• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

মানবাধিকারের ধর্ম ইসলাম, মানবতার নবী মুহাম্মাদ (সা.)


প্রফেসর এমদাদুল হক খান ফেব্রুয়ারি ১৬, ২০১৮, ০১:১৫ পিএম
মানবাধিকারের ধর্ম ইসলাম, মানবতার নবী মুহাম্মাদ (সা.)

ঢাকা : মানবাধিকার প্রতিটি মানুষের এক ধরনের অধিকার যেটা তার জন্মগত ও অবিচ্ছেদ্য। মানুষ এ অধিকার ভোগ করবে এবং চর্চা করবে। মানবাধিকার সব জায়গায় এবং সবার জন্য সমানভাবে প্রযোজ্য। এ অধিকার একই সাথে সহজাত ও আইনগত অধিকার। স্থানীয়, জাতীয়, আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক আইনের অন্যতম দায়িত্ব হলো এসব অধিকার রক্ষণাবেক্ষণ করা।

 

সর্বজনীন মানব অধিকার ঘোষণা ছিল ২য় বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী নবরূপে সৃষ্ট জাতিসংঘের অন্যতম বৃহৎ অর্জন। মোটা দাগে এই হলো বিশ্ব মানবাধিকার এবং আন্তর্জাতিক মানবতা দিবসের ইতিকথা ও প্রতিপাদ্য। বিশ শতকের আশির দশকে গণতন্ত্রের পুনঃপ্রতিষ্ঠার দাবিতে সারা বিশ্বে যখন একনায়কতান্ত্রিক শাসনের বিরুদ্ধে আন্দোলন চলছিল, বাংলাদেশের নাগরিক সমাজের আন্দোলন তখন মানবাধিকারের কাঠামোর আওতায় একটি শক্তিশালী ভিত্তি পেয়েছিল এবং বাংলাদেশের নেতৃস্থানীয় মানবাধিকার সংস্থাগুলো এ সময়ে প্রতিষ্ঠিত হয়।

মানবতার নবী হজরত মোহাম্মদ (সা.)-এর জীবনের পুরোটাই ছিল মানুষ ও মানবতার স্বর্ণালি আদর্শ ও শিক্ষায় ভরপুর। মহানবীই (সা.) সবার আগে শাশ্বত ও সর্বোচ্চ মানবাধিকারের ঘোষণা দিয়ে গেছেন। ১২১৫ সালের ম্যাগনাকার্টা, ১৬২৮ সালের পিটিশন অব রাইটস, ১৬৭৯ সালের হেবিয়াস কর্পাস অ্যাক্ট, ১৬৮৯ সালের বিল অব রাইটস এবং ১৯৪৮ সালের ১০ ডিসেম্বর জাতিসংঘ কর্তৃক ঘোষিত সার্বজনীন মানবাধিকার ঘোষণা মানুষের সামনে আসার বহু শত বছর আগেই মানবতার নবী (সা.) ভাষণে মানুষের আর্থ-সামাজিক, ধর্মীয় ও রাজনৈতিক অধিকার ঘোষিত হয়েছে।

মানবাধিকারে ধর্ম ইসলাম। মানবতার নবী মুহাম্মদ (সা.)। ইসলাম প্রদত্ত মানবাধিকারগুলো সংক্ষেপে উল্লেখ করা হলো।

১. জীবনের মর্যাদা বা বেঁচে থাকার অধিকার। ২. অক্ষম ও দুর্বলদের নিরাপত্তা লাভের অধিকার। ৩. মহিলাদের মান-সম্ভ্রমের নিরাপত্তা লাভের অধিকার। ৪. অন্ন বস্ত্র ও চিকিৎসা পাবার অধিকার। ৫. ন্যায় আচরণ লাভের অধিকার। ৭. সমতার অধিকার। ৮. পাপ কাজ বর্জন করার অধিকার। ১০. রাজনৈতিক কার্যক্রমে অংশ গ্রহণের অধিকার। ১১. ব্যক্তি স্বাধীনতা। ১৩. মান-সম্মানের নিরাপত্তার অধিকার। ১৪. ব্যক্তিগত গোপন জীবনের নিরাপত্তা। ১৫. যুলুমের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের অধিকার। ১৬. স্বাধীন মতামত প্রকাশের অধিকার। ১৭. স্বাধীন বিবেক ও বিশ্বাসের অধিকার। ১৮. ধর্মীয় অনুভ‚তিতে আঘাত থেকে বাঁচার অধিকার। ১৯. সভা-সমাবেশের অধিকার। ২০.  অপরের কর্মকাণ্ডের দায়-দায়িত্ব থেকে অব্যাহতির অধিকার। ২১. সন্দেহের শিকার হওয়া থেকে মুক্ত থাকার অধিকার। ইসলামই একমাত্র ধর্ম যেখানে সম্পূর্ণভাবে মানবাধিকার অক্ষুন্ন রয়েছে। সমানভাবে এবং বিস্তৃত অবয়বে ইসলাম প্রতিষ্ঠা করেছে মানবাধিকার। একজন মানুষের জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত- এমন কোনো স্তর বা এমন কোনো দিক-বিষয় নেই যেখানে ইসলাম অধিকারের কথা বলেনি।

