• ঢাকা
  • শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১
ভারতীয় সাংবাদিকের বিশ্লেষণ

ভারতকে টেক্কা দিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ


নিউজ ডেস্ক ফেব্রুয়ারি ১৭, ২০২০, ১০:২০ এএম
ভারতকে টেক্কা দিয়ে  এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ

ঢাকা : এক সময়ের ক্ষুধা-দারিদ্র্যের ভূমি, তলাবিহীন ঝুড়িসহ নানা অবমাননাকর তকমা ঝেড়ে ফেলে একটি স্থিতিশীল সমৃদ্ধ অর্থনীতি অর্জনের পথে বাংলাদেশ এখন অপেক্ষা করছে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপনের। সরকারের ঐকান্তিক প্রচেষ্টা ও আপামর জনসাধারণের কঠিন পরিশ্রমের ফসল হিসেবে ইতোমধ্যে স্বল্প আয়ের দেশ থেকে মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হওয়ার যোগ্যতা অর্জন করেছে বাংলাদেশ। বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরামের বার্ষিক প্রতিবেদন বলছে, এরই মধ্যে অন্তর্ভুতিমূলক নানা উন্নয়ন সূচকে বাংলাদেশ অনেকটাই পেছনে ফেলেছে প্রতিবেশী ভারত, পাকিস্তানসহ অনেক দেশকেই।

বাংলাদেশের এখন মানুষ স্বপ্ন দেখছে ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত দেশে রূপান্তরিত হওয়ার। বৈশ্বিক নানা টানাপড়েনে বর্তমানে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির স্থিতি ধরে রাখতে ভারতকে যখন রীতিমতো যুদ্ধ করতে হচ্ছে, সেখানে চলতি অর্থবছর এশিয়ার মধ্যে বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধিই সবচেয়ে বেশি হবে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে অনেকে। জাতিসংঘের পূর্বাভাস অনুযায়ী, চলতি ২০২০ অর্থবছরে বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি হতে পারে ৭.৮ শতাংশ। তার পরও ভারতের একশ্রেণির রাজনীতিক প্রায়ই বাংলাদেশকে তাচ্ছিল্য করে বক্তব্য দিয়ে চলেছেন প্রতিনিয়ত। তাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেই দেশটির বিখ্যাত সাংবাদিক ও লেখক কারান থাপড় তার এক বিশ্লেষণে চোখে আঙুল দিয়েই দেখিয়েছেন বাস্তবতা। ‘ভারতকে যেভাবে ছাড়িয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ’ শীর্ষক তার ওই বিশ্লেষণী প্রতিবেদনটি গত শনিবার প্রকাশ করেছে হিন্দুস্তান টাইমস।

বিশ্লেষণে কারান থাপড় বলেন, ‘সত্যি বলতে, আমি হেনরি কিসিঞ্জারকে দায়ী করি। ১৯৭০ সালের দিকে তিনি বাংলাদেশকে উল্লেখ করেছিলেন আন্তর্জাতিক তলাবিহীন ঝুড়ি হিসেবে। সন্দেহ নেই, ওই সময় বাংলাদেশ তা ছিল। বারবার ভয়াবহ বন্যায় টিভিতে প্রচারিত ধারাবাহিক ফুটেজ দেশটির এই ভাবমূর্তি নিশ্চিত করেছিল। ফলে কিসিঞ্জারের ওই বর্ণনা টিকে যায়। কিন্তু এখন বাংলাদেশ একটি ভিন্ন দেশ। তাদের বিষয়ে বিশ্বের অভিমত হয়তো খুব ধীরে ধীরে পাল্টাচ্ছে, যদিও আমি এ বিষয়ে নিশ্চিত নই। কিন্তু ভারতে আমাদের ১৯৭০-এর দশকে আটকে থাকার কোনো মানে হয় না। তার পরও গত সপ্তাহে ভারতের এক প্রতিমন্ত্রী যা বলেছেন তাতে সেটাই স্পষ্ট হয়।

সম্প্রতি ভারতের স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী কিষান রেড্ডি বলেছেন, ভারত যদি নাগরিকত্বের প্রস্তাব দেয় তাহলে অর্ধেক বাংলাদেশ খালি হয়ে যাবে। কিন্তু কূটনৈতিক শিষ্টাচার ও আক্রমণাত্মক মন্তব্যের কথা বাদ দিলেও বাংলাদেশের সত্যিকার অবস্থা সম্পর্কে তিনি একেবারেই যে অজ্ঞ তা এই বক্তব্যের মাধ্যমে প্রকাশ পেয়েছে। সবচেয়ে খারাপ হলো, তিনি জানেন না ভারতের তুলনায় বাংলাদেশ অনেক ক্ষেত্রে ভালো করছে, বিশেষ করে জীবনযাপনের মানে। প্রথমত, বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি যে হারে আগাচ্ছে তা ভারত আরও দুই বা তিন বছরের মধ্যে অর্জন করবে বলে আশা করতে পারি। আমরা রয়েছি ৫ শতাংশের নিচে, আর বাংলাদেশ ৮ শতাংশের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে।

