• ঢাকা
  • শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

মহাজোটের আসনে প্রার্থীজট


বিশেষ প্রতিনিধি ডিসেম্বর ৭, ২০১৮, ০৪:৩০ পিএম
মহাজোটের আসনে প্রার্থীজট

ঢাকা : একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আসন বণ্টন চূড়ান্ত না হওয়ায় বেশ কিছু আসনে জটিলতায় পড়েন আওয়ামী লীগ ও তাদের শরিক মহাজোটের প্রার্থীরা। সম্ভাব্য প্রত্যাশীরা নিজেদের মনোনয়ন নিশ্চিত হতে পারছেন না। মোটামুটি চূড়ান্ত ভাগাভাগির আসনের কয়েকটিতে আছেন আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী।

অন্যদিকে আসন চূড়ান্তের আগে শরিকরা নিজেদের প্রার্থী দেওয়ায় কয়েকটি আসনে আছে প্রার্থীজট। অনেক আসনে আওয়ামী লীগ ও শরিক দলের প্রার্থী থাকায় মহাজোটের মূল প্রার্থিতা নিয়ে নেতাকর্মী ও সমর্থকরা বিভ্রান্তিতে।

আওয়ামী লীগ সূত্র বলছে, ১৪ দলীয় জোট ও মহাজোটের শরিকদের জন্য ক্ষমতাসীন দল ৩৬ আসন ছাড়বে। এসব আসনের মধ্যে ২৭টিতে এখনো আওয়ামী লীগের ও অন্য শরিক দলের বিদ্রোহী প্রার্থী আছেন। আবার আসন চূড়ান্ত না হলেও মহাজোটের শরিক জাতীয় পার্টির (জাপা) জন্য আরো কিছু আসন ছেড়ে দেওয়ার আভাস দিয়েছে আওয়ামী লীগ। আভাস পেয়ে অনেক আসনে প্রার্থী দিয়ে রেখেছে জাপা। এসব আসনে আছে আওয়ামী লীগের প্রার্থীও। এ নিয়ে নেতাকর্মীদের মধ্যে বাড়ছে বিভ্রান্তি।

আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারক সূত্র বলছে, কোন আসনে আওয়ামী লীগ ও মহাজোটের প্রার্থী চূড়ান্ত কারা হচ্ছেন তা জানা যাবে ৯ ডিসেম্বরের মধ্যে। আজ শুক্রবার থেকে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে মহাজোটের প্রার্থীদের চিঠি দেওয়া শুরু হতে পারে। দলটির সাধারণ সম্পাদক, সড়ক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরও গতকাল জানান, ‘আজ ও কালের মধ্যেই চিঠি দিয়ে দেওয়া হবে। আগামীকাল মনোনয়নপ্রাপ্ত ব্যক্তিরা চিঠি পাবেন।’

সূত্র মতে, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে অনেক দিন ধরে বৃহত্তর রংপুরের ২১টি আসন দাবি করে আসছে জাপা। বৃহত্তর রংপুরের ২২টি আসনের মধ্যে আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্বাচনী এলাকা রংপুর-৬ আসন ছাড়া বাকি সব আসন পেতে চায় জাপা। আসন বণ্টনের আগে দলটি সেসব আসনে প্রার্থীও দেয়। সেগুলোর মধ্যে বেশিরভাগ আসনেই আওয়ামী লীগেরও প্রার্থী আছেন। রংপুর বিভাগে জাতীয় পার্টি ৩২টি আসন দাবি করলেও ২৭টিতেই এবার প্রার্থী আছে আওয়ামী লীগেরও।

আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারা মনে করেন, উত্তরবঙ্গে জাতীয় পার্টির আগের সেই অবস্থা নেই। দলটির জনপ্রিয়তা আগের তুলনায় অনেক কমেছে। সরকার উন্নয়ন করায় সেখানে আওয়ামী লীগের জনপ্রিয়তা গত দশ বছরে বেড়েছে। সেজন্য সব আসন জাপাকে ছেড়ে দেওয়ার বদলে দলের জনপ্রিয় প্রার্থী দিয়ে সংসদীয় আসন দখলে রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে আওয়ামী লীগ। তবে চূড়ান্ত সমঝোতা না হওয়ায় বলা যাচ্ছে না কোনটা আওয়ামী লীগের আসন আর কোনটা শরিক দলকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। জাপাও স্বীকার করছে, আসন ভাগাভাগি এখনো চূড়ান্ত না হওয়ায় তা জানা যাচ্ছে না।

