ঢাকা : ভারতে আসন্ন জাতীয় নির্বাচনে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠতে পারেন তিন নারী। এই তিন নারী হচ্ছেন- ইন্দিরা গান্ধীর নাতনি প্রিয়াঙ্কা গান্ধী, পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও উত্তর প্রদেশের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী মায়াবতী।
আগামী মে’র জাতীয় নির্বাচন দ্বিতীয় মেয়াদের জন্য ভোটের লড়াইয়ে নামবেন মোদী। ভোটারদের খুশি করতে শুক্রবার অন্তর্বর্তী নয় বরং পূর্ণ বাজেট পেশ করে চমক দেখিয়েছেন তিনি।
বাজেটে প্রচুর সুযোগ-সুবিধা দিয়ে দেশবাসীকে খুশির জোয়ারে ভাসিয়ে তাদের মন কড়ার চেষ্টা ছিল তার।
এদিকে, মোদীকে ভোটের লড়াইয়ে পরাজিত করতে দেশটির বিরোধী দলগুলো আঁটঘাট বেঁধেই মাঠে নেমেছে। নিজেদের মধ্যে বিরোধ ভুলে একজোট হয়ে কাজ করছে।
ভারতের প্রধান বিরোধীদল কংগ্রেস ভোটের লড়াইয়ে চমক হিসেবে মাঠে নামিয়েছে প্রিয়াঙ্কা গান্ধী ভদ্রাকে। ১৯৪৭ সালে স্বাধীনতার পর নেহেরু-গান্ধী পরিবার বেশির ভাগ সময় ভারত শাসন করলেও এত দিন রাজনীতির বাইরেই ছিলেন ইন্দিরা গান্ধীর নাতনি প্রিয়াঙ্কা।
ভারতের সবচেয়ে জনবহুল রাজ্য উত্তর প্রদেশে জানুয়ারিতে এক নির্বাচনী প্রচার সমাবেশে কংগ্রেসের হয়ে মঞ্চে উঠেন প্রিয়াঙ্কা। যিনি মোদীর সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠবেন বলেই ধারণা রাজনীতি বিশ্লেষকদের।
বাকি দুই নারী হলেন- অভিজ্ঞ রাজনীতিবীদ পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং উত্তর প্রদেশের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী মায়াবতী।
মোদীর দল ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) নেতৃত্বাধীন ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক অ্যালায়ান্স (এনডিএ)কে ক্ষমতা থেকে উৎখাত করতে ভিন্ন ভিন্ন দলের এই তিন নারী এক হয়েছেন। যদিও দলগুলোর মধ্যে আনুষ্ঠানিক কোনো চুক্তি হয়নি।
এ বিষয়ে সাবেক অর্থমন্ত্রী যশবন্ত সিনহা বলেন, ‘এনডিএ’র তুলনায় বিরোধী দলে অধিক প্রভাবশালী নারী নেতৃত্ব আছে। তারা সাধরণ ভোটারদের কাছে আস্থার প্রতীক হয়ে উঠতে সক্ষম, বিশেষ করে নারী ভোটারদের মধ্যে।’
গত বছর বিজেপি থেকে বেরিয়ে যান যশবন্ত। ওই বছরই ভারতের বিধানসভা নির্বাচনে দেশটির বড় এবং গুরুত্বপূর্ণ তিনটি রাজ্যে হেরে যায় বিজেপি।
যশবন্ত বলেন, ‘তাদের উদ্বিগ্ন হওয়ার কথা, বিশেষ করে রাজনীতির প্রাণকেন্দ্রে থাকা তিনটি রাজ্যে হেরে যাওয়া পর।’
মূলধারার রাজনীতিতে প্রিয়াঙ্কার অভিষেক দেশটির গণমাধ্যমে ফলাও করে প্রচার করা হয়েছে। কেউ কেউ ইন্দিরা গান্ধীর সঙ্গে তার মিল তুলে ধরেছেন। কেউ কেউ বলছেন তিনি মে মাসের নির্বাচনে কংগ্রেসের ‘ট্রাম্প কার্ড’ হতে যাচ্ছেন।
তবে সমালোচনা করার লোকেরও অভাব ছিল না। প্রিয়াঙ্কা ‘ট্রাম্প কার্ড’ হলে কংগ্রেস কেন এতদিন ‘জোকার’ নিয়ে খেলেছে, বিজেপি নেতাদের এমন ব্যঙ্গোক্তি করতেও শোনা গেছে।
প্রিয়াঙ্কার তুলনায় অন্য দুই নারীর রাজনৈতিক অভিজ্ঞাত অনেক বেশি। যদি বিরোধী জোট ভোটে জেতে, তাদেরকে কেউ কেউ সম্ভাব্য প্রধানমন্ত্রী প্রার্থীও বলছেন।
৬৩ বছরের মায়াবতীর দল বহুজন সমাজ পার্টি (বিএসপি) মূলত ভারতের নিম্নবর্ণের হিন্দু স¤প্রদায়ের ‘দলিত’ প্রতিনিধিত্ব করে। গত মাসে মায়াবতী তার চির প্রতিদ্ব›দ্বী সমাজবাদী পার্টির সঙ্গে জোট গঠন করেছেন।
ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারে দুইবার রেলপথ মন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করা মমতা ১৯৯৭ সালে কংগ্রেস পার্টি থেকে বেরিয়ে গিয়ে নিজ দল অল ইন্ডিয়া তৃণমূল কংগ্রেস (এআইটিসি) গঠন করেন।
পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা গত মাসে রাজ্যের রাজধানী কলকাতায় বিজেপি বিরোধী র্যালি আয়োজন করেছিলেন। ওই র্যালিতে সারা ভারত থেকে বিভিন্ন দলের নেতাকর্মীরা অংশ নেয়। হাজার হাজার মানুষ ওই র্যালিতে যোগ দেয়।
তবে বিরোধী দলগুলো যত চেষ্টাই করুক, জনমত জরিপে মোদী এখনো ভারতের সবচেয়ে জনপ্রিয় নেতা। কন্যাশিশুদের উন্নয়নে তাদের শিক্ষিত করে তুলতে মোদীর ‘বেটি বাঁচাও, বেটি পড়াও’ আন্দোলন দেশজুড়ে জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে। তার ২৬ সদস্যের মন্ত্রীসভায় ছয় জন নারী আছেন।
বিজেপির পক্ষ থেকে বলা হয়, তারা মোদীর আমলে নানা অর্জনের উপর ভিত্তি করে ভোটের প্রচার চালাবেন। মোদী সরকারের বিরুদ্ধে দাঁড় করানোর মত ইতিবাচক বিকল্প বিরোধী জোটের হাতে নেই। সূত্র : রয়টার্স
সোনালীনিউজ/এমটিআই
আপনার মতামত লিখুন :