• ঢাকা
  • শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

মন্ত্রী-এমপিতেই যত ভয়!


বিশেষ প্রতিনিধি নভেম্বর ১৪, ২০১৮, ০৩:০৩ পিএম
মন্ত্রী-এমপিতেই যত ভয়!

ঢাকা : প্রভাবশালীদের চাপে নতি স্বীকার না করে সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচন অনুষ্ঠানে নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন করতে নির্বাচন কমিশনের দেওয়া নির্দেশনা বাস্তবায়নে সংশয় দেখা দিয়েছে।

সংসদ বহাল থাকায় নির্বাচনে মন্ত্রী-এমপিদের প্রভাব বিস্তার বন্ধে আইনি পদক্ষেপ গ্রহণে ভয় পাচ্ছেন দায়িত্বপ্রাপ্ত রিটার্নিং অফিসাররা। প্রশাসনে চাকরি করে সরকারের প্রভাবশালীদের সঙ্গে দ্বন্দ্বে জড়িয়ে নিজেদের বিপদ ডেকে আনতে নারাজ তারা।

রাজধানীর আগারগাঁওয়ের নির্বাচন ভবনে মঙ্গলবার (১৩ নভেম্বর) রিটার্নিং অফিসারদের নির্বাচনসংক্রান্ত ব্রিফিং অনুষ্ঠানে বেশ কয়েকজন রিটার্নিং অফিসার এ শঙ্কার কথা প্রকাশ করেন। তারা এ বিষয়ে করণীয় নির্ধারণ করে দিতে নির্বাচন কমিশনকে অনুরোধ করেন। সে সঙ্গে দণ্ডপ্রাপ্ত বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মনোনয়নপত্র গ্রহণসংক্রান্ত বিষয়েও কমিশনের নির্দেশনা চাওয়া হয়।

নির্বাচন কমিশনের নির্ভরযোগ্য একটি সূত্রে জানা গেছে, অনুষ্ঠানে দলীয় সরকারের অধীনে আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করে দেশে প্রথমবারের মতো ইতিহাস সৃষ্টি করার প্রত্যয় ব্যক্ত করে নানা নির্দেশনা দেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কেএম নুরুল হুদা।

সুষ্ঠু ভোট আয়োজনে রিটার্নিং অফিসারদের কঠোর অবস্থানে থেকে নিরপেক্ষ ভূমিকা পালনের আহ্বান জানিয়ে প্রভাবশালীদের কাছ থেকে কোনো ধরনের চাপ এলে শক্ত হাতে তা মোকাবেলা করা এবং প্রয়োজনে তাৎক্ষণিক আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশনা দেন তিনি।

এ সময় অনুষ্ঠানে উপস্থিত বেশ কয়েকজন রিটার্নিং অফিসার প্রধান নির্বাচন কমিশনারের কাছে জানতে চান, প্রশাসনে চাকরি করে এটি কীভাবে সম্ভব। তারা শঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, দশম সংসদ এখনো বহাল থাকায় মন্ত্রী-এমপিরা স্বাভাবিকভাবেই নির্বাচনের সময়ে বহাল থাকবেন। তারা সরকারের প্রভাবশালী ব্যক্তি। নির্বাচনী এলাকায় তারা কোনো অনিয়মে জড়ালে কীভাবে তাদের প্রতিহত করা যাবে।

এ বিষয়ে তারা কমিশনের নির্দেশনা চান। অনুষ্ঠানে রিটার্নিং অফিসারদের এমন প্রশ্নের তাৎক্ষণিক কোনো জবাব দিতে পারেননি সিইসি। তবে আজকের (বুধবার) মধ্যে এ বিষয়ে তাদের সুস্পষ্ট নির্দেশনা দেওয়া হবে বলে তাদের আশ্বস্ত করা হয়।

সূত্র জানায়, অনুষ্ঠানে রিটার্নিং অফিসাররা বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মনোনয়ন বিষয়েও সিইসির নির্দেশনা চান। তারা বলেন, বিএনপি নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার ঘোষণা দিয়েছে। এ অবস্থায় দণ্ডপ্রাপ্ত খালেদা জিয়ার মনোনয়নপত্র যদি দাখিল করা হয় তাহলে করণীয় কী হবে।

জবাবে সিইসি বলেন, দণ্ডপ্রাপ্ত আসামির বিষয়ে বিধিমালায় যা আছে, তাই করবেন। তার দণ্ডের বিরুদ্ধে যদি কোনো স্থগিতাদেশ না থাকে তাহলে আইনত খালেদা জিয়ার মনোনয়নপত্র বাতিল করে দিতে হবে।

এদিকে ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বাধীন জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নির্বাচনের তফসিল পেছানোর পুনঃদাবি জানালেও এই দাবি গ্রহণ করার কোনো অবকাশ নেই বলে সাফ জানিয়ে দিয়েছে ইসি।

আগামী ৩০ ডিসেম্বরই ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হতে হবে জানিয়ে তফসিল না পেছানোর যৌক্তিক ব্যাখ্যাও তুলে ধরা হয়েছে কমিশনের পক্ষ থেকে। সেই সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোকে অযৌক্তিক দাবি থেকে সরে এসে ভোটে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার প্রস্তুতি নিতেও বলেছে ইসি।

নির্বাচন পেছানোর কোনো সুযোগ নেই জানিয়ে সিইসি বলেন, ৩০ ডিসেম্বর নির্বাচনের দিন নির্ধারিত হয়েছে। এরপর আর তারিখ পেছানোর সুযোগ নেই। নির্বাচনের পর ফলাফল আসবে, এরপর গেজেট করা। ৩০০ আসনের গেজেট করার জন্য সময় দরকার।

