• ঢাকা
  • শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

ভেঙে যাচ্ছে বিএনপির সকল কমিটি!


বিশেষ প্রতিনিধি জানুয়ারি ১৬, ২০১৯, ১০:১৫ পিএম
ভেঙে যাচ্ছে বিএনপির সকল কমিটি!

ঢাকা : মূলত শুরু থেকে বিএনপি বা জোটের কোন সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা সেভাবে পরিলক্ষিত হয়নি। কি প্রক্রিয়ায় নির্বাচন করবে, কিভাবে সরকার গঠন করবে,কে মূখ্য নেতৃত্বে থাকবেন- তা ছিল ধোঁয়াশার মতো। বিএনপির নেতারা অনেকটা হাত-পা ছেড়ে বসেছিলেন। তারা পুরো নির্ভরতা ছেড়ে দেন ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বাধীন ঐক্যফ্রন্টের নেতাদের ওপর।

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে রাজনৈতিক-ভাবেই বিএনপির কৌশলে ভুল ছিল বলে মনে করেন দলটির অধিকাংশ নেতা-কর্মী। তৃণমূল পর্যায়ে অনেকে হতাশ হয়ে পড়লেও এ থেকে বের হবার উপায় খুঁজছে বিএনপি। নির্বাচনে বিপর্যয়ের পর এটা নিয়ে দলের ভেতর-বাইরে বিশ্লেষণ চলছে।

বিএনপির নেতারা বলছেন, ড. কামাল ও ফখরুলসহ দলের অনেক সিনিয়র নেতাদের ভুল কৌশলের কারণে নির্বাচনে এমন ভরাডুবি হয়েছে। তৃণমূল নেতাকর্মীদেরও মূল্যায়ন করা হয়নি বলে জানান তারা।

এখান থেকে ঘুরে দাঁড়াতে হলে বিএনপির সব কমিটি ভেঙে দিয়ে নতুনভাবে সাজানোর পরামর্শ দিয়েছেন দলটির বেশ কয়েকজন কেন্দ্রীয় নেতা। পাশাপাশি স্থায়ী কমিটির সব সদস্যকে ব্যর্থতার দায় মাথায় নিয়ে পদত্যাগ করা উচিত বলেও মনে করেন তারা।

৩০শে ডিসেম্বরের নির্বাচন নিয়ে চুলচেরা বিশ্লেষণ চলছে বিএনপিতে। শুধু নির্বাচন নয়, গেলো এক দশকে বিএনপির কর্মকাণ্ড নিয়েই দলের ভেতর তুমুল আলোচনা। কেন্দ্রীয় নেতারা বলছেন, শুধু বিএনপির নির্বাহী কমিটি নয়, ছাত্রদল যুবদলসহ কোনও সহযোগী ও অঙ্গ সংগঠনের কমিটিই কার্যকর নয়।

বিএনপি ভাইস চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার মোঃ শাহজাহান ওমর বলেন, আমাদের নির্বাহী কমিটির সংখ্যা প্রায় ৫০০ এর মত। কোথাও কোনও দলের এতজন নির্বাহী কমিটির সদস্য থাকে কি না আমার জানা নেই। আমি মনে করি যত দ্রুত সম্ভব বিএনপির স্টান্ডিং কমিটি, কেন্দ্রিয় কমিটি, ভাইস চেয়ারম্যান, উপদেষ্টা এবং যারা ছাত্র আছে তাদের দিয়েই ছাত্রদল কমিটি গঠন করা উচিত। ব্যবসা করে বা বিদেশ থাকে এদের দলে পদ দিয়ে দলের কার্যক্রম ত্বরান্বিত করা সম্ভব নয়।

বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা তৈমুর আলম খন্দকার বলেন, এটি সত্য যে আমরা আন্দোলনে যেতে পারি নাই। আন্দোলনে কেনো যেতে পারি নাই, এর দায় কিন্তু যে যত বড় পদে আছে তাদেরকেই নিতে হবে। আমাদের মহাসচিব যদি সত্যি বুঝে থাকেন যে দলে শৃঙ্খলার অভাব, তাহলে তাকেই দলের শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে হবে। আর এই কাজ করতে হলে কোনও তদবির ভিত্তিক দল বানানো যাবে না, সাংগঠনিক ভিত্তিতে দল বানাতে হবে।

নির্বাচনসহ আন্দোলন গড়ে তুলতে ব্যর্থতার দায় নিয়ে অনেক আগেই নীতি নির্ধারনী পর্যায়ের নেতাদের পদত্যাগ করা উচিত ছিল বলেও মনে করেন তারা।

এ বিষয়ে বিএনপি ভাইস-চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুবুর হোসেন বলেন, আমাদের নেতাকর্মীরা ক্ষুব্ধ, তারা অত্যন্ত ক্ষোভের মধ্যে আছে। তারা মনে করে আমাদের নেতৃত্বে দুর্বলতার কারণেই আমরা কোনও দাবি আদায় না করেই নির্বাচনে গিয়েছিলাম।

দলের নেতৃত্বে পরিবর্তন আনা জরুরি জানিয়ে বিএনপি ভাইস চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার মোঃ শাহজাহান ওমর বলেন, আমরা আমাদের মান-ইজ্জত নিয়ে আছি। কিন্তু এখন নতুন নতুন অনেক নেতা আছেন, যাদের দৌরাত্ম অনেক চরম পর্যায়ে গিয়ে ঠেকেছে। এগুলো খুবই অপমান জনক। দলের মধ্যে বড় ধরনের একটি পরিবর্তন দরকার।

সকলেই পরিবর্তন চায়, ৫/১০ বছর একজন একটা পদ দখল করে আছে, এতে দলের কার্যক্রম ব্যাহত হয়। তাদের উচিত ছিল নিজেরা পদত্যাগ করে যোগ্য ব্যক্তিকে সেই পদে বসানো, কিন্তু আমাদের দলে এই রেওয়াজ নেই। তারা বাবার সম্পত্তি মনে করে কাজ না করে পদ দখল করে বসে আছে।

তিনি আরও বলেন, যদি কোনও দলের নেতৃবৃন্দ কোনও রাজনৈতিক যুদ্ধে পরাজিত হয়, তাহলে তাদের সেই পদ থেকে পদত্যাগ করা উচিত। আমাদের দলে এই কালচারটা এখনো হয় নাই। এইটা লজ্জাজনক।

দলের নেতা কর্মীর হতাশা দূর করতে তৃণমুল থেকে সব স্তরেই সক্রিয়দের নেতৃত্বে আনা উচিত বলে মনে করেন বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা তৈমুর আলম খন্দকার। তিনি বলেন, ভোটের মাধ্যমে যদি সব স্তরের কমিটি গঠন করা হয়, তাহলেই প্রকৃত নেতৃত্ব বেরিয়ে আসবে। কিন্তু আমাদের দুর্ভাগ্য হল যে আমাদের সব কমিটিই ঢাকা থেকে তদবির ভিত্তিক কমিটি হিসেবে করা হয়। এই তদবির ভিত্তিক কমিটির পরিবর্তে সাংগঠনিক কমিটি করা হলেই দলে চাঙ্গা ভাবা আনা সম্ভব।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, জনগণকে দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত করতে হলে বর্তমানে বিএনপির যে নেতৃত্ব রয়েছে সে নেতৃত্বকে পুণর্গঠন করতে হবে। সঠিক ব্যক্তিকে যদি সঠিক পদ দেয়া হয় তাহলেই জন সমর্থন নিয়ে আমাদের মাঠে নামা সম্ভব হবে।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!