• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
সৌদি-ইসরাইল চুক্তির সম্ভাবনা

মধ্যপ্রাচ্যে নয়া মেরূকরণ


মো. হাছিবুল বাসার মানিক অক্টোবর ১৫, ২০২০, ০১:১১ পিএম
মধ্যপ্রাচ্যে নয়া মেরূকরণ

ঢাকা : ক্ষমতার লড়াই ও কূটনৈতিক জয়-পরাজয়ের প্রশ্নে মধ্যপ্রাচ্য এক নতুন বাস্তবতার সামনে পতিত হয়েছে। সংযুক্ত আরব আমিরাত ইসরাইলের সঙ্গে চুক্তি করার পর থেকেই মূলত মধ্যপ্রাচ্যে ক্ষমতাকেন্দ্রিক নতুন সমীকরণ শুরু হয়েছে। মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে ইসরাইলের স্বীকৃতির ফলে ফিলিস্তিনের স্বাধীন ভূখণ্ডের স্বপ্নটা আরো ঝাপসা হয়ে গেল। ইসরাইলের সঙ্গে চুক্তির পরে আমিরাতের পক্ষ থেকে বলা হয়, ফিলিস্তিনিদের স্বার্থে এই চুক্তি করা হয়েছে। পশ্চিম তীর দখলের যে ঘোষণা ইসরাইল দিয়েছিল এই চুক্তির ফলে নাকি তা স্থগিত করা হবে। অথচ চুক্তির দুদিন পরেই গাজা উপত্যকায় হামলা চালায় ইসরাইলি বাহিনী। যাতে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয় এবং নেতানিয়াহু বিবৃতি দিয়ে জানিয়ে দেন, তারা কোনোভাবেই পশ্চিম তীর দখলের পরিকল্পনা থেকে সরে আসবে না। এটা তাদের অধিকার।

সংযুক্ত আরব আমিরাতের পর আরো কয়েকটি দেশ ইসরাইলের সঙ্গে চুক্তিতে আবদ্ধ হয়েছে। আরব রাষ্ট্রগুলো ফিলিস্তিন রাষ্ট্র রক্ষায় তাদের প্রতিশ্রুতি রাখতে ব্যর্থ হচ্ছে। এখন আরব বিশ্বের ক্ষমতার কাছাকাছি মানুষ থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষের মনে একটাই প্রশ্ন, মুসলিম দেশের প্রধান মোড়ল সৌদি আরব কি তাহলে ইসরাইলের সঙ্গে চুক্তি করতে যাচ্ছে? নাকি ফিলিস্তিনের স্বার্থ জলাঞ্জলি দিতে তারা এখনো প্রস্তুত নয়।

ঐতিহাসিকভাবেই সৌদি আরবের শাসকরা ইসরাইলের ঘোরতর সমালোচক। কিন্তু সাম্প্রতিক ঘটনা ও সৌদি যুবরাজের বক্তব্য ইঙ্গিত দিচ্ছে ইসরাইলের সঙ্গে সৌদির সম্ভাব্য চুক্তির। বিশেষ করে ইসরাইল ইস্যুতে সৌদি যুবরাজ ও বাদশার বিপরীত বক্তব্যই প্রমাণ করে দেশটির রাজপরিবারে ব্যাপক দ্বন্দ্ব চলছে। এই দ্বন্দ্বের মধ্য দিয়ে সৌদিতে ইসরাইলি লবি শক্তিশালী হয়ে উঠতে পারে বলেও মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

আল অ্যারাবিয়া টেলিভিশনকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে সৌদি আরবের জাতীয় গোয়েন্দা সংস্থার সাবেক প্রধান প্রিন্স বানদার সুলতান আল সউদ বলেন, ‘এ ধরনের নিম্নস্তরের বার্তা আমরা তাদের (ফিলিস্তিন কর্তৃপক্ষ) কাছ থেকে প্রত্যাশা করি না। তারা তো নিজেদের স্বার্থের জন্য বৈশ্বিক সমর্থন চাইছে। উপসাগরীয় অঞ্চলগুলোর নেতৃত্বের বিরুদ্ধে তাদের বক্তব্য অগ্রহণযোগ্য। ’

