• ঢাকা
  • শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

ভাগ্য নির্ধারণী ভূমিকায় তরুণরা


নিজস্ব প্রতিবেদক ডিসেম্বর ১৮, ২০১৮, ১০:৪২ পিএম
ভাগ্য নির্ধারণী ভূমিকায় তরুণরা

ঢাকা : ভোটার তালিকায় গত ১০ বছরে যুক্ত হয়েছেন সোয়া দুই কোটি তরুণ ভোটার। আসন্ন একাদশ সংসদ নির্বাচনে ফলাফলের ফ্যাক্টর হয়ে উঠতে পারেন তারা। এ বিষয়টি মাথায় রেখেই নির্বাচনী ইশতেহার সাজিয়েছে রাজনৈতিক দলগুলো। তাদের প্রতিশ্রুতির তালিকায় রয়েছে তরুণ ভোটারদের তুষ্ট করার নানা উপকরণ।

ছবিসহ ভোটার তালিকা হওয়ার পর ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর নবম সংসদ নির্বাচনে ভোটার ছিল ৮ কোটি ১০ লাখের বেশি। নিবন্ধিত ৩৯টি দলের মধ্যে ৩৮টিই সেবার ভোটে ছিল। বিএনপি ও সমমনাদের ভোট বর্জনের মধ্যে মাত্র ১২টি দল দশম সংসদ নির্বাচনে অংশ নিয়েছিল। তাতে ১৫৩ আসনে একক প্রার্থীরা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন। বাকি ১৪৭ আসনে ভোট হয়।

পাঁচ বছরের মাথায় আগামী ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠেয় একাদশ সংসদ নির্বাচনে নিবন্ধিত ৩৯ দলের সবগুলোই থাকছে। আর এবারের ১০ কোটি ৪২ লাখ ভোটারের মধ্যে এক-তৃতীয়াংশই বয়সে তরুণ।

নবম সংসদ নির্বাচনের পর যারা ভোটার হয়েছেন তাদের ‘তরুণ ভোটার’ হিসাবেই বিবেচনা করতে চান নির্বাচন পর্যবেক্ষক ও বিশ্লেষক আব্দুল আলীম। তিনি বলেন, ‘এ তরুণ ভোটাররা শিক্ষা ও প্রগতিশীলতার চিন্তা ধারণ করে। অনেক চিন্তাভাবনা করেই ভোটকেন্দ্রে যাবেন তারা। বলা যায়, আগামী সংসদ নির্বাচনে এ তরুণ ভোটাররা একটা বড় নিয়ামক হবেন।’

২০০৮ সালের পর যারা ভোটার তালিকায় যুক্ত হয়েছেন, তাদের বয়স এখন ১৮ থেকে ২৮ বছর। তাদের পক্ষে টানতে প্রতিশ্রæতির ডালি সাজিয়েছে আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জাতীয় পার্টিসহ প্রধান রাজনৈতিক দলগুলো।

আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তরুণ ও নারী ভোটাররা আওয়ামী লীগের বিজয়ে প্রধান ভূমিকা রাখবে বলে মনে করেন দলটির সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।

গতকাল মঙ্গলবার সকাল ১০টায় রাজধানীর সোনারগাঁও হোটেলে এক অনুষ্ঠানে আওয়ামী লীগ ইশতেহার ঘোষণা করে। এবারের ইশতেহারে তরুণ-যুবসমাজকে দক্ষ জনশক্তিতে রূপান্তর; কর্মসংস্থানের নিশ্চয়তাসহ দেশকে এগিয়ে নিতে তাদেরকে কাজে লাগানোর নানা পরিকল্পনার কথা রয়েছে।

অপরদিকে বিএনপিও গতকাল মঙ্গলবার গুলশানের লেইক শোর হোটেলে এক অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে ইশতেহার ঘোষণা করে। ইশতেহারে জাতীয় উন্নয়নে যুব, নারী ও শিশুদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা, ২৫ বছর বয়স পর্যন্ত তরুণদের স্বার্থ সংরক্ষণের জন্য ইয়ুথ পার্লামেন্ট গঠনসহ তরুণসমাজের জন্য বিভিন্ন প্রতিশ্রুতি রয়েছে।

এছাড়া ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতা কামাল হোসেনের উপস্থিতিতে গত সোমবার ঢাকার হোটেল পূর্বাণীতে ৩৫ দফা প্রতিশ্রুতি রেখে জোটের নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণা করা হয়। তাতে বলা হয়- পুলিশ ও সামরিক বাহিনী ছাড়া সরকারি চাকরিতে বয়সের কোনো সময়সীমা রাখবে না ঐক্যফ্রন্ট। অনগ্রসর জনগোষ্ঠী এবং প্রতিবন্ধী ছাড়া সরকারি চাকরিতে আর কারও জন্য কোটা থাকবে না। ৩০ বছরের বেশি বয়সী শিক্ষিত বেকারদের জন্য ভাতা চালু করতে একটি কমিশন গঠন করা হবে ঐক্যফ্রন্ট ক্ষমতায় গেলে।

