• ঢাকা
  • শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

মুশফিকের সেঞ্চুরিতে সর্বোচ্চ স্কোর করেও হারল বাংলাদেশ


ক্রীড়া প্রতিবেদক জুন ২১, ২০১৯, ১২:২০ এএম
মুশফিকের সেঞ্চুরিতে সর্বোচ্চ স্কোর করেও হারল বাংলাদেশ

ছবি সংগৃহীত

ঢাকা: অস্ট্রেলিয়ার গড়া  ৩৮১ রানের পাহাড় টপকাতে পারলনা টাইগাররা। মুশফিকুর রহিমের লড়াকু সেঞ্চুরিতে নিজেদের ওয়ানডেতে ইতিহাসে সর্বোচ্চ স্কোর করেও ৪৮ রানে হারল বাংলাদেশ। তবে উইন্ডিজের বিপক্ষে করা ৩৩০ রান পেরিয়ে ৩৩৩ রান করেছে লাল সবুজ জার্সিধারীরা।  

হারলেও বাংলাদেশের সেমির স্বপ্ন এখনি শেষ হয়ে যাচ্ছে না। সেক্ষেত্রে বাংলাদেশকে পরের তিনটি ম্যাচই জিততে হবে। বাংলাদেশের পরের ম্যাচগুলো আফগানিস্তান, ভারত ও পাকিস্তানের বিপক্ষে। অস্ট্রেলিয়া স্কোরবোর্ডে ৩৮১ রান তোলার পর অনেকেই ভেবেছিলেন বাংলাদেশ ভেঙে পড়বে। 

কিন্তু তাদের ধারণা ভুল প্রমাণ করে বাংলাদেশ স্কোরবোর্ডে ৩৩৩ রান তুলেছে।  মাশরাফিও পুরস্কার বিতরণী মঞ্চে বলে গেলেন, তারা ৪০-৫০ রান বেশি দিয়ে ফেলেছেন। এর মূল্যই তাদের চোকাতে হলো ৪৮ রানে হেরে। বৃথা গেল মুশফিকের অপরাজিত সেঞ্চুরি। ৯৭ বলে ১০২ রানে অপরাজিত থাকেন তিনি। নয় চারের বিপরীতে এক ছক্কা মেরেছেন। দারুন ইনিংস খেলেছেন মাহমুদউল্লাহও। ৫০ বলে ৬৯ করেছেন তিনি। পাঁচ চারের বিপরীতে ছক্কা মেরেছেন তিনটি। 

দ্বাদশ বিশ্বকাপের ২৬তম ম্যাচে বাংলাদেশের সামনে কঠিন চ্যালেঞ্জ ছুঁরে দিয়েছে বর্তমান চ্যাম্পিয়ন অস্ট্রেলিয়া। ডেভিড ওয়ার্নার, উসমান খাজা ও অ্যারেন ফিঞ্চের ব্যাটে চড়ে রানের পাহাড় গড়েছে ক্যাঙ্গারুরা। ৫ উইকেট হারিয়ে স্কোর বোর্ডে ৩৮১ রান জমা করেছে অসিরা। রান পাহাড় ডিঙ্গাতে নেমে চতুর্থ ওভারেই উইকেট হারায় বাংলাদেশ।

তামিম ইকবালের সঙ্গে ভুল বোঝাবুঝিতে রান-আউট হয়ে যান ২ বাউন্ডারিতে ১০ রান করা সৌম্য সরকার। স্ট্রাইক প্রান্তে থাকা তামিমের আহ্বানে সাড়া দেন সৌম্য। কিন্তু তিনি মাঝপথে যেতেই তামিম মানা করেন। এই সুযোগ মিড অন থেকে দেখে শুনে সরাসরি থ্রোতে নন স্ট্রাইক এন্ডের স্টাম্প উপড়ে দেন অ্যরন ফিঞ্চ।

সৌম্যর দুঃখজনক রান-আউটের পর তামিম-সাকিবের জুটিতে এগিয়ে যাচ্ছিল বাংলাদেশ। জুটিতে ৭৯ রান আসতেই ছন্দপতন। ৪১ বলে ৪১ করে ছোট্ট একটা ভুলে স্টইনিসের বলে ডেভিড ওয়ার্নারের তালুবন্দি হন দুর্দান্ত খেলতে থাকা আসরে এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ রানের মালিক সাকিব। স্লোয়ার বলে আগেভাগেই শট খেলায় টাইমিং করতে পারেননি। ব্যাটের কানায় লেগে মিড অফে সহজ ক্যাচ যায় ডেভিড ওয়ার্নারের হাতে। টানা পঞ্চম ম্যাচে পঞ্চাশোর্ধ রান করা হলো না বিশ্বসেরা অল-রাউন্ডারের।

