• ঢাকা
  • শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

মানুষের কত বছর বাঁচা উচিৎ?


নিজস্ব প্রতিবেদক ফেব্রুয়ারি ১০, ২০১৬, ০৪:২৭ পিএম
মানুষের কত বছর বাঁচা উচিৎ?

সোনালীনিউজ ডেস্ক
মার্কিন চিকিৎসক এজেকিয়েল এমান্নুয়েলকে সে দেশে বলতে গেলে সকলেই চেনে। তিনি যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ক্লিনিক্যাল বায়োএথিক্স বিভাগের পরিচালক। একজন ক্যান্সার বিশেষজ্ঞ হিসেবে তো বটেই, সেইসঙ্গে তাত্ত্বিক এবং মানসিক প্রশস্তিদায়ক বক্তা হিসেবেও তাকে পছন্দ করে মানুষ। তার প্রসঙ্গ এজন্যে আসছে যে, গত ২১ অক্টোবর যুক্তরাষ্ট্রের রাজধানী নিউইয়র্কে অনুষ্ঠিত ‘World-Changing Idea Summit’এ বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেন- মানুষের কত বছর বাঁচা উচিৎ।

তার ভাষ্যগুলো নতুন করে ভাবনা জাগায়, সন্দেহ নেই। মৃত্যুর মতো অমোঘ আর কিছুই নেই। জানামতে ভাইরাস এবং টুরিটপসিস নিউট্রিকুলা নামক জেলিফিশ ছাড়া পৃথিবীর বাদবাকি প্রাণ মরণশীল। মানুষ মৃত্যু নিয়ে ভীষণ ভাবনাকাতর। এ কাতরতা থেকে বহু তত্ত্ব, গল্প, কিংবদন্তি জন্ম নিয়ে নিয়েছে। গ্রিক পুরানোর একটি গল্প আছে দেবী এওস ও তার পৃথিবীবাসী প্রেমিক টিথোনাসকে নিয়ে। দেবী হওয়ার এওস মৃত্যুহীন, মানুষ হওয়ায় মরণশীল টিথোনাস। দেবী তাই দেবরাজ জিউসকে স্মরণ করেন। তার কাছে প্রার্থনা করেন, যেন টিথোনাসকে অমরত্ব দেয়া হয়। দেবপিতা তার আবেদন গ্রহণ করলেন, টিথোনাসকে অমরত্ব দেয়া হলো, কিন্তু চিরযৌবন দেয়া হলো না। টিথোনাস ক্রমশ বুড়ো হতে লাগলেন, সম্ভাব্য সকল রোগশোকে ভুগতে ভুগতে তিনি বুড়ো থেকে এমন বুড়োই হলেন, দেবীর কাছেই এতোই বিরক্তিকর বস্তুতে পরিণত হলেন যে এওস বাধ্য হলেন তাকে একটি ঘরে আবদ্ধ করে রাখতে। সেই ঘরে একাকী, নির্বাসিত টিথোনাস, দিনরাত তার মৃত্যুর জন্যে করুণ কণ্ঠে আবেদন জানিয়ে যেত।

এজেকিয়েল এামনুয়েল পুরাণের এ ঘটনাটিকে স্মরণ করেন। বলেন, বেশিদিন বাঁচা এক ধরনের ধরনের গৌরব বটে। তবে পৃথক আরেক পথ ধরে চিন্তা এগোলে, তা অগৌরবের কারণও হয়ে দাঁড়ায়। পৃথিবীকে কে তো যৌবনের মতো সৃজন উপহার দেয়া যায় না আর। তাই সামাজিক গুরুত্ব ক্রমশ কমে যেতে থাকে। অক্ষমতাগুলো শরীরকে ক্রমশ অবশ করে দেয়, জীবনের গতিময়তার সঙ্গে খাপ খাইয়ে চলা যায় না কোনভাবেই। নিজেকে প্রতিনিয়ত পিছিয়ে পড়তে দেখা, সবার কাছ থেকে দূরে সরে যেতে দেখাটাও ভীষণ কষ্টের। এই কষ্টের হাত ধরেই অগৌরব আসে। এজেকিয়েল এমান্নুয়েল মনে করেন, একজন মানুষ তার জীবনের সকল দায়িত্ব পালন করে পৃথিবীকে তার দেয়া ও পৃথিবীর কাছ থেকে তার পাওয়ার হিসেবটা নিকেশ করতে পারে পঁচাত্তর বছর বয়েসে এসে। সুতরাং ৭৫ হতে পারে মৃত্যুর জন্যে আদর্শ বয়স। তবে সবার জীবন এক পথে তাকে হাঁটতে শেখায় না। সবাই ঠিক একই সময়ে বুড়োয় না। ৭৫ বছর বয়েসে এসেও অনেকের শারীরিক সক্ষমতা যথেষ্ট থাকতে পারে, অনেকে এমনও মনে করতে পারেন পৃথিবীকে এখনও অনেক কিছু দেয়ার আছে তার। তবে তা সচরাচরের বাহিরের ঘটনা, যে কারণে ধর্তব্য নয়। তার ব্যক্তিগত পরিকল্পনার কথা জানান তিনি।

যদি তিনি ৭৫ অবধি বাঁচেন, তাহলে সে বয়েসের পর তিনি কোন ধরনের চিকিৎসা নেবেন না। কোন কেমোথেরাপি নয়, কোন এন্টিবায়োটিক নয়। জীবনের দৈর্ঘ্যকে প্রভাবিত করতে পারে এমন  কিছুই তিনি গ্রহণ করবেন না। মৃত্যুর জন্যে আনন্দময় অপেক্ষা করতে থাকবেন। স্বেচ্ছামৃত্যুর বিষয়টিও ভাবেন তিনি। তবে এর অপব্যবহার সম্বন্ধেও সচেতন। পৃথিবী আদপে কতখানি সুন্দর, তা মৃত্যুর পূর্বমুহূর্তে সবচেয়ে তীব্রতাসহ বোঝা যায়। যে কারণে জীবন ছেড়ে যাওয়া নিয়ে মানুষের মনে এতো বেদনা জমে থাকে। কিন্তু নির্দিষ্ট বয়সসীমা যদি মন থেকে বেঁধে নেয়া যায়, তবে অযাচিত বেদনাবোধ থেকে, দুশ্চিন্তা থেকে মানুষকে হয়ত অনেকটাই মুক্তি দিতে পারবে। তথ্য সূত্র: বিবিসি

সোনালীনিউজ/ঢাকা/আকন

Wordbridge School
Link copied!