• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

মনোনয়ন প্রত্যাশীদের শেষ মুহূর্তের দৌড়ঝাঁপ


বিশেষ প্রতিনিধি নভেম্বর ১৮, ২০১৮, ১০:৫৯ পিএম
মনোনয়ন প্রত্যাশীদের শেষ মুহূর্তের দৌড়ঝাঁপ

ঢাকা : ঘনিয়ে আসছে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। এ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে দেশের বড় দুটি রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপি ইতোমধ্যেই তাদের মনোনয়ন ফরম বিক্রি শেষ করেছে। এখন চলছে চূড়ান্ত প্রার্থী বাছাই। মনোনয়ন পেতে ইচ্ছুকদের মধ্যে চলছে শেষ মুহূর্তের দৌড়ঝাঁপ। মনোনয়ন পাওয়ার জন্য তারা স্ব স্ব দলের হাইকমান্ডের সঙ্গে চালাচ্ছেন জোর লবিং। সংশ্লিষ্ট একাধিক নির্ভরযোগ্য সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।  

সূত্র জানায়, বৃহত্তর ময়মনসিংহের একটি জেলা থেকে আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশী এক নেতা দলের জরিপে প্রথম স্থানে আছেন। এই তথ্য তিনি দলের সাংগঠনিক সম্পাদকসহ নানা সূত্র থেকে জেনেছেন। আর দলীয় প্রধান শেখ হাসিনা ঘোষণা করেছেন, এগিয়ে থাকারাই মনোনয়ন পাবেন। তবে মনোনয়ন কে পাচ্ছেন, এই তথ্য জানার জন্য চেষ্টার কমতি নেই।

ওই নেতা দলের মনোনয়ন বোর্ডের দুজন সদস্যের সঙ্গে দেখা করেছেন, কথা বলেছেন দুজন সাংগঠনিক সম্পাদকের সঙ্গে। সেখান থেকেও নিশ্চিত তথ্য না পেয়ে গেছেন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের একজন কর্মকর্তার কাছে। কিন্তু সেখানেও পাননি নিশ্চিত তথ্য।

ওই নেতার মতো প্রতিটি আসনেই ঘটছে একই ধরনের ঘটনা। যেসব এলাকায় দলের অবস্থান শক্তিশালী, সেসব এলাকায় তো বটেই, এমনকি যেসব এলাকায় অবস্থান দুর্বল, সেসব এলাকাতেও মনোনয়নপ্রত্যাশীদের ঘুম হারাম হয়ে গেছে।

বিএনপির পরিস্থিতিও ভিন্ন কিছু নয়। চেষ্টা-তদবির, দেনদরবারে মনোনয়ন নিশ্চিত করার হেন চেষ্টা নেই, যা তারা করছেন না।

সূত্রমতে, এবার আওয়ামী লীগ থেকে প্রতীক পাওয়ার আশায় ফরম নিয়েছেন চার হাজার ২৩ জন নেতা। অর্থাৎ গড়ে প্রতিটি আসনে মনোনয়ন চাইছেন ১৩ দশমিক ৪১ জন নেতা। এত বেশি ফরম বিক্রি হওয়ায় বিরক্ত হয়েছেন দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনা।

বিএনপির ফরম বিক্রি হয়েছে আরও বেশি- চার হাজার ৫৮০টি। অর্থাৎ সেখানে আগ্রহী প্রার্থী আরও বেশি। অর্থাৎ প্রতি আসনে ১৫ দশমিক ২৬ জন।
দুই দলেরই সূত্র বলছে, ফরম বিক্রি শুরুর আগেই অধিকাংশ আসনে প্রাথমিকভাবে প্রার্থী বাছাই করা হয়ে গেছে। আনুষ্ঠানিকতার জন্যই কেবল চূড়ান্ত করার ঘোষণা দেওয়া।

তবে শেষ মুহূর্তে মনোনয়নপ্রত্যাশীরা তাদের পক্ষে সিদ্ধান্ত নিয়ে আসার চেষ্টা করছেন। কেন্দ্রীয় শীর্ষ নেতাদের পাশাপাশি দপ্তরে খোঁজখবর রাখেন এমন কর্মীদেরও ধরছেন তারা। অবশ্য কেউ কেউ নিশ্চিত না হয়েই এলাকায় ঘোষণা দিয়ে বেড়াচ্ছেন, তিনি পেয়ে গেছেন মনোনয়ন।

আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশীদের সাক্ষাৎকার হয়ে গেছে ১৪ নভেম্বর। কিন্তু এখনো কেউ জানেননি মনোনয়ন মিলেছে কি না। কিন্তু তর সইছে না। তারা মনোনয়ন বোর্ডের সদস্যদের কাছে ধরনা দিচ্ছেন। নিজের জন্য তদবির করছেন। শেষ মুহূর্তে শেখ হাসিনার দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য প্রধানমন্ত্রীর ঘনিষ্ঠজনদের কাছেও মনোনয়নপ্রত্যাশীদের ভিড় বাড়ছে।

