• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১
মহোৎসবের প্রথম ধাপ সম্পন্ন

মনোনয়ন নিয়ে টেনশনে প্রার্থীরা


বিশেষ প্রতিনিধি নভেম্বর ৩০, ২০১৮, ০১:০১ পিএম
মনোনয়ন নিয়ে টেনশনে প্রার্থীরা

ঢাকা : জাতীয় সংসদ নির্বাচন মানেই দেশ ভাসতে থাকে উৎসাহ, উৎকণ্ঠা আর উদ্বেগের সংমিশ্রণে এক উৎসব আবহ। প্রার্থীদের মতো, দলীয় নেতাকর্মী, সমর্থকের পাশাপাশি সাধারণ ভোটারদের মধ্যেও চলে সেই উৎসব। চায়ের দোকান থেকে শুরু করে ড্রয়িং রুমের ঘরোয়া আড্ডারও প্রধান আলোচনার বিষয় ভোট।

ক্ষমতার পালাবদলের এই প্রক্রিয়ার প্রথম ধাপের কার্যক্রম শেষ হয়েছে বুধবার (২৮ নভেম্বর)। নির্বাচনে অংশ নিতে আগ্রহী প্রার্থীদের জন্য শেষ দিন ছিল মনোনয়নপত্র দাখিলের।

সারা দেশে দলীয় ব্যানারের পাশাপাশি স্বতন্ত্রভাবেও নির্বাচনে অংশ নিতে মনোনয়ন জমা দিয়েছেন আইনপ্রণেতা হওয়ার ইচ্ছুক প্রার্থীরা। আর নির্বাচন মহোৎসবের প্রথম ধাপের কার্যক্রম শেষ হতেই প্রার্থীদের মধ্যে সৃষ্টি হয়েছে ক্ষোভ, অভিমান আর দলীয় মনোনয়ন পাওয়া না পাওয়ার দোলাচল। শুধু প্রার্থীই নয় এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে কর্মী, সমর্থক ও সাধারণ ভোটারদের মধ্যেও।

আর বিগত কয়েকটি জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তুলনায় এবার মনোনয়ন পাওয়া না পাওয়ার এমন দোদুল্যমান পরিস্থিতি অনেক বেশি। মহাজোট ও ২০ দলীয় জোটের হিসাব নিকাশের সঙ্গে এবার যোগ হয়েছে ঐক্যফ্রন্ট ও যুক্তফ্রন্ট। জোটগত এই নির্বাচনে তাই এবার হেভিওয়েট প্রার্থী’খ্যাত অনেকেরই কপাল পুড়তে শুরু করেছে।

আর অনেকেই দৃঢ়ভাবে মনোনয়ন প্রত্যাশা করেও না পাওয়ায় ছাড়ছেন দল, কেউবা প্রার্থী হচ্ছেন স্বতন্ত্রভাবে। এরই মধ্যে দলের প্রতি আল্টিমেটামও ছুড়ে দিয়েছেন প্রার্থীর সমর্থকরা।

সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহীউদ্দীন খান আলমগীরকে চাঁদপুর-১ আসন থেকে চূড়ান্ত মনোনয়ন না দেওয়া হলে দল থেকে একযোগে পদত্যাগের ঘোষণা দিয়েছে তার কর্মী-সমর্থকরা।

বৃহস্পতিবার (২৯ নভেম্বর) চাঁদপুর প্রেস ক্লাবে দলীয় নেতাকর্মীরা সংবাদ সম্মেলন করে এমন আল্টিমেটাম দিয়েছে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগকে।

বিভাগীয় শহর খুলনায় চূড়ান্ত মনোনয়নের দাবিতে মানববন্ধন করেছে জাতীয় পার্টি। জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব ও জেলা সভাপতি শফিকুল ইসলাম মধুকে খুলনা-৬ (কয়রা-পাইকগাছা) আসনে মহাজোটের প্রার্থী ঘোষণার দাবিতে গতকাল বৃহস্পতিবার মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়।

এতে আরো অংশ নেন খুলনা-৪ আসনের প্রার্থী এম হাদিউজ্জামান, খুলনা-২ আসনের প্রার্থী এসএম এরশাদুজ্জামান ডলার, বাগেরহাট-১ আসনের প্রার্থী মাওলানা এসএম আল জুবায়েরও। এ সময় তারা শফিকুল ইসলাম মধুকে মহাজোটের প্রার্থী ঘোষণা করা না হলে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনেরও হুমকি দেয়।

প্রার্থিতা নিয়ে জটিলতা দেখা দিয়েছে বিভাগীয় শহর সিলেটেও। প্রার্থীদের পাশাপাশি এ শহরে ভোটারদের মধ্যেও ধোঁয়াশা। বিশেষ করে ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থিতা নিয়েই সৃষ্টি হয়েছে এ জটিলতা। জেলার ছয়টি আসনের প্রতিটিতে একাধিক প্রার্থীকে ঐক্যফ্রন্টেকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। প্রত্যেক প্রার্থীই মনোনয়ন জমা দিয়ে নিজেকে দলের আসল প্রার্থী হিসেবে প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। এতে বিএনপি ও ঐক্যফ্রন্টের নেতাকর্মীরা আসল ও বিকল্প প্রার্থীর পরিচয় নিয়ে পড়েছেন দ্বিধাদ্বন্দ্বে।

