• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১
জীবন ঝুঁকিতে সাধারণ মানুষ

ভেজাল ওষুধের বাধাহীন দৌরাত্ম্য


নিজস্ব প্রতিবেদক এপ্রিল ৯, ২০১৯, ০৬:০১ পিএম
ভেজাল ওষুধের বাধাহীন দৌরাত্ম্য

ঢাকা : রাজধানী থেকে শুরু করে দেশের প্রত্যন্ত এলাকাতেও ভেজাল ওষুধের মারাত্মক ঝুঁকিতে মানুষ। সমস্যা সমাধানে সংশ্লিষ্ট বিভাগ নানা উদ্যোগ নিলেও ভেজাল কারবারিদের প্রভাব থেকে মুক্ত হতে পারছে না সাধারণ মানুষ। দিন দিন সমস্যা আরো প্রকট হয়ে উঠছে। ভেজাল ওষুধ তৈরির কারবারি ও বিক্রেতাদের যথাযথ শাস্তি না হওয়াই এর কারণ বলে মনে করছে সাধারণ মানুষ।

বিশ্ববাজারে বাংলাদেশি ওষুধের সুনাম থাকলেও দেশজুড়ে ওষুধবাণিজ্যে সীমাহীন নৈরাজ্যে নকল, ভেজাল ও নিম্নমানের ওষুধের ছড়াছড়িতে মানুষের জীবন বিপন্ন হওয়ার পথে। দেশের সর্বত্রই নকল, ভেজাল ও নিম্নমানের ওষুধ উৎপাদন ও বিপণন কোনোভাবেই নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না।

সারা দেশে ওষুধবাণিজ্যের এই অরাজক পরিস্থিতির জন্য কয়েকটি সংঘবদ্ধ চক্র মুখ্য ভূমিকা রাখছে বলে জানা গেছে। প্রয়োজনীয় মনিটরিং ও কার্যকর শাস্তির ব্যবস্থা না থাকায় ভেজালকারীরা তাই বেপরোয়া। যেসব কোম্পানি নকল ও ভেজাল ওষুধ তৈরির দায়ে অভিযুক্ত সেগুলোই ঘুরেফিরে এ তৎপরতায় লিপ্ত।

ভেজাল ও নকল ওষুধের কারণে অনেক সময় রোগী সুস্থ হওয়ার বদলে হয়ে পড়ছে আরো অসুস্থ। প্রাণহানির ঘটনাও কম নয়। কিন্তু ওসব ঘটনায় দায়ী ব্যক্তিরা আইনের ফাঁক গলে বার বার বেরিয়ে যায়। দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করা যাচ্ছে না। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে হোতারা থেকে যাচ্ছে ধরাছোঁয়ার বাইরে।

নকল ওষুধ প্রস্তুত ও ভেজাল ওষুধ বিপণনে রাজধানীর মিটফোর্ডকেন্দ্রিক ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট, ফার্মেসি সংগঠন, বাংলাদেশ কেমিস্ট অ্যান্ড ড্রাগিস্ট সমিতির কোনো কোনো নেতা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে বলে অভিযোগ আছে। সরকারের মাঠপর্যায়ে থাকা ড্রাগ সুপারদের যোগসাজশে দেশজুড়ে সংঘবদ্ধভাবে গড়ে উঠেছে নকল-ভেজাল ওষুধের বিশাল নেটওয়ার্ক।

ওষুধ বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করা গেলে অপরাধীদের তৎপরতা কমে আসবে। শহর থেকে প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চল সবখানেই ভেজাল ওষুধের বাধাহীন দৌরাত্ম্য। জীবন বাঁচানোর ওষুধ কখনো কখনো হয়ে উঠছে প্রাণঘাতী। ওষুধ সম্পর্কিত জনসচেতনতামূলক প্রচারে নানা বাধাবিপত্তি থাকায় ক্রেতা জানতেও পারছেন না তারা টাকা দিয়ে কী ওষুধ কিনছেন। ক্রেতাকে রক্ষায় কার্যকর কোনো উদ্যোগ নেই।

