• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ, ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

মাদক নির্মূলে মহাপরিকল্পনা সরকারের


বিশেষ প্রতিনিধি জানুয়ারি ২৭, ২০১৯, ০২:১০ পিএম
মাদক নির্মূলে মহাপরিকল্পনা সরকারের

ঢাকা : মাদক নির্মূলে এবার মহাপরিকল্পনা গ্রহণ করেছে সরকার। ফেব্রুয়ারিতে কয়েকজন গডফাদারসহ প্রায় ২০০ মাদক ব্যবসায়ী আত্মসমর্পণ করবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছে। আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠানে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকার কথা রয়েছে।

এদিকে দেশ থেকে মাদক নির্মূলের অংশ হিসেবেই বিজিবি উখিয়া- টেকনাফ ও খাগড়াছড়ির পার্বত্যাঞ্চলে সীমান্ত সড়ক নির্মাণের প্রস্তাব দিয়েছে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে। এ ছাড়া ইয়াবার আগ্রাসনরোধে শিগগিরই উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন টাস্কফোর্স গঠন করতে যাচ্ছে সরকার। সংশ্লিষ্ট সূত্র এসব তথ্য নিশ্চিত করেছে।

সরকারের নীতিনির্ধারণী মহলের মতে, চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই, রাহাজানি অস্ত্র উদ্ধার, সন্ত্রাসী গ্রেফতার ও জঙ্গি দমনে সফলতার মুখ দেখলেও মাদক নিয়ন্ত্রণ হয়নি। একাধিকবার জিরো টলারেন্স ঘোষণার পরও মাদক নিয়ন্ত্রণে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়নি। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের কারণে মাদকবিরোধী অভিযানে ভাটা পড়লেও এবার আটঘাট বেঁধে নামছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, নির্বাচনকেন্দ্রিক আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সাময়িক নিষ্ক্রিয়তার সুযোগে মাদক ব্যবসায়ীরা আবারো তাদের মাদক ব্যবসা জমজমাট করে তুলেছে। সরকারের মাদক নির্মূলের মহাপরিকল্পনায় আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে দেশকে শতভাগ মাদকমুক্ত করার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত রয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নির্বাচনী ইশতেহার অনুযায়ী এবার তার সরকারের যে কয়েকটি প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন তার মধ্যে জঙ্গি দমন ও মাদক নির্মূল অন্যতম। তাই প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নে তিনি সরকার গঠনের পরদিন থেকেই এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্টদের তাগিদ দিয়েছেন।

ইতোমধ্যে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর চাপে তালিকাভুক্তদের মধ্যে এ পর্যন্ত শতাধিক ব্যক্তি কক্সবাজার জেলা পুলিশের কাছে আত্মসমর্পণ করেছেন। তাদেরকে পুলিশ হেফাজতে রাখা হয়েছে। ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহে টেকনাফে আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠানে এসব মাদক ব্যবসায়ী আনুষ্ঠানিকভাবে আত্মসমর্পণ করবে। যদিও ওই দেড়শ মাদক ব্যবসায়ীর ব্যাপারে পুলিশের পক্ষ থেকে কোনো ঘোষণা আসেনি। আত্মসমর্পণকারীদের মধ্যে ৩০ জন বিভিন্ন স্তরের জনপ্রতিনিধিসহ বদি পরিবারের ৭ সদস্য রয়েছে।

এ ব্যাপারে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের সাবেক মহাপরিচালক মো. মোদাব্বির হোসেন চৌধুরী বলেন, ‘মাদক নিয়ন্ত্রণ করাটা একটু কঠিন বিষয়। পুলিশ চাইলেই পারবে না। রাজনীতিক নেতা, অভিভাবক, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীসহ সবার সমন্বিত প্রচেষ্টা থাকতে হবে।’

‘মাদকের উৎসস্থল বন্ধ করতে হবে। চাহিদার জায়গায়ও হাত দিতে হবে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অসাধু সদস্যদের সীমান্ত পয়েন্ট থেকে প্রত্যাহার করতে হবে। আবার যেকোনো স্থানে মাদকের কারবারে যুক্ত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের চাকরিচ্যুত করার বিধান সৃষ্টি করতে হবে। এসব সম্ভব না হলে আমরা জাতি হিসেবে কোনো অবস্থায়ই মাদকের বিষাক্ত ছোবল থেকে রক্ষা পাব না।’

