• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ, ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

মিঠা পানির মাছ হচ্ছে ইলিশ?


নিজস্ব প্রতিবেদক জানুয়ারি ২৪, ২০১৮, ১২:৪৫ পিএম
মিঠা পানির মাছ হচ্ছে ইলিশ?

ঢাকা : সমুদ্রের লবণাক্ত পানিতে নয়, নদীর মিঠা পানিতেই স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেছে ইলিশ মাছ! সম্প্রতি এমন চমকপ্রদ তথ্য দিয়েছেন ভারতের মৎস্য বিশেষজ্ঞরা। তাদের দাবি, ডিম পাড়ার জন্য সমুদ্র থেকে নদীতে ঢুকে অনেক ইলিশই আর সাগরে ফিরে যাচ্ছে না।

বিবিসি বাংলার মঙ্গলবার (২৩ জানুয়ারি) এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ভারতের কেন্দ্রীয় মৎস্য গবেষণা কেন্দ্রসহ একাধিক প্রতিষ্ঠানের এক যৌথ গবেষণায় এ তথ্য বেরিয়ে এসেছে। ওই গবেষণার সঙ্গে যুক্ত বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, এ কারণেই গঙ্গার মোহনা থেকে প্রায় দুইশ’ কিলোমিটার উজানেও সারা বছর ধরে ইলিশ মিলছে। সেগুলো স্বাদে-গন্ধেও বেশ ভালো।

মোহনায় পাতা মাছধরা জালের ভয়েই ইলিশের ঝাঁক স্বাদু পানিতে রয়ে যাচ্ছে বলে তারা ধারণা করছেন। কিন্তু বঙ্গোপসাগরের ইলিশ কেন আর কীভাবে মিঠা পানির স্থায়ী বাসিন্দায় পরিণত হচ্ছে? ইলিশ সাগরের মাছ হলেও ডিম পাড়তে ঝাঁকে ঝাঁকে নদীতে ঢোকে আবহমানকাল থেকে ইলিশ-প্রিয় বাঙালি সেটাই জেনে এসেছে।

কিন্তু ব্যাঙ্গালোরের ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব সায়েন্সেসের অর্থায়নে করা সাম্প্রতিক এক গবেষণায় দেখা যাচ্ছে, বহু ইলিশ ডিম পাড়তে গঙ্গায় ঢুকলেও আর কখনো বঙ্গোপসাগরে ফিরছে না। ওই গবেষক দলের অন্যতম প্রধান বিজ্ঞানী অধ্যাপক অসীম কুমার নাথ বলছিলেন, ইলিশের ‘অটোলিথে’ বিভিন্ন রাসায়নিকের পরিমাণে তারতম্য দেখে তারা এর প্রমাণ পেয়েছেন।

তিনি বলেন, ‘অটোলিথ মাছের একটা অর্গান, যা ইলিশের ক্ষেত্রে মাথায় থাকে, কোনো কোনো মাছের ফ্যারিঞ্জিয়াল রিজিওনেও থাকে। এই অটোলিথ বিশ্লেষণ করে একটা মাছের মাইগ্রেটরি রুট সম্বন্ধে ধারণা পাওয়া যায়। আমরা এখন ইলিশের অটোলিথ কেটে দেখতে পাচ্ছি সেখানে বিভিন্ন রাসায়নিকের অনুপাত এমন যা থেকে স্পষ্ট, অনেক ইলিশই আর সাগরে ফিরছে না। মিঠা জলে এগুলোর বেশ ওজনও হয়ে গেছে পাঁচশ’ বা সাড়ে পাঁচশ’ গ্রাম। ওদিকে ক্ষুদে সাইজের পাঁচ-দশ গ্রাম ওজনের ইলিশও মিলছে।’

সাগরে না-ফেরাটা এই ইলিশগুলোর এক ধরনের বেঁচে থাকার চেষ্টা বা ‘ন্যাচারাল সিলেকশন’ বলেই মনে করছেন ভারতের সেন্ট্রাল ইনস্টিটিউট অব ফিশারিজ এডুকেশনের মুখ্য বিজ্ঞানী বি কে মহাপাত্র।

