• ঢাকা
  • মঙ্গলবার, ১৯ মার্চ, ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

ভূমিকম্প ঝুঁকিতে মানচিত্র থেকে হারিয়ে যেতে পারে ঢাকা


বিশেষ প্রতিনিধি মার্চ ৪, ২০১৯, ০১:৩২ পিএম
ভূমিকম্প ঝুঁকিতে মানচিত্র থেকে হারিয়ে যেতে পারে ঢাকা

ঢাকা : বড় মাত্রার ভূমিকম্পে ক্ষয়ক্ষতির বিবেচনায় বিশ্বের ঝুঁকিপূর্ণ শীর্ষ ১০ দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান রয়েছে ৫ নম্বরে। এমন দুর্যোগ ঘটলে উদ্ধার কার্যক্রম ও ব্যবস্থাপনায় দেশের সক্ষমতা রয়েছে মাত্র ২০ ভাগের মতো। এ ধরনের দুর্যোগে মানচিত্র থেকে হারিয়ে যেতে পারে রাজধানী ঢাকা।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সেবা সংস্থাগুলোর অপরিকল্পিত কর্মকাণ্ড ও পরস্পরের সমন্বয়হীনতার কারণেই রাজধানী ভূমিকম্পের মতো দুর্যোগে এমন ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থানে রয়েছে। তবে সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, ভূমিকম্পসহ বড় ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগ ঘটলে রাজধানী ঢাকায় তা ব্যবস্থাপনায় সমন্বিত একটি কমিটি রয়েছে। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদফতরের নেতৃত্বে সব সেবাসংস্থার সমন্বয়ে এই কমিটি কাজ করছে।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় ও বিশ্বব্যাংকের যৌথ এক গবেষণায় বলা হয়েছে, ভূমিকম্পে ক্ষয়ক্ষতির বিবেচনায় বিশ্বের ২০টি ঝুঁকিপূর্ণ শহরের মধ্যে রাজধানী ঢাকা একটি। বিশ্ববিদ্যালয়টি ২০১২ সালের ঝুঁকিপূর্ণ দেশের যে তালিকা (ওয়ার্ল্ড রিস্ক ইনডেক্স) তাতে বাংলাদেশের অবস্থান রয়েছে ৫ নম্বরে। তবে ক্ষয়ক্ষতির মাত্রার ভিত্তিতে বাংলাদেশের অবস্থান দ্বিতীয়।

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় বিদ্যমান সক্ষমতা ও অভিযোজিত (অ্যাডাপ্টিভ) সক্ষমতার যে দুর্বলতা রয়েছে সেই অবস্থানে বাংলাদেশ রয়েছে ঝুঁকির শীর্ষে। ভূকম্পনে সম্ভাব্য ক্ষয়ক্ষতির তুলনায় দেশের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার বিদ্যমান সক্ষমতার অভার রয়েছে প্রায় ৮৬ দশমিক ৮৪ ভাগ। আর অভিযোজিত সক্ষমতার অভাব রয়েছে ৬১ ভাগ।

খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের নগর ও গ্রামীণ পরিকল্পনা বিভাগের সাবেক প্রধান ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিষয়ক বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক মো. মহসিন উদ্দিন আহমেদের সঙ্গে কথা হয়।

ভবিষ্যতে ভয়াবহ কোনো ভূমিকম্প হলে রাজধানীর ক্ষয়ক্ষতির চিত্র বোঝাতে তিনি উপস্থাপন করেন ১৯৭২ সালের ভয়াবহ ভূমিকম্পের তথ্য।

তিনি বলেন, বর্তমান রাজধানী ঢাকা আর ২৫৭ বছর আগের ঢাকার মধ্যকার পার্থক্যটা বোঝাতে তেমন কোনো তথ্য-উপাত্ত নেই কারো কাছেই। তবে রাজধানীর নগরায়ণের যে ধারা তা বিশ্লেষণ করলে ওই সময়টায় ঢাকা ছিল বর্তমান সময়ের বাংলাদেশের প্রত্যন্ত কোনো গ্রামের মতোই। সেদিনের ভূকম্পনটি রিখটার স্কেলে কত মাত্রার ছিল তা পরিমাপ করা বা সে সংক্রান্ত কোনো তথ্যও নেই সরকারি-বেসরকারি কোনো সংস্থার কাছে।