দ্বিতীয়ত, টঙ্গীর ইজতেমা হবে জানুয়ারির ১১ তারিখে। ইসিকে চিঠি দিয়ে এটি জানানো হয়েছে। এ সময় সারা দেশ থেকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের আনতে হয়, যাতে কোনো সহিংসতা না ঘটে।

তিনি বলেন, খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের বড়দিনসহ বিভিন্ন বিষয় মাথায় রেখে ২৩ ডিসেম্বর নির্বাচনের বিষয়টি পরিকল্পনা করা হয়েছিল। যেহেতু নির্বাচনে সব দল অংশ নিয়েছে, এতে আমরা খুশি হয়ে তাদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে ভোটের দিন পিছিয়ে ৩০ ডিসেম্বর নির্ধারণ করেছি। কিন্তু ভোটের তারিখ আর পেছানোর সুযোগ নেই।

রিটার্নিং অফিসারদের উদ্দেশে কেএম নুরুল হুদা বলেন, আপনারা দেশি-বিদেশি সব স্তরের পর্যবেক্ষণে রয়েছেন। এ বছর নির্বাচনের পরিবেশ হবে ভিন্ন। আমাদের দেশে কখনো নির্বাচন হয়েছে রাষ্ট্রপতি শাসিত নির্বাচন, কখনো সেনাবাহিনী, কখনো কেয়ারটেকারের অধীনে। কিন্তু অন্য নির্বাচন থেকে এই নির্বাচন সম্পূর্ণ ভিন্ন।

কারণ সংসদ ও সরকার বহাল থেকে এ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। ২০১৪ সালে এমন একটি নির্বাচন হয়। কিন্তু সেই নির্বাচনে সব দল অংশ নেয়নি। আমরা সে জন্য আনন্দিত যে এই নির্বাচনে সব দল অংশ নিতে যাচ্ছে। সে কারণে আপনাদের দায়িত্ব অনেক বেড়ে গেছে।

সিইসি বলেন, নির্বাচন হতে হবে সম্পূর্ণ অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ। ভোট একটি উৎসব। ভোটের দিন ভোটাররা আনন্দমুখর পরিবেশে ভোট দিতে যাবেন। সবাই নিজ নিজ দায়িত্ব যথাযথ পালন করবেন। ভোটের বুথ ছাড়া বাকি সব স্থানে পর্যবেক্ষকসহ সবাই যেতে পারবেন এবং তা পর্যবেক্ষণ করতে পারবেন।

নির্বাচন যেন জনগণের কাছে গ্রহণযোগ্য হয়, সেই পরিবেশ রিটার্নিং অফিসারদেরই সৃষ্টি করতে হবে। এখন থেকে নির্বাচনের সব দায়িত্ব আপনাদের। কীভাবে প্রিসাইডিং কর্মকর্তা নিয়োগ করবেন, ভোটকক্ষ তৈরি করবেন- সব দায়িত্ব আপনাদের। সবাই আন্তরিকভাবে নির্বাচন পরিচালনা করেন, তাহলে সামগ্রিকভাবে আমাদের ওপর জনগণের সন্দেহ হবে না।

প্রার্থী ও রাজনীতিবিদরা সম্মানিত ব্যক্তি উল্লেখ করে সিইসি বলেন, অনেকেই এমপি ছিলেন, আবার অনেকে আছেন যারা এমপি ছিলেন না তারাও এলাকায় সম্মানিত ব্যক্তি। তাদের সঙ্গে যদি সুসম্পর্ক রাখেন, তাহলে কেউই নির্বাচনে সমস্যা সৃষ্টি করবেন না। তাদেরকে কখনো প্রতিপক্ষ হিসেবে নেবেন না। তাদের সহযোগিতা করলে তারাও আপনাদের সহযোগী, বন্ধু হিসেবে কাজ করবেন। বিরোধিতা করবেন না। নিরপেক্ষতা হবে একমাত্র মাপকাঠি।

কেএম নুরুল হুদা রিটার্নিং অফিসারদের উদ্দেশে বলেন, এবার নতুন আইনে এবং ভিন্ন রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে নির্বাচন হবে। তাই জাতি রিটার্নিং অফিসারদের দিকে তাকিয়ে আছে। তাই মন্ত্রী, এমপি ও প্রভাবশালী ব্যক্তিদের থেকে চাপ এলে আইনি ব্যবস্থা নিতে হবে।

নির্বাচন কমিশনার রফিকুল ইসলাম বলেন, দায়িত্ব পালনে কোনো চাপের কাছে মাথা নত করবেন না। কমিশনের আইন ও নীতিমালা অনুযায়ী কাজ করবেন। অতি উৎসাহী আচরণ বা ক্ষমতার অপব্যবহার করবেন না।

উল্লেখ্য, রাজনৈতিক দলগুলোর দাবির পরিপ্রেক্ষিতে ২৩ ডিসেম্বরের পরিবর্তে ৩০ ডিসেম্বর জাতীয় নির্বাচনের ভোটগ্রহণের পুনঃতফসিল দেয় ইসি। নতুন সময়সূচি অনুযায়ী মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষ সময় ২৮ নভেম্বর, বাছাই ২ ডিসেম্বর। আর প্রার্থিতা প্রত্যাহার ৯ ডিসেম্বর।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!