• ঢাকা
  • মঙ্গলবার, ১৯ মার্চ, ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০
দেশের মুদ্রণ ও প্রকাশনা শিল্পে ক্ষতি প্রায় ৪ হাজার কোটি টাকা

মূদ্রণ ও প্রকাশনা শিল্প বাচিঁয়ে রাখতে সহায়তার আহ্বান উদ্যোক্তাদের


নিজস্ব প্রতিবেদক জুলাই ১৬, ২০২০, ০৫:০২ পিএম
মূদ্রণ ও প্রকাশনা শিল্প বাচিঁয়ে রাখতে সহায়তার আহ্বান উদ্যোক্তাদের

ছবি: প্রতিনিধি

ঢাকা: দেশের মুদ্রণ ও প্রকাশনা শিল্প খাতে প্রতিবছর প্রায় ১২ হাজার কোটি টাকার টার্নওভার হয়ে থাকে, তবে কোভিড-১৯ মহামারীর কারণে এখাতের ক্ষতি হয়েছে ক্ষতি প্রায় ৪ হাজার কোটি টাকা। এ শিল্পের স্থানীয় উদ্যোক্তা ও উৎপাদনকারীদের বাচিঁয়ে রাখতে আর্থিক এবং নীতি সহায়তার আহ্বান জানান খাত সংশ্লিষ্টরা।

বৃহস্পতিবার (১৬ জুলাই) ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই) আয়োজিত ‘কোভিড-১৯ মহামারীর কারণে বাংলাদেশের মুদ্রণ ও প্রকাশনা শিল্পের সংকট ও প্রতিকার নির্ধারণ’ শীর্ষক ওয়েবনার তারা আহ্বান জানান।

অনুষ্ঠানের স্বাগত বক্তব্যে ডিসিসিআই সভাপতি শামস মাহমুদ বলেন, কোভিড-১৯ মহামারীর কারণে ব্যবসায়িক কর্মকা- পরিচালনায় অর্থপ্রবাহ নিশ্চিত করাই এখন উদ্যোক্তাদের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। তিনি বলেন, এ মহামারী সংকট শুরু হওয়ার পরপরই সরকার তা মোকাবেলায় ক্ষুদ্র ও মাঝারী উদ্যোক্তাদের জন্য ২০ হাজার কোটি টাকার একটি প্রণোদনার প্যাকেজ ঘোষণা করেছে, তবে ঘোষিত এ প্যাকেজ হতে ঋণ সুবিধা পাওয়া উদ্যোক্তাদের সংখ্যা তেমন উল্লেখযোগ্য নয় এবং বর্তমান অবস্থা উত্তরণে তিনি ব্যাংক সমূহকে সহযোগিতার মনোভাব নিয়ে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান।

ঢাকা চেম্বারের সভাপতি বলেন, দীর্ঘদিন ধরেই দেশের মুদ্রণ ও প্রকাশনা শিল্প বিশেষকরে আমাদের এসএমই খাতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে আসছে এবং এখাতের সার্বিক উন্নয়নে তিনি সরকারের নীতিসহায়তা, দক্ষজনবল তৈরিতে প্রশিক্ষণ প্রদান, শুল্ক কাঠামোর সংষ্কার, আধুনিক যন্ত্রপাতির ব্যবহার বাড়ানো এবং আর্থিক সহায়তা নিশ্চিতকরনের উপর জোরারেপ করেন।    

ঢাকা চেম্বারের সাবেক সভাপতি এম এ মোমেন বলেন, ব্যবসা-বাণিজ্যের অন্যান্য খাতগুলোর মধ্যে এখাতটি খুবই চ্যালেঞ্জিং এবং প্রতিযোগিতাপূণ। তিনি বলেন, এখাতের উদ্যোক্তাবৃন্দ নিজেদের দক্ষতা উন্নয়ন এবং আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়ানোর লক্ষ্যে প্রতিনিয়তই কাজ করে যাচ্ছেন।

তিনি জানান, প্রতিবছর এখাতে প্রায় ১২ হাজার কোটি টাকার টার্নওভার হয়ে থাকে, তবে কোভিড-১৯ মহামারীর কারণে এখাতের উদ্যোক্তাবৃন্দ মারাতœকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে, যেখানে বর্তমানে উদ্যোক্তাদের ব্যবসায়িক কর্মকা- পরিচলনাই অনেকটা হুমকির মুখে পড়েছে। এছাড়াও এ শিল্পের স্থানীয় উদ্যোক্তা ও উৎপাদনকারীদের বাচিঁয়ে রাখতে তিনি তাদের আর্থিক এবং নীতি সহায়তার আহ্বান জানান।

অনলাইন ভিত্তিক বইয়ের চাহিদা প্রতিনিয়ত বাড়লেও মুদ্রিত বইয়ের চাহিদা এবং জনপ্রিয়তা খুব সহসাই কমবে না বলে, তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