নিজেদের সিলেট-১ আসনে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থী হিসেবে পরিচয় দিচ্ছেন বিএনপির ভাইস-চেয়ারম্যান ইনাম আহমেদ চৌধুরী ও বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা খন্দকার আবদুল মুক্তাদির। এতে সাধারণ বিএনপির সমর্থকরা পড়েছেন বিপাকে। প্রার্থী চূড়ান্ত না হওয়ার কারণে তারা কারো পক্ষেই মাঠে নামতে পারছেন না।

সিলেট-২ আসনে নিখোঁজ বিএনপি নেতা ইলিয়াস আলীর সহধর্মিণী তাহসীনা রুশদীর লুনা বিএনপির মনোনয়ন জমা দিলেও নিজেকে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থী দাবি করছেন ২০ দলীয় জোটের শরিক খেলাফতে মজলিসের যুগ্ম মহাসচিব মুনতাসির আলী। সিলেট-৩ আসনে বিএনপির ৪ জন মনোনয়ন জমা দিয়েছেন।

তারা হলেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা এমএ হক, বিএনপির আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার এমএ সালাম, সাবেক সংসদ সদস্য শফি আহমদ চৌধুরী, বিএনপি নেতা কাইয়ুম চৌধুরী। এই ৪ নেতাই নিজেকে ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থী হিসেবে প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন।

সিলেট-৪ আসনে বিএনপির কেন্দ্রীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক সাবেক সংসদ সদস্য দিলদার হোসেন সেলিম ও বিএনপির সহ-স্বেচ্ছাসেবক বিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট সামসুজ্জামান জামান মনোনয়ন জামা দিয়েছেন। তারাও ভোটের মাঠে নিজেদের আসল প্রার্থী প্রমাণে ব্যস্ত।

সিলেট-৫ ও সিলেট-৬ আসনে ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থী নিয়ে বিএনপি ও জামায়াত নেতাদের মধ্যে চলছে ঠাণ্ডা লড়াই। সিলেট-৫ আসনে জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি কানাইঘাট উপজেলা বিএনপির সভাপতি মামুনুর রশিদ মামুন ও জামায়াত নেতা ফরিদ উদ্দিন চৌধুরী দুজনই মনোনয়ন জমা দিয়েছেন।

সিলেট-৬ আসনে বিএনপি নেতা ফয়সল চৌধুরী ও জামায়াত নেতা মাওলানা হাবিবুর রহমান মনোনয়ন জমা দিয়েছেন। দুই প্রার্থীর সমর্থকরাই নিজেদের পছন্দের প্রার্থীকে ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থী হিসেবে প্রচারণা করছেন করেছেন।

লক্ষ্মীপুর-৪ আসনে ঐক্যফন্ট প্রার্থী হিসেবে জেএসডি সভাপতি আ স ম আবদুর রব একক প্রার্থী হলেও মহাজোটের প্রার্থিতা ঘোষণা না হওয়ায় দোলাচলে রয়েছে ক্ষমতাসীন শিবিরের সমর্থকরা। এই আসনে আওয়ামী লীগের বর্তমান সংসদ সদস্য মোহাম্মদ আবদুল্লাহ ও তার স্ত্রী মাহমুদা বেগম স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন।

আর জোটগত নির্বাচনে বিকল্পধারার আবদুল মান্নানও দাখিল করেছেন মনোনয়নপত্র। পাশের জেলা চাঁদপুর-৪ আসনে দলীয় মনোনয়ন না পাওয়ায় বিএনপির সাবেক সংসদ সদস্য লায়ন হারুন উর রশিদ মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে। শিল্পপতি এমএ হান্নানকে মনোনয়ন দেওয়ায় কপাল পুড়েছে বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির ব্যাংকিং ও রাজস্ব বিষয়ক এই সম্পাদকের।

নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনে ক্ষমতাসীন জোটের প্রার্থী হিসেবে শামীম ওসমান মনোনয়ন দাখিল করলেও স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন শ্রমিকলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির শ্রমিক উন্নয়ন ও কল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক কাউছার আহম্মেদ পলাশ। আর বিএনপি থেকে দুজনের হাতে মনোনয়নের চিঠি তুলে দেওয়ায় বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে দলের সাবেক এমপি গিয়াস উদ্দিনও মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন।

পাশাপাশি মনোনয়নপত্র দাখিল করে আলোচনায় রয়েছেন মহাজোটের শরিক জাতীয় পার্টির সালাউদ্দিন খোকা মোল্লা। টাঙ্গাইল-৪ আসন থেকে মনোনয়ন না পেয়ে ক্ষমতাসীন দল ত্যাগ করে কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন জমা দিয়েছেন ইঞ্জিনিয়ার লিয়াকত আলী।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!