• ঢাকা
  • শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

মাকে ধর্ষণ পর বিয়েতে বাধ্য করে মেয়েকেও ধর্ষণ


সোনালীনিউজ ডেস্ক ডিসেম্বর ১০, ২০১৯, ১১:০০ এএম
মাকে ধর্ষণ পর বিয়েতে বাধ্য করে মেয়েকেও ধর্ষণ

ঢাকা : পাঁচ বছর আগে এক নারীকে জোরপূর্বক ধর্ষণ করেছিলেন এক ব্যক্তি। এরপর ধর্ষণের ছবি ও ভুয়া কাবিননামা দেখিয়ে সেই নারীকে নিজের স্ত্রী বলে দাবি করেছেন।  যদিও সেই নারী তখন আরেকজনের স্ত্রী ছিলেন। পরে বাধ্য হয়ে প্রথম স্বামীকে ছেড়ে দিয়ে ধর্ষককেই বিয়ে করতে বাধ্য হয়েছেন ভুক্তভোগী নারী।  নানা নির্যাতন ও অত্যাচারে কেটে গেছে পাঁচ বছরের সংসার জীবন।

নিজের নিয়তিকে মেনে নিয়ে সব কিছু মুখ বুঝে সয়ে যাচ্ছিলেন তিনি।  কিন্তু কিছু দিন আগে ওই নারীর আট বছরের শিশু কন্যাকেও জোরপূর্বক ধর্ষণ করেছেন তাঁর স্বামী।  নিজের মেয়ের মুখে এই ঘটনা শোনার পরে আর চুপ করে থাকতে পারেননি তিনি।  মেয়েকে ধর্ষণের অভিযোগে স্বামীর বিরুদ্ধে মামলা করেছেন।  মামলার পরে পুলিশের সহায়তায় মেয়ের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করিয়েছেন তিনি।  ডাক্তারি পরীক্ষাতেও মিলেছে আলামত।

ভুক্তভোগী ওই নারী, একাধিক প্রতিবেশী এবং দায়ের করা মামলা সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

রাজধানীর ভাটারা থানা এলাকায় গত ২০ নভেম্বর রাতে এমন অমানবিক ঘটনাটি ঘটিয়েছেন মো. শামীম ভূঁইয়া (৪৫) নামে এক ব্যক্তি।  মেয়েকে ধর্ষণের অভিযোগে স্ত্রীর দায়ের করা মামলায় তাকে গ্রেফতার করেছে ভাটারা থানা পুলিশ।

ভুক্তভোগী ওই নারী গণমাধ্যমকে জানান, ‘আমার গ্রামের বাড়ি মাদারীপুর জেলায়।  গ্রামে থাকতে ১৪ বছর বয়সেই আমার বিয়ে দিয়েছিল মা-বাবা।  বিয়ের পরে আমার এক ছেলে ও এক মেয়ে হয়েছে প্রথম স্বামীর ঘরে।  আমার স্বামী ঢাকায় একটি গার্মেন্টসের সুপার ভাইজার পদে চাকরি করতেন।  তাই স্বামীর সঙ্গে ঢাকায়ই থাকতাম।  এই শামীম ভূঁইয়ার (বর্তমান স্বামী) সঙ্গে অনেক আগে থেকেই আমাদের পরিচয় ছিল।  তার গ্রামের বাড়ি টঙ্গীতে।  সেখানে তার স্ত্রী-সন্তান থাকে।  আর শামীম বাড্ডায় থাকতো।  ২০১৪ সালে আমি এক দিন শামীমের বাড়িতে বেড়াতে গিয়েছিলাম।  সেই দিন রাতে শামীম আমাকে একটি ঘরে আটকে রেখে জোরপূর্বক ধর্ষণ করেছিল।’

তিনি আরো জানান, ‘ধর্ষণের সময় সে (শামীম) সব কিছু ভিডিও ও ছবি তুলে রাখছিল।  আর এসব যদি আমি কাউকে বলে দেই তাহলে আমার পরিবারের অন্যদের ক্ষতি করবে বলে হুমকি দিয়েছিল।  তাই ভয়ে আমি কাউকে কিছুই বলি নাই।  এই ঘটনার কিছু দিন পরে শামীম সব খারাপ খারাপ ছবি আমার স্বামীর কাছে নিয়া দেখাইছে। তখন আমার স্বামী আমাকে নিয়ে আর ঘর করবে না বলে জানায়।  খালি ছবিই পাঠায় নাই; শামীম ভুয়া বিয়ের কাবিননামা বানিয়ে আমার শ্বশুরবাড়িতে গিয়ে বলেছিল আমার সঙ্গে তার নাকি বিয়ে হয়েছে।  পরে আমার শ্বশুর বাড়ির কেউই আমাকে আর মেনে নেয় নাই।  এরপর শামীম জোর করে আমাকে তার সঙ্গে নিয়ে আসে।  আমি তখন ছোট দুই বাচ্চা নিয়া কই যাবো।  তাই বাধ্য হয়ে তাকেই দ্বিতীয় স্বামী হিসেবে মেনে এত দিন ধরে সংসার করেছি।’

