• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

ভোলা হানাদার মুক্ত দিবস আজ


ভোলা প্রতিনিধি ডিসেম্বর ১০, ২০১৮, ০৬:০০ পিএম
ভোলা হানাদার মুক্ত দিবস আজ

ছবি: সোনালীনিউজ

ভোলা : ভোলা ১০ ডিসেম্বর মুক্ত দিবস ১৯৭১ সালের এই দিনে পাকহানাদারদের কবল থেকে ভোলা কে মুক্ত করা  হয়। পাকবাহিনীর আত্ম-সমর্পণের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ স্বাধীন হয়। তবে (১০ ডিসেম্বর) আজকের এই দিনে পাকহানাদার মুক্ত হয় ভোলা জেলা। ১৯৭১ মে মাসের শুরুর দিকে ভোলা ওয়াপদা (ভোলা পানি উন্নয়ন বোর্ড অফিস) ভবনে ক্যাম্পের মাধ্যমে ভোলায় ঘাটি গড়ে পাক হানাদার বাহিনী।

অনেকে পালিয়ে যায় প্রতিবেশী দেশ ভারতে। ওয়াপদা ভবনের ২টি কক্ষকেই টর্চার সেল বানিয়ে পাকবাহিনী নিরীহ মানুষকে ধরে এনে পৈশাচিক নির্যাতন করত এবং নির্যাতন পরবর্তী সময়ে নির্বিচারে হত্যা করত। ওয়াপদা ভবনের পাশেই খালি জায়গায়  শত শত মুক্তি পাগল মানুষকে হত্যা করে ও বহু নারীকে ক্যাম্পে ধরে এনে রাতভর নির্যাতন করে সকাল বেলা লাইনে দাঁড় করিয়ে দিয়ে নির্মমভাবে হত্যা করত। সেখানে তৈরি হয়েছিল ৩টি বধ্যভূমি। পরবর্তী সময়ে লাশগুলোও দাফন করা হয় এই ৩টি বধ্যভূমিতে।

ভোলায় পাকবাহিনী আসার পূর্বেই ১৩ কিংবা ১৪ মার্চ থেকেই শুরু হয়ে যায় মুক্তিযুদ্ধের ট্রেনিং। মুক্তিযোদ্ধাদের ট্রেনিং হয় ভোলার আলিয়া মাদরাসা, ভোলা সরকারি স্কুল ও টাউন স্কুল মাঠসহ শাজাহান মিয়া বাড়িতে।

প্রশিক্ষণ দেয় সুবেদার গাজী জয়নাল আবেদীন, নায়েক আবদুর রব, বশির আহমদ ও সিপাহী শাহজাহান। মুক্তিযোদ্ধারা ভোলা সরকারি কলেজ এবং ভোলা সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের বিএনসিসির ডামি রাইফেল ও বাঁশ, লাঠি দিয়ে অস্ত্র প্রশিক্ষণ নেয়।
 
মুক্তিযুদ্ধের সময় ভোলায় মোট ৭টি সম্মুখ যুদ্ধ হয় মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে পাকবাহিনীর। চরফ্যাশনের জিন্নাগড় ইউনিয়নের পেয়ার আলী বেপারী বাড়িতে মুক্তিযোদ্ধাদের প্রথম ক্যাম্প তৈরি করেন।

তখন প্রথম ভোলায় যুদ্ধ অনুষ্ঠিত হয়। ওই যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী মুক্তিযোদ্ধা ভোলার লালমোহন উপজেলা চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ গিয়াস উদ্দিন জানান, সে দিন ২০-২৫ জন মুক্তিযোদ্ধা বসে ছিল। হঠাৎ করেই মুক্তিযোদ্ধাদের ওপর চরফ্যাশন পাক পুলিশদের আক্রমণ।

কিছু বুঝে উঠার আগেই পাক পুলিশ শুরু করে গোলাগুলি। মুক্তিযোদ্ধারা এক পর্যায়ে প্রতিরোধ গড়ে তুলে পাল্টা গুলি চালায়। ঘণ্টাব্যাপী যুদ্ধে পরাজিত হয় পাক বাহিনী। সেখান থেকে ১৪ টি অস্ত্র ছিনিয়ে নেয় মুক্তিযোদ্ধারা। হঠাৎ করেই পাক পুলিশ আমাদের ওপর আক্রমণ করে। আমরা সাহসিকতার সঙ্গে প্রতিরোধ করি। ওই যুদ্ধে ১৫ জন মুক্তিযোদ্ধা সামান্য আহত হয়েছিল।  

