• ঢাকা
  • শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

ভারতের মুসলিমপ্রধান লাক্ষাদ্বীপ


নিউজ ডেস্ক আগস্ট ১৫, ২০২০, ১১:৫০ এএম
ভারতের মুসলিমপ্রধান লাক্ষাদ্বীপ

ঢাকা : ভারতে শনাক্ত মোট করোনা রোগীর সংখ্যা যখন ২৩ লাখ ছুঁই ছুঁই করছে, তখন দেশটির একমাত্র যে অঞ্চল এই মরণঘাতী ভাইরাসের হানা থেকে বাঁচতে পেরেছে- সেটি হলো লাক্ষাদ্বীপ। মূলত দ্বীপটিতে বহিরাগতদের প্রবেশ বন্ধেই তাদের এই সাফল্য। এ ছাড়া পুলিশ সেখানে খুব কঠোরভাবে কারফিউ বলবৎ করে, লোকজন অযথা বাড়ির বাইরে বেরোয়নি।

ভারতের আরব সাগরের দ্বীপপুঞ্জ লাক্ষাদ্বীপ দেখতে অনেকটা ছবির মতো সাজানো। বাসিন্দাদের অধিকাংশই মুসলিম। একমাত্র এমপিও মুসলিম। ২০১৯ সালে লোকসভা নির্বাচনে লাক্ষাদ্বীপ থেকে জয় পেয়েছেন ন্যাশনালিস্ট কংগ্রেস পার্টির (এনসিপি) মোহাম্মদ ফয়জল। এখানে বিজেপিসহ প্রায় সব দলই তাদের প্রার্থী দেয় মুসলিম সম্প্রদায় থেকে।

৩৬টি দ্বীপকে নিয়ে গঠিত আরব সাগরের এই দ্বীপপুঞ্জটি ভারতের একটি মুসলিম অধ্যুষিত কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল, যা ভারতের মূল ভূ-খণ্ড থেকে ২০০-৪৪০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে লাক্ষা সাগরের মালাবার উপকূলে অবস্থিত। ৩২ বর্গকিলোমিটার আয়তনের দ্বীপটি ভারতের সবচেয়ে ছোট কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল। লাক্ষাদ্বীপের রাজধানীর নাম কাভারাট্টি। সমগ্র অঞ্চলটি একটি জেলা এবং ১০টি মহকুমায় বিভক্ত।

লাক্ষাদ্বীপ

ইতিহাস থেকে জানা যায়, সপ্তম শতকে এই অঞ্চলে মুসলমানদের আগমন ঘটে এবং এখানে ইসলাম ধর্ম প্রতিষ্ঠিত হয়। এখন এখানকার দশটি দ্বীপে মানুষ বসবাস করে। লাক্ষাদ্বীপের মোট ৯৬ দশমিক ২ শতাংশ মুসলিম। ২০১১ সালের জনগণনা অনুসারে অঞ্চলটির জনসংখ্যা ৬৫ হাজারের মতো। তবে এখন সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭০ হাজারে। সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ ইসলাম ধর্মাবলম্বী। এ ছাড়া হিন্দু, খ্রিস্টান, বৌদ্ধ, জৈন ও শিখ ধর্মাবলম্বীদের বাসও রয়েছে।

ভারতীয় মূল-ভূখণ্ডের কোচি থেকে প্রতিদিনধধধধই এয়ার ইন্ডিয়ার ফ্লাইট যাতায়াত করে। লাক্ষাদ্বীপের একটিমাত্র এয়ারপোর্টের নাম আগাট্টি; এটি একটি দ্বীপেরও নাম। এ ছাড়া কয়েকটি জাহাজ বিভিন্ন দ্বীপে চলাচল করে।

লাক্ষাদ্বীপ ভ্রমণের মূল আকর্ষণ নীল জলরাশি, প্রবাল প্রাচীর, সমুদ্রের নিচের প্রবাল আর প্রবালের মধ্যে থাকা সামুদ্রিক জীব। লাক্ষাদ্বীপ ১৯৫৬ সালের ১ নভেম্বর ভারতীয় প্রজাতন্ত্রের অধীনে আসে এবং এটি পৃথক কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলরূপে গড়ে ওঠে।