ভুক্তভোগী নারীর দাবি, বিয়ের পর থেকে প্রায় প্রতিদিনই কারণে অকারণে তাকে নির্যাতন করতো শামীম।  সংসারের খরচও ঠিক মতো দিতো না।  তাই সংসার চালাতে নিজেই ছোট একটি ব্যবসা শুরু করেছেন।  বড় ছেলেকে একটি মাদ্রাসায় রেখে পড়াশোনা করাচ্ছেন তিনি।  আর ছোট মেয়েটির বয়স মাত্র আট বছর, তাই মেয়েকে নিজের কাছে রেখেই স্কুলে পড়াচ্ছেন। শামীম তার সন্তানদের সামনেই সব সময় তাকে মারধর করতো বলে অভিযোগ করেছেন তিনি।  গায়ে হাত তোলার বাইরেও আরও নানাভাবে তাকে প্রহার করতো বলে দাবি ওই নারীর।  কিন্তু সন্তানদের মুখের দিকে চেয়ে সব কিছু মেনে নিয়েই জীবন চলছিল তার।

শামীম সৎ বাবা হলেও আট বছরের শিশু কন্যার সঙ্গে সব সময়ই হাসি ঠাট্টা ও দুষ্টামি করতেন।  মাঝে মধ্যে ঠাট্টার ছলে ছোট শিশুটির শরীরের বিভিন্ন স্পর্শকাতর অঙ্গে হাত দিতো।  এসব বিষয় একাধিকবার তার মাকে জানিয়েছিল শিশুটি। কিন্তু বাবা-মেয়ের ঠাট্টা ও দুষ্টামি ভেবে গুরুত্বের সঙ্গে মেয়ের কথায় কান দেননি শিশুটির মা।

ব্যবসার কাজে মাঝে মধ্যে ভারতে যেতেন ওই নারী।  আর দেশের বাইরে গেলে মেয়েকে তার এক বান্ধবীর কাছে রেখে যেতেন তিনি।  গত নভেম্বর মাসেও মেয়েকে ওই বান্ধবীর কাছে রেখে ভারতে গিয়েছিলেন।  কিন্তু ৭ নভেম্বর রাত ৯টার দিকে বান্ধবীর কাছ থেকে মেয়েকে বাসায় ডেকে নিয়ে যান শামীম ভূঁইয়া।  এরপর ওই রাতেই ৮ বছরের শিশুর ওপর যৌন নির্যাতন চালান শামীম।  পরের দিন সকালে বিষয়টি মায়ের সেই বান্ধবীকে জানায় ওই শিশু।  এরপর বিদেশে অবস্থান করা তার মায়ের সঙ্গে মোবাইলে কাঁদতে কাঁদতেও সব কিছু বলে সে।  ঘটনা শুনেই দ্রুত দেশে চলে আসেন তিনি।  দেশে ফিরে মেয়ের মুখে ভালোভাবে সব কথা শুনে থানায় একটি মামলা দায়ের করেন ওই নারী।

ওই নারী বলেন, ‘আমার বান্ধবী আমাকে ফোন করে বলে, তুই তাড়াতাড়ি আয়।  তোর মেয়ে অসুস্থ।  এরপর আমি দেশে আইসা আমার মেয়ের মুখে সব কথা শুনে; আর দেরি করি নাই।  মেয়েরে নিয়া থানায় গেছি।  হাসপাতালে ডাক্তাররা আমার মাইয়ারে পরীক্ষা কইরা বলে, এইটুকু মেয়েকে কেন ওই লোকের কাছে রেখেছিলাম।  সে (শামীম) এত বাজেভাবে আমার মেয়েটাকে...।’

ভুক্তভোগী ওই শিশুর মায়ের উপস্থিতে তার কাছে ঘটনার বিষয়ে জানতে চাইলে সে জানায়, ‘বাবা সারা রাত আমারে...। বাবা বলেছে আম্মুকে বলে দিলে আমাকে বালিশচাপা দিয়া মারবে।  আগেও এমন করার চেষ্টা করতো। কিন্তু আমি ভয়ে মাকে কিছু বলি নাই, কারণ মাকেও বালিশচাপা দিয়া মেরে ফেলতে চাইতো।’

৮ বছরের কন্যা শিশুকে ধর্ষণের অভিযোগে গ্রেপ্তার হওয়া সেই শামীমের নামে টঙ্গী, বাড্ডা ও পল্টন থানায় একাধিক মামলা আছে বলে জানিয়েছেন তার স্ত্রী।  আর এসব মামলায় সে একাধিকবার গ্রেফতারও হয়েছিলো।

ভুক্তভোগী ওই নারী জানান, ‘শামীম মদ, গাঁজা, ইয়াবা সব কিছুই খাইতো।  সে মাদকের ব্যবসাও করতো।  এসব কারণে তারে অনেকবার পুলিশে ধরে নিয়া গেছে।  পরে আমি আর তার প্রথম স্ত্রী মিলে টাকা পয়সা জোগাড় করে তারে জামিন কইরা আনছি।’

এদিকে শামীমের এই ঘটনার বিষয়ে জানতে তার প্রথম স্ত্রী শাহেদা বেগমের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়।  তিনি বলেন, ‘আমরা কষ্ট করে খাই। সে আমাদের তেমন খোঁজ খবর নেয় না। আমার দুই ছেলেকে নিয়া আমি একটি চাকরি করে সংসার চালাই।’ এরপর স্বামীর বিষয়ে আর কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি তিনি।

এই বিষয়ে জানতে চাইলে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ভাটারা থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মো. জহির বলেন, ‘মামলা দায়েরের দিনই আসামিকে গ্রেফতার করা হয়।  পরে আদালতে ম্যাজিস্ট্রেটের সামনে ওই শিশুর জবানবন্দি রেকর্ড করা হয়েছে।  আসামি এখন কারাগারে রয়েছেন।’ আমাদের সময়।

সোনালীনিউজ/এএস

Wordbridge School
Link copied!