ঢাকা : মহান মুক্তিযুদ্ধের প্রথম সশস্ত্র প্রতিরোধ দিবস আজ মঙ্গলবার। ১৯৭১ সালের এই দিনে মহান স্বাধীনতা যুদ্ধের প্রাক্কালে জয়দেবপুরের সংগ্রামী জনতা পাক-হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে সশস্ত্র প্রতিরোধ শুরু করেছিল।
১৯ মার্চের বীরত্বকে অমর করে রাখতে ১৯৭২-১৯৭৩ সালে গাজীপুরের চৌরাস্তায় একটি ভাস্কর্য নির্মাণ করা হয়। ‘জাগ্রত চৌরঙ্গী’ নামের এই ভাস্কর্য মুক্তিযুদ্ধের প্রথম ভাস্কর্য। দিবসটি উপলক্ষে আজ ঢাকা ও গাজীপুরে বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। সকাল ১০টায় রাজধানীর বাংলাদেশ প্রেস কাউন্সিল মিলনায়তনে এক আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়েছে।
এ ছাড়া সন্ধ্যায় প্রথম সশস্ত্র প্রতিরোধ যুদ্ধের বীরদের সংবর্ধনা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। এ ছাড়া বিকাল ৪টায় গাজীপুর জেলা শহরে শহীদ বরকত স্টেডিয়ামে এক সংবর্ধনা সভা হবে।
সে দিনের ঘটনা প্রসঙ্গে গাজীপুর সর্বদলীয় সংগ্রাম পরিষদের আহ্বায়ক ও বর্তমান মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেন, ১৭ মার্চ ’৭১ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মদিনে লাখ লাখ জনতার ঢল নেমেছিল ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধুকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানাতে। এ সময় কুর্মিটোলা (ঢাকা) ক্যান্টনমেন্টে অস্ত্রের মজুত কমে গেছে অজুহাতে জয়দেবপুরে ২য় ইস্টবেঙ্গল রেজিমেন্টকে নিরস্ত্র করে ২য় ইস্টবেঙ্গল রেজিমেন্টে রক্ষিত অস্ত্র আনার পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর ষড়যন্ত্রের সংবাদ বঙ্গবন্ধুকে জানাই।
এ অবস্থায় আমাদের কী করণীয় জানতে চাইলে বঙ্গবন্ধু বলেন, ‘তুই একটা আহম্মক, কী শিখিছিস যে আমাকে বলে দিতে হবে।’ একটু পায়চারী করে রাগতস্বরে বললেন, ‘বাঙালি সৈন্যদের নিরস্ত্র করতে দেওয়া যাবে না।’ নেতার হুকুম পেয়ে গেলাম। তিনি জানান, ১৯ মার্চ আকস্মিকভাবে পাকিস্তানি ব্রিগেডিয়ার জাহান জেবের নেতৃত্বে পাকিস্তানি রেজিমেন্ট জয়বেদপুরস্থ (গাজীপুর) ২য় ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টকে নিরস্ত্র করার জন্য পৌঁছে যায়। তখন বিভিন্ন কারখানায় শ্রমিক জনতা চারিদিক থেকে লাঠিসোটা, দা, কাতরা, ছেন, দোনালা বন্দুকসহ জয়দেবপুর উপস্থিত হয়।
মোজাম্মেল হক জানান, জয়দেবপুর রেলগেটে মালগাড়ির বগি, রেলের অকেজো রেললাইন, স্লিপারসহ বড় বড় গাছের গুঁড়ি, কাঠ, বাঁশ, ইট ইত্যাদি যে যেভাবে পেরেছে তা দিয়ে এক বিশাল ব্যারিকেড দেওয়া হয়। জয়দেবপুর থেকে চৌরাস্তা পর্যন্ত আরো ৫টি ব্যারিকেড দেওয়া হয় যাতে পাকিস্তানি বাহিনী অস্ত্র নিয়ে ফেরত যেতে না পারে।
২য় ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের সেকেন্ড ইন-কমান্ড মেজর কেএম সফিউল্লাহকে (পরবর্তীকালে প্রধান সেনাপতি) জনতার ওপর গুলি বর্ষণের আদেশ দেওয়া হয়। বেঙ্গল রেজিমেন্টের সৈন্যরা আমাদের/জনতার ওপর গুলি না করে আকাশের দিকে গুলি ছুড়ে সামনে আসতে থাকলে আমরা বর্তমান গাজীপুর কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের ওপর অবস্থান নিয়ে বন্দুক ও চাইনিজ রাইফেল দিয়ে সেনাবাহিনীর ওপর পালাক্রমে গুলি বর্ষণ করি।
মন্ত্রী জানান, আমরা যখন ব্যারিকেড দিচ্ছিলাম তখন টাঙ্গাইল থেকে রেশন নিয়ে একটি কনভয় জয়দেবপুর আসছিল। সে রেশনের গাড়িকে জনতা আটকে দেয়। সে কনভয়ে থাকা ৫ জন সৈন্যের চাইনিজ রাইফেল ও এলএমজি তাদের কাছ থেকে কেড়ে নেওয়া হয়। এদিকে রেলগেটের ব্যারিকেড সরানোর জন্য ২য় ইস্ট বেঙ্গলের রেজিমেন্টকে ব্রিগেডিয়ার জাহান জেব আদেশ দেয়। পাক হানাদার বাহিনীর গুলিতে জয়দেবপুরে কয়েকজন শহীদ হন, আহত হন শত শত বীর জনতা। বর্তমানে সেই স্থানে চৌরাস্তার মোড়ে ‘জাগ্রত চৌরঙ্গী’ নামে ভাস্কর্য স্থাপিত হয়েছে।
সোনালীনিউজ/এমটিআই
আপনার মতামত লিখুন :