• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

মুখে দুর্গন্ধ হলে কী করবেন


ডা. আওরঙ্গজেব আরু জুন ২২, ২০১৭, ১২:১২ পিএম
মুখে দুর্গন্ধ হলে কী করবেন

ঢাকা : সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলাটা মানুষের স্বভাবজাত বৈশিষ্ট্য। আর এ কারণে আমাদের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি পেয়েছে। এই সচেতনতা প্রত্যেকটি ক্ষেত্রে আমাদের সফল করে তুলেছে। এর সবচেয়ে বড় উদাহরণ হলো দাঁত নিয়ে মানুষের বর্তমান সচেতনতা। আগে মুখে দুর্গন্ধ হলে তাকে মানুষ এড়িয়ে চলত, এমন কি আক্রান্ত ব্যক্তি নিজেও নিজেকে গুটিয়ে রাখতে চাইত সামাজিক কর্মকাণ্ড ও আনুষ্ঠানিকতা থেকে।

দন্তবিশেষজ্ঞদের প্রচেষ্টায় আজ ব্যাঙ ব্রেথ বা মুখে দুর্গন্ধ একটি ডেন্টাল ডিজিজ বা দাঁতের রোগ হিসেবে চিহ্নিত করা গেছে। রোগ সনাক্ত করা গেলে তা চিকিৎসা করা সম্ভব হয় এবং রোগ থেকে পরিত্রাণ পাওয়া যায়। আগে আমরা জানতামই না যে, কেন মুখে দুর্গন্ধ হয়। ন্যাশনাল হেলথ সার্ভিস ২০১৬-এর জরিপ মতে, বিশ্বে প্রতি ৪ জনে ১ জন করে মুখে দুর্গন্ধের সমস্যায় ভুগে থাকেন। এটি যেকোনো বয়সেই হতে পারে। দন্তবিশেষজ্ঞরা এর অন্যতম প্রধান কারণ হিসেবে যেটি সনাক্ত করেছেন তা হলো, মুখ ও মুখগহ্বরের ত্রুটিপূর্ণ বা  নিম্নমানের পরিচর্যা। শরীরের যেকোনো অঙ্গের মতোই এর পরিচর্যায়ও রয়েছে কিছু সুনির্দিষ্ট নিয়ম। মনে রাখা প্রয়োজন, মুখ ও দাঁত দিয়ে আমরা নানা ধরনের খাদ্য গ্রহণ করছি। বিভিন্ন ধরনের খাদ্যের প্রতিক্রিয়াও আবার বিভিন্ন ধরনের। তাই সঠিক নিয়মে নিয়মিত দাঁত পরিস্কার করা মুখের দুর্গন্ধ প্রতিরোধের প্রধান নিয়ামক।

আমরা প্রতিদিন যে খাদ্য খাই তা পরিস্কার না করলে দাঁতের ফাঁকে মাড়িতে জমতে থাকে এবং এবং ব্যাকটেরিয়ায় আক্রান্ত হয়ে পড়ে আমাদের মুখ ও মুখগহ্বরের পুরোটা। এতে বাদ পড়ে না মুখে জিহবাও। এই ব্যাকটেরিয়া শুধু মুখে দুর্গন্ধই তৈরি করে সেই সঙ্গে মাড়ির রোগ ও দাঁতের ক্ষয় বা টুথ ডি-কে-এর মতো মারাত্মক রোগের জন্ম দেয়। মুখের দুর্গন্ধ বা হ্যালিটেসিস প্রতিরোধে দাঁত পরিস্কার রাখা খুবই জরুরি।

কিছু খাদ্য আছে যা দ্রুত মুখের দুর্গন্ধ বাড়াতে সাহায্য করে থাকে। এসব ক্ষেত্রে ডেন্টিস্টরা প্রতিনিয়ত সচেতন করে থাকেন। তীব্র ঝাঁঝালো গন্ধযুক্ত খাবার গ্রহণে সতর্ক থাকতে হবে। যেমন- রসুন, পেঁয়াজ, মসলাযুক্ত খাবার। কফি, অ্যালকোহল মুখের দুর্গন্ধের মাত্রা বাড়িয়ে দেয়। ধুমপান মুখের দুর্গন্ধের আরেকটি বিশেষ কারণ। ধূমপানের ফলে দাঁতে দাগ পড়ে যায়, মাঢ়ি আক্রান্ত হয়, মুখের স্বাদ নষ্ট হয়ে যায়। এক পর্যায়ে মুখে প্রচন্ড দুর্গন্ধ বাড়তে থাকে। মুখের দুর্গন্ধ প্রতিরোধে অবশ্যই ধুমপান বর্জন করতে হবে। ধুমপানকে ওরাল ডিজিজের হাই রিস্ক ফ্যাক্টর হিসেবে ধরা হয়ে থাকে। আবার কোনো কোনো ক্ষেত্রে বিভিন্ন ওষুধ সেবনের কারণেও মুখে দুর্গন্ধ হতে পারে। নাইট্রেট জাতীয় ওষুধ, ট্রাংকুলাইজার, কেমোথেরাপিতে ব্যবহৃত ওষুধ থেকে মুখে দুর্গন্ধ হতে পারে। বিভিন্ন রোগের কারণেও মুখে দুর্গন্ধ হতে পারে। যেমন- ড্রাই মাউথ, ডায়াবেটিস, ব্রংকাইটিস, টনসিলাইটিস, সাইনুসাইটিস, নোজ ইনফেকশন ইত্যাদি। মুখে কেন দুর্গন্ধ হচ্ছে তা সনাক্ত করতে পারবেন আপনার ডেন্টিস্ট। ডেন্টিস্ট কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে প্রেসক্রাইব করতে পারবেন আপনার চিকিৎসা ব্যবস্থা। আরও একটি বিষয় বর্তমান ডেন্টিস্টরা সনাক্ত করতে পেরেছেন তা হলো হ্যালিটোফোবিয়া। এটি একটি সাইকোলজিক্যাল কন্ডিশন।

মুখের দুর্গন্ধ এমনই একটি অস্বস্তিকর পর্যায়ে আমাদের নিয়ে এসেছে যে, আমরা এখন এটি নিয়ে মানসিক সমস্যায়ও আক্রান্ত হয়ে পড়ছি। যার নাম হ্যালিটোফোবিয়া। এতে আক্রান্ত ব্যক্তি মনে করে যে, তার মুখে দুর্গন্ধ আছে, আর প্রতিনিয়ত এটি সন্দেহ করতে থাকে। এমনকি অনেক সময় অন্যের স্বাভাবিক আচরণকেও সে অস্বাভাবিকভাবে গ্রহণ করে আর একমাত্র কারণ হিসেবে দায়ী করেন নিজের কাল্পনিক মুখের দুর্গন্ধ। এক্ষেত্রেও চিকিৎসা রয়েছে।

মুখের দুর্গন্ধ নিয়ে অস্থিরতা বা হীনমন্যতায় না ভুগে একজন ডেন্টিস্টের সঙ্গে পরামর্শ করুণ অতি সহজেই এর সমাধান পেয়ে যাবেন, শুধু প্রয়োজন কারণ সনাক্তকরণ ও ডেন্টিস্টের একটি সুনির্দিষ্ট গাইডলাইন।

লেখক: সাধারণ সম্পাদক, বাংলাদেশ ডেন্টাল হেলথ রিসার্চ ফাউন্ডেশন। চিফ কনসালটেন্ট, ইলাহী ডেন্টাল কেয়ার। মেরুল বাড্ডা প্রধান সড়ক, ঢাকা।

 

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!