কৃষিকাজ, মাছ ধরা ও নারকেলের চাষ এখানকার অধিবাসীদের জীবিকা অর্জনের প্রধান মাধ্যম। তা ছাড়া নারকেল সম্পর্কিত অনেক শিল্প এখানে গড়ে উঠেছে। পর্যটনশিল্পও তাদের আর্থিক উপার্জনের ক্ষেত্রে বড় ভূমিকা পালন করে।

লাক্ষাদ্বীপে বেশ গুরুত্ব দিয়ে রমজান, ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহা পালন করা হয়। এখানকার মানুষ অতি সহজ ও সাধারণ জীবনযাপনে অভ্যস্ত। মুসলিমরা দ্বীপটিতে সংখ্যাগরিষ্ঠ হলেও অন্যদের সঙ্গে মিলেমিশে বসবাস করেন। দ্বীপের উন্নতির জন্য একসঙ্গে কাজ করেন।

স্থানীয় ভাষা হিসেবে মালায়লাম ব্যাপকভাবে প্রচলিত। তবে এখন ইংরেজি ও হিন্দিরও প্রচলন ঘটছে। সাক্ষরতার হার ৯২.২৮ শতাংশ। সেখানকার পাঠ্যক্রমে কেরালা রাজ্যকে অনুসরণ করা হয়। শিক্ষার ক্ষেত্রে মেয়েরা এগিয়ে।

লাক্ষাদ্বীপে বেশ কয়েকটি আকর্ষণীয় মসজিদ রয়েছে। এর মধ্যে উজরা, জুমা মসজিদ, উবায়দুল্লাহ মসজিদ, আগাট্টি মসজিদ বেশি প্রসিদ্ধ। শুধু রাজধানী কাভারাট্টিতে ৫২টি মসজিদ রয়েছে। জনসংখ্যা অনুপাতে পৃথিবীর আর কোথাও এত বেশি মসজিদ আছে কি-না জানা নেই।

উজরা মসজিদ চত্বরে একটি কূপ রয়েছে। স্থানীয়দের বিশ্বাস এর পানিপানে বিভিন্ন রোগের নিরাময় ঘটে। উজরা মসজিদের দেয়ালে প্রাচীন রীতিতে করা আরবি ক্যালিগ্রাফির কারুকাজ দেখতে পর্যটকরা ভিড় করেন।

লাক্ষাদ্বীপ

লাক্ষাদ্বীপের মসজিদে উবায়দুল্লাহও বেশ প্রসিদ্ধ। এখানে একজন ধর্মপ্রচারকের কবর রয়েছে। তার নামেই মসজিদটি প্রসিদ্ধ। তিনি দ্বীপটিতে প্রথম ইসলামের দাওয়াত নিয়ে আসেন।

এবারের কোরবানির ঈদে লাক্ষাদ্বীপের মুসলমানরা বকরি জবাই করে গোশত বিলি-বণ্টন করেন। ঈদগাহে নামাজ আদায় করেন।

মসজিদসংলগ্ন মাদ্রাসাগুলোতে কোরআন শিক্ষা দেওয়ার ব্যবস্থা রয়েছে। লাক্ষাদ্বীপে রয়েছে দেওবন্দের সিলেবাস অনুসরণে পরিচালিত কয়েকটি মাদ্রাসাও। নারীরা হিজাব পরিধান করে ঘর-সংসারের কাজ সামাল দেন। মাতৃতান্ত্রিক সমাজ না হওয়া সত্ত্বেও অনেকে লাক্ষাদ্বীপকে নারীর রাজ্য বলে অভিহিত করেন। কারণ, সংসার দেখাশোনা থেকে শুরু করে সবকিছু নারীকেই করতে হয়। পুরুষরা কৃষিকাজ ও মাছ ধরাসহ নানা কাজে বাইরেই বেশি থাকেন।

সোনালীনিউজ/এএস

Wordbridge School
Link copied!