প্রিন্স বানদারের বক্তব্যই বলে দিচ্ছে, সৌদি রাজতন্ত্র আর আগের মতো ফিলিস্তিনের স্বার্থের পক্ষে থাকতে চাইছে না। প্রিন্স বানদার টানা ২২ বছর ওয়াশিংটনে সৌদি কূটনীতিক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশের সঙ্গে তার বেশ ভালো সম্পর্ক। তার এই সম্পর্কের কারণে তাকে বানদার বিন বুশ নামেও ডাকা হয়। ফিলিস্তিনি নেতাদের ব্যর্থতা নিয়ে বানদারকে বহুবার সমালোচনা করতে দেখা গেছে। তিনি বিশ্বাস করেন, ফিলিস্তিনিরা তাদের নেতৃত্বের কারণেই ইসরাইলের কাছে হেরে যাচ্ছে। সম্প্রতি সৌদি প্রশাসন বানদারের মতো সমালোচককেই দায়িত্ব দিয়েছে ফিলিস্তিনি নেতাদের সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে নিতে।

উপসাগরীয় অঞ্চলের দেশগুলো সাধারণত ফিলিস্তিনের স্বার্থকে এগিয়ে রেখেই এত দিন কথা বলেছে। দেশগুলো রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিকভাবে ফিলিস্তিনকে সহায়তাও করে আসছে দশকের পর দশক ধরে। কিন্তু ফিলিস্তিনি প্রয়াত নেতা ইয়াসির আরাফাত যখন ইরাকের প্রেসিডেন্ট সাদ্দাম হোসেনের পক্ষাবলম্বন করেন ১৯৯০ সালের কুয়েত যুদ্ধের সময়, তখন থেকেই ফিলিস্তিনের সঙ্গে সম্পর্কে ফাটল ধরে উপসাগরীয় দেশগুলোর। ১৯৯১ সালে যুক্তরাষ্ট্রের সহযোগিতায় কুয়েত মুক্ত হলে দেশটি থেকে ফিলিস্তিনিদের বের করে দেওয়া হয়। কুয়েতের সাধারণ মানুষের কাছে ওই যুদ্ধের আগেও জেরুজালেম মুসলিমদের জন্য পবিত্র ভূমি হিসেবে বিবেচিত হতো। কিন্তু যুদ্ধের পর কুয়েতের দেয়ালে লেখা থাকতে দেখা যায়, ‘আমি একজন কুয়েতি লিখছি, জেরুজালেম ইহুদিদের পবিত্র ভূমি। ’

২০০২ সালে বৈরুতের আরব সম্মেলনে ক্রাউন প্রিন্স আবদুল্লাহ একটি শান্তি প্রস্তাব উত্থাপন করেছিলেন। অবশ্য প্রস্তাবটি তার পক্ষে উত্থাপন করেছিলেন সৌদি আরবের তৎকালীন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আদেল জুবাইর। ওই পরিকল্পনা আরব বিশ্বেও গৃহীত হয়েছিল। ঠিক এবারো যদি সৌদি যুবরাজ সালমানকে ইসরাইলের সঙ্গে শান্তি স্থাপনে নতুন কোনো পরিকল্পনা নিতে দেখা যায় এবং তা আরব বিশ্ব গ্রহণ করে তাতে অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না। তবে সময়ই বলে দেবে ফিলিস্তিনের ভূমি রক্ষায় মুসলিম বিশ্বের মোড়ল দেশ সৌদি আরব পাশে থাকবে নাকি ইসরাইলের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক দৃঢ় করবে।

লেখক : শিক্ষার্থী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

 

Wordbridge School
Link copied!