শেখ হাসিনা বারবার বলেছেন, এবার তিনি জরিপ প্রতিবেদনকে গুরুত্ব দেবেন। জনপ্রিয়তা দেখে মনোনয়ন দেবেন। এখানে চেষ্টা-তদবির বা দলের বড় নেতা-ছোট নেতা দেখা হবে না।

মনোনয়ন চূড়ান্তের বিষয়টি কত দূর এগিয়েছে- জানতে চাইলে দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও সংসদীয় মনোনয়ন বোর্ডের সদস্য রমেশ চন্দ্র সেন বলেন, ‘প্রার্থিতা বাছাইয়ের বিষয়টি এখনো প্রাথমিক স্তরেই। আমরা মাঠপর্যায়ের জরিপ প্রতিবেদনগুলো বিশ্লেষণ করছি। এ সপ্তাহের মধ্যেই সব চূড়ান্ত হবে বলে আশা করছি।’

কেউ কেউ যে নিজের আসনে মনোনয়ন চূড়ান্ত বলে প্রচার করছেন, এ বিষয়ে জানতে চাইলে রমেশ বলেন, ‘কাউকে এখনো কোনো সংকেত দেওয়া হয়নি। কিছুই জানানো হয়নি। যারা বলছেন, তারা নিজেদের জাহির করার জন্য এ কাজ করছেন। মনোনয়ন বোর্ডের সদস্যদের অনেকে মনোনয়ন চেয়েছেন। কিন্তু তারা নিজেরাও নিজেদের কথা জানেন না।’

অপরদিকে বিএনপিতেও পরিস্থিতিটা যে অন্য রকম, তা নয়। রোববার (১৮ নভেম্বর) থেকে শুরু হয়েছে দলটির মনোনয়নপ্রত্যাশীদের সাক্ষাতকার। পাশাপাশি যারা ফরম জমা দিয়েছেন, তারা বিভিন্ন পর্যায়ে চেষ্টা-তদবির করে জানার চেষ্টা করছেন, তাদের সম্ভাবনা কতটুকু।

একাধিক মনোনয়নপ্রত্যাশী বিদেশে অবস্থানরত দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে যোগাযোগ-সম্পর্ক রাখছেন, কেউ কেউ দেখাও করে এসেছেন। কেবল তিনি নন, তার ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিতদের সঙ্গেও চলছে দেনদরবার। ধরনা দিচ্ছেন মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ স্থায়ী কমিটির সদস্যদের কাছেও।

দলটির নীতিনির্ধারণী সূত্রে জানা গেছে, আওয়ামী লীগের সম্ভাব্য প্রার্থীদের বিষয়টিকে বিশেষ বিবেচনায় রেখে তারা প্রার্থী চূড়ান্ত করবে। এ ছাড়া দলের দুঃসময়েও যারা দলের জন্য ভূমিকা রেখেছেন, মামলা, দণ্ডের মুখোমুখি হয়েছেন, তাদের বিষয়টি দল বিশেষভাবে মূল্যায়ন করবে।

বিএনপির শীর্ষস্থানীয় নেতাদের মধ্যে যারা এবারের নির্বাচনে অংশ নিতে পারছেন না, তাদের স্বজনেরা মনোনয়ন চেয়ে আবেদন করেছেন। দল তাদের মূল্যায়ন করবে, এই আস্থা থেকেই তারা প্রার্থী হওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করছেন।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘প্রতিবার ভোটের আগে মনোনয়নপ্রত্যাশীরা আমাদের দোয়া নিতে আসেন। এবারও এসেছেন। স্থানীয় পর্যায়ে জনপ্রিয়তায় কে এগিয়ে আছেন, তার ভিত্তিতেই মনোনয়ন দেব।’

সূত্রমতে, বিপুলসংখ্যক মনোনয়নপ্রত্যাশীর বিপরীতে প্রার্থী নির্বাচনে দুই দলকেই হিমশিম খেতে হচ্ছে। দুই দলের নীতিনির্ধারকেরা প্রকাশ্যে কিছু না বললেও তাদের দুশ্চিন্তার কারণ হতে পারেন মনোনয়নবঞ্চিতরা। যারা মনোনয়ন পাবেন না, তাদের একটি অংশ বিদ্রোহী প্রার্থী হতে পারে, এমন খবরও দুই দলের কেন্দ্রে আছে।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন সদস্য বলেন, ‘এই মুহূর্তে বিএনপির নির্বাচনে যাওয়াটা এক ধরনের চ্যালেঞ্জ। ঝুঁকিও আছে। কিন্তু তার ওপর এত সংখ্যক মনোনয়নপ্রত্যাশী আরেক চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এক যুগ ধরে দল ক্ষমতায় নেই।

অনেক নেতাকর্মী মামলা-মোকদ্দমা, জেল-জরিমানায় হয়রান হয়েছেন। নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। তারা তো তাদের ত্যাগের মূল্যায়ন চাইবেন। সবাইকে খুশি করে তৃণমূলে দলের ঐক্য ধরে রাখতে না পারলে ভোটে সুবিধা হবে না।’

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!