বর্তমান অবস্থা মোকবেলায় সরকার ঘোষিত প্রণোদনার প্যাকেজ হতে উদ্যোক্তাদের ঋণ সুবিধা প্রাপ্তির বিষয়টি নিশ্চিত করতে হলে ব্যাংকগুলোর মানসিকতা পরিবর্তন একান্ত আবশ্যক বলে তিনি মত প্রকাশ করেন। তিনি আরোও বলেন, এটি একটি শ্রম ঘন শিল্প হওয়ার, এর মাধ্যমে অনেক বেশি কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করা সম্ভব, তাই এখাতের প্রয়োজনীয় পরিচর্যার কোন বিকল্প নেই।    

ডিসিসিআই’র সভাপতি শামস মাহমুদের সঞ্চালনায় পরিচালিত এ ওয়েবনারে নির্ধারিত আলোচনায় বাংলাদেশ জ্ঞান ও সৃজনশীল প্রকাশক সমিতি-এর সভাপতি ফরিদ আহমেদ, বাংলাদেশ মুদ্রণ শিল্প সমিতি-এর চেয়ারম্যান শহীদ সেরনিয়াবাত, বাংলাদেশ পেপার ইম্পোটার্স এসোসিয়েশন-এর সভাপতি মোঃ শফিকুল ইসলাম ভরসা, হাসেম পেপার মিলস্ লিমিটেড-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক আজমল হোসেন, ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি (ডিআরইউ)-এর সভাপতি রফিকুল ইসলাম আজাদ, বাংলাদেশ গার্মেন্টস এক্সসোরিজ এন্ড প্যাকেজিং ম্যানুফ্যাকচারর্স এন্ড এক্সপোটার্স এসোসিয়েশন (বিজিএপিএমইএ)-এর সভাপতি মোঃ আব্দুল কাদের খান, বাংলাদেশ পুস্তক প্রকাশক ও বিক্রেতা সমিতি-এর সহ-সভাপতি শ্যামল পাল, বাংলাদেশ লোকাল কার্টন ম্যানুফেকচার্স এসোসিয়েশন-এর সভাপতি মোঃ বাশার পাটোয়ারী এবং চট্রগ্রাম কাগজ ও সেলোফোন এসোসিয়েশন-এর সেক্রেটারি জেনারেল মোহাম্মদ বেলাল প্রমুখ যোগদান করেন।

বাংলাদেশ জ্ঞান ও সৃজনশীল প্রকাশক সমিতির সভাপতি ফরিদ আহমেদ প্রকাশনা ও মুদ্রণ খাতে কোভিড-১৯ মহামারীর প্রকৃতি ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণে তিনি গবেষণা পরিচালনা করা এবং দীর্ঘমেয়াদী নীতি সহায়তা প্রদানের উপর জোরারোপ করেন। 

বাংলাদেশ মুদ্রণ শিল্প সমিতি-এর চেয়ারম্যান শহীদ সেরনিয়াবাত জানান, চলতি বছরের জানুয়ারি মাসেই স্থানীয় উদ্যোক্তাবৃন্দ প্রায় ৩৫ কোটি পাঠ্যপুস্তক মুদ্রণ করে সরকারের নিকট হস্তান্তর করা হয়েছে, তবে এখাতের উদ্যোক্তাদের ১০০ কোটি পাঠ্যপুস্তক মুদ্রণের সক্ষমতা রয়েছে। তিনি আরো জানান, প্রায় ৫ লক্ষ মানুষ সরাসরিভাবে জীবিকা নির্বাহে মুদ্রণ খাতের উপর নির্ভরশীল এবং কোভিড-১৯ মহামারীর সময়কালে এখাতের বাৎসরিক মোট ১২ হাজার কোটি টাকার বাজারের মধ্যে প্রায় ৪,০০০ কোটি টাকার বাজার ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে।  তিনি এ শিল্পের ক্ষুদ্র ও মাঝারী উদ্যোক্তাদের টিকে থাকার জন্য ঘোষিত প্রণোদনার প্যাকেজ হতে ঋণ সহায়তা প্রাপ্তির বিষয়টি নিশ্চিতরণের উপর জোরারোপ করেন।     

বাংলাদেশ পেপার ইম্পোটার্স এসোসিয়েশনের  সভাপতি মোঃ শফিকুল ইসলাম ভরসা বলেন, কোভিড-১৯ মহামারীর কারণে এখাতের উৎপাদিত পণ্যের বিক্রিা ৭০% কমে গেছে এবং বর্তমান অবস্থা উত্তরণে প্রণোদনা প্যাকেজের সুষম বন্টনের প্রস্তাব করেন।

ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) সভাপতি রফিকুল ইসলাম আজাদ জানান, দেশে অনুমোদিত ২৫৪টি সংবাদপত্রের মধ্যে মাত্র ৮৬টি বর্তমানে চালু রয়েছে। তিনি জনান, মুদ্রণ ও প্রকাশনা শিল্পে শুধুমাত্র ঢাকাতেই প্রায় ৩০০০ কোটি টাকার বাজার রয়েছে। 

তিনি আরো বলেন, এ মহামারীর কারণে ইতোমধ্যে প্রায় ২০০ জন গণমাধ্যম কর্মী তাদের চাকুরি হারিয়েছেন এবং মুদ্রণ ও প্রকাশনা শিল্পের বিকাশের লক্ষ্যে এটিকে একটি শিল্পখাত হিসেবে ঘোষণার আহ্বান করেন।

সোনালীনিউজ/এলএ/এমএএইচ

Wordbridge School
Link copied!