• ঢাকা
  • মঙ্গলবার, ১৯ মার্চ, ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

মহিলা লীগ নেত্রী পাপিয়ার সব কাজের সঙ্গী স্বামী সুমন


নিজস্ব প্রতিবেদক ফেব্রুয়ারি ২৩, ২০২০, ০৮:৩৩ পিএম
মহিলা লীগ নেত্রী পাপিয়ার সব কাজের সঙ্গী স্বামী সুমন

ছবি: সংগৃহীত

ঢাকা: সদ্য বহিষ্কৃত যুব মহিলা লীগ নেত্রী শামীমা নূর পাপিয়ার নামে রাজধানী ঢাকা ও নরসিংদীতে বিলাসবহুল বাড়ি-গাড়িসহ বিপুল অর্থের সন্ধান পাওয়ার দাবি করেছে র‌্যাপিড অ্যাকশান ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব)। রাজধানীর বিভিন্ন পাঁচতারকা হোটেলে নারীদের অনৈতিক কাজে বাধ্য করে অর্থ আয়ের মাধ্যম ছিল তার। রেলওয়ে ও পুলিশে এসআই পদে চাকরির কথা বলেও বিপুল পরিমাণ অর্থ হাতিয়ে নিয়েছে পাপিয়া। 

রোববার (২৩ ফেব্রুয়ারি) সকালে রাজধানীর ফার্মগেট ইন্দিরা রোডে পাপিয়ার বাসায় অভিযান চালিয়ে ১টি বিদেশি পিস্তল, ২টি ম্যাগজিন, ২০ রাউন্ড গুলি, ৫ বোতল বিদেশি মদ, ৫৮ লাখ ৪১ হাজার টাকা, ৫টি পাসপোর্ট, ৩টি চেক বই, বেশকিছু বিদেশি মুদ্রা ও বিভিন্ন ব্যাংকের ১০টি এটিএম কার্ড উদ্ধার করেছে র‌্যাব। রোববার (২৩ ফেব্রুয়ারি) বিকালে রাজধানীর কারওয়ানবাজারের র‌্যাব মিডিয়া সেন্টারে এসব কথা জানান র‌্যাব-১ এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল শাফী উল্লাহ বুলবুল। 

এদিকে, যুব মহিলা লীগের শামীমা নূর পাপিয়ার সব কর্মকাণ্ডের অন্যতম অংশীদার তার স্বামী মফিজুর রহমান চৌধুরী সুমন। সুমন এক সময় নরসিংদী শহর ছাত্রলীগের আহ্বায়ক ছিলেন। এরপর নরসিংদীর প্রয়াত পৌর মেয়র লোকমানের বডিগার্ড। মূলত প্রয়াত পৌর মেয়রের দ্বারা রাজনীতিতে হাতেখড়ি তার। 

শৈশব থেকেই সন্ত্রাস কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন সুমন। ২০০১ সালে পৌরসভার কমিশনার মানিক মিয়াকে যাত্রা প্যান্ডেলে গিয়ে হত্যার অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। ওই হত্যাকাণ্ডের এজহারভুক্ত আসামি সুমন ওরফে মতি সুমন। হত্যাকাণ্ড ও সন্ত্রাস কর্মকাণ্ডের ওপর ভর করে তার উত্থান। 

২০০৯ সালে প্রেমের সম্পর্কে পর পাপিয়া চৌধুরীকে বিয়ে করেন সুমন। সুমনকে বিয়ের পর পাপিয়া রাজনীতিতে পুরোপুরি জড়িয়ে পড়েন। লোকমান হত্যাকাণ্ডের বছর তিনেক পর পাপিয়া চৌধুরীর ওপর সন্ত্রাসী হামলা হয়। ওই সময় পাপিয়াকে গুলি করে সন্ত্রাসীরা। এরপর তারা নরসিংদী ছেড়ে ঢাকায় পাড়ি জমান। ঢাকায় এমপি সাবিনা আক্তার তুহিনের সঙ্গে সখ্য গড়ে ওঠে তাদের। 

এরপর থেকে পাপিয়া চৌধুরী ও তার স্বামী সুমন ওরফে মতি সুমন রাজধানীর সাবেক এক সংরক্ষিত এমপির আস্থাভাজন হয়ে ওঠেন। ওই এমপির সঙ্গে তার গাড়ির ব্যবসা আছে বলে জানা গেছে। ২০১৮ সালে নরসিংদী জেলা যুব মহিলা লীগের সাধারণ সম্পাদক হয় পাপিয়া। নরসিংদীর শহরের ভাগদী এলাকায় কেএমসি কার ওয়াশ নামে একটি গাড়ির সার্ভিস সেন্টার রয়েছে তার স্বামী সুমনের। নরসিংদীতে রয়েছে সুমন ও তার স্ত্রী পাপিয়ার বিশাল কর্মীবাহিনী। মাঝেমধ্যেই তারা বিশাল শোডাউন দেন আওয়ামী লীগের মিছিল-মিটিংয়ে।

