• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

মানা হচ্ছে না পেঁয়াজের বেঁধে দেয়া দাম


নিজস্ব প্রতিবেদক নভেম্বর ১৩, ২০১৯, ০১:০৩ পিএম
মানা হচ্ছে না পেঁয়াজের বেঁধে দেয়া দাম

ঢাকা : ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের কারণে পেঁয়াজ সরবরাহ ব্যাহত হওয়ার সুযোগ নিচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। নিজেদের দেওয়া সব প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করে তারা বাড়িয়েছেন পেঁয়াজের দাম। শ্যামবাজার ও খাতুনগঞ্জে এখন আর মানা হচ্ছে না বেঁধে দেওয়া দর। আবারো যে যার মনমতো দামে পেঁয়াজ বিক্রি শুরু করেছেন।

গত মঙ্গলবার পেঁয়াজের দাম একশ টাকার নিচে নামিয়ে আনার আশ্বাস দিয়েছিলেন চট্টগ্রামের ব্যবসায়ীরা। এরপর গত শনিবার পর্যন্ত ওই বাজারে দাম বেশ কম ছিল।

অপরদিকে গত শুক্রবারে আমদানি পেঁয়াজের দাম কমিয়ে ৫৫ থেকে সবোর্চ্চ ৮৫ টাকার মধ্যে বেঁধে দিয়েছে শ্যামবাজার বণিক সমিতি। দেশের সবচেয়ে বড় বাজার খাতুনগঞ্জের পরে রাজধানীর বড় বাজার শ্যামবাজারে এ দরপতনের খবরে স্বস্তির ইঙ্গিত মিলেছিল পেঁয়াজের দরে। ওই সময় বিভিন্ন বাজারে পেঁয়াজের দর কমেও যায়।

কিন্তু ওইদিনই পেঁয়াজের দাম ১০০ টাকার নিচে নামার সম্ভাবনা আপাতত নেই- বাণিজ্যমন্ত্রীর এমন বক্তব্যে হঠাৎই সে স্বস্তি জলে গেছে। বাজারে মন্ত্রীর এমন বক্তব্যে চূড়ান্ত নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। তারপরই যুক্ত হয় ঘূর্ণিঝড় বুলবুল। ঝড়ের কারণে বন্দর থেকে পেঁয়াজ খালাস ব্যাহত হয়েছে তিন দিন। তাতে সরবরাহ কমে যাওয়ায় বাজারে দাম বেড়ে গেছে। কয়েক দিনের ব্যবধানে প্রতি কেজি পেঁয়াজের দাম এখন খুচরায় ৩০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে।

এ অবস্থায় শ্যামবাজারে বেঁধে দেওয়া দামে পেঁয়াজ কেনা যাচ্ছে না। মঙ্গলবার (১২ নভেম্বর) সরেজমিনে ওই বাজারে বিভিন্ন আড়তে পেঁয়াজ বিক্রি বন্ধ রাখতে দেখা গেছে। সেখানে ব্যবসায়ীরা দাবি করছেন শ্যামবাজার বণিক সমিতির বেঁধে দেওয়া দামের মধ্যে আমদানিকারদের কাছে পেঁয়াজ কিনতে পারেননি তারা। ফলে বিক্রিও বন্ধ রেখেছেন।

যদিও কিছু আড়তে গোপনে চড়া দামে পেঁয়াজ বিক্রির খবর পাওয়া গেছে। আবার দেশি পেঁয়াজের দাম নির্ধারিত না থাকায় সেসব বিক্রি হচ্ছে মনমতো দামে।

এ বিষয়ে শ্যামবাজার কৃষিপণ্য আড়ত বণিক সমিতির সভাপতি মো. সাঈদ বলেন, সরকার ও জনগণের সুবিধার্থে এক রকম চাপের মধ্যেই এ দাম বেঁধে দেওয়া হয়েছিল। তারপর গত শনিবার পর্যন্ত প্রায় সব আড়তে পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছিল সে দামেই। কিন্তু ঘূর্ণিঝড়ের পড়ে আড়তে আর কোনো পেঁয়াজ নেই। এ কারণে বিক্রি বন্ধ রাখা হয়েছে।

গোপনে পেঁয়াজ বিক্রি করার বিষয়ে তিনি বলেন, এমন অভিযোগ আমাদের কানেও এসেছে। সুনির্দিষ্ট তথ্যের ভিত্তিতে এসব ব্যবসায়ীদের ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

সংশ্লিষ্টরা বলছে, খাতুনগঞ্জসহ বিভিন্ন বাজারে মূল্য স্বাভাবিক করতে প্রশাসনের নিয়মিত নজরদারি, জরিমানা এবং অভিযান থাকলেও কাজ হচ্ছে না কিছুই। ভারত রপ্তানি বন্ধের পর থেকে পেঁয়াজের দামের ঊর্ধ্বগতি রোধ অনেকটা অসম্ভব হয়ে পড়েছে। পেঁয়াজের দামে এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের প্রভাব। ঘূর্ণিঝড়ের অজুহাতেও পেঁয়াজের দাম বাড়ছে।

