• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

মানব সেবায় আপনি কী করেছেন?


ফেসবুক থেকে ডেস্ক মার্চ ৫, ২০১৭, ০৫:১০ পিএম
মানব সেবায় আপনি কী করেছেন?

পুলিশ সার্জেন্ট ফাহাদ মোহাম্মদ

ঢাকা: একজন ব্যক্তির প্রয়োজনে রক্ত দেয়া একটি মহৎ কাজ। সচেতনতার অভাবে এবং কিছু ভুল ধারণার কারণে আমরা অনেকেই রক্তদানের মতো মহৎ কাজ এবং দুর্লভ সুযোগ থেকে নিজেদের বঞ্চিত করছি প্রতিনিয়ত।

অথচ সুস্থ্য প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ হিসেবে আমরা প্রতি ১২০ দিন পর কোন রকম শারীরিক ক্ষতি ছাড়াই রক্ত দিয়ে একজন মানুষের জীবন বাঁচাতে ভূমিকা রাখতে পারি। নিয়মিত ব্যবধানে ভেঙ্গে যাওয়া রক্তকণিকা আমাদের শরীরে কোন কাজে আসে না অথচ এই রক্ত অন্যকে দিলে তার জন্য তা হতে পারে অমূল্য।

আবহমানকাল ধরে মানবদেহের জন্য রক্তদান এবং রক্ত গ্রহণের ব্যবহার চলছে। ‘আশরাফুল মাখলুকাত’ বা সৃষ্টির সেরা জীব হিসেবে মানুষের মহামূল্যবান জীবন ও দেহ সুরক্ষায় রক্ত অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও অপরিহার্য তরল উপাদান। যেকোনো দুর্ঘটনায় শরীর থেকে রক্ত ঝরে গেলে দেহের অভ্যন্তরে অন্ত্র বা অন্য কোনো অঙ্গ থেকে রক্তক্ষরণ হলে অস্ত্রোপচারের জন্য রক্তের খুব প্রয়োজন।

প্রসবজনিত অপারেশনের সময় বা বড় ধরনের দুর্ঘটনার মতো নাজুক অবস্থায় রক্ত দেয়া অত্যাবশ্যকীয় হয়ে পড়ে। মানবদেহে রক্তশূন্যতার জন্য রক্ত গ্রহণের যেমন বিকল্প নেই, তেমনি রক্তের চাহিদা পূরণের জন্য রক্ত বিক্রয় বৈধ নয়।

বাংলাদেশে অনেকেই বিভিন্ন সময় রক্তের প্রয়োজনে হন্যে হয়ে ঘুরে বেড়ান। রক্তের প্রয়োজনে ঘুরে বেড়ানো মানুষদের অনেকেই বিভিন্ন উপায়ে সাহায্যে করে থাকেন। কেউ বা নিজে রক্ত দিয়ে, আবার অন্যের থেকে সংগ্রহ করে। কিন্তু আজকাল ইন্টারনেট দুনিয়ায় প্রযুক্তি ব্যবহার করে মানুষকে আরো অনেক উপায়ে সাহায্যে করা যায়। তার অন্যতম উপায় হলো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক।

স্বেচ্ছায় রক্ত দিচ্ছেন পুলিশ সার্জেন্ট ফাহাদ মোহাম্মদ

আর সেই ফেসবুক ব্যবহার করে রক্তের প্রয়োজন এমন মানুষদের সাহায্যে করে যাচ্ছেন বাংলাদেশ পুলিশের এক ট্রাফিক সার্জেন্ট ফাহাদ মোহাম্মদ। যারা সেচ্ছায় রক্ত দিতে আগ্রহী তাদের ফেসবুকের মাধ্যমে যোগাযোগ করিয়ে দেন যাদের রক্ত প্রয়োজন তাদের সঙ্গে। তার এই কাজে অনেকেই খুশি আবার অনেকেই বিরক্ত হন। যারা এমন ভালো কাজে বিরক্ত হন তাদের জন্যই শুক্রবার (৩ মার্চ) তিনি তার ফেসবুকে একটি পোস্ট দিয়েছেন।

সেনালীনিউজের পাঠকদের জন্য পোস্টটি হুবহু তুলে দেয়া হলো:

‘মানুষের প্রয়োজনে আপনি কতটুকু এগিয়ে এলেন সেটাই বলে দিবে আপনি কতটা মানবতাবাদী। ফেসবুকে সারাদিন অন্যকে খোঁচিয়ে পোস্ট না করে সমাজের জন্য ভাল কিছু করুন। যেমন রক্ত সংগ্রহ করতে সাহায্য করা। মাঝেমধ্যে সরকারি হাসপাতালে গিয়ে দরিদ্র রোগীদের একটু হলেও সাহায্য করা। কিংবা সমাজের অসহায় মানুষের পক্ষে ভাল হয় এমন কিছু করতে পারেন।

ফাহাদ মোহাম্মদ এর উদ্যেগে সেচ্ছায় রক্ত দিচ্ছেন আরেক পুলিশ

কিন্তু আপনাদের বেশিরভাগ পোস্ট থাকে অন্যের সমালোচনা। কিভাবে একজনকে পচানো যায় সেই চিন্তায় মগ্ন হয়ে ইন্টারনেট ঘাটাঘাটি করেন। মাঝেমধ্যে পচানো এক জিনিস আর উদ্দেশ্য প্রণোদিত হয়ে সবসময় করা আরেক জিনিস। যদিও আমি আপনাদের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যকে সম্মান করি।

আমার পরিচিত অনেক পাবলিক ফিগার আছেন, তাদের কেউ রাজনীতিবিদ, কেউ ব্যবসায়ী, কেউ সাংবাদিক, কেউ চাকুরীজীবী। তাদের মধ্যে অনেকই আছেন যাদের কথায় তাদের অনুসারীরা জীবনও দিতে পারে। তারা যদি রক্তের প্রয়োজনে দেয়া পোস্ট কিংবা মানবিক আবেদন জনিত পোস্টগুলো রি-পোস্ট কিংবা শেয়ার করেন তাহলে এর কার্যকারিতা আমার মত অখ্যাত মানুষের পোস্টের তুলনায় শতগুণ বেশি কার্যকর হবে।

ফাহাদ মোহাম্মদ এর উদ্যেগে স্বেচ্ছায় রক্ত দিচ্ছেন আরেক যুবক

রাজনীতি যদি মানুষের জন্য করেন, তাহলে মানুষের ভালোবাসাই আপনাকে বড় করবে। তেমনি প্রতিটি পেশার মানুষ যদি যে যার যায়গা থেকে অসহায় মানুষদের সাহায্যে এগিয়ে আসে তাহলে সমাজটা অন্যরকম হয়ে যাবে।

আমি প্রতিদিন রক্তের পোস্ট দেই বলে অনেকেই বিরক্ত হন। যদিও তাদের বিরক্তিতে আমার কিছু যায় আসে না। অনকে মনে করে আমি হয়ত রক্ত নিয়ে ব্যবসা করি। তাদের কথায়ও আমার কিছু যায় আসে না। রক্তের প্রয়োজনে যাতে একটি মানুষও আমার সামনে না মরে সেটাই আমার দেখার বিষয়। আপনার নিকটাত্মীয় কারো রক্তের প্রয়োজন হলে আমাকে নক করতে পারেন।

মানুষ মানুষের জন্য। জীবন জীবনের জন্য। রক্ত দিন জীবন বাঁচান’।

লেখক: ফাহাদ মোহাম্মদ, পুলিশ সার্জেন্ট।


সোনালীনিউজ/ঢাকা/আকন

Wordbridge School
Link copied!