তবে ক্ষয়ক্ষতি সম্পর্কে অনেকটা বর্ণনামূলক কিছু তথ্য রয়েছে বিশ্লেষক ও বিশেষজ্ঞদের কাছে। ক্ষয়ক্ষতির এসব তথ্য-উপাত্ত থেকে জানা যায়, সেদিনের ভূকম্পনে ঢাকায় যে কয়েকটি অবকাঠামো ছিল তা ভূমিতে লুটিয়ে পড়েছিল ধুলার মতো।

আনুমানিক তখন ঢাকার ৫০০ মানুষ প্রাণ হারায় ভয়াবহ সেই ভূকম্পনে। ঢাকার আশপাশের নদ-নদী, খাল-ঝিলের পানি উপচে উঠেছিল ডাঙায়। আর পানি নেমে যাওয়ার পর ডাঙার মাছসহ বিভিন্ন জলজ প্রাণী মরে পড়ে থাকতে দেখা যায়। সেই ভূমিকম্পে সবচেয়ে বড় ক্ষয়ক্ষতি হয়েছিল মাটি ফেটে বালু-কাদাসহ পানি ওপরে উঠে আসার কারণে, যাকে ভূকম্প বিশারদরা বলে লিকুফ্যাকশন (খরয়ঁবভধপঃরড়হ)।

তিনি জানান, বাংলাদেশের গত ২৬০ বছরের ইতিহাসে মাত্রার ভিত্তিতে মোট ১৭টি বড় ধরনের ভূমিকম্পনের ঘটনা ঘটেছে।

অধ্যাপক মহসিন উদ্দিন আহমেদ বলেন, গতিশীল তিনটি প্লেটের সংযোগস্থলে বাংলাদেশের অবস্থানের কারণে শতবর্ষের ভূমিকম্পের সার্কেলে রয়েছে বাংলাদেশ। যেকোনো মুহূর্তে বড় মাত্রার কম্পন সৃষ্টি হতে পারে। এ ধরনের ভূকম্পনে সুনামি ও লিকুফ্যাশনের ঘটনা বেশি ঘটে। প্লেটের বিচ্যুতির কারণে ভূমিতে ফাটল এবং ভূ-অভ্যন্তরীণ পানি, বালু, কাদা ওপরে উঠে আসার ঘটনা ঘটে।

তিনি বলেন, ভূ-প্রকৃতি ও ভূমিকম্পের মাত্রার ভিত্তিতে রাজধানী ঢাকা রয়েছে মধ্যম শ্রেণির অঞ্চলে। তবে শুধু লিকুফ্যাকশনের কারণেই ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণটা হবে সবচেয়ে বেশি। ভূমিতে ফাটলের কারণে শুধু দুর্বল নয়, মধ্যম ক্যাটাগরির অবকাঠামোগুলোও ধসে পড়বে। আর ক্ষয়ক্ষতির বিবেচনায় তা ব্যবস্থাপনায় বাংলাদেশের কোনো প্রস্তুতি নেই বললেই চলে।

মহসিন উদ্দিন আহমেদ আরো বলেন, রাজধানীর সেবাসংস্থাগুলোর অপরিকল্পিত কর্মকাণ্ড ভূমিকম্প ঝুঁকি বাড়িয়েছে। আর তাদের মধ্যে সমন্বয় না থাকার কারণে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায়ও রয়েছে বড় ধরনের দুর্বলতা। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদফতর একটা কমিটি গঠন করেছে। কিন্তু তারা বসে আছে কবে দুর্যোগ হবে তখন কীভাবে কী করা যায় সেই অপেক্ষায়ই। যদি কার্যতই তারা কোনো কাজ করত তাহলে ভূমিকম্পের রিস্কের জায়গাগুলোয় কারণগুলোর সমাধান করত। অপরিকল্পিত নগরায়ণ রোধ করত।

এ ব্যাপারে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদফতরের মহাপরিচালক আবু সৈয়দ মোহাম্মদ হাশিম বলেন, মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে সম্ভাব্য ভূমিকম্পে ঢাকাসহ দেশের ওপর কী প্রভাব পড়তে পারে তা দুর্যোগের মাত্রা সব কিছুই বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে। এ ধরনের দুর্যোগ ঘটলে আমাদের করণীয় কী সে সংক্রান্ত একটি জাতীয় কমিটি রয়েছে। রাজধানীর বিভিন্ন সেবা সংস্থা, ফায়ার সার্ভিস, আবহাওয়া অধিদফতরসহ গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয় এই কমিটিতে রয়েছে, যারা প্রতিনিয়ত কাজ করে যাচ্ছে ঝুঁকি কমাতে ও মোকাবেলা করতে।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!