তিনি বলেন, ‘গলদা চিংড়ি হরিদ্বারেও দেখা যায়, সেখান থেকে ডিম পাড়তে তারা চলে আসে সুন্দরবনের মোহনাতেও। এই জাতীয় মাছকে বলে ক্যাটাড্রোমাস। কিন্তু ইলিশ হলো অ্যানাড্রোমাস মাছ, তারা সাগর থেকে ডিম পাড়তে যায় নদীর ভেতর।’

তিনি আরো বলেন, ‘কিন্তু কেন এখন তারা আর ফিরতে চাইছে না? চাইছে না, কারণ গঙ্গার এসচুয়ারি জুড়ে বিছানো আছে চৌদ্দ হাজারেরও বেশি জাল। তাই প্রাণে বাঁচতেই তারা রয়ে যাচ্ছে মিষ্টি জলে। এটাকে বিবর্তনবাদ বা ন্যাচারাল সিলেকশন হিসেবেই দেখা যায়।’

বহু বছর আগে গুজরাটে দেখা গিয়েছিল, তাপ্তী নদী বেয়ে ইলিশের ঝাঁক উকাই জলাধারে ঢুকে সেখানেই থাকতে শুরু করে, ডিম পাড়ে ও তাদের বাচ্চাও হয়। এখন অনেকটা একই ধাঁচের জিনিস দেখা যাচ্ছে গঙ্গাতেও। অসীম কুমার নাথ বলেন, ‘গঙ্গায় কাকদ্বীপের নিচে নিশ্চিন্দাপুরে যেখানে মিঠা পানি শুরু, সেখান থেকে আপনি যদি দুইশ’ কিলোমিটারেরও বেশি ওপরে বলাগড় অবধি যান, সেখানে ক্যালেন্ডার করে আমরা দেখতে পাচ্ছি জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি-মার্চ-প্রাক মনসুন-মনসুন কিংবা পোস্ট-মনসুন... সারা বছরই কিন্তু এই পুরো এলাকা জুড়ে ইলিশ মিলছে।’

তবে অধ্যাপক নাথ বলেন, ‘বিশেষত বর্ষার পর কৃষিক্ষেতের কীটনাশক-যুক্ত জল যখন এসে নদীগুলোতে মেশে, তখন এই মিঠা পানির ইলিশগুলোর বিরাট ক্ষতিও হয়ে যাচ্ছে। মিঠা জলের নদীতে পাকাপাকিভাবে থাকার জন্য এসব ইলিশকে বেশি দূষণের শিকার হতে হচ্ছে, তাতে কোনো সন্দেহ নেই। কিন্তু তারপরও স্বাদে-গন্ধে সেগুলো কিন্তু অন্য ইলিশের চেয়েও ভালো।’

তার ভাষায়, ‘মিঠা পানিতেই কিন্তু ইলিশের স্বাদ বাড়ে। কারণ নদীতে ঢোকার পরই তাদের শরীরে ফ্যাট বাড়ে, সেগুলো খেতেও অনেক ভালো হয়। গভীর সমুদ্রে ধরা ইলিশের স্বাদ কখনো তেমন হয় না। ফলে এগুলোর স্বাদ নিয়ে কোনো সমস্যা নেই!’

ইলিশ কখনো সাগরে না সাঁতরালে তাকে আদৌ সত্যিকারের ইলিশ বলা যাবে কিনা, তা নিয়ে অবশ্য মৎস্যবিজ্ঞানী আর খাদ্য-রসিকদের মধ্যে দু’রকম মত আছে। কিন্তু ভারতীয় বিজ্ঞানীদের গবেষণা বলছে, বেশ কিছু ইলিশ আর কখনো সাগরে ফেরার টান অনুভব করছে না। জেলেরা গঙ্গায় সেই ইলিশ পাচ্ছেন বছরজুড়েই!

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!