সাকিবের ফিফটি না হলেও চলতি বিশ্বকাপে প্রথমবার হাফসেঞ্চুরির দেখা পেয়েছেন তামিম। যদিও ফিফটি পূরণ করার পর বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি, ৬২ রানে মিচেল স্টার্কের বলে বোল্ড হয়ে প্যাভিলিয়নে ফিরেছেন তিনি। ৬৫ বলে ওয়ানডে ক্যারিয়ারের ৪৭তম ফিফটি পূরণ করেন এই ওপেনার। ৭৪ বলে ৬ চারে ৬২ রান করেন তামিম।

আগের ম্যাচে ৬৯ বলে ৯৪ রানের ঝড়ো ইনিংস খেলে আশা জাগিয়ে ছিলেন লিটন দাস। কিন্তু আজ অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে দলের গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে হতাশ করেন লিটন। অজিদের বিপক্ষে ১৭ বলে ২০ রান করে ফেরেন এই উইকেটকিপার ব্যাটসম্যান।

লিটন দাসের বিদায়ের পর মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের সঙ্গে জুটি বেধে অনবদ্য ব্যাটিং করে যান মুশফিকুর রহিম। পঞ্চম উইকেটে তারা ১২৭ রানের জুটি গড়ে দলকে জয়ের স্বপ্ন দেখান। শেষ দিকে জয়ের জন্য বাংলাদেশের প্রয়োজন ছিল ২৮ বলে ৮০ রান। খেলার এমন অবস্থায় নাথান কোল্টার নিলের তোপের মুখে পড়ে দুই বলে মাহমুদউল্লাহ ও সাব্বির রহমানের উইকেট হারায় বাংলাদেশ।

মাহমুদউল্লাহর বিদায়ের মধ্য দিয়ে জয়ের স্বপ্ন ফিকে হয়ে যায় টাইগারদের। শেষ দিকে মুশফিকুর রহিমের একার লড়াইয়ে পরাজয়ের ব্যবধান কমলেও হার এড়াতে পারেনি বাংলাদেশ। দলের হয়ে ৯৭ বল খেলে ৯টি চার ও এক ছক্কায় অপরাজিত ১০২ রান করেন মুশফিক।

বৃহস্পতিবার (২০ জুন) নটিংহ্যামের ট্রেন্টব্রিজে টস জিতে টাইগারদের বিপক্ষে আগে ব্যাট করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন অসি অধিনায়ক অ্যারন ফিঞ্চ। ব্যাট করতে নামা অসিদের দারুন সূচনা এনে দিয়েছেন দুই ওপেনার ডেভিড ওয়ার্নার ও অ্যারেন ফিঞ্চ। অথচ পঞ্চম ওভারেই ওপেনিং জুটিটা ভাঙতে পারত। মাশরাফির বলে ব্যাকওয়ার্ড পয়েন্টে ক্যাচ ফেলেছেন সাব্বির। কঠিন কোনো ক্যাচও ছিল না। ১০ রানে জীবন পেয়ে স্বাচ্ছন্দ্যে ব্যাটিং করছেন ওয়ার্নার।

বিশ্বকাপে তুলে নিলেন আরও একটি হাফ সেঞ্চুরি। রুবেল হোসেনের বল ফাইন লেগে ঠেলে দিয়ে ৫৫ বলে পূরণ করেন ফিফটি। ইংল্যান্ড ও ওয়েলসের আসরে চতুর্থবার ৫০ ছাড়ানো ইনিংস খেললেন এই ওপেনার। ওয়ার্নারের পর ফিফটি পূরণ করেছেন অ্যারন ফিঞ্চ। মেহেদী হাসান মিরাজের বলে বাউন্ডারি মেরে মাইলফলকটিতে পৌঁছান এই ওপেনার। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সেঞ্চুরি পাওয়া অস্ট্রেলিয়ান অধিনায়ক জ্বলে উঠেছেন আবার। ৫০ করতে তার লেগেছে ৪৭ বল।

দুই প্রান্তে বোলার পরিবর্তন করেও জুটি ভাঙতে পারছিল না টাইগার বোলাররা। তাই বাধ্য হয়ে সৌম্য সরকারের হাতে বল তুলে দেন অধিনায়ক মাশরাফি। আস্থার প্রতিদান দিয়ে আক্রমণে এসেই বাংলাদেশকে ব্রেকথ্রু এনে দিয়েছেন সৌম্য। নিজের প্রথম ওভারেই অ্যারেন ফিঞ্চকে রুবেলের তালুবন্দি করে বিদায় করেন তিনি।

