• ঢাকা
  • শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১
বিশেষ বর্ধিত সভায় শেখ হাসিনা

ভোট চুরির বদনাম নেবে না আওয়ামী লীগ


নিউজ ডেস্ক জুন ২৩, ২০১৮, ১১:৫৬ পিএম
ভোট চুরির বদনাম নেবে না আওয়ামী লীগ

ঢাকা : একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে অনেক বেশি চ্যালেঞ্জিং আখ্যায়িত করে আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দলের নেতাকর্মীদের জনগণের মন জয় করে তাদের ভোটেই ক্ষমতায় আসার প্রস্তুতি নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। দলীয় কোন্দল ও কাদা ছোড়াছুড়ি বন্ধ করে সবাইকে এক হয়ে কাজ করারও আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।

শনিবার (২৩ জুন) দলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে তার সরকারি বাসভবন গণভবনে আওয়ামী লীগ আয়োজিত বিশেষ বর্ধিত সভায় সভাপতির বক্তৃতায় মনোনয়নপ্রত্যাশীদের সতর্কও করেন শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, সংগঠন ও পরস্পরের বিরুদ্ধে অপপ্রচারকারীরা দলীয় মনোনয়ন লাভে অযোগ্য বিবেচিত হবেন।

নেতাকর্মীদের জনগণের মন জয় করে নির্বাচনের প্রস্তুতি নেওয়ার আহ্বান জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, নির্বাচনে জনগণ ভোট দেবে। ‘ভোট চুরি, ভোট ডাকাতি’- যার বিরুদ্ধে আন্দোলন করেছি, সেভাবে কেউ জিততে পারবেন না। আওয়ামী লীগ এ বদনাম নেবে না। জনগণ স্বতঃস্ফূর্ত হয়ে আপনাকে আপনার কাজে খুশি হয়ে ভোট দেবে। তিনি বলেন, ‘জনগণের ভোটের অধিকার নিয়ে কেউ কিন্তু ছিনিমিনি খেলতে পারবে না। নির্বাচন যেন স্বচ্ছ হয়। নির্বাচন নিয়ে কেউ যেন কোনো কথা বলতে না পারে।’

শেখ হাসিনা বলেন, জনগণের মন জয় করে তাদের ভোট নিয়েই ক্ষমতায় আসতে হবে এবং উন্নয়ন কাজের ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে হবে। দলের প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী এবং সংসদ সদস্যদের বিরুদ্ধে কাদা ছোড়াছুড়ি বন্ধের আহ্বান জানিয়ে নেতাকর্মীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, বরং দলের উন্নয়ন কর্মকাণ্ডগুলো ভোটারদের কাছে তুলে ধরতে হবে এবং তাদের বোঝাতে হবে বিএনপি-জামায়াত জোট ক্ষমতায় এলে ২০০১ সালের মতোই কী ভয়াবহ ব্যাপার ঘটতে পারে। শেখ হাসিনা বলেন, ‘যিনি আমার দলের বিরুদ্ধে বদনাম করবেন তিনি কী এটা বোঝেন না, এতে তার ভোটও নষ্ট হবে।’ তিনি তাহলে কোন মুখে ভোট চাইতে যাবেন- প্রশ্ন তোলেন প্রধানমন্ত্রী।

আগামী জাতীয় নির্বাচনকে অনেক বেশি চ্যালেঞ্জিং আখ্যায়িত করে তিনি বলেন, ‘সামনে আমাদের নির্বাচন। সব সময় মনে রাখতে হবে, এটা আমাদের একটানা তৃতীয় নির্বাচন। আর নির্বাচন মানেই সেটা চ্যালেঞ্জিং হবে এবং এই নির্বাচনে সবাইকে এক হয়ে কাজ করতে হবে।’ তিনি বলেন, ‘সময় কিন্তু আর বেশি নেই। কেউ দলীয় মনোনয়ন পাবেন কী পাবেন না, সেটা নির্ভর করবে এলাকায় কতটুকু জনপ্রিয়তা অর্জন করতে পেরেছেন আর দলের নেতাকর্মীদের কীভাবে মূল্যায়ন করছেন তার ওপর।’

শেখ হাসিনা নেতাকর্মীদের উদ্দেশে বলেন, আমাদের দলের পক্ষ থেকেই এই কথাগুলো মানুষের কাছে নিয়ে যেতে হবে যে, আমরা আপনাদের জন্য এই কাজ করেছি এবং এই কাজগুলো আগামীতে করব। তিনি বলেন, ২০০৮ সালের নির্বাচনের আগে আমরা যে ঘোষণা দিয়েছিলাম তার চেয়ে অনেক দূর আমরা এগিয়ে গিয়েছি। ২০১৪ সালের নির্বাচনী ইশতেহার থেকেও আমরা এগিয়ে গিয়েছি। পরের বার আমরা আরো উন্নতি করতে সক্ষম হব। কাজেই আওয়ামী লীগ যে কথা দেয়, সে কথা রাখে। সে কথাটাই মনে রাখতে হবে। আর জনগণকে সে কথা বলতে হবে।

