে বিএনপি আর কোন আসনে ছাড় দেবে কি না সেটিই এখন দেখার বিষয়।

‘গলার কাঁটা’ ৩টি আসন : জানা গেছে,  ঐক্যফ্রন্টের অন্য দুই শরিক জেএসডি ও নাগরিক ঐক্যকে সন্তুষ্ট করতে পারলেও গণফোরামকে সন্তুষ্ট করতে পারছে না বিএনপি। ফলে দফায় দফায় ঐক্যফ্রন্টের স্টিয়ারিং কমিটির বৈঠকের পরেও আসন ভাগাভাগির ফয়সালা হচ্ছে না। ফলে মনোনয়ন প্রত্যাহারের আগের দিন পর্যন্ত গড়াতে পারে আসন বণ্টন নিয়ে দরকষাকষি। যদিও ইতোমধ্যে দীর্ঘদিনের মিত্র ২০ দলীয় জোটের সাথে আসন বণ্টনের বিষয়টি ফয়সালা করেছে বিএনপি।

তবে বিএনপি নেতারা বলছেন, আসন বণ্টন নিয়ে ঐক্যফ্রন্টের মধ্যে কোনো ফাটল তৈরি হবে না। মনোনয়ন প্রত্যাহারের শেষ দিন ৯ ডিসেম্বরের আগেই বিষয়টির চূড়ান্ত ফয়সালা হয়ে যাবে।

এদিকে গণফোরামের নেতারা বলছেন, আসন বণ্টনের বিষয়ে বিএনপিকে আরও উদার হতে হবে। জাতীয় ঐক্য সৃষ্টির বিষয়ে বড় ভূমিকা রেখেছেন ড. কামাল হোসেন ও মোস্তফা মহসীন মন্টু। ড. কামাল হোসেনের কারণেই বিএনপির নেতা-কর্মীরা এখন থলে থেকে বের হতে পারছেন। সুতরাং দলের সাধারণ সম্পাদক মন্টুকে বিএনপির ছাড় দেওয়া উচিত।

জানা গেছে, আসন ভাগাভাগি চূড়ান্ত না হওয়ায় ঐক্যফ্রন্টের শরিক দলগুলোকে নিজেদের মতো করে মনোনয়ন জমা দিতে বলে বিএনপি। ফলে নিজেদের মতো করে মনোনয়ন জমা দেন শরিক দলগুলোর প্রার্থীরা।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট ও ২০ দলীয় জোটের শরিকদের ৬০টির মতো আসন ছাড় দিতে পারে বিএনপি। এর মধ্যে ২০ দলীয় জোটে জামায়াতকে ২৫ ও অন্য শরিকদের ১৫টি আসন ছাড় দিয়েছে বিএনপি। আর বাকি ২০টি আসন গণফোরাম, জেএসডি ও নাগরিক ঐক্যকে দিতে চায় বিএনপি।

যদিও একসময় ঐক্যফ্রন্টের তিন শরিক দল বিএনপির কাছে ১৫ আসন দাবি করেছিল। কিন্তু সেই দাবি থেকে সরে আসলেও মূলত গণফোরামের সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা মহসীন মন্টুর চাওয়া তিন আসন নিয়েই জটিলতা তৈরি হয়েছে। মোস্তফা মহসীন মন্টু ঢাকা-১, ঢাকা-২ ও ঢাকা-৭ আসন থেকে নির্বাচন করতে আগ্রহী।

এই তিন আসনে বিএনপিকে ছাড় দিতে একেবারেই নারাজ গণফেরাম। কিন্তু ঢাকা-১ ও ২ আসনে নিজেদের ২ হেভিয়েট প্রার্থী থাকায় বেকায়দায় পড়েছে বিএনপি। এ দুই আসনে যথাক্রমে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমানউল্লাহ আমান ও স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বিএনপির প্রার্থী। মোস্তফা মহসীন মন্টুকে ঢাকা-৭ আসন ছেড়ে দিতে রাজি হলেও তাতে সন্তুষ্ট নয় গণফোরাম। ফলে দফায় দফায় বৈঠকের পরও বিষয়টির সুরাহা করতে পারছেন ঐক্যফ্রন্ট নেতারা।

গণফেরাম ওই তিন আসনে তাদের প্রার্থী দিতে এখনও অনড় থাকায় বিষয়টির সুরাহা হতে মনোনয়ন প্রত্যাহারের আগের দিন পর্যন্ত গড়াতে পারে বলে মনে করছেন সংশ্লিস্টরা। এ ব্যাপারে ফের জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে।

জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের এক নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, এখন প্রতিদিনই ইনফরমাল বৈঠক হচ্ছে। মূলত গণফোরামের সাথে কোনো ঐক্যমতে পৌঁছাতে না পারায় পারায় বিলম্ব হচ্ছে। যদিও আসন ভাগাভাগির বিষয়ে কথা বলতে নারাজ বিএনপি ও গণফোরাম নেতারা। বিএনপির একাধিক নেতার কাছে জানতে চাইলে এ ব্যাপারে কথা বলতে অপরাগতা প্রকাশ করেন তারা। গণফোরামের সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা মহসীন মন্টুও এখনই কোনো কথা বলতে রাজি নন।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!