পেঁয়াজের দাম নতুন করে বেড়েছে সেই চিত্র উঠে এসেছে সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) নিয়মিত বাজার মনিটরিং প্রতিবেদনেও। সংস্থাটির তথ্যে বাজারে দেশি পেঁয়াজের দাম ১৫ থেকে ২০ টাকা এবং আমদানি পেঁয়াজের দাম ১০ থেকে ১৫ টাকা বেড়েছে। আর বর্তমানে বাজারে পেঁয়াজের দাম এক বছরের ব্যবধানে বেড়েছে ৩১৫ শতাংশ।

ঘূর্ণিঝড়ের পড়ে একই অবস্থা চট্টগ্রামের শ্যামবাজারে। সেখানে একশ টাকার মধ্যে পেঁয়াজ বিক্রির কথা থাকলেও গতকাল মিয়ানমার থেকে আমদানি হওয়া পেঁয়াজ ১২০ টাকা কেজিতে বিক্রি হয়েছে। ঘূর্ণিঝড়ের আগে মিয়ানমারের এসব পেঁয়াজের দাম ১০০ টাকার নিচে নেমে এসেছিল।

অন্যদিকে মিসর ও চীন থেকে আমদানি হওয়া পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ১০৫ টাকায়। এই পেঁয়াজ কেজিপ্রতি ৭০ টাকায় নেমে এসেছিল।

খাতুনগঞ্জের ব্যবসায়ী মোহাম্মদ ইদ্রিস বলেন, ঘূর্ণিঝড়ের কারণে তিন দিন পেঁয়াজ খালাস হয়নি। তাতে বাজারে পেঁয়াজের সরবরাহে সংকট তৈরি হয়েছে। ঝড় কেটে যাওয়ায় এখন পেঁয়াজের সরবরাহ বাড়লে দামও কমবে। এর জন্য দু-একদিন সময় লাগবে।

এদিকে ক্রেতা ও সংশ্লিষ্টদের দাবি, বাজারে ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান যতক্ষণ পরিচালিত হয়, ততক্ষণ ঠিক নিয়ন্ত্রণে থাকে পেঁয়াজের দাম। এরপরই কৃত্রিম সংকট দেখিয়ে পুনরায় বাড়িয়ে দেওয়া হয় পেঁয়াজের দাম। বিভিন্ন অজুহাতকে কাজে লাগিয়ে একটি চক্র পেঁয়াজের সংকট দেখিয়ে খুচরা বাজারে বাড়তি দামে বিক্রি করছেন।

ফলে ফলে বাজার নিয়ন্ত্র্ত্রণে সরকারের ডজনখানেক বৈঠক, অভিযান কিছুই কাজে আসছে না বরং লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে এ নিত্যপণ্যের দাম। তার ঝাঁজ সামলাতে নাভিশ্বাস উঠছে ক্রেতাদের।

অন্যদিকে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এবং বিভিন্ন জেলা প্রশাসনের ভ্রাম্যমাণ আদালতের যৌথ অনুসন্ধানে ওইসব চক্রের অনেকের নামও উঠে এসেছে। যারা পেঁয়াজ আমদানিকারক, সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট, আড়তদার ও বিক্রেতা। তবে সরকার তাদের বিরুদ্ধে সামান্য কিছু জরিমানা ব্যতীত কোনো দৃশ্যমান পদক্ষেপ নিতে পারেনি।

এসব বিষয়ে কনসাস কনজুমার্স সোসাইটি (সিসিএস) নির্বাহী পরিচালক পলাশ মাহমুদ বলেন, পেঁয়াজের সিন্ডিকেট ভাঙতে ব্যর্থ হয়েছে সরকার। তাতে তারা আরো বেশি তৎপর হওয়ার সুযোগ পেয়েছে। সরকারের ব্যর্থতা পেঁয়াজের বাজারে নৈরাজ্য সৃষ্টিতে এক প্রকার ইন্ধন দিচ্ছে। সরকার আগে থেকে কঠোর ব্যবস্থা নিলে এমনটা হতো না।

পেঁয়াজের দাম নিয়ন্ত্রণে সরকারের নেওয়া পদক্ষেপগুলো কার্যকর হয়নি। সংকট মোকাবেলায় কয়েকটি শিল্পগ্রুপকে পেঁয়াজের বড় চালান আনার অনুমতি দিলেও সেসব আজও  দেশে পৌঁছায়নি। ওই পেঁয়াজ কবে নাগাদ আসবে, কতটুকু আসবে, দেশের জোগান তা দিয়ে কতদিন চলবে তাও ঠিক করে বলতে পারছেন না কেউই।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!