• ঢাকা
  • বুধবার, ২৪ এপ্রিল, ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

ভোটের মাঠে আ.লীগের কর্মকৌশল চূড়ান্ত


বিশেষ প্রতিনিধি ডিসেম্বর ১, ২০১৮, ১২:১২ পিএম
ভোটের মাঠে আ.লীগের কর্মকৌশল চূড়ান্ত

ঢাকা : একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ভোটের প্রচার-প্রচারণার সব প্রস্তুতি চূড়ান্ত। অপেক্ষা নির্বাচন কমিশনের (ইসি) বেঁধে দেওয়া আনুষ্ঠানিক প্রচারণার সময়ের। এ নিয়ে চলছে দলের নীতিনির্ধারকদের শেষ মুহূর্তের শলা-পরামর্শ ও বৈঠক। অন্যবারের মতো গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর সমাধি থেকে এবারো প্রচারণা শুরু করবে দলটি।

প্রচারণায় চমকের পাশাপাশি থাকছে নতুনত্ব। আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পরিচ্ছন্ন ভাবমূর্তি ও তার নেতৃত্বের গুণাবলি প্রচারণায় বিশেষ প্রাধান্য পাচ্ছে। তার নেতৃত্বে গত দশ বছরের উন্নয়ন ও সরকারের ধারাবাহিকতায় বেশি জোর দেবেন দলের নেতারা। তরুণদের ভোট টানার প্রতিশ্রুতি গুরুত্ব পাচ্ছে প্রচারণায়।

রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ বিএনপি-জামায়াতের প্রার্থী তালিকায় যুদ্ধাপরাধী, তাদের পরিবারের সদস্য ও জঙ্গিবাদে মদত দেওয়ায় অভিযুক্তদের রাখার বিষয়েও প্রচারণার ভোটদাতাদের কাছে তুলে ধরার নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়েছে।

বিএনপি-জামায়াতের এসব নেতা ক্ষমতা ও ক্ষমতার বাইরে থাকাকালে কখন ও কীভাবে জঙ্গি ও উগ্রবাদে মদত দিয়েছেন, সেসবও তথ্যসহ তুলে ধরবে আওয়ামী লীগ। নিবন্ধন না থাকলেও বিএনপি জোট থেকে যুদ্ধাপরাধীদের দল জামায়াতের নির্বাচন করার দিকগুলোও তরুণ ও যুবকদের কাছে তুলে ধরবে ক্ষমতাসীনরা।  

জঙ্গি ও সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে নীতিগত জোরালো অবস্থানের কথা তুলে ধরা হবে দলের ইশতেহারেও। এবার আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কয়েক নেতাকে দলের মনোনয়ন দেওয়া হয়নি নির্বাচনী এসব কার্যক্রম পর্যবেক্ষণের জন্য। ১০ ডিসেম্বর ইসির প্রতীক বরাদ্দ দেওয়ার পর থেকে শুরু হবে আনুষ্ঠানিক প্রচারণা। দলের নীতিনির্ধারক পর্যায় ও নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোটও ভোটের মাঠের প্রস্তুতি নিচ্ছে। জোট প্রার্থীদের পক্ষে প্রচারণার জন্য ১৪ দল টিম গঠন করছে দেশের সব সংসদীয় এলাকায়। আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও ১৪ দলের মুখপাত্র মোহাম্মদ নাসিম এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘নির্বাচন হচ্ছে বাঙালির বিজয়ের মাস ডিসেম্বরে। সারা দেশে বিজয় মঞ্চ নির্মাণ করে সেখান থেকে ভোট চাওয়া হবে। ১৪ ডিসেম্বর থেকে বা এর আগে থেকে বিজয় মঞ্চের কাজ শুরু হবে।’

বিতর্কিতদের হাতে বিএনপির টিকেট : একাত্তরের যুদ্ধাপরাধী, তাদের সন্তান, ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলায় দণ্ডিতদের পরিবারের সদস্য, সন্ত্রাসী ও জঙ্গি মদতদাতারের মনোনয়নপত্র দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে বিএনপির বিরুদ্ধে। শেষ পর্যন্ত কেউ কেউ বাদ পড়লেও বিতর্কিতরা বিএনপির মনোনয়ন পাচ্ছেন, এমন আভাস পাওয়া গেছে। ভোটের মাঠে আওয়ামী লীগ ভোটারদের কাছে তা তুলে ধরবে। এসব বিষয় তুলে ধরে ভোটযুদ্ধে প্রতিপক্ষকে পরাস্ত করতে দলের শীর্ষ নেতারা সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

মানবতাবিরোধী অপরাধে দণ্ডিত আবদুল আলীমের ছেলে জয়পুরহাট-১, দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর ছেলে পিরোজপুর-১, সালাউদ্দিন কাদেরের ছেলে চট্টগ্রাম-৬, জঙ্গিবাদে অর্থায়নে অভিযুক্ত শাকিলা ফারজানা চট্টগ্রাম-৫ থেকে বিএনপির মনোনয়নপত্র পেয়েছেন। জেএমবি নেতা সিদ্দিকুল ইসলাম ওরফে বাংলা ভাইকে নানাভাবে মদতদাতা হিসেবে অভিযুক্ত আমিনুল হক, রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু ও নাদিম মোস্তফাও আছেন দলটির মনোনীতদের তালিকায়।