রাসুল (সা.) বলেছেন, প্রত্যেক ব্যক্তিকে সৃষ্টি করা হয়েছে স্বভাবের ওপর। সে স্বভাবের মধ্যে রয়েছে স্বাধীনতা। বিভিন্ন প্রদেশে পাঠানো গভর্নরদের এক বিচার সভায় একজন গভর্নরকে লক্ষ্য করে হজরত ওমর (রা.) বলেছিলেন, আল্লাহ তো প্রত্যেক মানুষকে স্বাধীন করে সৃষ্টি করেছিলেন এবং প্রত্যেক মা তাঁর সন্তানকে স্বাধীনভাবে জন্ম দিয়েছেন, কে তোমাদের গোলাম করল? বিশ্বব্যাপী মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য হজরত ওমরের (রা.) এই একটি মাত্র বাণীর বাস্তবায়নই যথেষ্ট।

রাসুল (সা.)-এর গোটা জীবনটাই কেটেছে মানবাধিকার আন্দোলনে জড়িত থেকে। মানবতার সঙ্গেই ছিল তার নিত্য বসবাস। মানবাধিকার প্রতিষ্ঠায় বিভিন্ন সম্প্রদায়ের লোকদের মধ্যে সম্পীতি ও ঐক্যে সমুন্নত রাখাকে গুরুত্ব করেছেন রাসুল (সা.)। রাসুল (সা.)-এর সময়কালে হিজরি ৬২৪ সালের মদিনা সনদ বিশ্ব মানবাধিকারের স্বীকৃতির জন্য বিখ্যাত। দেখুন রাসুল (সা.) এখানেও কীভাবে মানবতার পক্ষে কাজ করেছেন।

মদিনার সনদের মানবাধিকার সংক্রান্ত কিছু ধারা হলো- ১. মদীনা সনদে স্বাক্ষরকারী ইহুদি, খ্রিষ্টান, পৌত্তলিক ও মুসলমান সম্পদায়সমূহ সমান নাগরিক অধিকার ভোগ করবে এবং তারা একটি জাতি গঠন করবে। ২. পূর্ণ ধর্মীয় স্বাধীনতা বজায় থাকবে। মুসলমান ও অমুসলমান সম্প্রদায়ের লোকেরা বিনা দ্বিধায় নিজ নিজ ধর্ম পালন করতে পারবে। কেউ কারো ধর্মে হস্তক্ষেপ করতে পারবে না। ৩. রক্তপাত, হত্যা, ব্যভিচার এবং অপরাপর অপরাধমূলক কার্যকলাপ একেবারেই নিষিদ্ধ করা হলো। ৪. দুর্বল ও অসহায়কে সর্বতোভাবে সাহায্য ও রক্ষা করতে হবে। ৫. ইহুদিদের মিত্ররাও সমান নিরাপত্তা ও স্বাধীনতা ভোগ করবে।

মানবাধিকার প্রতিষ্ঠা এবং মানবতার পক্ষে কাজ করার অসংখ্য উদাহরণ, অগণিত আদর্শ প্রতিষ্ঠিত রয়েছে রাসুল (সা.)-এর জীবনে এবং ইসলামই একমাত্র ধর্ম যে ধর্মে মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার চূড়ান্ত বাণী উচ্চারিত হয়েছে। কিন্তু আফসোস ইসলামের প্রকৃত ধারক-বাহকরা আজ এই নববি আর্দশ থেকে অনেক দূরে।

আজ সমাজের বিভিন্ন স্তরে, বিভিন্ন পর্যায়ে নানাভাবে লঙ্ঘিত হচ্ছে মানবাধিকার। মানুষ হারাচ্ছে তার ন্যায্য অধিকার। পাশাপাশি বিভিন্ন আন্দোলন গড়ে উঠছে মানবাধিকারের কথা নিয়ে কিন্তু আসলে হচ্ছেটা কী? প্রকৃত অর্থেই কি প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে মানবাধিকার? মানুষ কি ফিরে পাচ্ছে ন্যায্য অধিকার?

মানবাধিকার এবং মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার সার্থক পদ্ধতি হচ্ছে ইসলাম এবং রাসুল (সা.) বাস্তবায়িত পদ্ধতি। যতদিন পর্যন্ত এই পাথেয় মানবাধিকার আন্দোলনের গাইডলাইন হিসেবে ব্যবহৃত না হবে সফলতা আধুনাই থেকে যাবে সুনিশ্চত!

লেখক : শিক্ষক, এশিয়ান ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!