• ঢাকা
  • বুধবার, ২৪ এপ্রিল, ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

মির্জা ফখরুলকে সরিয়ে দিচ্ছে বিএনপি?


নিজস্ব প্রতিবেদক এপ্রিল ২৯, ২০১৯, ০৮:৪৯ পিএম
মির্জা ফখরুলকে সরিয়ে দিচ্ছে বিএনপি?

ঢাকা : বহু জল্পনার-কল্পনার অবসান ঘটিয়ে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলামকে রেখেই শপথ নিলেন বাকি চার সংসদ সদস্যও। আজ সোমবার বিকেল ৫টা ৪০ মিনিটে জাতীয় সংসদ ভবনে স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী তাদের শপথ বাক্যপাঠ করান।

তারা হলেন- বিএনপির যুগ্ম-মহাসচিব ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ৩ থেকে নির্বাচিত হারুনুর রশীদ, চাঁপাইনবাবগঞ্জ-২ আসনের মো. আমিনুল ইসলাম, ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসন থেকে নির্বাচিত সাবেক প্রতিমন্ত্রী উকিল আবদুস সাত্তার এবং বগুড়া-৪ আসন থেকে নির্বাচিত মোশাররফ হোসেন।

সংবিধান অনুযায়ী একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিজয়ীদের শপথ নেওয়ার শেষ দিন সোমবার। সংবিধানে বলা আছে, সংসদের প্রথম বৈঠকের পরবর্তী ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচিত সাংসদদের শপথ গ্রহণ করতে হবে। তা না হলে সদস্যপদ বাতিল করে আসন শূন্য ঘোষণা করা হবে। একাদশ সংসদের প্রথম বৈঠক বসে গত ৩০ জানুয়ারি। এই হিসাবে ২৯ এপ্রিলের মধ্যে নির্বাচিতদের শপথ নিতে হবে।

এরপর গতকাল রবিবার রাতে তিন সাংসদ উকিল আবদুস সাত্তার, হারুনুর রশীদ ও আমিনুল ইসলামকে নিয়ে গুলশানের কার্যালয়ে বৈঠক করেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্যরা।

দলীয় সূত্র জানায়, বৈঠকে দলের চেয়ারপারসনের কারাবন্দী অবস্থায় ওই তিনজনকে শপথ না নিতে অনুরোধ করা হয়। একপর্যায়ে তিন সাংসদ দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে স্কাইপে পৃথকভাবে একান্তে কথা বলেন।

শপথের বিষয়ে হারুনুর রশীদ বলেন, ‘দেশে সরকার থাকবে অথচ আইনের শাসন থাকবে না এটা হতে পারে না। তারেক রহমানের নির্দেশে আমরা শপথ নিয়েছি।’

বিএনপির বিজয়ী প্রার্থী হিসেবে এখন শপথ নিতে বাকি রয়েছেন একমাত্র দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

বিজয়ী প্রার্থীদের শপথ নেওয়ার বিষয়ে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘আমি অসুস্থ, বাসায় আছি। এ বিষয়ে কিছু বলতে পারব না।’

এর আগে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর ভোট কারচুপির অভিযোগ তুলে বিএনপি শপথ না নেওয়ার ঘোষণা দিলেও গত বৃহস্পতিবার (২৫ এপ্রিল) ঠাকুরগাঁও-৩ আসন থেকে নির্বাচিত বিএনপির সংসদ সদস্য জাহিদুর রহমান জাহিদ শপথগ্রহণ করেন। পরে তাকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়।

এদিকে জাহিদুরের শপথ গ্রহণের পরপর সমস্ত রাগ, ক্ষোভ, বিদ্রোহ এখন ফখরুলকে ঘিরে। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপার্সন তারেক জিয়াও এখন ফখরুলের ব্যাপারে ভিন্ন চিন্তা করেছেন বলে জানা গেছে।

বঙ্গবন্ধু মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে চিকিৎসাধীন বেগম খালেদা জিয়াও ফখরুলকে দলের মহাসচিব হিসেবে আর না রাখার পক্ষেই মতামত দিচ্ছেন। অবশ্য পয়লা বৈশাখে সর্বশেষ সাক্ষাতেই বেগম খালেদা জিয়া ফখরুলের ব্যাপারে নেতিবাচক মনোভাব প্রকাশ করেছিলেন কিন্তু দলের ঐক্য অটুট রাখার স্বার্থে এবং দলের বিভক্তি এড়াতে তিনি মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে মহাসচিব হিসেবে দায়িত্ব চালিয়ে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন। তবে তিনি বলেছিলেন দল যেন যৌথ সিদ্ধান্তে চলে। অন্যদিকে ৩০ ডিসেম্বর নির্বাচনের পর থেকেই মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সঙ্গে তারেক জিয়ার সম্পর্কের অবনতির খবর পাওয়া যায়। তারেক জিয়াও একজন বিকল্প মহাসচিব পাওয়া যাচ্ছে না জন্যই মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে দায়িত্বে রেখেছিলেন।

