• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

‘মুজিববর্ষ’ পালন নিয়ে যা বললেন আসিফ নজরুল


নিজস্ব প্রতিবেদক জানুয়ারি ১৪, ২০২০, ০২:৫৬ পিএম
‘মুজিববর্ষ’ পালন নিয়ে যা বললেন আসিফ নজরুল

ঢাকা : জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী আগামী ১৭ মার্চ। এ উপলক্ষে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ২০২০-২১ সালকে মুজিব বর্ষ ঘোষণা করেছে। ইতোমধ্যে গত ১০ জানুয়ারি বর্ণাঢ্য আয়োজনের মধ্যে দিয়ে শুরু হয়েছে মুজিববর্ষের ক্ষণগণনা। ১৭ মার্চ বর্ণাঢ্য উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে শুরু হবে বছরব্যাপী এ উদযাপন।

এদিকে মুজিবর্ষ উপলক্ষে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দিয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক ড. আসিফ নজরুল।

মঙ্গলবার (১৪ জানুয়ারি) সকালে তার ফেসবুকে দেয়া ওই স্ট্যাটাসটি সোনালীনিউজের পাঠকদের জন্য হুবহু তুলে দেয়া হলো-

‘আমি বাবা হয়েছি প্রায় এক যুগ আগে। এরপর থেকে যখনই কোনো মামলায় পড়েছি বা কোনো ঝামেলায়, মনে হতো হায় হায়, আমি না থাকলে কী অবস্থা হবে আমার সন্তানদের। শীলাকে বিয়ে করার পর মনে হতো আমি জেলে গেলে বাঁচবে কীভাবে সে!

আমাদের মতোই ভালোবাসাময় সংসার ছিল বঙ্গবন্ধুর। উনার সঙ্গে রাসেল, অল্পবয়সী হাসিনা, রেহানা আর উনার স্ত্রীর ছবি দেখলে চোখ জুড়িয়ে যায়, বুকের ভেতর নরম নদী উথলে উঠে।

আর ভাবি, আহারে কেমন করে তিনি এদের রেখে বছরের পর বছর জেলে থেকেছেন? কীভাবে দিনের পর দিন কাটিয়েছেন পথে প্রান্তরে, সংসার থেকে বহুদূরে? দেশের জন্য কী গভীর প্রেম আর মায়া থাকলে করা যায় এমন অচিন্ত্যনীয় আত্মত্যাগ!

কিছু ভুল তিনি করেছেন জীবনের শেষপ্রান্তে। কিন্তু কোনো ভুলেই নাকচ হয়ে যায় না তার প্রায় পুরো জীবনের অসীম আত্মত্যাগ। কোনো কিছু্ আড়াল করতে পারে না এই সত্য যে, আমার দেশটা স্বাধীন হয়েছে উনি জন্মেছিলেন বলে।

২. বঙ্গবন্ধুকে ভালবাসি সাধারণ বিচারবুদ্ধি থেকে। গণপরিষদ বিতর্ক পড়ে উপলদ্ধি করেছি সব আত্মত্যাগ তিনি করেছেন স্রেফ সাধারণ মানুষের কষ্ট দূর করার জন্য।

উনার ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’ পড়ে এটা আরও ভালোভাবে জেনেছি। কাঁদতে কাঁদতে চোখ ভারী হয়েছে বারবার। মনে হয়েছে এ বইয়ের লাইনের পর লাইন বলে আসি বাংলাদেশের সব শিশুর কাছে, তরুণের কাছে।

নিথর রাতে এটাও কখনও মনে হয়েছে, বঙ্গবন্ধুকে আমরা উপলদ্ধি করতে পারিনি ঠিকমতো। না তার বিরোধীরা, না তার স্তাবকের পাল, না তার নিজের প্রতিষ্ঠিত দল।

৩. আমার এ মনে করাটা দৃঢ়তর হয়েছে মুজিববর্ষ পালনের বিষয়টা দেখে। উনাকে স্মরণ করা হচ্ছে অনেকাংশে স্থুল, ব্যয়বহুল, আর আরোপিতভাবে। এসব করে কি মানুষের মনে উনার প্রতি কৃতজ্ঞতা জাগবে নাকি মানুষ বিরক্ত হয় উঠবে-মনে হয় না তা বিবেচনা করা হয়েছে ভালো করে।

আমার বিশ্ববিদ্যালয়ে শীতের রাত বারোটা একটায় স্লোগান ওঠে বঙ্গবন্ধুর নামে। ভাবি, উনি বেঁচে থাকলে কি পছন্দ করতেন এটা? আমার এলাকায় সবচেয়ে অত্যাচারী মানুষটা চোখ রাঙ্গান মুজিববর্ষের পোস্টারে ব্যানারে। আমার সড়কের বহু সবুজ ঢেকে গেছে উনার নামে করা বিকট তোরণে। আমার বাসায় পত্রিকার পর পত্রিকা ঢেকে গেছে অনাবশ্যক স্তুতিবাক্যে।

উনার কি ভালো লাগতো এসব?

৪.আসল বঙ্গবন্ধুকে আমরা বোধহয় মেরে ফেলেছি মুজিববর্ষেও। আসল বঙ্গবন্ধু এসবের চেয়ে অনেক সুন্দর, অনেক মহান, অনেক মানবিক, অনেক মঙ্গলময়।

বঙ্গবন্ধুকে ভালোবাসতে মুজিববর্ষ লাগে না। শুধু একটু জানতে হয়, থাকতে হয় সামান্য বিচারবুদ্ধি।

মুজিববর্ষের অনেক আয়োজনে সে বিচারবুদ্ধিই হারিয়ে গেছে যেন।’

Wordbridge School
Link copied!