এদিকে তরুণ ভোটারদের দিকে মনোযোগ কাড়তে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ এবার দলকে ডিজিটাল প্রচার মাধ্যমে এনেছেন। এরশাদের বিশেষ সহকারী এ বি এম রুহুল আমিন হাওলাদার গত শুক্রবার ইশতেহার ঘোষণার সময় বলেন, ‘নতুন প্রজন্মের জন্য আগামী অর্ধ শতাব্দী সময়কে সামনে রেখে যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে জাতীয় পার্টি নতুনভাবে এই ১৮ দফা কর্মসূচি ঘোষণা করেছে।’

‘ভিশন মুক্তিযুদ্ধ-৭১’ শিরোনামে সিপিবি ইশতেহারে নির্বাচনী অঙ্গীকারগুলো ৩০টি দফা ও ১৫১টি উপ-দফায় বর্ণনা করা হয়েছে। সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম ইশতেহার ঘোষণায় বলেন, ‘আওয়ামী লীগ ও বিএনপি এই স্বপ্ন বাস্তবায়নে তাদের অক্ষমতার প্রমাণ দিয়েছে। এমনকি এই দুটি দলকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠা দ্বি-দলীয় রাজনৈতিক কাঠামো দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে পারেনি। বরং যারাই ক্ষমতায় এসেছে, তারা ক্রমান্বয়ে আরও কর্তৃত্ববাদী ও স্বৈরাচারী হয়ে উঠেছে।’

বিকল্প অর্থনৈতিক নীতি ও ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করা, কর্মসংস্থান সৃষ্টি, দারিদ্র্য বিমোচন ও বৈষম্য হ্রাস করা, ঘুষ-দুর্নীতি-লুটেপাটের বিরুদ্ধে ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি গ্রহণ করা হবে এ বাম দলের লক্ষ্য।

তরুণ ভোটারদের প্রত্যাশা : ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা বিভাগের শিক্ষার্থী তানজিমুল ইসলাম বলেন, ‘আমাদের বড় ভাইদের অনেকেই পড়ালেখা শেষ করে বসে আছেন। তারা চাকরি খুঁজে বেড়াচ্ছেন। আমি চাই না পড়ালেখা শেষে একদিনও বসে থাকতে। নতুন করে যারা ক্ষমতায় আসবেন তাদের কাছে এক নম্বর দাবি থাকবে কর্মসংস্থানের পরিধি বাড়ানোর। এ জন্য নতুন নতুন শিল্পকারখানা গড়ে তুলতে হবে।’

দুর্নীতির বিরুদ্ধে ‘শক্ত অবস্থান’ নিতে নতুন সরকারের কাছে কঠোর আইন চান বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের চাকুরে আরফাতুর রহমান পাপ্পু। তিনি বলেন, ‘আমার দাবি হল- যে ব্যক্তি দুর্নীতি করবেন তার সব সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করে রাষ্ট্রের কোষাগারে নিতে হবে। একই সাথে দুর্নীতির সর্বোচ্চ সাজা যাবজ্জীবন করতে হবে।’

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে একটি সরকারি কলেজ থেকে পাস করা ঝুমা রাণী দাশের চাওয়া, চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩৫ করতে হবে। তিনি বলেন, ‘সবাই যোগ্যতা নিয়ে চাকরিতে প্রবেশ করবে, এতে বয়সের কারণে যদি কেউ প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে না পারে তাহলে সেটা দুঃখজনক। আমরা অনেকেই এবার চাকরিতে প্রবেশের বয়স বাড়ানোর দাবি জানিয়েছিলাম, কিন্তু সাড়া পাইনি। এবার নির্বাচনে রাজনৈতিক দলগুলো এই বিষয়টি বিবেচনা করে তাদের ইশতেহারে রাখবে বলে আশা করি।’

বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী শৈবাল চন্দ্র বণিক বলেন, ‘যারা নতুন করে ক্ষমতায় আসবে তাদের মনে রাখতে হবে প্রযুক্তির ব্যবহার দিন দিন বাড়ছে, কিন্তু এর সাথে তাল মিলিয়ে আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থাকেও সাজানো উচিত। প্রযুক্তিতে দক্ষ জনবল গড়ে তোলার মত ব্যবস্থা তাদের নিতে হবে।’

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!