• ঢাকা
  • শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

মামলার বাদী হলো আসামি আর বিচারক হলেন বাদী


ঝিনাইদহ প্রতিনিধি ফেব্রুয়ারি ২৪, ২০২০, ০৫:২৮ পিএম
মামলার বাদী হলো আসামি আর বিচারক হলেন বাদী

ঝিনাইদহ: ঝিনাইদহে নেগোশিয়েবল ইন্সষ্ট্রুমেন্ট অ্যাক্টের (চেক ডিসঅনার) মামলায় মিথ্যা সাক্ষ্য ও চেক টেম্পারিং করার দায়ে ওই মামলার বাদী আব্দুল জলিলের বিরুদ্ধে এক দৃষ্টান্তমুলক রায় দিয়েছেন বিজ্ঞ আদালত। 

রোববার (২৩ জানুয়ারি) ঝিনাইদহ চিফ জুডিশিয়াল ম্যজিষ্ট্রেট মোঃ হাসানুজ্জামান পৃথক দুটি ধারায় আসামি আব্দুল জলিল (বাদী ও পরবর্তীতে) কে দোষি সাব্যস্ত করে ৫ বছরের সশ্রম কারাদন্ড ও দশ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে আরো তিন মাসের কারাদন্ড প্রদান করেন। আব্দুল জলিল ঝিনাইদহ সদর উপজেলার মথুরাপুর গ্রামের মৃত আকবর আলীর ছেলে। আসামির আইনজীবী এড এসএম মশিয়ূর রহমান এ তথ্য নিশ্চিত করেন। 

ঝিনাইদহ চিফ জুডিশিয়াল ম্যজিষ্ট্রেট আদালত সুত্রে জানা গেছে, ২০১৫ সালে আব্দুল জলিল ১৫ লাখ টাকার নেগোশিয়েবল ইন্সষ্ট্রুমেন্ট এ্যক্টের ১৩৮ ধারায় মামলা করেন জনৈক হাসান আলীর বিরুদ্ধে, যার মামলা নং ৯৮/২০১৫। ২০১৭ সালের ২৮ নভেম্বর ঝিনাইদহ যুগ্ম দায়রা জজ ১ম আদালতে সাক্ষ্য প্রদানের সময় মামলার বাদী আব্দুল জলিল শপথ পুর্বক জানান যে, তিনি আসামি হাসান আলীর কাছ থেকে ১৫ লাখ টাকা বুঝে পেয়েছেন। অন্যদিকে মামলার আসামি হাসান আলী আদালতকে জানান, তর্কিত চেকটিতে প্রকৃত পক্ষে ৫০ হাজার টাকা লেখা ছিল। বাদী আব্দুল আজিজ চেক কাটাকাটি করে ৫০ হাজারের স্থলে ১৫ লাখ বানিয়েছেন। 
আসামি হাসান আলী ও জানান যে, তিনি ৫০ হাজার টাকা আব্দুল জলিলকে ইতিমধ্যে পরিশোধ করেছেন। আদালতের সন্দেহ হলে চেকটি পরীক্ষার জন্য ঢাকার সিআইডিতে পাঠানো হয়। সিআইডির পরিদর্শক রুহুল আমীন পরীক্ষান্তে আদালতে রিপোর্ট দেন যে প্রকৃত পক্ষে ৫০ হাজার টাকার স্থলে কাটাকাটি করে ১৫ লাখ লেখা হয়েছে। 

আসামির ৫০ হাজার টাকা প্রদানের স্বীকারোক্তি ও সিআইডির রিপোর্টের সাথে মিল থাকায় তৎকালীন ঝিনাইদহ যুগ্ম দায়রা জজ ১ম আদালতের বিজ্ঞ বিচারক মোঃ সালেহুজ্জামান নিজেই বাদী হয়ে নেগোশিয়েবল ইন্সষ্ট্রুমেন্ট এ্যক্টের ১৩৮ ধারার মামলার বাদী আব্দুল জলিলের বিরুদ্ধে মিথ্যা সাক্ষ্য ও চেক টেম্পারিং এর মামলা করেন। 

আসামি আব্দুল জলিলের বিরুদ্ধে বাদী তথা দায়রা আদালতের বিচারক, হস্তলিপি বিশারদ, আদালতের বেঞ্চ সহকারী ও অফিস সহায়কের মাধ্যমে সন্দেহাতীতভাবে দন্ডবিধির ১৯৩ ও ৪৬৫ ধারার অপরাধ সংঘটিত করেছেন মর্মে প্রমাণিত হয়। ফলে দালিলিক সাক্ষ্য দ্বারা দোষ প্রমানিত হওয়ায় ঝিনাইদহ চিফ জুডিশিয়াল ম্যজিষ্ট্রেট মোঃ হাসানুজ্জামান আসামিকে মিথ্যা সাক্ষ্য প্রদানের জন্য ১৯৩ ধারায় ৩ বছর সশ্রম কারাদন্ড এবং ১০ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে ৩ মাসের বিনাশ্রম কারাদন্ড এবং চেক টেম্পারিং করার দায়ে দন্ডবিধির ৪৬৫ ধারায় দোষি সাব্যস্ত করে আরো দুই বছরের কারাদন্ড প্রদান করেন। 

দুইটি সাজার একটির পর আরেকটি কার্যকর হবে বলে রায়ে উল্লেখ করা হয়। আদালত তার পর্যবেক্ষনে উল্লেখ করেন, প্রায় চেক জালিয়াতির মাধ্যমে সাধারণ জনগনকে মিথ্যা মামলায় ফেলে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ পাওয়া যায়। এই মামলার ঘটনাটি তারই একটি উজ্জল প্রমাণ। ফলে আসামিকে দৃষ্টন্তমুলক শাস্তি না দিলে সমাজ থেকে এই রোগ নির্মূল হবে না। 

সোনালীনিউজ/জেআরটি/এসআই

Wordbridge School
Link copied!