তবে অন্যপ্রান্তে অটল ডেভিট ওয়ার্নার। চলতি বিশ্বকাপে নিজের দ্বিতীয় সেঞ্চুরি তুলে নিয়েছেন তিনি। সেঞ্চুরি হাঁকিয়ে বিধ্বংসী হয়ে উঠেছিলেন ডেভিড ওয়ার্নার। ওয়ানডে ক্যারিয়ারের ১৬তম সেঞ্চুরি পূরণের পর ১৫০ রানও ছাড়িয়ে যান ওয়ার্নার। বাংলাদেশের নিয়মিত বোলারদের ওপর ঝড় তুলে একের পর এক বল করেছেন সীমানা ছাড়া। অবশেষে তাকে থামালেন ‘পার্ট-টাইম’ বোলার সৌম্য। তার শর্ট বল থার্ডম্যানের ওপর দিয়ে মারতে চেয়েছিলেন ওয়ার্নার। কিন্তু বল তার ব্যাট ছুঁয়ে আশ্রয় নেয় রুবেল হোসেনের হাতে। তার আগেই ১৪৭ বলে ১৪ চার ৫ ছক্কায় ১৬৬ রান তুলে নেন তিনি।  

এরপর ব্যাট হাতে নেমেই বিধ্বংসী হয়ে উঠেছিলেন ম্যাক্সওয়েল। তবে সৌম্যর ওভারেই রান আউট হয়ে ফিরে যান এই ব্যাটসম্যান। রুবেল হোসেনের চমৎকার থ্রোতে প্যাভিলিয়নে ফেরার আগে মাত্র ১০ বলে ২ চার ও ৩ ছক্কায় খেলে যান ৩২ রানের টর্নেডো ইনিংস। ম্যাক্সওয়েল সাজঘরে ফেরার পর আবারও সৌম্যর জাদু। এবার তার শিকার হয়ে ফেরেন উসমান খাজা। সেঞ্চুরির আশা জাগানো এই ব্যাটসম্যান ৮৯ রানে ধরা পড়েন মুশফিকুর রহিমের গ্লাভসে। ৭২ বলের ইনিংসটি তিনি সাজান ১০ বাউন্ডারিতে। তাকে আউট করে সৌম্য পান তৃতীয় উইকেট।

এদিন ব্যাট হাতে আলো ছড়াতে পারেননি স্টিভেন স্মিথ। মাত্র ১ রান করে মোস্তাফিজুর রহমানের শিকার হয়ে সাজঘরে ফেরেন সাবেক এই অসি অধিনায়ক। পরের ওভারেই শুরু হয় বৃষ্টির কান্না! ঝুম বৃষ্টির ফলে খেলা বন্ধ হয়ে য়ায়। মাত্র কয়েক মিনিট পরেই আবার খেলা শুরু হয়। শেষ পর্যন্ত নির্ধারিত ওভারে ৫ উইকেট হারিয়ে ৩৮১ রানের পাহাড় গড়ে অস্ট্রেলিয়া।

বাংলাদেশের পক্ষে ‘পার্ট-টাইম’ বোলার সৌম্য সরকার ৩টি উইকেট নিয়েছেন। ১টি উইকেট নিয়েছেন মোস্তাফিজুর রহমান।

অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে একাদশে দুটি পরিবর্তন এনেছে বাংলাদেশ। কাঁধের চোটে নেই মোসাদ্দেক হোসেন, পিঠের সমস্যায় বাদ পড়েছেন মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন। তাদের জায়গায় দলে ঢুকেছেন সাব্বির রহমান ও রুবেল হোসেন। বাংলাদেশের মতো অস্ট্রেলিয়াও তাদের একাদশে তিনটি পরিবর্তন এনেছে। মার্কাস স্টয়নিসকে ফিরিয়ে এনেছে তারা। এই ম্যাচে খেলছেন লেগস্পিনার অ্যাডাম জামপা ও পেসার নাথান কোন্টার নাইল।

বাংলাদেশ একাদশ: মাশরাফি বিন মর্তুজা (অধিনায়ক), তামিম ইকবাল, সৌম্য সরকার, সাকিব আল হাসান, মুশফিকুর রহীম (উইকেটরক্ষক), লিটন কুমার দাস, মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ, সাব্বির রহমান, রুবেল হোসেন, মেহেদী হাসান মিরাজ, মোস্তাফিজুর রহমান।

অস্ট্রেলিয়া একাদশ: অ্যারন ফিঞ্চ (অধিনায়ক), ডেভিড ওয়ার্নার, উসমান খাজা, স্টিভ স্মিথ, গ্লেন ম্যাক্সওয়েল, মার্কোস স্টইনিস, অ্যালেক্স ক্যারে (উইকেটরক্ষক), নাথান কুল্টার-নাইল, প্যাট কামিন্স, মিচেল স্টার্ক, অ্যাডাম জাম্পা।a

সোনালীনিউজ/ঢাকা/জেডআই

Wordbridge School
Link copied!