বিএনপির একাধিক সূত্র বলছে, মির্জা ফখরুল ইসলাম যেন দলের মহাসচিবের দায়িত্ব পালন করে এজন্য ড. কামাল হোসেনও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন। কিন্তু আজ ২৫ এপ্রিল জাহিদুর রহমান জাহিদের শপথ গ্রহণের পর এখন দাবি ওঠেছে সবার আগে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে সরাতে হবে। মির্জা ফখরুল ইসলাম যদি দলের মহাসচিবের দায়িত্ব পালন করেন তাহলে সিনিয়র অনেক নেতা দলের জন্য কাজ করবেন না বলে আনুষ্ঠানিকভাবে জানিয়ে দিয়েছেন।

সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, বিএনপির একাধিক নেতা মনে করছেন, মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের কারণেই দলের এই দু:অবস্থা তৈরী হয়েছে এবং বিএনপি একটি হাস্যকর রাজনৈতিক দলে পরিনত হয়েছে। আজ জাহিদুর রহমান জাহিদের শপথ গ্রহণের কয়েক ঘন্টা পরই ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেনের বাসভবনে বিএনপির সিনিয়র নেতারা এক বৈঠকে মিলিত হন। বৈঠকে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর আমন্ত্রিত হননি। তারা খুব শীঘ্রই বেগম খালেদা জিয়ার কাছে একটা বার্তা পাঠাতে চান। যে বার্তায় তারা দলের একজন নতুন মহাসচিব নেওয়ার প্রস্তাব করবেন এবং নতুন মহাসচিব না হলে দলের যে ভঙ্গুর অবস্থা এবং নেতাকর্মীদের মধ্যে হতাশা তা কাটানো সম্ভব নয় বলে মনে করেছে।

মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের ব্যাপারে ৫ টি অভিযোগ বিএনপির নেতারা খালেদা জিয়া ও তারেক জিয়ার কাছে পাঠাবেন বলে ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেনের বাসভবনে সিদ্ধান্ত হয়েছে।

জানা গেছে, বেগম খালেদা জিয়ার কাছে আজকালের মধ্যেই বেগম খালেদা জিয়ার ব্যাক্তিগত চিকিৎসক ড. মামুন এই মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে সরিয়ে দেওয়ার এই বার্তাটি নিয়ে যাবেন। বেগম খালেদা জিয়া যদি শেষ পর্যন্ত এতে সম্মতি দেন তাহলে মহাসচিব হিসেবে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের পরিসমাপ্তি ঘটবে বলেই মনে করা হচ্ছে। যে সাতজন নেতা মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে অপসারিত করতে চাচ্ছেন তাদের মধ্যে রয়েছে; ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, মেজর (অব:) হাফিজ উদ্দীন আহমেদ, রুহুল কবির রিজভী, আমান উল্লাহ আমান।

ফখরুলের বিরুদ্ধে যে ৫ অভিযোগ-

১. মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সরকারের সঙ্গে গোপন আঁতাত করছেন এবং এই আঁতাতের মূল উদ্দেশ্য হলো বিএনপিকে ধ্বংস করে দেওয়া।

২. মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, ড. কামাল হোসেন এবং ভারতকে নিয়ে একটা চক্রান্ত করছেন যে চক্রান্তের শেষ ফলাফল হলো বিএনপি থেকে জিয়া পরিবার মাইনাস করা।

৩. মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর দলের মধ্যে একজন আদর্শ নেতারা ভাবমূর্তি তৈরী করতে পারেননি। দলের মধ্যে তিনি অজনপ্রিয় ব্যক্তি হিসেবে পরিচিত হয়েছে। বিশেষ করে ৩০ ডিসেম্বর নির্বাচনের পরে তার জনপ্রিয়তা এখন দলের মধ্যে শূন্যের কোঠায়।

৪. মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বিএনপির যে মূল শক্তি ২০ দলীয় জোটকে সংকুচিত এবং দুর্বল করে ফেলেছে এবং ২০ দলের ব্যাপারে তার তীব্র অনাগ্রহ বাংলাদেশের জাতীয়তাবাদী রাজনীতিকে দুর্বল করেছে।

৫. মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর খালেদা জিয়ার মুক্তির ব্যাপারে কোন ধরনের কর্মসূচী গ্রহণ করেননি এবং তীব্র অনীহা প্রকাশ করেন।

এ সমস্ত কারণে বিএনপির শীর্ষ সাতজন নেতা মনে করছেন, অবিলম্বে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে দলের মহাসচিবের পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া প্রয়োজন। একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে, তারেক জিয়ার ইঙ্গিতেই এ ধরনের একটা প্রস্তাবনা দলের সিনিয়র নেতারা তৈরী করেছেন।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!