• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

মুক্তিযোদ্ধাদের নির্ভুল ডাটাবেজ হোক


নিজস্ব প্রতিবেদক নভেম্বর ১৪, ২০১৬, ০৯:২৪ এএম
মুক্তিযোদ্ধাদের নির্ভুল ডাটাবেজ হোক

‘মুক্তিযোদ্ধা’র সংজ্ঞা ও বয়স নির্ধারণ করে প্রজ্ঞাপণ জারি করেছে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়। ৯ নভেম্বর মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে। প্রজ্ঞাপণ অনুযায়ী, মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে অন্তর্ভুক্তির জন্য ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ ন্যূনতম ১৩ বছর হতে হবে। এ সংক্রান্ত বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিলের সুপারিশের আলোকে প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাদের একটি নির্ভরযোগ্য ও গ্রহণযোগ্য তালিকা প্রণয়নের লক্ষ্যে এই সংজ্ঞা ও বয়স নির্ধারণ করা হয়েছে। জাতির চরম দুর্ভাগ্য যে, মুক্তিযুদ্ধের চার দশকেও দেশমাতৃকার জন্য অসীম সাহসে লড়ে যাওয়া মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা প্রণয়ন করা যায়নি। বরং সেই গৌরবময় অবদানের স্বীকৃতি পেতে অনেক প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাকে পদে পদে হয়রানি ও লাঞ্ছনার শিকার হতে হচ্ছে। আবার ভুয়া সনদ নিয়ে অনেকে বড় বড় পদে থেকে নানা সুবিধা হাতিয়ে নিচ্ছেন। যাই হোক, দেরিতে হলেও মুক্তিযোদ্ধাদের সংজ্ঞা ও বয়স নির্ধারণ করা হয়েছে, এটি নিশ্চয়ই একটি ভালো কাজ। এর ভিত্তিতে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের একটি নির্ভুল ডাটাবেজ প্রণীত হলে সেটি হবে বড় একটি কাজ।

উল্লিখিত প্রজ্ঞাপণে মুক্তিযোদ্ধার সংজ্ঞায় বলা হয়েছে, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কর্তৃক স্বাধীনতার ঘোষণায় সাড়া দিয়ে ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ থেকে ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত সময়ের মধ্যে যেসব ব্যক্তি বাংলাদেশের মহান স্বাধীনতা অর্জনের লক্ষ্যে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছেন তারাই মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে গণ্য হবেন। তাদের মধ্যে যেসব ব্যক্তি মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণের জন্য বাংলাদেশের সীমানা অতিক্রম করে ভারতের বিভিন্ন ট্রেনিং/প্রশিক্ষণ ক্যাম্পে নাম দিয়েছিলেন, যেসব বাংলাদেশি পেশাজীবী মুক্তিযুদ্ধের সময় বিদেশে অবস্থানকালে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে বিশেষ অবদান রেখেছেন। এবং যেসব বাংলাদেশি বিশিষ্ট নাগরিক বিশ্বে জনমত গঠনে সক্রিয় ভূমিকা রেখেছেন, তারা মুক্তিযোদ্ধা বলে গণ্য হবেন। এ ছাড়া যারা মুক্তিযুদ্ধকালীন গঠিত বাংলাদেশ সরকারের (মুজিবনগর সরকার) অধীনে কর্মকর্তা-কর্মচারী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন; সশস্ত্র বাহিনী, পুলিশ, ইপিআর, আনসার বাহিনীর সদস্য যারা মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয় অংশগ্রহণ করেছেন; মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণকারী ও বাংলাদেশ সরকারের (মুজিবনগর সরকার) সঙ্গে সম্পৃক্ত এমএনএরা ও এমপিএরা (গণপরিষদ সদস্য) এই আওতায় পড়বেন। পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ও তাদের সহযোগী কর্তৃক নির্যাতিত নারী (বীরাঙ্গনা) মুক্তিযোদ্ধার মধ্যে পড়বেন। স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের শিল্পী ও কলাকুশলী এবং দেশ ও দেশের বাইরে দায়িত্ব পালনকারী বাংলাদেশি সাংবাদিক; স্বাধীন বাংলা ফুটবল দলের খেলোয়াড়; মুক্তিযুদ্ধকালে আহত মুক্তিযোদ্ধাদের চিকিৎসাসেবা প্রদানকারী মেডিকেল টিমের ডাক্তার, নার্স ও সহকারীরা মুক্তিযোদ্ধার আওতায় থাকবেন।

বাঙালি জাতির হাজার বছরের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় আত্মত্যাগ, অর্জন ও গৌরবের ঘটনা হচ্ছে ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ। সেদিনকার জনযুদ্ধের গণযোদ্ধারা যুদ্ধে অংশগ্রহণ করে হাসতে হাসতে প্রাণ বিসর্জনে কুণ্ঠিত হননি। যাদের অপরিমেয় আত্মত্যাগে আজ আমরা স্বাধীন, আজ আমরা বিশ্বসভায় নিজের কীর্তির স্বীকৃতি পাই, জাতির সেই শ্রেষ্ঠ সন্তান জীবিত বীর মুক্তিযোদ্ধাদের কি আমরা স্বীকৃতি দিতে পেরেছি? না, তাদের সবাইকে আমরা চিহ্নিতই করতে পারিনি। মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা প্রণয়নের নামে ৪৫ বছর ধরে ধারাবাহিকভাবে চলেছে প্রহসন। দলীয় রাজনৈতিক সংকীর্ণ দৃষ্টিভঙ্গিতে তালিকায় নাম যোগ ও বিয়োগ করা হয়েছে। বয়সের কারণে মরে মরে প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধার সংখ্যা যখন কমে যাচ্ছে, তখন সরকারের তালিকায় নতুন নতুন নাম যুক্ত হয়ে তালিকা স্ফীত হচ্ছে। খোদ মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয়ের সচিবসহ সরকারের প্রভাবশালী পাঁচ সচিবের মুক্তিযোদ্ধার সার্টিফিকেট ভুয়া প্রমাণিত হয়েছে। মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে প্রহসনের একপর্যায়ে উচ্চআদালত থেকে জানতে চাওয়া হয়েছে- ‘মুক্তিযোদ্ধা’র সংজ্ঞা কী? যাই হোক, মুক্তিযোদ্ধার সংজ্ঞা ও বয়স নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছে। এতে হয়তো কিছু বিভ্রান্তি দূর হবে। আবার মুক্তিযোদ্ধার বয়স কমিয়ে আনার সুযোগ নিতেও জালিয়াত চক্র সচেষ্ট হতে পারে। কাজেই তথ্যভিত্তিক যাচাই-বাছাই করেই মুক্তিযোদ্ধা পরিচয় চূড়ান্ত করতে হবে। আমরা চাই- মুক্তিযোদ্ধা পরিচয় ও তালিকা নিয়ে প্রহসনের দ্রুত সমাপ্তি ঘটুক। আর কালক্ষেপণ না করে দেশের বীর মুক্তিযোদ্ধাদের একটি নির্ভুল ও গ্রহণযোগ্য ডাটাবেজ তৈরি করা হোক।

সোনালীনিউজ/ঢাকা
 

Wordbridge School
Link copied!