• ঢাকা
  • শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

মিশন, পরিকল্পনা ও নেতৃত্ব


মনোয়ার হোসেন সেপ্টেম্বর ২৮, ২০১৯, ১১:৫৫ এএম
মিশন, পরিকল্পনা ও নেতৃত্ব

ঢাকা : উন্নয়নের বিবেচনায় স্বাধীন বাংলাদেশের ৪৮ বছরের (বর্তমানে) ইতিহাসের চলমান অধ্যায় নিঃসন্দেহে প্রশংসার দাবিদার। চলমান অধ্যায়ে অর্থাৎ শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগের শাসনকালীন (এক দশক), বাংলাদেশ অর্থনৈতিক ও সামাজিক ক্ষেত্রে এমন বহু কিছু সাফল্য পেয়েছে যা সব বিবেচনাতেই বিস্ময়কর। এই দুই ক্ষেত্রে দ্রুত সাফল্যপ্রাপ্তি সহজ কোনো বিষয় ছিল না।

প্রথমে অর্থনৈতিক ক্ষেত্রের অর্জন বিবেচনায় নিয়ে বলা যায় দশ বছরে প্রতিটি ক্ষেত্রে বা বিভাগে ক্রমান্বয়ে প্রবৃদ্ধি হয়েছে। একই সঙ্গে মূল্যস্থিতি নির্দিষ্ট মাত্রায় সীমাবদ্ধ ছিল। ‘ব্যালেন্স অব পেমেন্ট’ এবং চলতি হিসাবে স্থিতি রক্ষায় বড় ধরনের নেতিবাচক কিছু ঘটেনি। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ২৬ থেকে ৩২ বিলিয়ন ডলারের মধ্যেই ওঠানামা করেছে। অর্থাৎ গড়ে সাত মাসের আমদানি ব্যয়ের সমপরিমাণ অর্থ মজুত থেকে গেছে। রপ্তানি আয় এবং রেমিট্যান্স বা প্রবাসী বাংলাদেশিদের প্রেরিত অর্থের পরিমাণ ক্রমান্বয়ে বেড়েছে। যার ফলে অনেক মেগা প্রজেক্ট এবং প্রয়োজনীয় অসংখ্য ছোট প্রকল্পের বাস্তবায়নে অর্থ বরাদ্দ করা সম্ভব হয়েছে।

উল্লেখ্য, বর্তমানে দক্ষিণ এশিয়া উপমহাদেশের মূল ভূখণ্ডের তিনটি দেশের মধ্যে বাংলাদেশে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার সবচেয়ে বেশি। অর্থাৎ ভারত ও পাকিস্তানের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার বাংলাদেশের নিচে রয়েছে।

অর্থনৈতিক ক্ষেত্রের অর্জন সামাজিক খাতে বহুলভাবে ইতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। বস্তুত সামাজিক খাতে এমন কোনো ক্ষেত্র নেই, যেখানে আগের যে কোনো সময়ের তুলনায় অধিক বরাদ্দ দেওয়া হয়নি এবং তা থেকে সুফল আসেনি।

সামাজিক সূচকে বিস্ময়কর সাফল্য আসার কারণে পৃথিবীর বহু দেশের সামনে বাংলাদেশ একটি উন্নয়নের মডেল হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। সামাজিক খাতে সাফল্য আনার জন্য অতিশয় প্রয়োজন ছিল সুষ্ঠু চিন্তা ও পরিকল্পনা এবং তা বাস্তবায়নে সাহসী ও সঠিক পদক্ষেপ। সরকারপ্রধান শেখ হাসিনার সাহসের অভাব ছিল না এবং কোনো কারণেই তিনি পদক্ষেপ নিতে কার্পণ্য করেননি। এক কথায় সামাজিক খাতের উন্নয়নের জন্য তার বলিষ্ঠতার চিহ্ন এই খাতের সর্বত্রই লক্ষ করা যায়।

সংক্ষেপে সামাজিক ক্ষেত্রে কয়েকটি সাফল্য উল্লেখ করা প্রাসঙ্গিক হবে। দেশে প্রসূতিকালীন মাতৃমৃত্যুর হার কমেছে; নবজাত শিশুর মৃত্যুর হার কমেছে; সুপেয় পানি সহজলভ্য হয়েছে; প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষার হার বেড়েছে; দারিদ্র্যের হার কমেছে; মহিলা শিক্ষার্থীর সংখ্যা বিপুল হারে বেড়েছে; মহিলারা সমাজের প্রতিটি ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছেন।
উল্লেখিত প্রতিটি বিষয়ই প্রতিবেশী দেশ ও বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থায় এবং জাতিসংঘের অঙ্গ প্রতিষ্ঠানসমূহে এখন আলোচিত বিষয়। অর্থনৈতিক ক্ষেত্রের সাফল্যের ফল যে সামাজিক ক্ষেত্রেও বিস্তার করা হয়েছে তা সুপ্রমাণিত। বিশেষভাবে উল্লেখ করা যেতে পারে শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতের সাফল্যসমূহ।

গত দশ বছরে সমাজের চিত্র বহুলাংশে পাল্টে গেছে। সেই সঙ্গে বহির্বিশ্বে পাল্টেছে বাংলাদেশের পরিচয়। বাংলাদেশ এখন বহুলাংশে আত্মনির্ভরশীল একটি রপ্তানিভিত্তিক দেশ। দেশের অর্থনীতি এখন বিদেশি লগ্নিকারী প্রতিষ্ঠানের দয়া বা করুণার ওপর নির্ভরশীল নয়। নিম্ন আয়ের দেশ থেকে মধ্যম আয়ের দেশে প্রবেশ অর্থাৎ শ্রেণি উত্তরণ সহজ ব্যাপার নয়।

কিন্তু গত দশ বছরে বাংলাদেশের ক্ষেত্রে তা-ই হয়েছে। আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি এখনো না এলেও পৃথিবীর সর্বত্রই বাংলাদেশ এখন মধ্যম আয়ের দেশ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। এই কৃতিত্ব অর্জনের জন্য একটি নিরবচ্ছিন্ন চিন্তা এবং সেই অনুযায়ী কর্মের যে সমন্বয়ের প্রয়োজন ছিল তা যথাযথভাবে ঘটেছে।

আর এর জন্য যে গতিশীল, সুষ্ঠু এবং দৃঢ় নেতৃত্ব ও ‘ভিশন’-এর প্রয়োজন তা সরকারপ্রধান হিসেবে শেখ হাসিনার মধ্যে ওই অভাব লক্ষ করা যায়নি।

লেখক : সাংবাদিক

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব ভাবনার প্রতিফলন। সোনালীনিউজ-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে লেখকের এই মতামতের অমিল থাকাটা স্বাভাবিক। তাই এখানে প্রকাশিত লেখার জন্য সোনালীনিউজ কর্তৃপক্ষ লেখকের কলামের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে আইনগত বা অন্য কোনও ধরনের কোনও দায় নেবে না। এর দায় সম্পূর্ণই লেখকের।

Wordbridge School
Link copied!