• ঢাকা
  • মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল, ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১
রাজনৈতিক কৌশল

মহাজোটের শরিকরা বিরোধী দলে


বিশেষ প্রতিনিধি জানুয়ারি ৩০, ২০১৯, ১২:০৮ পিএম
মহাজোটের শরিকরা বিরোধী দলে

ঢাকা : প্রধান রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ বিএনপিকে জাতীয় সংসদের ভেতরেও কোণঠাসা রাখতে চায় আওয়ামী লীগ। মহাজোটের শরিক দলগুলোকে সংসদে সেজন্যই বিরোধী দলের ভূমিকায় দেখতে চায় ক্ষমতাসীন দলটি। সাংগঠনিক ও নেতৃত্বে দুর্বলতাসহ বিভিন্ন কারণে সংসদের বাইরে ও রাজপথের রাজনীতিতে বিএনপি ইতোমধ্যেই ‘দুর্বল’।

দশম সংসদের মতো একাদশ সংসদেও বিরোধী দলে বিএনপি থাকতে না পারলে দলটির অবস্থান সংসদীয় রাজনীতিতে আরো ‘নাজুক’ হতে পারে। রাজনৈতিক এ কৌশলের অংশ হিসেবে একই প্রতীকে নির্বাচন করলেও ১৪ দল ও মহাজোটের শরিকদের সংসদে বিরোধী দল হতে বলা হচ্ছে বলে মনে করেন জোটের শীর্ষ নেতারা।

আওয়ামী লীগের উচ্চপর্যায়ের সূত্র জানায়, সরকারি দল ও সরকারের শীর্ষপর্যায় থেকে বিএনপি ও ঐক্যফ্রন্টকে শপথ নিয়ে সংসদে আসার আহ্বান জানানো হলেও তারা এখনো সংসদ সদস্য হিসেবে শপথ নেননি। প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনা গত ২৫ জানুয়ারি জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে ‘সংখ্যায় কম হলেও’ বিএনপির নির্বাচিতদের শপথ নিয়ে সংসদে আসার আহ্বান জানান।

আগামী ২ ফেব্রুয়ারি গণভবনে অনুষ্ঠেয় প্রধানমন্ত্রীর চা-চক্রের আমন্ত্রণেও অংশ না নেওয়ার ঘোষণা দেয় ঐক্যফ্রন্ট। ‘নেতিবাচক রাজনৈতিক অবস্থান’ থেকে সরতে না চাওয়ায় ঐক্যফ্রন্টের এমন রাজনৈতিক অবস্থান বলে মনে করেন আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারা।

এ পরিস্থিতিতে বিএনপির ‘সরকারের বিরোধিতার জন্য বিরোধিতা করতে’ সংসদে যাওয়ার বিষয়টিতে তেমন গুরুত্ব দিচ্ছে না আওয়ামী লীগ। রাজনৈতিক মিত্র ও সমমনা হওয়ায় মহাজোটের শরিক দলগুলো সংসদে দায়িত্বশীল বিরোধী দল হতে পারে বলে মনে করেন আওয়ামী লীগের শীর্ষ পর্যায়ের কেউ কেউ।

বিএনপির নেতৃত্বাধীন ঐক্যফ্রন্ট মাত্র আটটি আসন নিয়ে বিরোধী দলে বসতে পারছে কি না, এ নিয়েও নানা তর্ক আছে রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মধ্যে। আসন কম হওয়ায় ঐক্যফ্রন্ট বিরোধী দল হতে পারছে না বলে মনে করেন অনেক বিশেষজ্ঞ। আসন সংখ্যা বিবেচনায় না নিলেও সংসদে বিএনপি ও ঐক্যফ্রন্টের নির্বাচিতরা নিয়মিত হবেন, এমন লক্ষণও দেখছেন না আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারকরা। বিএনপি ‘কমসংখ্যক আসনের বিরোধী দল’ হলেও প্রকৃত গণতান্ত্রিক ভূমিকা পালন করবে সংসদে, এ বিষয়ে আশ্বস্ত হতে পারছে না সরকারি দলের শীর্ষ নেতৃত্ব।

ফলে নতুন কৌশল অবলম্বন করে ১৪ দল ও মহাজোটের শরিক জাতীয় পার্টির পাশাপাশি বিকল্পধারাকেও সংসদে বিরোধী দলের আসনে বসাতে চায় আওয়ামী লীগ। বিরোধী দলে থাকলে ১৪ দলের শরিক প্রগতিশীল রাজনৈতিক দলগুলো নিজ দলের সাংগঠনিক অবস্থার দিকে আরো বেশি নজর দিতে পারবে বলেও মনে করেন ক্ষমতাসীনরা। এসব দলের সাংগঠনিক অবস্থা শক্ত হলে মিত্র হওয়ায় আওয়ামী লীগেরই লাভ হবে।

দলীয় সূত্র জানায়, ঐক্যফ্রন্টের আটটি সংসদীয় আসনের মধ্যে বিএনপির মাত্র ছয়টি আর বাকি দুটি গণফোরামের। এর মধ্যে বিএনপি ভোটের মাঠে আওয়ামী লীগের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী হওয়ায় ওই দলকে নিয়েই রাজনৈতিক কৌশল বেশি থাকে ক্ষমতাসীনদের।

শপথ নেওয়ার ব্যাপারে ইতোমধ্যে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন ঐক্যফ্রন্টের শরিক দল গণফোরামের নির্বাচিত দুই সংসদ সদস্য। দশম সংসদ নির্বাচনে অংশ না নেওয়ায় গত পাঁচ বছর বিএনপি সংসদের বাইরে থাকায় দলটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। দলের চেয়ারপারসন কারাবন্দি হওয়ায় ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বিদেশে থাকাসহ নানা কারণে দলটির নেতৃত্ব দুর্বল হয়ে পড়ছে।

