• ঢাকা
  • শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

মনাকষা নদীতে ভাসলো ফেরদৌসির লাশ, আসামিরা অধরা


চাঁপাইনবাবগঞ্জ প্রতিনিধি সেপ্টেম্বর ১৪, ২০২০, ০১:৪০ পিএম
মনাকষা নদীতে ভাসলো ফেরদৌসির লাশ, আসামিরা অধরা

নিহত গৃহবধূ ফেরদৌসি-ছবি সংগৃহীত

চাঁপাইনবাবগঞ্জ: চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলায় ফেরদৌসি নামে এক গৃহবধূর হত্যার এক মাস পার হলেও একজনও আসামী গ্রেফতার হয়নি বলে অভিযোগ উঠেছে। উপরন্তু শিবগঞ্জ থানা পুলিশ আসামীদের সহযোগীতা করছেন এমন অভিযোগে এতে হতাশা প্রকাশ করেছেন বাদী পক্ষ।

এবিষয়ে বাদী ও বাদীর পরিবার নিরাপত্তাহীনতার মধ্য দিয়ে মানবেতার জীবনযাপন করছেন বলে বাদীর পক্ষ থেকে অভিযোগ জানিয়ে বলা হয়, গত ৩৩ দিনেও শিবগঞ্জ উপজেলার মনাকষা ইউনিয়নের পারচৌকা গ্রামের শহিদুল ইসলামের স্ত্রী ও পার্শ্ববর্তী রানীনগর ঘুনটোলা গ্রামের শামসুদ্দিনের মেয়ে ফেরদৌসী হত্যা মামলার কোন আসামী গ্রেফতার হয়নি। এছাড়াও ময়না তদন্তের রির্পাট না আসা, প্রকাশ্যে আসামীদের ঘুরে বেড়ানো ও বিভিন্নভাবে হুমকীর বিষয়ে শিবগঞ্জ থানায় অভিযোগ করলেও আসামীদের দ্বারা প্রভাবিত পুলিশ কোন পদক্ষেপ নিচ্ছেনা বলেও বাদী পক্ষ অভিযোগ করেছেন।

তবে পুলিশ এসব অভিযোগ অস্বীকার করে বলছেন মামলা রুজ্জু হয়েছে। তদন্ত চলছে।

জানা গেছে, প্রায় ৭ বছর আগে শহিদুল ইসলামর সাথে ২ লক্ষ টাকা দেন মোহরে (উপহার স্বরুপ ১ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা সহ) বিয়ে হয় ফেরদৌসীর। তারপরও বিভিন্ন সময় যৌতুক নেয়ার অত্যাচারে চলতি বছরের ৭ই আগষ্ট শুক্রবার শহিদুল তার স্ত্রী ফেরদৌসীকে তার পিতার নিকট হতে ২০ হাজার টাকা যৌতুক আনতে বললে এবং ফেরদৌসী তা এনে দিতে ব্যর্থ হলে ঐদিন রাতেই শহিদুল ও তার আত্মীয়রা ফেরদৌসীর ওপর অমানবিক নির্যাতন চালিয়ে শ্বাসরুদ্ধ করে হত্যা করে টানা ২৪ ঘন্টা লাশ ঘরে লুকিয়ে রাখে। পরে ফেরদৌসী বাক্স থেকে ১ লক্ষ ৪৫ হাজার টাকা নিয়ে নিখোঁজ হয়েছে বলে তার পরিবারকে সংবাদ দেয় শ্বশুর বাড়ির লোকজন।

এদিকে ৮ ই আগষ্ট শনিবার সকালে ফেরদৌসীর মা জাহানারা বেগম জামাইয়ের বাড়ি গেলে জামাই ও তার বাড়ির লোকজন তার সাথে মারমুখী আচরন করে এবং ওই দিনই রাত পৌনে ১২ টার দিকে শহিদুলের আত্মীয় স্বজনরা তার শ্বশুর শামসুদ্দিনের বাড়িতে গিয়ে টাকাসহ মেয়ে খুঁজে বের করার জন্য চাপ সৃষ্টি করে বাড়ি ফিরে আসে।