দ্বিতীয় সম্মুখ যুদ্ধ হয় বোরহানউদ্দিন উপজেলার দেউলা তালুকদার বাড়িতে। ৭ জন পাক সেনা মারা যায় ২য় যুদ্ধে মুক্তিযোদ্ধাদের হাতে। এতে অধ্যক্ষ গিয়াস উদ্দিন, মাকসুদর রহমান, ফরিদ হোসেন বাবুলসহ প্রায় ৬০ জন মুক্তিযোদ্ধা অংশ নেয়।
সকাল ১১টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত এই যুদ্ধে ২৭ জন পাক সেনা মারা যায়। সেখান থেকে বেশ কিছু অস্ত্র উদ্ধার করে মুক্তিযোদ্ধারা। এই ঘটনার আগের দিন বোরহানউদ্দিন থানা থেকে ৭ জন পুলিশ দেউলায় এলে তাদের ওপর ও মুক্তিযোদ্ধারা আক্রমণ চালায়।

সেখানে পাক সেনাদের কাছ থেকে ৭টি অস্ত্র ছিনিয়ে নেয় মুক্তিযোদ্ধারা। যুদ্ধ হয় দৌলতখানের গুপ্ত বাজারে। সেখানে মুক্তিযোদ্ধাদের আক্রমণের মুখে ১৭ জন নিহত হয়।

আবুগঞ্জের গরুচোখা নামক এলাকায় সন্ধ্যার পর নৌপথ দিয়ে কয়েকজন রাজাকার নিয়ে পাক সেনারা বৃষ্টির মতো গুলি ছুড়তে ছুড়তে আসছিল।

এ সময় মুক্তিযোদ্ধারা বিষয়টি বুঝতে পেয়ে তাদের ওপর আক্রমণ করার চেষ্টা করে। কিন্তু তাদের প্রতিরোধ করতে পারেনি।
কিছুক্ষণ পরে খবর পয়ে বিপুলসংখ্যক মুক্তিবাহিনী বেড়ি বাঁধের ওপর অবস্থান করে পাক সেনাদের ওপর অতর্কিত আক্রমণ চালায়। মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে পরাজিত হয়ে পাক বাহিনীর সদস্যরা বলে ওঠে “খোদাকি কসম, কোরআনকী কসম, নবীকী কসম- হাম সেলেন্ডার করতা হু, তুম হামে মাত মারো” এবং আত্মসমর্পণ করে তারা।

এ যুদ্ধে আলী আকবর বড় ভাই, আবু তাহের, সুবেদার মান্নান ও অধ্যক্ষ গিয়াস উদ্দিনসহ অসংখ্য মুক্তিযোদ্ধা অংশ নেয়।  
৭টি সম্মুখ যুদ্ধের ২টি যুদ্ধে অংশ নেয় ভোলার প্রবীণ সাংবাদিক ভোলা প্রেস ক্লাবের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা এম হাবিবুর রহমান বলেন।

ভোলা থেকে পাক হানাদাররা বাংলাবাজার আসছে এমন খবর পেয়ে মুক্তিযোদ্ধারা বাংলাবাজার ব্রিজসহ বিভিন্ন স্থানে অবস্থান নেয়। কিন্তু পাক বাহিনী বাঘমারা নামক এলাকা থেকে বৃষ্টির মতো গুলি ছুড়ে মুক্তিযোদ্ধাদের ওপর আক্রমণ চালায়।

এতে মুক্তিযোদ্ধা ও সাধারণ মানুষসহ অন্তত ৩০০ জন মারা যায়। এছাড়াও দৌলতখান হাসপাতাল (তৎকালীন থানায়) দীর্ঘতম যুদ্ধ হয়। যুদ্ধ হয় ঘুইংগারহাট এলাকাতেও। দীর্ঘ সংগ্রাম ও যুদ্ধের পর পাক-হানাদার বাহিনী মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতিরোধের মুখে ভোলা থেকে পালিয়ে যায়।

১৯৭১ সালের ১০ ডিসেম্বর ভোলা পাক হানাদার মুক্ত হয়। আর তখনি মুক্তিযোদ্ধারাসহ ভোলার মানুষ আনন্দ উল্লাসে ফেটে পড়ে।   

সোনালীনিউজ/ঢাকা/এইচএআর

Wordbridge School
Link copied!