একাদশ সংসদের নির্বাচনে অংশ নিয়ে সংসদে আসার সুযোগ পেয়েও কাজে না লাগালে দলটি ‘আরো দুর্বল’ হতে পারে। তাতে রাজনৈতিকভাবে আওয়ামী লীগেরই লাভ বলে দলটি মনে করছে।

তবে আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারকদের মতে, সুশাসন নিশ্চিত করতেই সংসদে বিরোধী দলের আসনে জোটের শরিকদের বসানো হচ্ছে। নির্বাচনে বড় বিজয়ের পর নতুন সংসদের মাধ্যমে উন্নয়নের পাশাপাশি সুশাসন নিশ্চিত করতে চায় সরকারি দল। সংসদের কার্যক্রমকে জবাবদিহির মধ্যে আনতে প্রথম অধিবেশনেই গঠন করা হবে সংসদীয় কমিটিগুলো।

গঠনমূলক বিরোধিতার সুযোগ সৃষ্টি করতে এসব কমিটিতেও রাখা হবে বিরোধী পক্ষের সদস্যদের। মাদক, জঙ্গিবাদ ও দুর্নীতি দমনে ইতোমধ্যে নানা পদক্ষেপ নিয়েছে নবগঠিত সরকার। এসব পদক্ষেপ বাস্তবায়নে প্রয়োজনে আইনের সংস্কার ও নতুন আইন প্রণয়নসহ দরকারি ব্যবস্থা নেওয়া হবে সংসদ।

দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও কৃষিমন্ত্রী ড. আবদুর রাজ্জাক এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘মানুষ চায় উন্নয়নের পাশাপাশি দেশে সুশাসন হবে। মানুষের আশা আকাঙ্ক্ষার বাস্তবায়ন হবে সংসদের মাধ্যমে। বিরোধী দল যত ছোটই হোক না কেন, তাদের কেউ সংসদে দাঁড়িয়ে ন্যায়সঙ্গত কোনো কথা বললে আমরা সে কথাকে অবশ্যই গুরুত্ব দেব।’

আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও ১৪ দলের মুখপাত্র মোহাম্মদ নাসিম এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘আনুষ্ঠানিকভাবে বিরোধী দল না হলেও সংসদে বিরোধী দলের ভূমিকায় থাকবে ১৪ দলের শরিকরা। সংসদে সরকারি ও বিরোধী দল উভয়ই হতে হবে মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষের শক্তির। এ লক্ষ্যেই বিরোধী ভূমিকায় থাকবেন জোট ১৪ দলের নেতারা। শুধু সংসদেই নয়, সংসদের বাইরেও সরকারের গঠনমূলক সমালোচনা করবে এই জোট, ধরিয়ে দেবে সরকারের ভুল-ত্রুটি।’

অন্যদিকে বুধবার (৩০ জানুয়ারি) থেকে একাদশ সংসদের প্রথম অধিবেশন শুরু হওয়ার কথা থাকলেও ১৪ দল সংসদে বিরোধী দল হচ্ছে কি না, এ বিষয়ে  মঙ্গলবার (২৯ জানুয়ারি) পর্যন্ত দলগুলো সিদ্ধান্ত নিতে পারেনি। ১৪ দল ও মহাজোটের শরিক কয়েকটি দল বিরোধী দলের ভূমিকায় থাকতে চাইলেও অন্য নেতারা এ বিষয়ে ভিন্নমত পোষণ করছেন। সংসদে বিরোধী দল হওয়া নিয়ে মহাজোট ও ১৪ দলের শরিক দলগুলোতে দেখা দিয়েছে মতানৈক্য।

একই প্রতীকে ভোট করার পর এখন তাদের বিরোধী দলে পাঠানোর পরিকল্পনা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন তারা। সরকারের চাওয়া মতো বিরোধী দলে গেলে আদর্শিক এ জোটের ঐক্য অটুট থাকবে না বলেও তারা যুক্তি দেখাচ্ছেন। অনেক বিশ্লেষক মনে করেন ‘সংসদের প্রাণবন্ত হওয়ার বিষয়টি সম্পূর্ণ নির্ভর করছে দুই পক্ষের রাজনৈতিক সদিচ্ছার ওপর। বিরোধী দলের আসনে বসার সিদ্ধান্ত গতকাল পর্যন্ত নিতে না পারলেও অধিবেশন চলাকালীন এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত আসতে পারে বলে আশা করা হচ্ছে। কারণ, কোনো সংসদের প্রথম অধিবেশন সাধারণত দীর্ঘ হয়।

দশম জাতীয় সংসদে মন্ত্রিসভা ও বিরোধীদলীয় দায়িত্ব পালন করে জাতীয় পার্টি। একাদশ জাতীয় সংসদের শুরু থেকেই সরকারের অংশ না হওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় দলটি। মহাজোটের আরেক শরিক বিকল্পধারা বিরোধী দলে থাকতে আগ্রহী নয়। বিকল্পধারা সরকারে থাকার পক্ষে আগ্রহ ব্যক্ত করেছে। বিকল্পধারার সভাপতি ও সাবেক রাষ্ট্রপতি বদরুদ্দোজা চৌধুরী এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘সরকারের সহায়তা নিয়ে নির্বাচিত হয়ে সংসদে বিরোধী দলে যাওয়া ঠিক নয়। এটা নৈতিকভাবে ভুল।’

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!