সূত্র জানায়, মাছ ধরার ট্রলারে বা নৌকায় করে মিয়ানমার থেকে যেসব এলাকায় অনায়াসেই ইয়াবা পাচার হয়ে আসে সেসব এলাকায় সীমান্ত সড়ক নির্মাণে বিজিবি প্রস্তাব দিয়েছে। প্রস্তাবটি সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে যাছাই-বাছাই করা হচ্ছে।

দায়িত্বশীল সূত্রের মতে, মাদকের অনুপ্রবেশ রোধে সরকার প্রস্তাবটি সক্রিয়ভাবে বিবেচনা করছে। ওই প্রস্তাবে বলা হয়েছে সীমান্ত অরক্ষিত থাকার কারণে মিয়ানমার থেকে বিভিন্ন সীমান্ত পয়েন্ট দিয়ে সহজেই মাদক বহন করে নিয়ে আসছে কারবারিরা। সীমান্ত সড়ক নির্মাণ করা গেলে মাদক পাচারের রুট অনেকাংশে বন্ধ হয়ে যাবে। তারপরও স্বল্প পরিসরে মাদক ঢুকলে সেগুলো আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সামাল দিতে সক্ষম হবে।

এ ব্যাপারে বাংলাদেশ মানবাধিকার বাস্তবায়ন সংস্থার চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট সিগমা হুদা বলেন, ‘শর্ষেতে ভূত রয়েছে, মাদক নির্মূল হবে কীভাবে। সরকারপ্রধানের আন্তরিক সদিচ্ছা আছে। তিনি মাদকমুক্ত দেশ বিনির্মাণে সচেষ্ট এটা নিয়ে কোনো সংশয় নেই।’ ‘তবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অসাধু সদস্যরা মাদক নির্মূলে আন্তরিক নন। তারা এই সেক্টর থেকে বখরা পেয়ে মাদক ব্যাবসা জিইয়ে রাখছে’।

তিনি আরো বলেন, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, আইজিপি, ডিজি র্যাব, পুলিশ কমিশনার একদিকে মাদকের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স ব্যক্ত করেন। অন্যদিকে অসাধু সদস্যরা মাদক থেকে বখরা নেয়, বহন করে এবং নিজেরাও ব্যবসায় যুক্ত হয়। এই যদি হয় অবস্থা মাদকটা নির্মূল হবে কীভাবে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সমন্বিত উদ্যোগ এবং পরিকল্পনাজনিত ত্রুটির কারণে মাদক নির্মূল হচ্ছে না। বরং দিন দিন রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ইয়াবা ছড়িয়ে পড়ছে। ইয়াবা একটি মরণঘাতি নেশা। এই নেশার কবলে প্রতিদিন শত শত উদীয়মান তরুণের জীবন অন্ধকারে তলিয়ে যাচ্ছে। দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ না করা গেলে পুরো জাতিকে এর মাশুল দিতে হবে।

পুলিশ সদর দফতরের সূত্রমতে, মাদক নির্মূলে এবার ‘মাল্টি ডাইমেনশনাল প্রজেক্ট’ হাতে নিতে যাচ্ছে সরকার। উদ্যোগের অংশ হিসেবে শিগগিরই মাদক নির্মূলে একটি টাস্কফোর্স গঠন করা হবে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও পুলিশ বাহিনীর প্রতিনিধির সমন্বয়ে গঠন করা ওই টাস্কফোর্স মিয়ানমার গিয়ে তাদের সরকারের সঙ্গে কথা বলবে। টাস্কফোর্স সীমান্ত ঘেঁষে গড়ে ওঠা মিয়ানমারের ইয়াবা কারখানাগুলো সরিয়ে নেওয়ার প্রস্তাব করবে।

এ ব্যাপারে পুলিশের অতিরিক্ত উপমহাপরিদর্শক মনিরুজ্জামান বলেন, এই সরকারের টার্গেট হচ্ছে মাদককে যেকোনো মূল্যে নির্মূল করা। ইতোমধ্যে এ বিষয়ে একটি মাস্টারপ্ল্যান করা হয়েছে। এর আওতায় ইতোমধ্যে কাজ শুরু করা হয়েছে।’ ‘পুলিশের পক্ষে একা মাদক নির্মূল করা সম্ভব নয়। সবার সহযোগিতা লাগবে।

রাজনীতিক, সাংবাদিক, ব্যবসায়ী সমাজের সচেতন অংশ এবং অভিভাবকদেরও এগিয়ে আসতে হবে। মাদকের কুফল সম্পর্কে যার যার অবস্থান থেকে জানান দিতে হবে। এর ভয়াবহতা সম্পর্কেও জনসচেতনতা সৃষ্টি করতে হবে।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!