• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ, ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

মন্ত্রিসভায় ঠাঁই পেতে দৌড়ঝাঁপ


বিশেষ প্রতিনিধি জানুয়ারি ২, ২০১৯, ১০:৫৯ এএম
মন্ত্রিসভায় ঠাঁই পেতে দৌড়ঝাঁপ

ঢাকা : ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়ে টানা তৃতীয়বারের মতো সরকার গঠন করতে যাচ্ছে। নতুন সরকারের মন্ত্রিসভায় ঠাঁই পেতে আগ্রহী দলটির টিকেটে সদ্য শেষ হওয়া নির্বাচনে বিজয়ী অনেকেই। ১৪ দল ও মহাজোটের শরিক দলের নেতারাও পিছিয়ে নেই। মন্ত্রিসভায় থাকার জন্য অনেকেই দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছেন।

দলের সভাপতি ও জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কন্যা শেখ হাসিনার আস্থা জয় করে মন্ত্রিসভার তালিকায় নিজের নাম যোগ করা যায় কি না, এ চেষ্টা করছেন তারা।

দলের নীতিনির্ধারক পর্যায়ের নেতাদের বাসা ও কার্যালয়ে গিয়েও চলছে তদ্বির। শীর্ষ ও প্রবীণ নেতাদের মধ্যস্থতায় প্রধানমন্ত্রীর স্নেহের পরশ মেলে কি না, এ চেষ্টায় অনেকে ত্রুটি রাখছেন না। বর্তমান মন্ত্রিসভার অনেকে নতুন সরকারে মন্ত্রিত্ব টিকিয়ে রাখার দৌড়ঝাঁপও ইতোমধ্যে শুরু করেছেন। বিতর্ক জন্ম দেওয়া মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী ও উপমন্ত্রীরাও বসে নেই। যদিও এবার তাদের কপাল পোড়ার আশঙ্কাই বেশি।

আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারক পর্যায়ের সূত্র জানায়, ৩০ ডিসেম্বর সংসদ নির্বাচনের পর দল ও মহাজোট থেকে জয়ীরা বেশিরভাগই নিজের সংসদীয় এলাকা ছেড়ে এখন ঢাকায়। বিশেষ করে, নতুন সংসদ সদস্যরা ৩ জানুয়ারি, বৃহস্পতিবার শপথ নেওয়ার সম্ভাব্য তারিখ সামনে রেখে ঢাকায় ফিরেছেন।
অবশ্য মঙ্গলবার (০১ জানুয়ারি) তা চূড়ান্ত হয়। ঢাকায় ফিরে অনেকে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করেছেন ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাতে। কেউ কেউ গণভবনে এসে তুলে ধরেছেন মন্ত্রিত্ব পেলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার একাগ্রচিত্ত, দূরদর্শিতা ও উন্নয়ন রাজনীতির দর্শনে একনিষ্ঠ হয়ে কাজ করার প্রতিশ্রুতি।

সবাই মন্ত্রিসভায় ঠাঁই পাওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করছেন না। আবার অনেকেই মন্ত্রিসভায় ঠাঁই পেতে আগ্রহী হলেও তাদের ঠাঁই হওয়ার সম্ভাবনা নেই। নির্বাচনে মনোনয়ন দেওয়ার সময়ও তাদেরকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছিল এ বিষয়ে। জানুয়ারি মাসের প্রথম সপ্তাহে না হলে দ্বিতীয় সপ্তাহের মধ্যে নতুন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শেখ হাসিনা শপথ নেবেন। এবার মন্ত্রিসভার আকার বর্তমানের তুলনায় বাড়তে পারে বলে ওই সূত্র জানায়।

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের মঙ্গলবার (০১ জানুয়ারি) বলেন, আশা করি, আগামী ১০ জানুয়ারি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবসের আগেই সংসদ সদস্যরা ও নতুন মন্ত্রিসভা শপথ নেবে।

তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু জানান, আনুষ্ঠানিকভাবে গেজেট দুয়েক দিনের মধ্যেই হবে। ৩ জানুয়ারি সংসদ সদস্যরা শপথ নেবেন। এরপর মহাজোটের সরকার গঠন হতে যাচ্ছে। আমরা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে নতুন সরকার পাব।

সূত্র জানায়, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় পর্যায় থেকে তৃণমূল পর্যন্ত এখন আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে নতুন মন্ত্রিসভায় কারা স্থান পাচ্ছেন। পুরনোদের মধ্যে কার কার কপাল পুড়ছে আর কারা থাকছেন, আবার নতুন করেই বা কারা আসছেন, কে পাচ্ছেন কোন দফতর— এমন নানা প্রশ্ন এখন সবার মনে ঘুরপাক খাচ্ছে।

তবে নতুন মন্ত্রিসভায় কারা স্থান পাচ্ছেন আর বাদ যাচ্ছেন, তা একান্তই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এখতিয়ার। তিনি যাদের চাইবেন, তাদেরই জায়গা হবে নতুন মন্ত্রিসভায়। প্রধানমন্ত্রী ও তার দফতরই নির্ধারণ করবে কবে কখন ও কাদেরকে নিয়ে মন্ত্রিসভা গঠন করা হবে। সংবিধানই প্রধানমন্ত্রীর এ ক্ষমতা নিশ্চিত করে।

