• ঢাকা
  • শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১
অগ্নিঝরা মার্চ

মার্চজুড়ে প্রতিবাদ ছিল রাজশাহীতে


নিজস্ব প্রতিবেদক মার্চ ১২, ২০১৯, ০২:৩৭ পিএম
মার্চজুড়ে প্রতিবাদ ছিল রাজশাহীতে

ঢাকা : পাকিস্তানের তদানীন্তন শাসক গোষ্ঠীর ১৯৭১ সালের ১ মার্চ জাতীয় পরিষদের নির্ধারিত ৩ মার্চের অধিবেশন স্থগিতের ঘোষণায় সর্বস্তরের জনগণের স্বতঃস্ফূর্ত প্রতিবাদে রাজশাহী শহর উত্তাল হয়ে ওঠে। হানাদারদের নৃশংস ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে জাতীয় পরিষদের অধিবেশন স্থগিতের ঘোষণায় বিক্ষোভ ও প্রতিবাদের শহরে পরিণত হয় রাজশাহী। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান জাতীয় পরিষদের অধিবেশন স্থগিতের ঘোষণা প্রত্যাখ্যান করে ২ মার্চ ঢাকা এবং ৩ মার্চ দেশব্যাপী ধর্মঘটের ডাক দেন।

ওই উত্তাল দিনগুলোর স্মৃতিচারণ করে শাহ মখদুম ডিগ্রি কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ ডা. তাসিকুল ইসলাম রাজা বলেন, হাজার হাজার মানুষ সর্বদলীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ ও শ্রমিক সংগ্রাম পরিষদের ব্যানারে রাস্তায় নেমে আসে। তারা ১৯৭০ সালের নির্বাচনে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জনকারী দলের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তরের দাবি জানায়।

৩ মার্চ দেশব্যাপী হরতাল কর্মসূচির দিন সরকারি-বেসরকারি অফিস, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, স্কুল-কলেজ ও কলকারখানায় কাজ সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে যায়। শহরে সর্বাত্মক হরতাল পালিত হয়।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আদালত চত্বর পর্যন্ত ৮ কিলোমিটার রাস্তা রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মী ও স্বাধীনতাকামী মানুষের মিছিল-স্লোগানে উত্তাল হয়ে ওঠে। একই সঙ্গে শহরের সব সড়কে মিছিল স্লোগানে ধ্বনিত হতে থাকে ‘জাগো জাগো বাঙালি জাগো’, ‘বীর বাঙালি অস্ত্র ধরো বাংলাদেশ স্বাধীন করো।’

এদিন বেলা সাড়ে ১১টায় দখলদার বাহিনী রানীবাজার এলাকায় পার্শ্ববর্তী টেলিফোন এক্সচেঞ্জ ভবন থেকে একটি মিছিলে গুলি চালালে একজন সাধারণ মানুষ নিহত ও অনেকে আহত হয়। এই নৃশংস হত্যাকাণ্ডের তীব্র প্রতিবাদের মধ্য দিয়ে রাজশাহীতে আন্দোলন আরো বেগবান হয়।

এভাবে এ শহর ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর হত্যাযজ্ঞ এবং মুক্তিকামী মানুষের বীরত্বপূর্ণ প্রতিরোধ উভয়ই প্রত্যক্ষ করেছে।

রাজশাহী জেলা পরিষদের প্রশাসক মাহাবুবুজ্জামান ভুলু বলেন, বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ গণকবর রয়েছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে। এটি মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর ক্যাম্প ছিল।

এই রাজশাহী শহরের সন্নিকটে সংঘটিত হয়েছে ভয়াবহ এক যুদ্ধ। এই যুদ্ধে বীরশ্রেষ্ঠ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর শহীদ হন।

১৯৬৯ সালে পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর অবৈধ ও স্বৈরাচারী শাসনের বিরুদ্ধে গণঅভ্যুত্থানের মধ্যে স্বাধীনতার আকাঙ্ক্ষা দানা বাঁধতে থাকে। গণঅভ্যুত্থানে ওই দিনগুলোতে ১৯৬৯ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি এক ছাত্র মিছিলে পুলিশ গুলি চালাতে উদ্যত হলে সে সময়কার প্রক্টর ও রসায়ন ডিপার্টমেন্টের প্রফেসর ড. শামসুজ্জোহা পুলিশের গুলির হাত থেকে ছাত্রদের রক্ষা করতে গিয়ে হানাদারদের বুলেটে বিদ্ধ হয়ে শহীদ হন।

মুক্তিযুদ্ধে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারী ও শিক্ষার্থীরা বীরত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।

সাবাশ বাংলাদেশ চত্বর, ড. শামসুজ্জোহা, মীর আবদুল কাইয়ুম, শহীদ হাবিবুর রহমান ও সুখরঞ্জন সমাদ্দারের কবর ও সমাধি এবং বীর মুক্তিযোদ্ধাদের উপস্থিতি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়কে মহিমান্বিত করেছে।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!