• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
পোশাক খাতের মজুরি পর্যালোচনা

মালিকরা দর কষছেন সাড়ে ৬ হাজার টাকা থেকে


নিজস্ব প্রতিবেদক জুলাই ২০, ২০১৮, ০৩:৫২ পিএম
মালিকরা দর কষছেন সাড়ে ৬ হাজার টাকা থেকে

ঢাকা : পোশাক খাতের মজুরি বোর্ড গঠনের ঘোষণা আসে গত ১৪ই জানুয়ারি। বোর্ড ঘোষণার আগে থেকেই শ্রমিক প্রতিনিধিরা ১৬ হাজার টাকা নিম্নতম মজুরির দাবি জানিয়ে আসছিলেন। সোমবার (১৬ জুলাই) শ্রমিক ও মালিক উভয়পক্ষের লিখিত প্রস্তাবনা জমা দেয়ার কথা।

সূত্র অনুযায়ী, নতুন মজুরি কাঠামো নির্ধারণে মালিকপক্ষ দরকষাকষি শুরু করছে প্রায় সাড়ে ৬ হাজার টাকা থেকে। আর শ্রমিকপক্ষের প্রস্তাবনায় নিম্নতম মজুরির দাবি থাকবে ১১-১২ হাজার টাকা।

জানুয়ারিতে মজুরি বোর্ড গঠন হলেও এর প্রথম সভা হয় ১৯শে মার্চ। এরপর দ্বিতীয় সভা বসে ৮ জুলাই। আজ তৃতীয় সভায় উভয়পক্ষের আনুষ্ঠানিক লিখিত প্রস্তাব জমা দেয়ার সিদ্ধান্ত হয়। সে অনুযায়ী দুপক্ষই প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

মালিকপক্ষের প্রস্তাবনা নিয়ে কাজ করছে এ খাতের সংগঠন বিজিএমইএর সাবেক নেতাদের সমন্বয়ে গঠিত একটি কমিটি। এ কমিটিতে অন্যান্যের মধ্যে রয়েছেন সংগঠনের সাবেক সভাপতি সফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন, আনোয়ারুল আলম চৌধুরী, টিপু মুনশি ও আরশাদ জামাল।

এ কমিটি সর্বশেষ নূন্যতম মজুরি ৫ হাজার ৩০০ টাকা ভিত্তি ধরে গত চার বছরে বার্ষিক ৫ শতাংশ হারে মজুরি বৃদ্ধি এবং একই সময়ে প্রকৃত মূল্যস্ফীতির হার বিবেচনা করে নতুন কাঠামো তৈরি করেছে। সব মিলিয়ে আজকের সভায় মালিকপক্ষের প্রস্তাবনা ৬ থেকে সাড়ে ৬ হাজার টাকার মধ্যে হতে পারে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানিয়েছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিজিএমইএর সাবেক এক নেতা বলেন, আমরা প্রতি বছর ৫ শতাংশ হারে বার্ষিক মজুরি বাড়াচ্ছি। পাশাপাশি প্রকৃত মূল্যস্ফীতি হিসাব করেই প্রস্তাবনা তৈরি করা হচ্ছে। এগুলো বিবেচনা করলে নিম্নতম মজুরি ৬ থেকে সাড়ে ৬ হাজার টাকার বেশি আসবে না। এরপর দরকষাকষির সুযোগ থাকবে। সর্বশেষ কততে গিয়ে ঠেকবে, সেজন্য অপেক্ষা করতে হবে।

তবে বিজিএমইএর বর্তমান পর্ষদের নেতারা জানিয়েছেন, মজুরি কাঠামোর সর্বনিম্ন হারটি প্রযোজ্য শিক্ষানবিশ কর্মীর ক্ষেত্রে। আর শিক্ষানবিশদের মজুরি হার বিবেচনা করা হবে বর্তমান কাঠামোর ৫ হাজার ৩০০ টাকার সঙ্গে ২০১৪ সাল থেকে এ পর্যন্ত মূল্যস্ফীতি সমন্বয় করে। এর পরের গ্রেডগুলোর ক্ষেত্রে বার্ষিক মজুরি বৃদ্ধির হারটি বিবেচনায় নেয়া হবে।