দ্বিতীয়ত, নির্মলা সীতারমন (ভারতের কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী) চীনা বিনিয়োগকারীদের আকৃষ্ট করতে ১৫ শতাংশ করপোরেট করের প্রস্তাব দিয়ে মরিয়া চেষ্টা করছেন। অথচ বাংলাদেশ সেই দুটি দেশের একটি, যেখানে আগেই চীনা বিনিয়োগ যাচ্ছে। লন্ডন ও নিউইয়র্কে রাস্তার পাশের দোকানগুলো ভরে গেছে বাংলাদেশে তৈরি পোশাকে। কিন্তু খুবই কম আছে লুধিয়ানা ও ত্রিপুরায় উৎপাদিত পোশাক। ফলে বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানি ২০১৯ অর্থবছরে দ্বিগুণ হয়েছে এবং ভারতের যে উল্লেখযোগ্যভাবে কমেছে তাতে বিস্মিত হওয়ার কিছু নেই।

এ অর্থনৈতিক উন্নয়ন ভারত ও বাংলাদেশের ক্রমবর্ধমান অগ্রগতির একটি অংশমাত্র। অন্য পার্থক্যও অনেক বড়। ভারতের তুলনায় বাংলাদেশের জীবনযাপন যে অনেক বেশি আকর্ষণীয় বলেই দৃশ্যমান তা স্পষ্ট। তথ্য বলছে, বাংলাদেশে পুরুষ ও নারীদের সম্ভাব্য গড় আয়ু যথাক্রমে ৭১ ও ৭৪ বছর। ভারতে তা ৬৭ ও ৭০ বছর। এই বড় বিষয়টির দিকে তাকালেই পার্থক্য আরও স্পষ্ট হয়ে যাবে। শিশুদের কথাই ধরুন। ভারতে নবজাতক মৃত্যুর হার প্রতি হাজারে ২২.৭৩ শতাংশ; বাংলাদেশে তা ১৭.১২ শতাংশ। শিশু মৃত্যুর হার ভারতে ২৯.৯৪ শতাংশ আর বাংলাদেশে ২৫.১৪ শতাংশ। পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশুর মৃত্যুহার ভারতে ৩৮.৬৯ শতাংশ এবং বাংলাদেশে ৩০.১৬ শতাংশ। আবার বাংলাদেশে ১৫ বছরের বেশি নারীদের সাক্ষরতার হার ৭১ শতাংশ, আর ভারতে ৬৬ শতাংশ। বাংলাদেশে শ্রমে নারীদের অংশগ্রহণ ৩০ শতাংশ এবং তা ক্রমেই বাড়ছে। অথচ ভারতে তা ২৩ শতাংশ এবং গত দশকে তা কমেছে ৮ শতাংশ। উচ্চবিদ্যালয়ে ছেলে ও মেয়েদের ভর্তির অনুপাতও ইঙ্গিত দেয় ভবিষ্যৎ উন্নয়নের। ভারতে যখন এই অনুপাত ০.৯৪ শতাংশ সেখানে বাংলাদেশে তা ১.১৪। তাই বলাই যায় যে, সীমান্তের ওপারের অবস্থা যে শুধু ভালো তা নয়, তারা আরও ভালোর দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। আমরাই পিছিয়ে পড়ছি।’

বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী একে আবদুল মোমেন বলেছেন, ‘অর্থনৈতিক কারণে কিছু ভারতীয় বাংলাদেশে প্রবেশ করছেন।’ তিনি হয়তো ঠিক কথাই বলেছেন। মানুষ এক স্থান থেকে অন্য স্থানে যায় জীবনমানের উন্নতি করতে এবং বাংলাদেশের জীবনযাপন নিশ্চিতভাবেই আরও ভালো বলে প্রতীয়মান হচ্ছে। আপনি যদি গরুর মাংস বিক্রির জন্য গণপিটুনির আতঙ্কে থাকা একজন ভারতীয় মুসলিম হন, হিন্দু নারীর প্রেমে পড়ায় ‘লাভ-জিহাদে’ অভিযুক্ত হন অথবা নাগরিকত্ব হারানোর ঝুঁকিতে থাকেন, তাহলে সহজেই সীমান্ত পার হয়ে ওপারে চলে যেতে প্রলুব্ধ হতেই পারেন। এই মুহূর্তে বাংলাদেশ থেকে ভারতে আসার প্রবণতা কম। আমার উদ্ধৃত পরিসংখ্যানই দেখাচ্ছে, ভারতের বৈধ নাগরিক হওয়ার চেয়ে এখন বাংলাদেশে কীট হওয়া বেশি আকর্ষণীয়।

কিষেন রেড্ডিকে কারও এই কথা মনে করিয়ে দেওয়া উচিত, যুক্তরাষ্ট্র যদি নাগরিকত্বের প্রতিশ্রুতি দেয় তাহলে অর্ধেক ভারত খালি হয়ে যাবে। সত্যিকার অর্থে তা আরও বেশি হবে। সে যা-ই হোক, এখন যুক্তরাষ্ট্রের দরজা বন্ধ থাকলেও আমাদের ঠেকানো যাচ্ছে না।সূত্র: আমাদের সময়।

সোনালীনিউজ/এএস

Wordbridge School
Link copied!