• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল, ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

ভিমরুলীর ভাসমান পেয়ারা বাজার


মো. আমিনুল ইসলাম, ঝালকাঠি জুলাই ১৯, ২০১৭, ১১:০২ এএম
ভিমরুলীর ভাসমান পেয়ারা বাজার

ঝালকাঠি: আষাঢ়, শ্রাবন ও ভাদ্র এ তিন মাস পেয়ারার মৌসূম। এসময় পাকা পেয়ারার মৌ মৌ গন্ধ নিতে এবং সবুজের সমারোহ দেখতে আসে দেশ ও বিদেশের অনেক মানুষ। স্থানটির নাম ভীমরুলী। এটা ভিয়েতনামের কোথাও নয়। বাংলাদেশের দক্ষিণের একটি জেলা ঝালকাঠি। সদর উপজেলার উত্তরদিকে অবস্থিত ভীমরুলী গ্রাম। পিরোজপুরের স্বরূপকাঠি, বরিশালের বানারীপাড়া এবং ঝালকাঠি সদর উপজেলার সীমান্তবর্তি একটি গ্রাম।

সরেজমিনে ভাবলে মনে হতে পারে, আবাল-বৃদ্ধ-বণিতার বাইচ। কিন্তু তা নয়। এটি বোঝা গেল, যখন চোখটা কচলে নেয়া দু’হাতের মুষ্টি দিয়ে। আরও স্পষ্ট হলো স্টিমার বা ট্রলার ঘরানার জলযান ওই পথ মাড়ালে। কোনো প্রতিযোগ নয়, সময় ধরতে হবে। দেরি হলেই বিধিবাম। আশপাশের অন্য সবার মতো গতি ধরে এগিয়ে চলা। হুট করেই রাজ্যে প্রবেশ। মনে হতে পারে দক্ষিণাঞ্চলের কোনো নদী-খাল টপকে থাইল্যান্ড কিংবা ভিয়েতনামে এসে পড়া কিনা! এত্ত পেয়ারা...! পেয়ারার রাজ্য! তাও আবার জলে ভেসে ভেসে! জলেভাসা বাজার চারদিক। ছোট ছোট ডিঙি নৌকায় পণ্য নিয়ে শুরু হলো বিক্রি। পানির ওপর জলজ্যান্ত একটি হাট।

ঝালকাঠি সদর উপজেলার অন্তর্ভুক্ত এ জলবাজারে প্রধান পণ্য পেয়ারা। সারি সারি নৌকার ওপর সবুজ-হলুদ পেয়ারা। এর ভারেই নৌকাও ডুবেছে অর্ধেকখানিক। হাটুরেদের হাঁকডাকে গম গম পুরো এলাকা। এক কথায় খালের ওপর এ এক আজব-অবাক করা বাজার।

স্থানীয়দের কাছে জানা গেল, এ অঞ্চলের ‘সবচেয়ে বড়’ ভাসমান হাট এটি; যা পুরো বাংলাদেশেই অনন্য। এ অঞ্চলের সবচেয়ে বড়! তাহলে কি আরো আছে এমন বাজার? হ্যাঁ, আছে তো- পাশের পিরোজপুরের স্বরূপকাঠির (নেছারাবাদ) কুড়িয়ানা, আটঘর, আতা, ঝালকাঠির মাদ্রা। আরো মজার বিষয় হলো, এসবই পিরোজপুর সন্ধ্যা নদী থেকে বয়ে আসা একই খালপাড়ে। ভীমরুলী জলে ভাসা হাটে পেয়ারা বোঝাই ডিঙি নৌকাগুলো একবার এপাশ, একবার ওপাশ, চাষিদের ভালো দামের আশায় এমন নড়চড়। খালের দু’পাশে আড়ৎ ব্যবসায়ীদের আড়ৎ। তারাই কিনবেন।

বাংলাদেশের সিংহভাগ পেয়ারা উৎপাদনকারী অঞ্চলের চাষিরা ডিঙিতে বসে বিকিকিনিতে মগ্ন। ভীমরুলীতে ভাসমান এ পেয়ারা হাট দেখতে এসেছিলেন অস্ট্রেলিয়ার নাগরিক রিক স্ট্রিল (৬২)। ঢাকাতেই থাকেন। অস্ট্রেলিয়া থেকে বাংলাদেশে আসা বন্ধু নিয়ে বেড়াতে এসেছেন এখানে। সঙ্গে তার স্ত্রীও রয়েছেন। সবাই মিলে ঘুরে ঘুরে দেখলেন পুরো ভাসমান বাজার।

তার মন্তব্য- থাইল্যান্ড-ভিয়েতনামের বিভিন্ন বড় বড় শহরে এমন জলেভাসা বাজারের দেখা মেলে। কিন্তু বাংলাদেশের একটি প্রতন্ত গ্রামে জলেভাসা বাজার-হাট গড়ে ওঠা সত্যিই অবাক করার মতো। তাও আবার জমজমাট হাট।

অর্ধবাংলায় তিনি বলেন, ‘এটি দেখতে সত্যিই চমৎকার!’ অদ্ভুত সুন্দর ভাসমান এ হাট ও তার আশপাশের প্রকৃতি যে কতটা নজরকাড়া হতে পারে, এটি এখানে না এলে বোঝার উপায় নেই! প্রতিবছর শত বিদেশি পর্যটক এ স্থানে ভিড় জমান পুরো পেয়ারা মৌসুম জুড়েই। বাংলাদেশিদের জন্যও যা হতে পারে অপূর্ব ভ্রমণকেন্দ্র।


সোনালীনিউজ/ঢাকা/আকন

Wordbridge School
Link copied!