জানতে চাইলে মজুরি বোর্ডের মালিক প্রতিনিধি বিজিএমইএ সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান গতকাল বলেন, সোমবার (আজ) প্রস্তাবনা জমা দেব। পরিমাণের বিষয়ে কোনো ধারণা দেয়া যাবে না। মূল বিবেচনা মূল্যস্ফীতি। আর বার্ষিক মজুরি বৃদ্ধির বিষয়টি বিবেচনায় আসবে পরের গ্রেডের ক্ষেত্রে।

বিজিএমইএর বর্তমান পর্ষদের আরেক নেতা বলেন, বর্তমানে আলোচ্য বিষয় নূন্যতম মজুরি। যে কর্মী নতুন কাজে যোগ দিচ্ছেন, তার কোনো বার্ষিক মজুরি বৃদ্ধি হয় না প্রথম বছর। তাই নিম্নতম হারটি ৫ হাজার ৩০০ টাকাই আছে, এর ওপর মূল্যস্ফীতি হিসাব করেই আজ মজুরি প্রস্তাবনা জমা দেয়ার প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হচ্ছে।

এদিকে মজুরি বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, শিক্ষানবিশ ছাড়া পোশাক খাতে কর্মরত শ্রমিকদের গ্রেড রয়েছে মোট সাতটি। ২০১৩ সালের ৫ই ডিসেম্বরের গেজেট অনুযায়ী, প্রশিক্ষণ ভাতা হিসেবে শিক্ষানবিশ পোশাক শ্রমিক সাকল্যে পান ৪ হাজার ১৮০ টাকা। সপ্তম গ্রেডের শ্রমিক পান ৫ হাজার ৩০০ টাকা। ষষ্ঠ, পঞ্চম, চতুর্থ, তৃতীয়, দ্বিতীয় ও প্রথম গ্রেডের শ্রমিকদের মজুরি যথাক্রমে ৫ হাজার ৬৭৮, ৬ হাজার ৪২, ৬ হাজার ৪২০, ৬ হাজার ৮৫০, ১০ হাজার ৯০০ ও ১৩ হাজার টাকা।

শ্রমিক প্রতিনিধিদের কাছে জানতে চাইলে তারা জানিয়েছেন, এরই মধ্যে বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠন থেকে পোশাক খাতের নিম্নতম মজুরি ১৬ হাজার, ক্ষেত্র বিশেষে ১৭ হাজার টাকারও দাবি জানানো হয়েছে। এসব দাবির পাশাপাশি আজ শ্রমিকদের পক্ষে মজুরি প্রস্তাবনা চ‚ড়ান্ত করার ক্ষেত্রে ২০১০ ও ২০১৩ সালে শ্রমিকপক্ষের দাবি ও চ‚ড়ান্ত হওয়া কাঠামো কেমন ছিল, সেগুলো বিবেচনা নেয়া হয়েছে। এছাড়া মূল্যস্ফীতিসহ অন্যান্য বিবেচনায় আজ শ্রমিকপক্ষ থেকে ১১-১২ হাজার টাকার মধ্যে একটি পরিমাণ দাবি করা হবে নিম্নতম মজুরি হার হিসেবে।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে মজুরি বোর্ডে শ্রমিকপক্ষের প্রতিনিধি জাতীয় শ্রমিক লীগের নারীবিষয়ক সম্পাদক শামসুন্নাহার ভূঁইয়া বলেন, আজ আমরা প্রস্তাবনা জমা দেব বলে আশা করছি। প্রস্তাবনায় নূন্যতম মজুরির হার কত হবে, তার নির্দিষ্ট পরিমাণ এখন বলা সম্ভব না। আমরা মূল্যস্ফীতি, রাষ্ট্রীয় ও অন্যান্য খাতে নতুন কাঠামোর হার ও বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠনের প্রস্তাবনা বিবেচনায় নিয়েছি। এছাড়া এর আগের মজুরি বোর্ডে শ্রমিকপক্ষের প্রস্তাবনা কতটুকু বিবেচনায় নেয়া হয়েছে, সে দিকগুলো বিবেচনায় নিয়ে  প্রস্তাবনার হার নির্ধারণ করেছি।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!