• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

মহাপাপীও যেসব কাজে মাফ পায়


সোনালীনিউজ ডেস্ক অক্টোবর ২৮, ২০১৯, ১২:২৫ পিএম
মহাপাপীও যেসব কাজে মাফ পায়

ঢাকা : গোনাহ যতবড়ই হোক না কেন, তওবার মাধ্যমে সব গোনাহ মুছে যায়।  বিভিন্ন নেক (ভালো) আমলের দ্বারা সগিরা (ছোট) গোনাহগুলো মিটে যায়।  আর তওবা সগিরা, কবিরা (বড়) গোনাহ মিটিয়ে দেয়।  তবে স্মরণ রাখতে হবে মানুষে অধিকারের ব্যাপারে।  অর্থাৎ মানুষের পাওনা থাকলে, তা বুঝিয়ে দিতে হবে অথবা তার থেকে ক্ষমা চেয়ে নিতে হবে তারপর আল্লাহ মাফ করবেন, তার আগে নয়। সুতরাং বান্দার হকের বিষয়ে সাবধান থাকা জরুরি।

কোনো মুমিন গোনাহ করে বসে থাকতে পারে না। মুমিন বান্দা গোনাহ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তওবা করে নেয়। কোরআনে কারিম আল্লাহতায়ালা মুমিনের এ গুণের কথা বর্ণনা করেছেন এভাবে, ‘এবং তারা সেই সব লোক, যারা কখনও কোনো অশ্লীল কাজ করে ফেললে বা (অন্য কোনোভাবে) নিজেদের প্রতি জুলুম (গোনাহ) করলে সঙ্গে সঙ্গে আল্লাহকে স্মরণ করে এবং তার ফলশ্রুতিতে নিজেদের গোনাহের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করে। আল্লাহ ছাড়া কেই বা আছে, যে গোনাহ ক্ষমা করতে পারে? আর তারা জেনেশুনে তাদের কৃতকর্মে অবিচল থাকে না। -সূরা আলে ইমরান: ১৩৫

যেকোনো মহাপাপী তওবার মাধ্যমে হয়ে যেতে পারে গোনাহমুক্ত।  হাদিসে ইরশাদ হয়েছে, ‘গোনাহ থেকে তওবাকারী গোনাহমুক্ত ব্যক্তির মতো।’ -সুনানে ইবনে মাজাহ: ৪২৫০

আল্লাহতায়ালাও বান্দার তওবা কবুলের জন্য তার ক্ষমার হাত প্রসারিত করে রাখেন সর্বদা। হজরত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, ‘আল্লাহতায়ালা রাতে তার (ক্ষমার) হাত প্রসারিত করেন, যাতে দিনে যারা পাপ করেছে তারা তওবা করতে পারে। আর দিনে তার (ক্ষমার) হাত প্রসারিত করেন, যাতে রাতে যারা পাপ করেছে তারা তওবা করতে পারে। এভাবে (তার অবারিত ক্ষমা) চলতে থাকবে সূর্য পশ্চিম দিক থেকে উদিত হওয়া পর্যন্ত। -সহিহ মুসলিম: ২৭৫৯

নেক আমল পাপ মুছে দেয়
কোরআনে কারিমে ইরশাদ হয়েছে, ‘তুমি নামাজ কায়েম করো দিনের দুই প্রান্তভাগে এবং রাতের প্রথমাংশে। অবশ্যই নেক আমল পাপসমূহ মিটিয়ে দেয়। যারা উপদেশ গ্রহণ করে, এ তাদের জন্য এক উপদেশ। -সূরা হূদ: ১১৪

সুতরাং নেক আমলের প্রতি যত্নবান হওয়া চাই। কোনো পাপ হয়ে গেলে সঙ্গে সঙ্গে তওবা করা চাই এবং নেক আমলের মাধ্যমে পাপ মিটিয়ে ফেলা চাই। নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাহাবী আবু যরকে (রা.) একবার এ উপদেশই দিয়েছেন। ইরশাদ করেন, ‘হে আবু যর! যেখানেই থাকো আল্লাহকে ভয় করো এবং কোনো পাপ হয়ে গেলেই নেক আমল করো, তা তোমার পাপ মিটিয়ে দেবে।’ -জামে তিরমিজি: ১৯৮৭

যে সব নেক আমল দ্বারা পাপ মিটে যায় এর অন্যতম হলো নামাজ। বর্ণিত আয়াতে সেদিকে ইশারা রয়েছে। নামাজের মাধ্যমে মাফ চাইলে আল্লাহ দ্রুত মাফ করেন। হজরত আবু বকর (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি হজরত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছেন, ‘কারও কোনো পাপ হয়ে গেলে সে যদি উত্তমরূপে অজু করে এবং দুই রাকাত নামাজ পড়ে আল্লাহর কাছে মাফ চায় আল্লাহ তাকে মাফ করে দেন।’ -মুসনাদে আহমাদ: ২

পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ মধ্যবর্তী গোনাহগুলো মিটিয়ে দেয়
যে ব্যক্তি পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের ব্যাপারে যত্নবান তার কোনো গোনাহ থাকতে পারে না। একে তো নামাজি ব্যক্তি গোনাহ থেকে বেঁচে থাকতে চেষ্টা করবে, প্রতি নামাজেই গোনাহ থেকে মাফ চাইবে এবং গোনাহ থেকে বেঁচে থাকার সংকল্প করবে। তারপরও যদি কোনো গোনাহ হয়ে যায়, তাহলে আল্লাহতায়ালা নামাজের মাধ্যমে বান্দার গোনাহগুলো মিটিয়ে দেন। হাদিসে হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি হজরত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছেন, (তোমাদের কী মনে হয়?) কারও বাড়ির পাশে যদি নদী থাকে আর সে তাতে প্রতিদিন পাঁচ বার গোসল করে, তার শরীরে কি কোনো ময়লা থাকবে? সাহাবায়ে কেরাম উত্তরে বললেন, না; তার শরীরে কোনো ময়লা অবশিষ্ট থাকবে না। নবী করিম (সা.) তখন বললেন, পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের দৃষ্টান্তও এরূপ। এর মাধ্যমে আল্লাহ (বান্দার) পাপসমূহ মিটিয়ে দেন। -সহিহ মুসলিম: ৬৬৭

অন্য হাদিসে ইরশাদ হয়েছে, হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ, এক জুমা থেকে আরেক জুমা, এক রমজান থেকে আরেক রমজানের মধ্যবর্তী সময়ের গোনাহকে মিটিয়ে দেয়; যদি ওই ব্যক্তি কবিরা গোনাহ থেকে বেঁচে থাকে (ওই ব্যক্তির যদি কবিরা গোনাহ না থাকে)। -সহিহ মুসলিম: ২৩৩

অর্থাৎ কবিরা গোনাহ করলে সব গোনাহের কাফফারা হবে না বরং শুধু সগিরা গোনাহের কাফফারা হবে। কারণ, কবিরা গোনাহ তওবা ছাড়া মাফ হয় না (তেমনি বান্দার হকও, যা অন্য হাদিস থেকে বোঝা যায়)।

অজু গোনাহ ধুয়ে দেয়
নামাজের জন্য, কোরআন তেলাওয়াত বা অন্য কোনো আমলের জন্য আমরা অজু করি। নির্দিষ্ট অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ ধৌত করি, অজুর মাধ্যমে পবিত্র হই। এই অজু কিন্তু মানুষের গোনাহগুলোও ধুয়ে দেয়। গোনাহের নাপাকি থেকে মানুষকে পবিত্র করে। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, হজরত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যখন মুসলিম অজু করে, চেহারা ধোয়ার সময় পানির ফোঁটার সঙ্গে চোখের গোনাহগুলো ধুয়ে যায় (বর্ণনাকারী বলেন, অথবা নবী করিম সা. বলেছেন, পানির শেষ ফোঁটার সঙ্গে ধুয়ে যায়)। হাত ধোয়ার সময় হাতের গোনাহগুলো ধুয়ে যায়। পা ধোয়ার সময় পায়ের দ্বারা কৃত গোনাহগুলো ধুয়ে যায়। এভাবে বান্দা গোনাহ থেকে একেবারে পাক-সাফ হয়ে যায়। -সহিহ মুসলিম: ২৪৪

কষ্টের সময় উত্তমভাবে অজু করা গোনাহের কাফফারা
প্রচণ্ড শীতের রাতে অজু করা ভীষণ কষ্টের কাজ। এসন অবস্থায় যে পরিপূর্ণরূপে অজু করবে তার জন্য রয়েছে বিশেষ পুরস্কার। আর সেটা হলো- গোনাহ মিটে যাওয়া। বান্দার গোনাহ মিটে যাওয়ার চেয়ে বড় পুরস্কার আর কী হতে পারে? দীর্ঘ এক হাদিসে ইরশাদ হয়েছে, ‘পাপ মোচনাকরী হলো- নামাজের পর (আরেক নামাজের অপেক্ষায়) মসজিদে অবস্থান করা, পায়ে হেঁটে মসজিদে গমন এবং কষ্টের মুহূর্তে পূর্ণরূপে অজু করা। -জামে তিরমিজি: ৩২৩৩

নামাজের জন্য মসজিদে গমন, কদমে কদমে গোনাহ মাফ
জামাতের সঙ্গে নামাজ আদায় আল্লাহতায়ালার কাছে অনেক প্রিয়। ফলে জামাতের নামাজের জন্য যে কদম আগে বাড়ে তা আল্লাহর কাছে পছন্দনীয়। জামাতে নামাজের জন্য আগে বাড়া প্রতিটি কদমের বিনিময়ে আল্লাহ বান্দার গোনাহ মাফ করেন এবং মর্যাদা বৃদ্ধি করেন। হাদিসে ইরশাদ হয়েছে, হজরত আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, হজরত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘জামাতের নামাজ ঘরের বা বাজারের নামাজ অপেক্ষা পঁচিশ গুণ বেশি সওয়াব রাখে। কারণ, বান্দা যখন উত্তমরূপে অজু করে এবং একমাত্র নামাজের উদ্দেশ্যেই ঘর থেকে বের হয় তো প্রতিটি কদমের বিনিময়ে আল্লাহ তার একটি করে মর্যাদা বৃদ্ধি করেন এবং একটি করে গোনাহ মিটিয়ে দেন। -সহিহ বোখারি: ৬৪৭

সোনালীনিউজ/এএস

Wordbridge School
Link copied!