• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

ভালোবাসায় ভাগ বসানোয় শিশু মিমকে হত্যা


নিজস্ব প্রতিবেদক সেপ্টেম্বর ২৪, ২০২০, ০১:৩৩ পিএম
ভালোবাসায় ভাগ বসানোয় শিশু মিমকে হত্যা

ঢাকা : চার বছরের শিশু নুসরাত জাহান মিম হত্যায় জড়িত একমাত্র আসামি মিমের বড় ভাই আল-আমিনকে (১৪) জিজ্ঞাসাবাদ শেষে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব। রাজধানীর বনানীর কড়াইল বস্তিতে বাবা-মায়ের ভালোবাসায় ভাগ বসানোয় মিমকে হত্যা করা হয় বলে স্বীকার করেছে আল-আমিন।

মিমের পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, বুধবার (২৩ সেপ্টেম্বর) সকালে মিম বাসায় ঘুমিয়ে ছিল। মা রোকসানা কাজে বেরিয়ে গেলে মেয়ে ও ছেলে আল‌-আমিনকে বাসায় রেখে বের হন বাবা লিটন। ১০ মিনিট পর বাসায় এসে মিমকে খুঁজে পাননি। এরপর থেকে তারা খোঁজাখুঁজি শুরু করেন। এলাকায় করা হয় মাইকিংও। একঘণ্টা পর বাসার পাশের গোসলখানায় মেয়ের লাশ দেখতে পান তারা।

পরিবারের দাবি, শ্বাসরোধে মিমকে হত্যা করা হয়। খবর পেয়ে ঘটনাস্থল থেকে লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজে হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়।

এ সময় নিহহ মিমের বড় ভাই ১৪ বছরের আল-আমিনসহ প্রতিবেশী আরও একজনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নিয়ে যায় র‌্যাব।

র‌্যাব জানান,গত বুধবার সকাল ৮টার দিকে রাজধানীর বনানী থানাধীন জামাই বাজার এলাকাস্থ কড়াইল বস্তির মো. লিটন মিয়ার শিশু কন্যা মিমকে গলা টিপে হত্যা করা হয়। পরে নিহতের পিতা বাদী হয়ে বনানী থানায় একটি হত্যা মামলা করেন। যার নম্বর-৩২।

ভিকটিমের পিতা মোঃ লিটন মিয়া জনান, তিন বছরের বেশি সময় ধরে সে বর্তমান ঠিকানার বাসায় স্বপরিবারে বসবাস করছে। সে বনানী এলকায় পেয়ারা ও আমড়া বিক্রি করে এবং তার স্ত্রী রুপসানা অন্যের বাসায় কাজ করে। তাদের দুই সন্তানের মধ্যে বড় ছেলে আল-আমিন ওরফে সজিব (১৪) এবং ছোট মেয়ে নিহত মিম (৪)। প্রতিদিনের মত গত বুধবারও তার স্ত্রী রুপসানা সকালে কাজে চলে যায় এবং কিছুক্ষণ পর সেও বাসার বাইরে চলে যায়। কিছু সময় পর বাসায় ফিরে মেয়েকে না পেয়ে খোঁজাখুঁজি করেতে থাকে। অনেক খুঁজার পর আশেপাশে কোথাও মেয়েকে না পেয়ে সবশেষে পাশ্ববর্তী আল-মদিনা মসজিদের মাইকে বিষয়টি ঘোষণা করে। পরবর্তীতে আনুমানিক ১০ টারদিকে মিমকে বাসা থেকে কিছু দূরে একটি গোসলখানায় মৃত অবস্থায় পাওয়া যায়।

র‌্যাব আরও জানান, হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় র‌্যাব-১ তাৎক্ষণিকভাবে হত্যাকারীদের খুঁজে বের করে আইনের আওতায় আনতে দ্রুততার সাথে ছায়া তদন্ত শুরু করে এবং গোয়েন্দা নজরদারী বৃদ্ধি করে। এরই ধারাবাহিকতায় মাত্র ১০ ঘন্টার মধ্যে হত্যাকারীকে সনাক্ত করা সম্ভব হয়। বনানী থানাধীন কড়াইল বস্তি থেকে ভিকটিমের বড় ভাই আল-আমিন ওরফে সজিবকে গ্রেফতার করা হয়।

আল-আমিন র‌্যাবের জিজ্ঞাসাবাদে জানান, সে স্থানীয় আইডিয়াল স্কুলের ৫ম শ্রেণীতে অধ্যয়রত। সে ৩য় শ্রেণী পর্যন্ত নরসিংদীর রায়পুরায় তার নিজ গ্রামের একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ৪র্থ শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশুনা করেছে। এরপর বাবা-মায়ের কাছে ঢাকায় আসে। তার ভাষ্যমতে, ছোট বোন মিম জন্মের পর থেকে তার প্রতি বাবা-মায়ের ভালোবাসা কমতে থাকে। যত দিন যায় বাবা-মা তার প্রতি উদাসিন হয়ে পরে এবং সব ভালোবাসা মিমের দিকে চলে যায়। তার উপর কারণে অকারণে চলে বাবার নির্দয় প্রহার। যার দুরুন ছোট বোনের প্রতি তার ক্ষোভ জন্মাতে থাকে এবং সব কিছুর জন্য তাকে দায়ি করে সে। প্রতিদিন বাসায় ফিরে তার পিতা সবার আগে মেয়েকে কাছে ডকে নেয় এবং আদর করে তার জন্য বাইরে থেকে নিয়ে আসা কিছু খেতে দেয়।

আল-আমিন আরও জানান, বাবা-মা দুজনই তার ছোট বোনের সব আবদার পুরণ করলেও তার বেলায় বীপরিত ঘটনা ঘটে। তাই সে ছোট বোন মিম কে বাবা-মায়ের চোখের আড়াল করার জন্য বিভিন্ন ফন্দি আটতে থাকে যাতে করে সে আগের মত আদর/ভালোবাসা পেতে পারে। এর জন্য সে সুযোগের অপেক্ষা করতে থাকে। এরই প্রেক্ষিতে গত ২৩ সেপ্টেম্বর ৮টার দিকে পাশ্ববর্তী মাদ্রাসা থেকে পড়া শেষে বাসায় ফিরার সময় সে তার বাবাকে ঘরের বাইরে যেতে দেখে এবং ঘরে ফিরে ভিকটিম মিমকে ঘুমন্ত অবস্থায় দেখতে পায়। ঘরে বাবা-মা কেউ না থাকায় মোক্ষম সুযোগ মনে করে সে ঘুমন্ত মিমকে গলা টিপে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে এবং বিছানার নিচে লুকিয়ে ফেলে। পরবর্তীতে তার বাবা বাসায় ফিরে মেয়েকে না পেয়ে খোঁজাখুঁজি করতে থাকে এবং বাসার বাইরে খুঁজতে যায়। 

এই সুযোগে আল-আমিন মিমের লাশ পাশের গোসলখানায় রেখে আসে। গ্রেফতারকৃত আল-আমিনের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।

এদিকে বনানী থানার উপ-পরিদর্শক জাহিদুল ইসলাম জানান, শিশুটির মুখে ও গলায় লালচে দাগ ছিল। এ ঘটনায় তদন্ত অব্যাহত রয়েছে।

সোনালীনিউজ/এএস

Wordbridge School
Link copied!