• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

ভেঙে যাচ্ছে ঐক্যফ্রন্ট!


বিশেষ প্রতিনিধি জানুয়ারি ২৯, ২০১৯, ০২:৫৮ পিএম
ভেঙে যাচ্ছে ঐক্যফ্রন্ট!

ঢাকা : ঐক্যফ্রন্টে শোনা যাচ্ছে ভাঙনের সুর। যেকোনো সময় আসতে পারে ভাঙনের ঘোষণা। নেতাভেদে বিশেষ টার্গেট নিয়ে প্রতিষ্ঠাতারা গঠন করেছিলেন জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট। একাধিক নেতার একাধিক টার্গেট ছিল। গত ৩০ ডিসেম্বর নির্বাচনের আগে-পরে কারোটা পূরণ হয়েছে, আবার কেউ কেউ নিরাশ হয়েছেন। নতুন সরকার গঠনের পর হিসাব-নিকাশের ধরন পাল্টে গেছে। শেষ সময়ে লাভ-ক্ষতির অঙ্ক কষছেন সম্পৃক্তরা।

নাম প্রকাশ না করার শর্ত জুড়ে দিয়ে ফ্রন্টের শরিক দুটি দলের একাধিক নেতা আলাপকালে বলেন- ভোটের আগে লাভ-ক্ষতির হিসাবটা ছিল জাতীয় স্বার্থের, ভোটের দিন ছিল নিজ দলের অভ্যন্তরে। এখন অঙ্কটা গড়িয়েছে নেতার ব্যক্তিগত লাভ-ক্ষতিতে। এ পরিস্থিতিতে ঐক্যফ্রন্টে দলের পরস্পরের টানাপড়েন সম্পর্ক ব্যক্তিগত পর্যায়ে রূপ নিয়েছে।

এদিকে ছোট দলের মতিগতি গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছে ঐক্যফ্রন্টের প্রধান দল বিএনপি। পরিস্থিতি ও পরিবেশ বুঝে দলটিও তাদের একক প্রস্তুতির কথা জানাবে। হয়তো সেদিনই আনুষ্ঠানিকভাবে ভাঙনের সানাই বাজতে পারে বলে বিএনপির নীতিনির্ধারক পর্যায়ের এক নেতা দৃঢ়তার সঙ্গেই বলেছেন। তবে তার আগেই ফ্রন্টের শরিক দল ড. কামাল হোসেনের গণফোরাম খণ্ডিত হচ্ছে বলেও আভাস ওই নেতার।

গত সংসদ নির্বাচনে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের বিপরীতে ভোটযুদ্ধ করে ওই দলেরই সাবেক নেতা সুলতান মোহাম্মদ মনসুর প্রধানমন্ত্রীর আহ্বানে সাড়া দিয়ে সংসদে যাচ্ছেন। গত ২৫ জানুয়ারি জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে ঐক্যফ্রন্টের বিজয়ীদের সংসদে যাওয়ার জন্য আহ্বান জানান। রাজনীতির অঙ্গনে চাউর আছে ঘরের ছেলে ঘরেও ফিরতে পারেন। তিনি ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি, আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক, ডাকসুর আলোচিত ছাত্র সংসদের ভিপি ছিলেন।

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘিরে ‘আন্দোলন, নির্বাচন এবং সরকার গঠন’- এই তিন ইস্যুতে গঠিত হয় জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট। ফ্রন্টের নামকরণ থেকেই বিএনপিতে এক ধরনের অস্বস্তির রেখাচিহ্ন ফুটে উঠেছিল।

বিকল্পধারা বাংলাদেশের প্রধান ডা. একিউএম বদরুদ্দোজা চৌধুরীর (বি. চৌধুরী) নেতৃত্বে প্রতিষ্ঠিত হয় যুক্তফ্রন্ট। চাওয়া-পাওয়ার হিসাব-নিকাশটা সেখান থেকেই। পরস্পরের মধ্যে আস্থা সঙ্কটের কারণে লিখিত সমঝোতা বা চুক্তিতে আবদ্ধ হন বি. চৌধুরী ও গণফোরামের সভাপতি ড. কামাল হোসেন। সঙ্গে ছিলেন নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না।

তখনই সরকার প্রধান, ফ্রন্টের প্রধান এবং প্রধানমন্ত্রীত্বের হিসাবটা মেলেনি। নেতায় নেতায় টার্গেট ফিলাপ না হওয়ায় ডক্টর এবং ডাক্তারের চুক্তিও টেকেনি। শেষ পর্যন্ত বি. চৌধুরীকে বাদ দিয়েই জোট গঠিত হয়। তাতে নাগরিক ঐক্যের ‘ঐক্য আর যুক্তফ্রন্টের ফ্রন্ট’ এই দুইয়ে মিলে ঐক্যফ্রন্ট গঠিত হয়। ঘোষণা করা হয় তখনকার সরকারবিরোধী জোট হিসেবে।