তবে পরের দিন ৯ আগষ্ট রোববার সকাল ৮ টার দিকে শহিদুলের বাড়ির পার্শ্বে মনাকষা চৌকার নদীতে ফেরদৌসীর লাশ ভেসে থাকার সংবাদ পেয়ে পরিবারের লোকজন ছুটে যায় এবং বেলা ১১টার দিকে পুলিশ আসলে লাশ শনাক্ত করা হয়।

এ বিষয়ে ফেরদৌসীর ভাবী ফাতিমা বেগম, ফুফু সায়েদা বেগম গুধীসহ ফেরদৌসীর অন্যান্য আত্মীয়দের দাবী- যৌতুকের ২০ হাজার টাকার জন্যই শহিদুল ও তার আত্মীয়রা ফেরদৌসীকে পিটিয়ে হত্যা করে নদীতে পাটের জাগের মধ্যে চাপা দেয়। যা আমরা পরের দিন সকালে ভেসে উঠলে জানতে পারি।
এদিকে পানি থেকে লাশ উত্তোলনকারী ফেরদৌসীর চাচা উজির আলি, আবেদ আলি, চাচাতো ভাই জেম ও বাবু জানান, লাশ পানি থেকে তোলার সময় ফেরদৌসীর দুই হাত, ঘাড়ে, মাজায় ও গলায় আঘাতর দাগ দেখেছি।

এ বিষয়ে নিরাপত্তাহীনতায় ভোগা নিহত ফেরদৌসীর মা জাহানারা বেগম ও পিতা শামসুদ্দিন আসামী পক্ষ প্রভাবশালী হবার কথা উল্লেখ করে বলেন, মেয়ের মৃত্যুর খবরে আমরা যখন দিশেহারা তখন আসামী পক্ষের লোকজন স্থানীয় কয়েকজন নেতার সহযোগিতায় লাশ পানি থেকে তুলে ও ময়নাতদন্তে পাঠানোর কথা বলে বিভিন্ন ভাবে চাপ দিয়ে সাদা কাগজে আমাদের টিপ সহি নিয়েছে। এখন তারা এটিকে আত্মহত্যা বলে প্রচার চালাচ্ছে এবং আমাদেরকে বিপদে ফেলার চেষ্টা করছে। আর তাই সুষ্ঠু বিচার ও নিরাপত্তা চেয়ে গত ১০ আগষ্ট সোমবার থানায় অভিযোগ দিতে গেলে ওসি অভিযোগ গ্রহন না করায় অবশেষে গত ১৬ আগষ্ট রোববার বিজ্ঞ আদালতে বাদী হয়ে মামলা দায়ের করেন নিহত ফেরদৌসীর ভাই শফিকুল ইসলাম।

তবে এ ব্যাপারে ঘটনার তদন্তকারী কর্মকর্তা এস আই রিপন (বর্তমান রাজশাহীত বদলী) বলেন, লাশ ফুলে যাওয়ায় শরীরে কোন দাগ বুঝা যায়নি। লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য নবাবগঞ্জ আধুনিক সরকারী হাসপাতাল পাঠানো হয়ছিলো। আর বর্তমান তদন্তকারী কর্মকর্তা শিবগঞ্জ থানার ওসি (তদন্ত) শাহীন রেজা বলেন, নিহতের ভাই শফিকুল আলম বিজ্ঞ আদালতে মামলা করেছে। থানাতেও মামলা রুজু হয়েছে। যার মামলা নং ৬০, তারিখ ২৭ আগস্ট। ইতিমধ্যে ২ দিন তদন্ত করেছি। তবে ময়নাতদন্তের রিপোর্টের অপেক্ষায় আছি।

কিন্তু শিবগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ শামসুল আলম শাহ বাদী শফিকুল ইসলাম ও নিহতের পিতা শামসুদ্দিনের অভিযোগ অস্বীকার করে পুলিশের পক্ষ থেকে তদন্ত চলছে জানিয়ে বলেন, যেহেতু ময়নাতদন্তের রিপোর্ট দেখা হয়নি সেহেতু কিছু বলা যাচ্ছে না। তবে নিহতের পিতা থানায় প্রথমত হত্যা মামলা না করে ইউডি মামলা করছে এবং তারপর তার ছেলে শফিকুল ইসলাম বিজ্ঞ আদালতে মামলা করেছে। আর তাই সময় সাপেক্ষে অবশ্যই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থাগ্রহণ করা হবে।

সোনালীনিউজ/এসজেডি/এএস

Wordbridge School
Link copied!