সারা দেশে জাপা ২৫টি আসন পাওয়ার আশ্বাস পেয়েছে এ পর্যন্ত। চূড়ান্ত হলে তা আরো বাড়তে পারে। তবে দলটি রংপুর বিভাগের আসন দাবি করে প্রার্থী দেওয়ায় জটের সৃষ্টি হয়েছে। জাপাকে কুড়িগ্রামের চার আসনের দেওয়া হয়েছে একটি। কিন্তু বাকি তিনটিতে এখনো দলটির প্রার্থী আছেন। আছেন আওয়ামী লীগের প্রার্থীও। ঠাকুরগাঁওয়ের তিন আসনে মহাজোটের প্রার্থী হিসেবে আওয়ামী লীগ দিয়েছে দুটি আসনে। একটি আসনে আওয়ামী লীগ ও জাপা দুই দলই প্রার্থী দেয়।

গাইবান্ধার পাঁচ আসনের মধ্যে জাপা ও আওয়ামী লীগের মধ্যে একটি করে আসনে সমঝোতা হয়েছে। অমীমাংসিত তিন আসন। নীলফামারীর চার আসনে জাপা একটি ও আওয়ামী লীগের একটি আসন চূড়ান্ত। বাকিটিতে আছেন দুই দলের প্রার্থীই। আরেকটি আসনে জাপার প্রার্থী থাকলেও আছেন আওয়ামী লীগেরও বিদ্রোহী।

পটুয়াখালী-১ আসনে আওয়ামী লীগ ছাড় দেয় জাপাকে। এ আসন থেকে জাপার সদ্য সাবেক মহাসচিব রুহুল আমিন হাওলাদার প্রার্থী হলেও তার মনোনয়নপত্র বাতিল হয়। আসনটিতে এখনো আওয়ামী লীগের প্রার্থী শাহজাহান মিয়া টিকে আছেন। এমন অবস্থা দেশের বেশ কয়েকটি সংসদীয় আসনে। নির্বাচন কমিশনে (ইসি) আপিলের পর রুহুল আমিন হাওলাদারের প্রার্থিতা বৈধ হলেও তার সেখান থেকে দলীয় প্রার্থী হওয়ার আর সম্ভাবনা নেই বলে জানায় জাপা।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসন মহাজোটের শরিকের জন্য রাখা হলেও এখানে আছেন আওয়ামী লীগের দুই বিদ্রোহী প্রার্থী। বিকল্পধারার মহাসচিব মেজর (অব.) আবদুল মান্নানের লক্ষ্মীপুর-৪, জাপার প্রার্থী অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তা মাসুদ উদ্দিন চৌধুরীর ফেনী-৩ আসনে আওয়ামী লীগের দুজন বিদ্রোহী, পিরোজপুর-৩ আসনটি মহাজোটের জন্য ছেড়ে দিলেও এখানে আছেন আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী সাবেক দুই সংসদ সদস্য আনোয়ার হোসেন ও আশফাকুর রহমান।

আসন বণ্টনের চূড়ান্ত পর্বে আওয়ামী লীগের দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক মিত্র ১৪-দলীয় জোটের শরিকদের এবার ১৩ আসন দেয় আওয়ামী লীগ। জাসদ সভাপতি মইনউদ্দীন খান বাদল চট্টগ্রাম-৮ আসনে প্রার্থী হলেও সেখানে আছেন আওয়ামী লীগের প্রার্থী। পঞ্চগড়-১ আসনে জাসদের (বাদল) সাধারণ সম্পাদক নাজমুল হক প্রধান প্রার্থী হলেও ওই আসনেও আছেন আওয়ামী লীগের প্রার্থী।

পঞ্চগড়-১ আসনে জাপার আবু সালেকও প্রার্থী। আবার পঞ্চগড়-২ আসনে বর্তমান সংসদ সদস্য আওয়ামী লীগের নুরুল ইসলাম সুজন দলের প্রার্থী হলেও এ আসনে লুৎফর রহমান রিপন জাপার প্রার্থী। একইভাবে শরিফ নূরুল আম্বিয়ার নড়াইল-১ আর তরীকত ফেডারেশনের আনোয়ার খানের লক্ষ্মীপুর-১ আসনেও আওয়ামী লীগের প্রার্থী আছেন।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!