• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১
মহাসড়কে টোল আদায়ের সিদ্ধান্ত

মাশুল গুনবে কে


বিশেষ প্রতিনিধি সেপ্টেম্বর ৫, ২০১৯, ০৬:৩৮ পিএম
মাশুল গুনবে কে

ঢাকা : উড়ালসড়কের মতো মহাসড়কগুলোয় গাড়ি চলাচলের ক্ষেত্রে টোল আদায়ের কথা ভাবছে সরকার। এ জন্য টোলের নিয়ম চালু করার পরিকল্পনার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি-একনেকের গত মঙ্গলবারের সভায়। সভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এমন নির্দেশনা দিয়েছেন। দেশে এখন পর্যন্ত শুধু সেতু পারাপার আর কোনো কোনো উড়ালসড়ক ব্যবহারের ক্ষেত্রে টোল আদায়ের ব্যবস্থা চালু আছে।

প্রশ্ন দেখা দিয়েছে, মহাসড়কগুলোয় গাড়ি চলাচলের ক্ষেত্রে টোল আদায়ের এ নির্দেশনা বাস্তবায়ন হলে মাশুল গুনবে কে?

পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান জানিয়েছেন, ‘মহাসড়ক বলতে আমরা জাতীয় মহাসড়কগুলোকে বুঝিয়েছি, ছোট সড়কগুলো নয়। যেমন ঢাকা-চট্টগ্রাম, ঢাকা-খুলনা, ঢাকা-ময়মনসিংহ ইত্যাদি সড়ক বুঝিয়েছি। যেগুলো আন্তঃজেলা বড় সড়ক। এত দিন আমরা শুধু কয়েকটি নির্বাচিত সেতুতে টোল নিতাম। কিন্তু রাস্তাঘাট মেরামতে আমাদের বহু অর্থের প্রয়োজন হয়। তাই টোল নিয়ে যদি আলাদা একটি ডেডিকেটেড তহবিলে রাখা যায় তবে সেই টাকাটা রাস্তা মেরামতে ব্যয় করা হবে, এটাই হচ্ছে আইডিয়া।

মন্ত্রী জানান, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই আইডিয়াটার কথা জানিয়েছেন। এখন সেটা আরো পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখা হবে।’ মহাসড়কে যে টোল দেওয়ার কথা বলা হচ্ছে, সেটি কি যাত্রীবাহী বাস, ছোট গাড়িগুলোকেও দিতে হবে নাকি শুধু পণ্যবাহী ট্রাকের ওপর প্রযোজ্য হবে? এ বিষয়ে এখনো পরিষ্কার করে কিছু বলা হয়নি।

বিষয়টি এখনো প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে জানিয়ে পরিকল্পনামন্ত্রী বলেছেন, ‘যারা সড়ক ব্যবহার করেন, যাওয়া-আসা করবেন, তারাই এই টোল দেবেন। যেভাবে অন্যান্য দেশে আছে, সেভাবেই এখানেও ব্যবস্থা করা হবে। সেটা স্বয়ংক্রিয় ব্যবস্থা হতে পারে।’

নতুন এই উদ্যোগ চালুর দিনক্ষণ জানায়নি সরকার। তবে মন্ত্রী জানিয়েছেন, পুরো কার্যক্রম শুরু হলে তখন এই বিষয়গুলো পরিষ্কার হবে। তখন গাড়িপ্রতি টোলের হারটিও নির্ধারণ করা হবে।

তিনি জানান, যে একনেক সভায় প্রধানমন্ত্রী মহাসড়কে টোল আদায় করার নির্দেশনা দেন, সেখানেও এ বিষয়টি এজেন্ডাভুক্ত ছিল না। ফলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নির্দেশনা দেওয়ার পর থেকেই এটি নিয়ে আলাপ-আলোচনা শুরু হয়েছে।

পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান আরো বলছেন, ‘অনেক দেশেই সড়কে একটি টোল নেওয়া হয়। সেটা আমরা দেখব, বুঝব। সেভাবেই আমাদের এখানেও ঠিক করা হবে। একটা নির্দিষ্ট দূরত্বের পর পর হয়তো টোল স্টেশনগুলো হবে।’

অর্থনীতিবিদ এবং বিশ্লেষকরা বলছেন, টাকা আদায় বা টাকার সংস্থান করার চেয়ে বরং বেশি জরুরি মহাসড়ক রক্ষণাবেক্ষণে অর্থের সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করা।

বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজের অর্থনীতিবিদ ড. জায়েদ বখত বলেন, ‘মহাসড়কে টোলের পদ্ধতি নতুন না, অনেক দেশে করা হয়। আমাদের দেশেও ব্রিজে এগুলো আছে, উড়ালসড়কে আছে। যেসব হাইওয়ে বাণিজ্যিকভাবে বেশি ব্যবহূত হয়, সেটায় টোল হতে পারে। এর ভালো-মন্দ দুটি দিকই আছে।’

তিনি বলেন, ‘এ জন্য যেমন একদিকে সাধারণভাবে মানুষের কস্ট অফ লিভিং

বাড়বে। কারণ যানবাহনের খরচ বাড়লে ভাড়াও বাড়বে। আবার যেসব সড়ক বেশি ব্যবহূত হয়, সেটা মেরামতের দরকারও বেশি, টোলের আয় থেকে সেটি ব্যয় নির্বাহ হবে।’

তবে তহবিল গঠনের চেয়ে বরং সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার ওপর সরকারের বেশি নজর দেওয়া উচিত বলে মনে করে এ বিশেষজ্ঞ বলেন, ‘এটা সরকারের রাজস্ব আয়ের ভালো উৎস হতে পারে। কিন্তু সেটার ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। কারণ সরকারের টাকার অভাবে মেরামত হচ্ছে না তা নয়, বরং আসল সমস্যা হচ্ছে সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার অভাব।’

তিনি উদাহরণ দিয়ে বলেন, ‘একজন গার্মেন্ট ব্যবসায়ী দ্রুত পণ্য পাঠানোর সুযোগ পেলে হয়তো তিনি অতিরিক্ত টাকাও খরচ করবেন। কিন্তু টাকা খরচ করেও তার কোনো সুবিধা হলো না, তাহলে তো কোনো মানে হলো না।’ এ নিয়ে সড়ক পরিবহন মালিকদের রয়েছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া।

বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন সমিতির মহাসচিব খোন্দকার এনায়েত উল্লাহ বলেছেন, ‘বিশ্বের অনেক দেশে এ রকম ব্যবস্থা আছে, বাংলাদেশেও যদি সরকার করতে চায় ভালো। টোল দিতে আমাদের আপত্তিও নেই, তবে ভালো সড়কের ব্যাপারটিও নিশ্চিত করতে হবে। রাস্তা যদি ভালো থাকে, ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা থাকে, আমাদের গাড়ি যদি দ্রুত চলাচল করতে পারে, তাহলে কিছুটা টোল দিতে হলেও আমাদের আপত্তি থাকবে না।’

অ্যাসোসিয়েশন অব বাস কোম্পানিজের সভাপতি খোন্দকার রফিকুল হোসেন বলেছেন, ‘সড়কগুলো যুগোপযোগী করা হচ্ছে না, আধুনিক করা হচ্ছে না, দুর্ঘটনা ঠেকাতে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না। ফলে এই টোল বসানোর যে কথা বলা হচ্ছে, তাতে কতটা সুফল আসবে, তা নিয়ে সংশয় আছে। আর যে টোলই বসানো হোক না কেন, সেটা শেষ পর্যন্ত তো জনগণকেই দিতে হবে। বাস-ট্রাকের ভাড়া বাড়বে, ফলে জনগণের ওপর, ব্যবসায়ীদের ওপর চাপ আরো বাড়বে।’

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!