দলে মতভেদ সৃষ্টিকারীদের উদ্দেশ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমি লক্ষ করেছি কেউ কেউ স্বপ্রণোদিত প্রার্থী হয়ে বিএনপি কী সন্ত্রাস করল, লুটপাট-দুর্নীতি করল, জঙ্গিবাদ সৃষ্টি করল সেটা বলে না। অথচ তাদের বক্তব্য এসে যায় আওয়ামী লীগ এমপির বিরুদ্ধে, সংগঠনের বিরুদ্ধে।’ তিনি তার ব্যক্তিগত সব কিছু বাদ দিয়ে কেবল দলের জন্য, দেশের জন্য দিনরাত পরিশ্রম করেন, উন্নয়নের কাজ করেন উল্লেখ করে বলেন, ‘আমি একটি ঘোষণা দিতে চাই, কেউ যদি আমার দলের উন্নয়নের কথাগুলো না বলে কোথায় কার কী দোষ আছে সেগুলো খুঁজে বের করে জনগণের কাছে গিয়ে বলেন তারা আওয়ামী লীগের নমিনেশন পাবেন না। এটা পরিষ্কার।’

এ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, যদি কেউ ৫ বছর ১০ বছর সরকারে থাকার পর দলের বিরুদ্ধে বদনাম করে তাহলে জনগণ তো তাকেও ভোট দেবে না। এটা হলো বাস্তব কথা। কাজেই এ কথাটা সবাইকে মনে রাখতে হবে। এটা ডিজিটাল বাংলাদেশ এবং আজকাল সব কথাই রেকর্ড হয়। চাইলে মোবাইল মারফত সেগুলো তিনি শুনতেও পারেন বলে জানান প্রধানমন্ত্রী।

এ সময় তার মোবাইল ফোনে দিনে তিন-চার শ ক্ষুদেবার্তা আসে এবং সময় পেলেই তিনি প্রতিটি বার্তা পড়েন এবং সংশ্লিষ্ট সমস্যা সমাধানের উদ্যোগ নেন বলেও তিনি জানান। প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রার্থী হওয়ার অধিকার সবার আছে। কিন্তু প্রার্থী হতে গিয়ে দলের বদনাম করা তিনি সহ্য করবেন না। প্রধানমন্ত্রী এ সময় দলীয় সংসদ সদস্যদের দলের ত্যাগী কর্মীদের মূল্যায়নের আহ্বান জানান।

তিনি বলেন, ‘আমাদের যারা সংসদ সদস্য আছেন তাদেরও আমি বলব একটা কথা মনে রাখবেন- জনগণ কিন্তু খুব হিসাবি। কেউ দুর্নীতি করলে জনগণ কিন্তু সেটা ঠিকই মাথায় রাখবে। সেটা কিন্তু তারা ভুলে যায় না। কাজ করতে গিয়ে টাকা নিলে পরে ভোট চাইতে গেলে তারা বলবে টাকা দিয়ে কাজ নিয়েছি ভোট দেব কেন?’

প্রধানমন্ত্রী জনগণের সচেতনতার কথা উল্লেখ করে আরো বলেন, জনগণের এখন কিন্তু চক্ষু খুলে গেছে। এখন ডিজিটাল যুগ। তারা এখন বিশ্বকে জানতে পারছে। দল ক্ষমতায় থাকলে সুবিধাভোগী শ্রেণি অন্য দল থেকে দলে এসে ভিড়লেও অসময়ে তাদের পাওয়া যায় না উল্লেখ করে গ্রুপিংয়ের দল ভারী করার জন্য এদের দলে ভেড়ানো থেকে বিরত থাকার জন্যও তিনি নেতাদের প্রতি আহ্বান জানান।

বিএনপি-জামায়াতের সন্ত্রাসী, নির্যাতনকারী, লুটপাটকারীরা মামলা থেকে বাঁচার ভয়ে অনেকেই আওয়ামী লীগে ভিড়তে চাইতে পারে উল্লেখ করে তাদের সম্পর্কেও দলের সবাইকে সতর্ক থাকার নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী। এ সময় তিনি জাতির পিতার হত্যাকারী এবং যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ও দণ্ড কার্যকর হওয়ার প্রসঙ্গ টেনে সাক্ষীদের নিরাপত্তায় সচেষ্ট থাকতে নেতাকর্মীদের প্রতি আহ্বান জানান।

আগামী নির্বাচনও জোটবদ্ধভাবে করার ইঙ্গিত দিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা জোট করেছি, মহাজোট করেছি। নির্বাচনের স্বার্থে জোট করতে হয়। আমরাও করব, আমরা বন্ধু হারাব না। সবাইকে নিয়েই করতে চাই।’ কে প্রার্থী হলো সেটি বড় কথা নয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আপনাদের এখন থেকেই জনগণের কাছে যেতে হবে নৌকা মার্কায় ভোট চাওয়ার জন্য।’

নৌকার বিজয় হবে আশাবাদ ব্যক্ত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এত কাজ আমরা করেছি, যেভাবে দেশের উন্নয়ন আমরা করেছি। এরপরও নৌকা মার্কায় ভোট না পড়লে সেজন্য দলের প্রচার বিমুখতাই দায়ী হবে বলেও তিনি উল্লেখ করেন। জনগণের ভোটাধিকার নিয়ে বিএনপির বিরুদ্ধে স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগ তুলে আগামী নির্বাচন যাতে অবাধ ও সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হতে পারে সে জন্য সচেষ্ট থাকতেও নেতাকর্মীদের আহ্বান জানান। বাসস

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!