• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
আওয়ামী লীগের অভিমত

ভারতে সরকার পরিবর্তন হলে বাংলাদেশে প্রভাব পড়বে না


বিশেষ প্রতিবেদক এপ্রিল ১৩, ২০১৯, ০৮:০৫ পিএম
ভারতে সরকার পরিবর্তন হলে বাংলাদেশে প্রভাব পড়বে না

ঢাকা : পাশ্ববর্তী দেশ ভারতে চলছে ১৭তম লোকসভা নির্বাচন। আগামী ১৯ মে পর্যন্ত মোট ৭ দফায় ভোটগ্রহণ হবে ‘বিশ্বের সর্ববৃহৎ নির্বাচন’ খ্যাত এই জাতীয় নির্বাচনে।

এদিকে ভারতের এবারের লোকসভা নির্বাচনে সরকার পরিবর্তন বা যে দলই ক্ষমতায় আসুক বাংলাদেশের আভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে কোনো নেতিবাচক প্রভাব পড়বে না বলে মনে করছেন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতারা। দুই দেশের মধ্যকার বর্তমান সুসম্পর্কও অব্যাহত থাকবে বলে জানান তারা।

আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতাদের মতে, ভারতের ক্ষমতাসীন বিজেপি এবং বিরোধী দল কংগ্রেস- উভয় দলের সঙ্গেই আওয়ামী লীগের সুসম্পর্ক রয়েছে। দুই দলই ভারতের রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় থাকাকালে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন সরকার সুসম্পর্ক বজায় রেখে কাজ করেছে এবং বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক আরও বৃদ্ধি পেয়েছে। আগামীতেও যে দলই ক্ষমতায় আসুক এই সম্পর্ক অব্যাহত থাকবে। সরকার পরিবর্তন হলেও সম্পর্কের ক্ষেত্রে কোনো নেতিবাচক প্রভাব পড়বে না বলে তারা মনে করছেন।

এ বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য অ্যাডভোকেট আব্দুল মতিন খসরু বলেন, ভারতে নির্বাচনে কোন দল ক্ষমতায় আসবে সেটা ওই দেশের জনগণের ওপর নির্ভর করছে। বিজেপি, কংগ্রেস না অন্য কোনো জোট আসবে সেটা এখনই বোঝা যাচ্ছে। তবে ভারতের সঙ্গে আমাদের অর্ধশতাব্দী ধরে সুসম্পর্ক আছে। আগামীতে ভারতের যে সরকারই আসবে সে সরকারের সঙ্গেই আমাদের সুসম্পর্ক বজায় থাকবে।

শুধু ভারতের সঙ্গে সম্পর্কের ক্ষেত্রেই নয়, বাংলাদেশের আভ্যন্তরীণ রাজনীতিতেও কোনো প্রভাব পড়বে না বলে মনে করেন আওয়ামী লীগ নেতারা। বিশেষত ২০১৪ সালের নির্বাচনে বিজেপির ক্ষমতায় আসাকে বাংলাদেশের দুই-একটি রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ সরকারের জন্য নেতিবাচক বলে বিভ্রান্তি তৈরির চেষ্টা করেছিলো। এবার সেই ধরনের কোনো পরিস্থিতিও তৈরির সম্ভাবনা নেই।
গতকাল বৃহস্পতিবার ভারতের লোকসভার নির্বাচন শুরু হয়েছে। এক মাসেরও বেশি সময় ধরে ৭ ধাপে এই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। নির্বাচনে কোন দল ক্ষমতায় আসছে, ক্ষমতাসীন বিজেপি পুনরায় আসবে নাকি বিরোধী দল কংগেস ক্ষমতায় ফিরবে- সেই আলোচনা উপমহাদেশজুড়েই হচ্ছে।

ভারতের নির্বাচনে সরকার পরিবর্তন হলে বাংলাদেশে কোনো প্রভাব পড়বে কিনা জানতে চাওয়া হলে আওয়ামী লীগের ওই নেতারা জানান, গত ৫ বছরে বিজেপির সরকারের সঙ্গে আওয়ামী লীগের সুসম্পর্ক তৈরি হয়েছে। এই সময়ই ভারতের সঙ্গে ঝুলে থাকা দীর্ঘদিনের সীমান্ত সমস্যার সমাধান হয়। দীর্ঘ ৪১ বছর আগের মুজিব-ইন্দিরা সীমান্ত চুক্তি বাস্তবায়নে ভারতের পার্লামেন্টে সীমান্ত বিল পাস হয়। এই সমস্যা সমাধান করেই ওই বছর জুনে নরেন্দ্র মোদী ঢাকা সফরে আসেন এবং দুই দেশের ঐতিহাসিক সম্পর্কের নতুন অধ্যায়ের সূচনা হয়।

