• ঢাকা
  • শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

‘মনে হচ্ছে হাশরের ময়দান আছি’


বিশেষ প্রতিনিধি জানুয়ারি ২৮, ২০১৯, ০১:২৩ পিএম
‘মনে হচ্ছে হাশরের ময়দান আছি’

ঢাকা : ‘নেতারা নিজেরাই দৌড়ের ওপর আছেন। কেউ জেলে, কেউ অন্য জেলায় গিয়ে ক্ষেতখামারে কাজ করেন, ঢাকায় গার্মেন্টে চাকরি করেন, রিকশা চালান। এমপি (প্রার্থী) সাব থাকেন ঢাকায়। তার মোবাইল ফোন বন্ধ। পরিবার ছাড়া কারো খবর রাখেন না তিনি।

পুলিশে খোঁজে, প্রতিপক্ষ ধাওয়া করে, আদালতেও হাজিরা থাকে। মাথার ওপর কেউ না থাকলে যা হয় তা-ই হচ্ছে। এক-দুই বছর হলে তো সহ্য হয়, একে একে ১২ বছর। মনে হচ্ছে হাশরের ময়দানে আছি’- এভাবেই নিজ এলাকার দলীয় নেতাকর্মীদের জীবনচিত্র তুলে ধরেন ফেনীর ছাগলনাইয়া উপজেলা বিএনপি নেতা আনোয়ার হোসেন আনু।

ফেনী-১ নির্বাচনী আসনের তিন উপজেলার মধ্যে ছাগলনাইয়া একটি। এ আসনে নির্বাচন করতেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। তিনি কারাগারে। ওই আসনে এবার ধানের শীষে মনোনয়ন চেয়েছিলেন বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা আবদুল লতিফ জনি ও রফিকুল ইসলাম মজনু এবং স্থানীয় নেতা নূর আহম্মেদ। ইসির বাছাই শেষে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন মজনু। ভোটে চরম ভরাডুবি হয়েছে ধানের শীষের।

পরাজয়ের পর ওইসব নেতা এখন আর ফেনী-১ আসনের নেতাকর্মীদের সঙ্গে দেখা করা তো দূরের কথা খোঁজখবরও নেন না। এ অবস্থায় ওই এলাকার বিএনপির নেতাকর্মীরা এখন ফেরারি জীবনযাপন করছেন। নতুন-পুরনোসহ গায়েবি মামলায় জর্জরিত তারা। এক মামলায় জামিন হলেও ফের গ্রেফতার করা হয় আরেক মামলায়।

বৃহত্তর নোয়াখালীর ১৩টি আসনের মধ্যে ৮টির করুণ দশা বলে জানালেন ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সংসদের সহ-সভাপতি বজলুল করিম আবেদ। পাঁচটি আসনের নেতাকর্মীদের খোঁজ রাখেন সাবেক-বর্তমান নেতারা।

তিনি জানান, প্রতিটি আসনের শত শত নেতা ৩০ ডিসেম্বর জাতীয় নির্বাচনের আগে থেকেই কারাগারে। কারাগারে থাকতে হলে সিট ভাড়া ও নিজের টাকায় খাবার কিনতে হয়। নেতারা বন্দিদের পাশে দাঁড়াচ্ছেন না। ফলে কারাগারে ধুঁকছেন বন্দি নেতাকর্মী ও সমর্থকরা আর অর্ধাহারে-অনাহারে দিন পার করছেন বন্দি নেতার পরিবারের সদস্যরা।

আলাপকালে ফরিদপুর সদরের বাসিন্দা যুবদল নেতা জুলহাস উদ্দিন বলেন, বৃহত্তর ফরিদপুরের খোঁজ নিলে পাবেন অনেক পরিবার পুরুষশূন্য। তারা এখন ঢাকায় থাকে। ১০ বছর ধরে তারা ঘরবাড়িতেই থাকতে পারেন না। সংসার চলে নারীদের তত্ত্বাবধানে। ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে তালা ঝুলছে। টাকার অভাবে সন্তানদের লেখাপড়া বন্ধের পথে। অপেক্ষার প্রহর গুনতে গুনতে স্বামীকে ছেড়ে চলে গেছেন স্ত্রী। জুলহাসের মতে, এমন চিত্র দেশের বেশিরভাগ জেলার।

পটুয়াখালী বিএনপির নেতা অধ্যক্ষ বাহার উদ্দিন বাহার জানান, ৯-১০ বছর অপেক্ষার পর স্থানীয় নেতাকর্মীরা আশায় বুক বেঁধেছিলেন যে, ৩০ ডিসেম্বরের ভোটে সরকার বদল হবে। কিন্তু তা তো হলোই না উল্টো জুলুম নেমে এসেছে। উড়ে এসে জুড়ে বসা হঠাৎ প্রার্থী (গোলাম মওলা রনি) দিয়ে আরেক সমস্যার সৃষ্টি করেছে কেন্দ্র।

নির্বাচনের পর তিনি আর পেছনে ফিরেও তাকাচ্ছেন না। পুরনো নেতারাও ক্ষোভে নীরব দর্শকের ভূমিকায়। কাণ্ডারিহীন নেতাকর্মীরা চরম হতাশার মধ্যে জীবনযাপন করছেন। বিত্তশালীরা আপাতত ভালো থাকলেও হতদরিদ্রদের জীবন বিপন্ন হওয়ার পথে।

বিএনপির কেন্দ্রীয় দফতরের হিসাব মতে, গত তিন মাসে বিএনপি নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে ৪ হাজার ৪২৯টি মামলা হয়েছে। জ্ঞাত ও অজ্ঞাত আসামির সংখ্যা ৪ লাখ ৩৪ হাজার ৯৭৫ জন। নাম চিহ্নিত আসামি করা হয়েছে ১ লাখ ৯ হাজার ৪৪১ জনকে। অজ্ঞাত আসামির তালিকাভুক্ত করে কারাগারে দেওয়া হয় ৩ লাখ ২৫ হাজার ৫৩৪ জনকে।

এছাড়া গত ১০ বছরে প্রায় ৮০ হাজার মামলায় প্রায় ৯ লাখ নেতাকর্মী ও সমর্থককে আসামি করা হয়েছে বলে দাবি বিএনপির। এর মধ্যে মৃত, প্রবাসী ও পঙ্গু লোকজনও ফেঁসে গেছেন পুলিশের হাতকড়ায়।

বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান নোয়াখালীর মোহাম্মদ শাহজাহান বলেন, নির্যাতিত পরিবারসহ বন্দি নেতাকর্মীদের পাশে দাঁড়াতে নির্বাচনের আগেই স্থানীয় সম্ভাব্য প্রার্থী ও পদধারী নেতার প্রতি হাইকমান্ড থেকে একটি নির্দেশনা দেওয়া হয়েছিল। দুঃখজনক হলেও সত্য, নির্দেশনা বাস্তবায়ন হয়নি।

এই নেতার দাবি, তার নির্বাচনী এলাকার এখনো তিন শতাধিক নেতাকর্মী কারাগারে। প্রতিপক্ষের হামলায় আহত হয়ে হাসপাতালে, এলাকা ছাড়া হয়েছে হাজারো পুরুষ। এই পরিপ্রেক্ষিতে নারীরাও সম্ভ্রমহানির শঙ্কা নিয়ে বসবাস করছেন।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!