পাপিয়ার স্বামী সুমন ঢাকায় সন্ত্রাসের পাশাপাশি অস্ত্র ব্যবসার সঙ্গেও সম্পৃক্ত থাকার অভিযোগ রয়েছে। শামীমা নূর পাপিয়া যুব মহিলা লীগের পদ বাগিয়ে অভিজাত এলাকায় জমজমাট নারী ব্যবসাসহ ভয়ঙ্কর সব অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িত ছিলেন বলে অভিযোগ উঠেছে। রাজনৈতিক কর্মসূচিতে গিয়ে নেতাদের ফুল দিয়ে সেই ছবিও অপব্যবহার করতেন। শুধু গত এক মাসেই এই নারী রাজধানীর অভিজাত এক পাঁচ তারকা হোটেলে বিশাল অঙ্কের বিল পরিশোধ করেছেন। 

আর এ অর্থ খরচের কারণেই গোয়েন্দাদের চোখ পড়ে পাপিয়ার ওপর। একের পর এক বেরিয়ে আসতে থাকে তার সব অপকর্মের কাহিনী। আলোচিত এই নারী নরসিংদী জেলা যুব মহিলা লীগের সদ্য বহিষ্কৃত সাধারণ সম্পাদক। তিনি নিজেকে কেন্দ্রীয় নেত্রী হিসেবেও পরিচয় দিতেন। এই পরিচয়ের আড়ালে ছিল তার অপরাধমূলক কাজকর্ম। 

গতকাল শনিবার সকালে স্বামী মফিজুর রহমান চৌধুরী সুমন, সাবিক্ষর খন্দকার (২৯), শেখ তায়্যিবা (২২)সহ আরও দুজন বিদেশে যাওয়ার সময় বিমানবন্দর এলাকা থেকে তাকে আটক করে র‌্যাব। পাঁচ তারকা হোটেলে নারী ও মাদক ব্যবসাই তার আয়ের মূল উৎস। দেশের অভিজাত কিছু মানুষ ও বিদেশিরাই এর গ্রাহক। ইন্টারনেটে স্কট সার্ভিস খুলে বসে খদ্দেরদের কাছে তাদের চাহিদামতো সুন্দরী তরুণী পাঠাতেন। রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে শিক্ষিত সুন্দরী তরুণীদের সংগ্রহ করতেন। 

একপর্যায়ে তাদেরকে ধণাঢ্য ব্যক্তিদের শয্যাসঙ্গী করতেন পাপিয়া। সে একাধিক অভিজাত হোটেলের রুম ভাড়া নিতেন নামে-বেনামে। নরসিংদী জেলা শহরে ভাগদী মারকাজ মসজিদ এলাকায় পাপিয়ার বাবা সাইফুল বারীর বাসা। সেখানে গিয়ে দেখা যায় একটি দোতালা পাকা বাড়ি তার বাবার। তার শ্বশুরবাড়ি ব্রাহ্মণদীতে চারতলা একটি বাড়ি আছে। রাজধানীর ফার্মগেট ইন্দিরা রোডে ‘রওশন ডমিনো রিলিভো’ বিলাসবহুল ভবনে তার ও তার স্বামীর নামে দুটি ফ্ল্যাট রয়েছে। 

এ ছাড়া তার কালো ও সাদা রঙের দুটি হায়েস মাইক্রোবাস, একটি হ্যারিয়ার, একটি নোয়া ও একটি ভিজেল কার আছে। তার স্বামীর মালিকানায় থাইল্যান্ডে একটি বারও আছে বলে জানা গেছে। রাজধানীর এফডিসি গেটের সঙ্গে ‘কার এক্সচেঞ্জ’ নামে তার একটি গাড়ির শোরুম আছে বলে জানা গেছে। নরসিংদীর শহরের ব্রাক্ষন্দীতে পাপিয়ার শ্বশুর বাড়িতে গিয়ে কাউকে পাওয়া যায়নি। 

তবে বাড়ির দারোয়ান জানান, বাসার সবাই ঢাকা চলে গেছে। এদিকে পাপিয়ার বাবার বাড়ি ভাগদীতে গিয়ে জানা যায়, পাপিয়া আর সুমন প্রায়ই রাজনৈতিক ও ব্যবসায়ীক কারণে নরসিংদী আসতেন। তবে কি কারণে তাদের গ্রেফতার করা হয়েছে তা জানেন না বলে জানান তার বাবা সাইফুল বারী। সকালে সাদা পোশাকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এসে তাদের সম্পর্কে জানতে চান বলে জানান। তবে এলাকাবাসী তাদের সম্পর্কে ভয়ে কোনো কথা বলতে রাজি হয়নি।

বিষয়ে নরসিংদী জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মতিন ভূঁইয়ার কাছে তাদের বিষয় জানতে চাইলে তিনি জানান, এটা সুমন ও পাপিয়ার ব্যক্তিগত ব্যাপার। এই জায়গায় রাজনৈতিক কোনো বিষয় জড়িত নয়। তারা রাজনৈতিক পরিচয়ে নাম ভাঙিয়ে ঢাকা কি করছে সেটা দেখার কোনো সুযোগ আমাদের নেই। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তাদের গ্রেফতার করেছে তারাই সব বের করবে। আর তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিবে কেন্দ্রীয় নেতারা।

সোনালীনিউজ/এমএএইচ

Wordbridge School
Link copied!