মোদীর ঢাকা সফরে দুই দেশের মধ্যে ২২টি চুক্তি, সমঝোতা স্মারক ও প্রটোকল সই হয়। গুরুত্ব দেওয়া হয় আঞ্চলিক যোগাযোগ বা কানেকটিভিটি ও যৌথ নিরাপত্তা। বাংলাদেশের অবকাঠামো উন্নয়নে নতুন করে ২০০ কোটি ডলার ঋণ সহায়তা এবং ‘নতুন প্রজন্ম-নতুন দিশা’ শীর্ষক ৬৫ দফা যৌথ ঘোষণার মধ্য দিয়ে সহযোগিতার সম্পর্ককে নতুন উচ্চতায় নিয়ে গেছে।

এর পর ২০১৭ সালের এপ্রিলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারত সফর এবং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে দুই দেশের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের পাশাপাশি দুই সরকারের মধ্যে সোহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক আরও জোরদার হয়। পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির কারণে তিস্তা ইস্যু ঝুলে থাকলেও সমস্যা সমাধানে বিগত কংগ্রেস সরকারের মতো বিজেপি সরকারও ইতিবাচক।

এছাড়া বিজেপির আমন্ত্রণে আওয়ামী লীগের উচ্চ পর্যায়ের একটি প্রতিনিধি দল ভারত সফর করে এবং বিজেপির নেতারাও আওয়ামী লীগের আমন্ত্রণে ঢাকায় আসেন। আওয়ামী লীগ নেতারা আরও জানান, কংগ্রেসের সঙ্গে আওয়ামী লীগের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক দীর্ঘদিনের। বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রাম এবং মুক্তিযুদ্ধের সময় থেকেই এই সম্পর্ক তৈরি হয়।

স্বাধীনতার পর থেকে কয়েক দফায় আওয়ামী লীগ সরকার কংগ্রেসের নেতৃত্বাধীন সরকারের সঙ্গে কাজ করেছে। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ যখন ক্ষমতায় আসে তখন কংগ্রেস ক্ষমতায় ছিলো। ওই ৫ বছর বিভিন্ন ইস্যুতে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন সরকারকে ভারত সমর্থন দিয়েছে। বিশেষ করে ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচন নিয়ে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন বিভিন্ন ধরনের জটিলতা তৈরির চেষ্টা হলেও বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক ধাপরাবাহিকতা রক্ষায় ভারতের তৎকালীন কংগ্রেস সরকারের সমর্থন অব্যাহত ছিলো।

সর্বপরি আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন সরকারের সময় ভারতের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক যে মাত্রায় পৌঁছেছে আগামীতে সেখানে যে সরকারই আসুক এই সম্পর্কের ক্ষেত্রে নেতিবাচক কোনো প্রভাব পড়বে না বলে তারা আরও জানান।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সংগঠনিক সম্পাদক ও নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘ভারতের নির্বাচন তাদের অভ্যন্তরীণ বিষয়, এটার সঙ্গে আমাদের কোনো সম্পর্ক নেই। এক দল আসবে, এক দল যাবে এটাই গণতান্ত্রিক নিয়ম। আমাদের সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক স্টেট টু স্টেট। এর আগে ভারতে অনেক দলের সরকার এসেছে। সব সরকারের সঙ্গেই কাজ করার অভিজ্ঞতা আওয়ামী লীগের আছে। এটা কোনো বিষয় না।

যে সরকারই আসবে আমরা স্বাগত জানাবো, তাদের সঙ্গে কাজ করবো। ভারত একটি গণতান্ত্রিক দেশ, সেখানে যে সরকারই আসুক এটা আমাদের কোনো সমসা না। আমাদের সমস্যা পাকিস্তান ও পাকিস্তানপন্থিরা। পাকিস্তান এখনও আমাদের ন্যায্য হিস্যা দেয়নি।’

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!