ঢাকা : আমাদের বাজার ব্যবস্থায় দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির ক্ষেত্রে চাঁদাবাজি, মজুতদারিসহ নানাবিধ কারণে খুচরা ব্যবসায়ীরা পাইকারদের দায়ী করেন; পাইকাররা অধিক মূল্যে পণ্য কেনার অজুহাতের পাশাপাশি জোগান না থাকাসহ তুলে ধরেন অন্যান্য নানা সঙ্কট। অথচ প্রায় দেড় মাস আগে আসন্ন রমজানকে সামনে রেখে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি পণ্যের দাম বাড়বে না বলে আশ্বস্ত করেছিলেন জনসাধারণকে। কিন্তু এবার আমরা লক্ষ করলাম যে, রমজান নয় বরং তার আগেই অসাধু ব্যবসায়ীচক্র নিত্যব্যবহার্য ভোগ্যপণ্যের দাম বাড়িয়ে দিয়েছে।
সাম্প্রতিক সময়ের বাজার পর্যবেক্ষণ করে দেখা গেছে, রোজার সবচেয়ে প্রয়োজনীয় পণ্য ছোলা ও চিনির সঙ্গে বেড়েছে মসুর ডালের দাম। অন্যদিকে সবজির বাজার দ্বিগুণ চড়া। বেগুনের কেজি এখন প্রায় ৮০ টাকা। আর বাজারভেদে দেশি পেঁয়াজের পাইকারি দর কেজিতে কোথাও ২৬ থেকে ২৮ টাকা, আবার কোথায় ৩৫ টাকা এবং ভারতীয় পেঁয়াজ ২০-২২ ও ৩০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। রসুন সপ্তাহখানেক আগে ৮০ টাকায় বিক্রি হলেও এখন এর পাইকারি মূল্য ১০৮ টাকা এবং খুচরা বাজারে ১২০ টাকা। একই ভাবে আদার পাইকারি বাজারদর ৯০ টাকা এবং খুচরা মূল্য কেজিতে ১৪০ টাকা।
এদিকে রোজার অন্যতম ভোগ্যপণ্য ছোলা ৮০ থেকে ৯০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। রমজানে মুসল্লিদের অতি গুরুত্বপূর্ণ দ্রব্যের মধ্যে বেসন ৬০ থেকে ১০০ টাকা, চিনি ৫৫ টাকা এবং খেজুর ২২০ টাকা থেকে ১ হাজার ২০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে। সবজির দাম কিছুটা স্থিতিশীল থাকলেও বেগুনের আকাশছোঁয়া দাম লক্ষ করা গেছে। একই ভাবে গরু ও খাসির মাংস কিছুটা নিয়ন্ত্রণে থাকলেও দেশি, পাকিস্তানি ও ব্রয়লার— সব ধরনের মুরগির দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। ব্রয়লার মুরগির দাম কেজিতে ১০ থেকে ১৫ টাকা ও পাকিস্তানি মুরগির দাম কেজিতে বেড়েছে ৫০ টাকা। আর দেশি মুরগির দাম বর্তমানে কেজিপ্রতি ৫০ টাকা কমে বিক্রি হচ্ছে ৫৫০ টাকায়।
মাগফেরাত, রহমত ও নাজাতের এই মাসে সব মুসলমানই ইবাদত বন্দেগিতে মশগুল থাকে। সিয়াম সাধনার এই মাস আমাদের কাছে আত্মশুদ্ধির বার্তা নিয়ে আসে। অথচ কিছু অসাধু ব্যবসায়ী পবিত্র এই মাসকে কেন্দ্র করে অতিরিক্ত মুনাফা লোটার ফন্দি আঁটে। রমজান মাসে ভোগ্যপণ্যের চাহিদা বৃদ্ধি পায়, এটা স্বাভাবিক। তাই বলে একে পুঁজি করে সব নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বাড়িয়ে দেওয়া কিছুতেই সমর্থনযোগ্য নয়। উদ্বেগের বিষয় হচ্ছে, রোজার মাসে চাহিদার শীর্ষে থাকা ছোলা, চিনি, ডাল, তেল, খেজুরসহ সব ধরনের ভোগ্যপণ্যের দাম অন্য সময়ের তুলনায় আন্তর্জাতিক বাজারে কমতে শুরু করলেও দেশীয় বাজারে তা বৃদ্ধি পায় কয়েকগুণ। আমদানি ব্যয় কম হওয়ার ফলে খুচরা বাজারেও দাম কমবে, ভোক্তারা এমনটাই আশা করে থাকেন। সরকারের বাজার মনিটরিং টিমকে বিষয়টি খতিয়ে দেখতে হবে। যদিও কোনো কোনো পাইকারি বাজারে মূল্যতালিকা টাঙিয়ে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু খুচরা বাজারগুলোয় এর লক্ষণ নেই। মূলত সাধারণ ভোক্তারা খুচরা বাজার থেকেই কেনাকাটা করে থাকেন। তাই তারা প্রতারিতও হয়ে থাকেন অধিকাংশ সময়। বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনায় নিয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ করছি খুচরা বাজারে মূল্যতালিকা টাঙানোর উদ্যোগ নিতে।
পবিত্র রমজান উপলক্ষে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের স্থানীয় উৎপাদন, আমদানি, মজুত অবস্থা ও মূল্য পরিস্থিতি পর্যালোচনা বৈঠকে যেমনটি বাণিজ্যমন্ত্রী বলেছেন দেশের মানুষ এখন তার বাস্তবায়ন চায়। চাঁদাবাজি কিংবা কৃত্রিম উপায়ে পণ্যের সঙ্কট সৃষ্টি করলে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। সুতরাং এর সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনায় বাজার মনিটরিং ব্যবস্থা আরো জোরদার করা প্রয়োজন। তবেই রমজান মাসে ভোগ্যপণ্যের বাজার স্থিতিশীল থাকবে। জনগণের প্রতি দায়বোধ থেকেই নিত্যপণ্যের দামের অন্যায্য বৃদ্ধিরোধে সরকারকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে আহ্বান জানাচ্ছি।
সোনালীনিউজ/এমটিআই
*** প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব ভাবনার প্রতিফলন। সোনালীনিউজ-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে লেখকের এই মতামতের অমিল থাকাটা স্বাভাবিক। তাই এখানে প্রকাশিত লেখার জন্য সোনালীনিউজ কর্তৃপক্ষ লেখকের কলামের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে আইনগত বা অন্য কোনও ধরনের কোনও দায় নেবে না। এর দায় সম্পূর্ণই লেখকের।
আপনার মতামত লিখুন :