বগুড়া-৩ আসনে মনোনয়ন পেয়েছেন মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলার আসামি আবদুল মোমিন তালুকদার খোকা। ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলায় দণ্ডিত সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর স্ত্রীসহ আরো অনেক বিতর্কিত ব্যক্তি বিএনপির মনোনীত তালিকায় আছেন বলে মনে করেন আওয়ামী লীগের নেতারা। দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের অভিযোগ, ‘বিএনপি জঙ্গিদেরও মনোনয়ন দিয়েছে।’

প্রচারণা শুরু টুঙ্গিপাড়া থেকে : ১১ ডিসেম্বর আনুষ্ঠানিকভাবে নির্বাচনী প্রচারণা শুরু করবেন আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনা। ওই দিন টুঙ্গিপাড়ায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সমাধিতে শ্রদ্ধা নিবেদনের মধ্য দিয়ে প্রচারণা শুরু করবেন তিনি। এরপর সিলেটে হযরত শাহজালাল (র.) ও হযরত শাহ পরাণ (র.) মাজার জিয়ারত করে সেখানে জনসভা করবেন তিনি।

উত্তরাঞ্চলের কয়েকটি জেলাসহ কুমিল্লা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও চট্টগ্রামসহ বেশ কয়েকটি জেলায় নির্বাচনী জনসভা করার পরিকল্পনা রয়েছে শেখ হাসিনার। সফরসূচি চূড়ান্ত করতে দলের কেন্দ্রীয় নেতাদের নির্দেশ দেন তিনি। সভাপতির নির্দেশে চলছে কার্যক্রম।

প্রচারণায় তারকা চমক : রুপালি জগতের আকর্ষণীয়-জনপ্রিয় অভিনেতা ও অভিনেত্রীদের নির্বাচনী প্রচারণায় যুক্ত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে আওয়ামী লীগ। নাট্যজগতের খ্যাতিমান তারকারাও থাকছেন এ সঙ্গে। আওয়ামী লীগের পক্ষে ভোট চাইবেন তারা।

দলের নির্বাচনী প্রচার উপ-কমিটি বলছে, চিত্রনায়ক রিয়াজ, ফেরদৌস, কণ্ঠশিল্পী মমতাজ, নাট্যাভিনেতা জাহিদ হাসান, তার স্ত্রী নৃত্যশিল্পী ও অভিনেত্রী মৌ, অভিনেত্রী তারিন, তানভিন সুইটি, অরুণা বিশ্বাস ও বিজরী বরকত উল্লাহসহ আরো অনেকে প্রচারণায় অংশ নেবেন।

দলটি থেকে এবার নির্বাচনে প্রার্থী হতে চেয়েছিলেন অভিনেত্রী তারানা হালিম, রোকেয়া প্রাচী, শমী কায়সার, জ্যোতিকা জোতি, চিত্রনায়ক শাকিল খান, খলনায়ক মনোয়ার হোসেন ডিপজল, সিদ্দিকুর রহমান, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি গোলাম কুদ্দুছ, চলচ্চিত্র পরিচালক মাসুদ পথিক ও গীতিকার সুজন হাজং। তারা শেষ পর্যন্ত মনোনয়ন না পেলেও দলের প্রচারণায় অংশ নেবেন।

অভিনেতা আসাদুজ্জামান নূর, চিত্রনায়ক আকবর হোসেন পাঠান ফারুক, ক্রিকেট তারকা মাশরাফি বিন মুর্তজা, নাঈমুর রহমান দুর্জয় ও ফুটবল তারকা আবদুস সালাম মুর্শেদী মনোনয়ন পেলেও দলীয় বিভিন্ন প্রচারণায় অংশ নেবেন। ঢাকাসহ বিভিন্ন বিভাগীয় শহরে প্রচারপত্র বিলি, দরজায় দরজায় প্রচারণা, পথ নাটক, গান ও অন্যান্য কর্মসূচি চালিয়ে তারা ভোট চাইবেন।

চূড়ান্ত প্রস্তুতি : আওয়ামী লীগের জাতীয় নির্বাচন পরিচালনায় ১৪০ সদস্যের জাতীয় কমিটি হয়েছে। নীতিনির্ধারক পর্যায়ের ২৬ নেতাকে ১৩ উপ-কমিটির দায়িত্ব দেওয়া হয়। পাঁচ সদস্যের ১৩ উপ-কমিটি হয়েছে। ৬৪ জেলা দল গঠন করা হয়েছে অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে। ভোটকেন্দ্রভিত্তিক কমিটি গঠন ও এজেন্ট প্রশিক্ষণনের কাজও শেষ পর্যায়ে। নির্বাচনী কার্যক্রমও ইতোমধ্যে গুছিয়ে রেখেছে।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!