এদিকে ‘শত্রুর শত্রু আমার বন্ধু’ থিউরিতে বিএনপি এই রাজনৈতিক ফ্রন্টের প্রতি আপাতত আস্থা রাখে। বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াও কারাগার থেকে ড. কামাল হোসেনদের প্রতি আস্থা রাখতে বিএনপির প্রতি নির্দেশনা দেন। বর্তমান প্রেক্ষাপটে জামায়াত নিয়ে প্রশ্ন উঠলে রাজনীতির কৌশলের আশ্রয় নেয় ফ্রন্ট। জামায়াতকে বগলে রেখেই  নির্বাচনে আসন বণ্টন, নির্বাচনী ব্যয় নির্বাহ এবং শেষ পর্যন্ত শপথ নিয়ে ফ্রন্টের মধ্যে বিশৃঙ্খলা তৈরি হয়।   

একাদশ নির্বাচনে বিএনপিকে নিয়ে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট মোট ৮টি আসন লাভ করে। এর মধ্যে বিএনপি ৬টি ও গণফোরাম ২টি। গত ৩০ ডিসেম্বর এই নির্বাচনের পর ব্যাপক অনিয়ম ও কারচুপির অভিযোগ এনে নির্বাচন প্রত্যাখ্যান করে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট। পাশাপাশি পুনর্নির্বাচনের দাবি জানিয়ে নির্বাচিতদের সংসদ সদস্য হিসেবে শপথ না নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। তাদের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হলো ফ্রন্ট থেকে নির্বাচিত হওয়া কোনো সদস্যই সংসদ সদস্য হিসেবে শপথ নেবেন না।

কিন্তু সোমবার গণফোরামের দুই নির্বাচিত সদস্য ব্যক্তিগতভাবে শপথ নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। এ ঘোষণায় বিএনপি-গণফোরামসহ জাতীয় ঐক্যফ্রন্টে বিশৃঙ্খল। এখন পর্যন্ত গণফোরামের সিদ্ধান্ত শপথ না নেওয়ার। কিন্তু এই সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করে নিজ দলের সাংসদদের শপথ নেওয়ার অনুমতি দিলে ভাঙতে পারে ঐক্যফ্রন্ট।

গণফোরামের নির্বাহী সভাপতি সুব্রত চৌধুরী বলেন, সুলতান মোহাম্মদ মনুসর আহমেদ ও মোকাব্বির খান দুজনই গণফোরামের প্রেসিডিয়ামের সদস্য, দুজনই জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের স্টিয়ারিং কমিটির সদস্য। সেভাবেই নির্বাচন হয়েছে। একজন ধানের শীষ নিয়েছেন, আরেকজন গণফোরামের প্রতীকে নির্বাচন করেছেন। এখনো গণফোরামের সিদ্ধান্ত হচ্ছে সংসদে না যাওয়ার, শপথ না নেওয়ার। এর পরে কী ব্যত্যয় ঘটবে সেটা প্রার্থীরাই ভালো বলতে পারবেন। জানা গেছে, গণফোরামের কার্যনির্বাহী কমিটির বৈঠক আগামী ৩০ জানুয়ারি। ওই বৈঠকেই আসবে পরবর্তী সিদ্ধান্ত।

এদিকে গণফোরামের নির্বাচিতদের শপথ নেওয়ার ঘোষণায় ক্ষুব্ধ বিএনপির অপর রাজনৈতিক জোট ২০ দলও। সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানে ২০-দলীয় জোটের শরিক এলডিপির সভাপতি কর্নেল (অব.) ড. অলি আহমদ নির্বাচিতদের সংসদ সদস্য হিসেবে শপথ না নেওয়ার আহ্বান জানিয়ে বলেন, তা করলে তারা বেঈমান হিসেবে চিহ্নিত হবে।

ফ্রন্টের একাধিক নেতা জানান, তাদের কাছে তথ্য আছে নির্ধারিত ৯০ দিনের (২ জানুয়ারি থেকে) মধ্যে শপথ নিতে যাচ্ছে গণফোরামের দুই বিজয়ী মৌলভীবাজার-২ আসন থেকে নির্বাচিত সুলতান মোহাম্মদ মনসুর ও সিলেট-২ আসনের নির্বাচিত সদস্য মোকাব্বির খান।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!