• ঢাকা
  • শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

মারা যাচ্ছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের সাক্ষীরা, থমকে আছে কার্যক্রম!


সোনালীনিউজ ডেস্ক নভেম্বর ১৮, ২০১৯, ১১:১৫ এএম
মারা যাচ্ছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের সাক্ষীরা, থমকে আছে কার্যক্রম!

ঢাকা: একদিকে জনবল সংকট, অন্যদিকে সাক্ষী, আসামি ও ভিকটিম বয়সজনিত কারণে মারা যাওয়ায় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের (আইসিটি) তদন্ত কাজ বিঘ্নিত হচ্ছে। তদন্ত সংস্থা বলছে, এখনও প্রায় ৭০০ অভিযোগ নথিভুক্ত হয়ে আছে এবং অভিযোগ আসা অব্যাহত আছে। এমতাবস্থায় সব অভিযোগ তদন্ত সম্ভব নাও হতে পারে। 

আগামীতে অভিযোগের গুরুত্ব বিবেচনা করে তালিকা তৈরির মধ্যদিয়ে কাজ এগিয়ে নেওয়ার বিকল্প নেই। যদিও মন্ত্রণালয় বলছে, জনবল সংকটের কারণে তদন্ত বিঘ্নিত হচ্ছে, তদন্ত সংস্থা এমন কোনও তথ্য তাদের জানায়নি।

আইসিটি’র তদন্ত সংস্থার সূত্র বলছে, এপর্যন্ত তারা চার হাজার ৩৮ জনের বিরুদ্ধে ৭৫১টি অভিযোগ পেয়েছে। এরমধ্যে ৬৭২টি অভিযোগের তদন্ত বাকি আছে। তদন্ত সম্পন্ন হয়েছে ৭৪টি। ৫টি অভিযোগ স্থগিত করা হয়েছে। 

বর্তমানে তদন্তাধীন রয়েছে ২৭টি, আর বিচারাধীন আছে ৩২টি অভিযোগ। ট্রাইব্যুনালের কার্যক্রম আরও গতিশীল করতে আটটি বিভাগীয় শহরে তদন্ত সংস্থার অফিস স্থাপনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু মন্ত্রণালয় থেকে প্রয়োজনীয় জনবল না দেওয়ায় বিভাগীয় অফিস স্থাপন করা যায়নি।

তদন্ত সংস্থার সমন্বয়ক আব্দুল হান্নান খান মনে বলেন, একদিকে জনবল সংকট, আরেকদিকে সাক্ষীরা এমনকি অভিযোগকারীরা বয়সের কারণে মারা যাচ্ছেন। ফলে এখন আমরা ঘটনার গুরুত্ব বিবেচনায় নিয়ে তালিকা করে তদন্তে এগোবো।

তিনি আরও বলেন, এমনও হয়েছে একটি ঘটনায় অভিযোগ  ১২ জনের বিরুদ্ধে। আমরা তদন্ত করতে গিয়ে ১২ জনের মধ্যে দুজনকে পেয়েছি। আসামি, ভিকটিম ও সাক্ষী সবারই বয়স হয়েছে। এখন যদি কাজটি দ্রুত না করা যায়, আরও দীর্ঘদিন যে তারা বেঁচে থাকবেন এমন তো নয়। ট্রাইব্যুনালের সংখ্যা বাড়ানো, বিভাগীয় পর্যায়ে তদন্ত সংস্থার অফিস করা, সবই জরুরি হয়ে পড়েছে।

ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থার অর্গানোগ্রাম অনুযায়ী ২৮৯টি পদ রয়েছে। বর্তমানে বিভিন্ন পদে কর্মরত আছেন ১৭৫ কর্মকর্তা-কর্মচারী। ১১৪টি পদ শূন্য রয়েছে। তদন্ত সংস্থায় কো-অর্ডিনেটর থেকে ইন্সপেক্টর পর্যন্ত ২০ জন, এসআই থেকে কনস্টেবল পর্যন্ত ৮৪ জন, ড্রাইভার থেকে সুইপার পর্যন্ত পদ রয়েছে ৭১ জনের। এসব পদে প্রেষণে এবং সরাসরি নিয়োগ দেওয়ার অনুমোদন চেয়ে ওপর মহলে চিঠিও পাঠানো হয়েছে, কিন্তু সাড়া পাওয়া যায়নি। 

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা বলেন, ১৭৫টি পদে লোক আছে বলে যেটা বলা হচ্ছে, সেসবের মধ্যে সরাসরি তদন্ত কাজে জড়িত হন বড়জোর ১১/১২ জন। বাকিরা সহযোগিতামূলক ও মনিটরিংয়ের পদে আছেন। গবেষণা বিষয়ক একটি পদ থাকলেও সেখানে নিয়োগ দেওয়া হয়নি। এমতাবস্থায় এত অভিযোগের সবগুলো বিচারের মুখোমুখি করা সম্ভব হবে, এটা ভাবার কোনও কারণই নেই।

তদন্ত সংস্থার কো-অর্ডিনেটর সানাউল হক বলেন, আমাদের কাছে এখনও প্রায় ৭০০ অভিযোগ রয়েছে। এই জনবল নিয়ে যতটা করা সম্ভব আমরা করছি। এই বিপুল অভিযোগ কেবল পূর্ণ জনবল থাকলেই করা সম্ভব। এ বিষয়ে মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়েও আমরা সাড়া পাইনি।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (রাজনৈতিক ও আইসিটি) আবু বকর ছিদ্দিক বলেন, শুরু থেকে যে জনবল আছে, সেটি তো কমানো হয়নি। তারা বেশকিছু তদন্ত করেছে। এখন তো বরং চাপ কমেছে। তারা তো কম জনবলের বিষয়ে আমাদের কোনও অভিযোগ করেনি।

সাতশ’ অভিযোগ দ্রুততার সঙ্গে তদন্ত না করলে সাক্ষী, ভিকটিম ও আসামি মারা যাওয়ায় বিচার না হওয়ার শঙ্কা তৈরি হচ্ছে জানানো হলে এই কর্মকর্তা বলেন, ‘আমি এমন কিছু শুনিনি। তাদের জনবল কম থাকলে চাইতে পারতো। তিনি তদন্ত সংস্থার সঙ্গে কথা বলবেন বলেও জানান।

প্রসঙ্গত, একাত্তরে গণহত্যা, হত্যা, অপহরণ, নির্যাতন, ধর্ষণসহ বিভিন্ন মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্তদের বিচারের জন্য ২০১০ সালের ২৫ মার্চ আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল গঠন করা হয়। প্রথমে একটি বেঞ্চে বিচার কাজ শুরু হলেও মামলার চাপ বেড়ে যাওয়ায় ২০১২ সালের ২২ মার্চ দ্বিতীয় ট্রাইব্যুনাল গঠন হয়। তবে তিন বছর পর ২০১৫ সালে দ্বিতীয় বেঞ্চটি বিলুপ্ত করা হয়।বাংলা ট্রিবিউন

সোনালীনিউজ/এইচএন

Wordbridge School
Link copied!