প্রধানমন্ত্রীর সিদ্ধান্ত অনুযায়ী মন্ত্রিসভার সদস্য হওয়ার জন্য নির্বাচিত ব্যক্তিদের সঙ্গে যোগাযোগ করে তাদের শপথ নিতে আমন্ত্রণ জানায় মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। ফলে মূল দৌড়ঝাঁপ প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় বা গণভবনকেন্দ্রিক। তবে নতুন কে কে মন্ত্রী হচ্ছেন আর কারা মন্ত্রণালয় হারাচ্ছেন- বিষয়গুলো এখনো স্পষ্ট নয়। তেমনই দল ও মহাজোটের প্রার্থী হিসেবে নির্বাচিত যে কেউ মন্ত্রিসভায় ঠাঁই পাওয়ার চেষ্টারও সমালোচনা করতে আগ্রহী নন শীর্ষ নেতারা। তাদের মতে, মন্ত্রিত্ব পাওয়ার চেষ্টা যে কেউ করতেই পারেন।

সূত্র মতে, অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত রাজনীতি থেকে অবসর নিচ্ছেন বলে নিজেই ঘোষণা দেন। নতুন মন্ত্রিসভায় তিনি থাকছেন না বলে ধরে নেন নীতিনির্ধারকরা। অর্থ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে নতুন মুখ আসতে পারে বলে ধরে নেওয়া হয়। কুমিল্লা-১০ আসন থেকে নির্বাচিত পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল এবং সিলেট-১ আসনে জয়ী আওয়ামী লীগের প্রার্থী ও আবুল মাল আবদুল মুহিতের ছোট ভাই ড. একে আবদুল মোমেন এই মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পেতে পারেন আলোচনায় ছিল।

তবে গতকাল আবুল মাল আবদুল মুহিত সাংবাদিকদের বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চাইলে আরো কিছুদিন অর্থমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করতে তিনি আপত্তি করবেন না। তার এমন বক্তব্য প্রসঙ্গে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে মঙ্গলবার (০১ জানুয়ারি) বলেন, ‘অর্থমন্ত্রী হিসেবে আবদুল মুহিত ১২টি বাজেট ঘোষণা করেছেন। মন্ত্রণালয় পরিচালনায় তার বিশেষ সফলতা আছে। তিনি থাকতে চাইলে প্রধানমন্ত্রীও তাকে আপাতত মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে দেখতে চাইবেন বলেই মনে করার যথেষ্ট যুক্তি আছে।’

তবে ওই কর্মকর্তার মতে, নতুন করে শপথ নেওয়ার কারণে আগের মন্ত্রিসভা স্বয়ংক্রিয়ভাবে বাতিল হয়ে যাবে। ফলে অর্থমন্ত্রী নতুন করে শপথ নেন কি না, তা দেখেই স্পষ্ট হতে পারে তিনি আরো কিছু দিন থাকছেন কী থাকছেন না।

সূত্র জানায়, স্বরাষ্ট্র, কৃষি, শিল্প, বাণিজ্য, সেতু ও নৌপরিবহনসহ আরো কয়েকটি মন্ত্রণালয়ে পরিবর্তন হচ্ছে না। বর্তমানে যারা এসব মন্ত্রণালয়ে আছেন, তারা সফল হিসেবেই বিবেচিত। স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম সফল হলেও তিনি অন্য মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পেতে পারেন। শীর্ষ পর্যায় থেকে এমন আভাস পেয়ে সদ্য নির্বাচিত অনেকেই এ মন্ত্রণালয়ে ঠাঁই পেতে আগ্রহী। ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনে অন্তত বারোজন দলের টিকেটে সংসদ সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন। তাদের মধ্যে অনেকেই মন্ত্রিসভায় ঠাঁই পেতে চাচ্ছেন।

গত সোমবার ও গতকাল তাদের কয়েকজন গণভবনেও আসেন। বেশিসংখ্যক চিকিৎসক নির্বাচিত হওয়ায় নতুন সরকারে স্বাস্থ্যমন্ত্রী কে হচ্ছেন, তা নিয়ে কৌতূহল অনেকের। আবার মনোনয়ন চাইলেও দলের স্বার্থে অন্য প্রার্থীকে ছাড় দেওয়ায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ডা. প্রাণ গোপাল দত্ত ও স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের সভাপতি ডা. ইকবাল আর্সলানের নাম যোগ হতে পারে নতুন মন্ত্রিসভায় ‘টেকনোক্র্যাট’ হিসেবে, এমনও বলছেন কেউ কেউ।

১৪ দলের শরিক ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন, জাসদের সভাপতি হাসানুল হক ইনু ও জেপির আনোয়ার হোসেন মঞ্জুও মন্ত্রিসভায় থাকছেন। মহাজোটের শরিক দলের মধ্যে যারা মন্ত্রিসভায় আছেন, তাদের কারো নতুন মন্ত্রিসভা থেকে বাদ পড়ার সম্ভাবনা নেই। তাদের মধ্যে কারো কারো মন্ত্রণালয় বদলের কথাও ভাবা হচ্ছে। মহাজোটের শরিক দল থেকে নতুন করে কারো যোগ হওয়ার সম্ভাবনাও আছে।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!