কয়েক হাজার কোটি টাকার বিনিয়োগ, বিপুল মানুষের কর্মসংস্থান এবং বিদেশে রফতানিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখা ওষুধশিল্প নিজ দেশেই জনস্বাস্থ্য সুরক্ষায় কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারছে না বলে সচেতন দেশবাসীর অভিযোগ।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, কমিশনপ্রলুব্ধ অনেক ডাক্তার সেসব ওষুধ আর টেস্ট লিখে দিচ্ছেন রোগীকে। এতে অতিরিক্ত টাকা খরচ করেও পর্যাপ্ত সুফল পাচ্ছেন না রোগী। এসব নিয়মনীতির ফাঁক গলে বাজারে ঢুকে পড়ছে নিম্নমানের ও ভেজাল ওষুধ।

রাজধানীর মিটফোর্ডের ওষুধ মার্কেটের কয়েকটি চক্রের মাধ্যমে সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ছে মানহীন, নকল-ভেজাল ওষুধ। ওষুধের পাইকারি ব্যবসায়ীদের সূত্র জানিয়েছে, এখানকার একটি সিন্ডিকেট দেশের অন্তত ৪০টি জেলার ওষুধ বাজার একচ্ছত্র নিয়ন্ত্রণ করছে। একইভাবে শাহবাগ, এলিফ্যান্ট রোড, ফার্মগেট, গুলশান, মহাখালীতে গড়ে ওঠা সিন্ডিকেট নিজস্ব স্টাইলে পৃথকভাবে ওষুধবাজার নিয়ন্ত্রণ করে চলেছে। অনেক অসাধু ব্যবসায়ী প্রয়োজনে-অপ্রয়োজনে বৈধ-অবৈধ উপায়ে বিভিন্ন দেশের নিম্নমানের ওষুধ এনেও উচ্চমূল্যের বাজার দখলে রাখছে।

অন্যদিকে দেশি-বিদেশি বিভিন্ন ওষুধের সংমিশ্রণ ঘটিয়ে নকল-ভেজাল ওষুধ তৈরির প্রভাবশালী একটি চক্রও গড়ে উঠেছে দেশে। হারবাল ও ইউনানিকেন্দ্রিক অর্ধশতাধিক ভুঁইফোঁড় প্রতিষ্ঠানের সংঘবদ্ধ চক্র যেনতেনভাবে তৈরি করা ওষুধ গ্রামগঞ্জে একচেটিয়া বাজারজাত করছে। অর্ধশিক্ষিত-অসচেতন মানুষজনকে টার্গেট করেই প্রতিষ্ঠানগুলো সেক্স মেডিসিন আর ভিটামিন ওষুধের ভয়ঙ্কর বাণিজ্য ফেঁদে বসেছে। তাদের কথিত যৌনশক্তিবর্ধক উচ্চক্ষমতার নানা ট্যাবলেট-সিরাপের বিরূপ প্রতিক্রিয়ায় গড়ে প্রতিবছর তিন শতাধিক ব্যক্তির জীবনহানি ঘটছে। অগণিত মানুষ চিরতরে যৌনক্ষমতা হারানোসহ জটিল-কঠিন রোগে আক্রান্ত হওয়ার নানা তথ্য রয়েছে ওষুধ প্রশাসন অধিদফতরে।

ওষুধ প্রশাসন অধিদফতর সূত্র জানায়, বর্তমান সরকার দেশের ওষুধ ব্যবস্থাপনা ও স্বাস্থ্যসেবা আমূল বদলে দিয়েছে। আমরা অতীতের যেকোনো সময়ের চেয়ে অনেক বেশি আধুনিক। আমাদের ল্যাবরেটরিগুলোও এরই মধ্যে আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত হওয়ার স্বীকৃতি পেয়েছে। দেশে প্রতিষ্ঠিত মডেল ফার্মেসিগুলো যাবতীয় নকল-ভেজাল ওষুধের দৌরাত্ম্য থেকে ভুক্তভোগীদের রেহাই দিতে কাজ করে চলেছে।

যেকোনো ভেজাল ও নিম্নমানের ওষুধ স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর জানিয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিসিন বিভাগের সাবেক ডিন অধ্যাপক ডা. এবিএম আবদুল্লাহ বলেন, মান ঠিক না থাকলে গ্রহণকারীর মারাত্মক পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে। এ ধরনের ওষুধ ব্যবহারকারীরা নানা জটিল রোগে আক্রান্ত হতে পারেন। এমনকি তাদের কেউ কেউ মৃত্যুর মুখে পড়তে পারেন।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!