• ঢাকা
  • শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

মূল্যবোধ শিক্ষায় পুলিশের সঙ্গে কাউন্সিলিং শুরু


নিজস্ব প্রতিবেদক জানুয়ারি ২৩, ২০১৬, ০৬:১৯ পিএম
মূল্যবোধ শিক্ষায় পুলিশের সঙ্গে কাউন্সিলিং শুরু

বিশেষ প্রতিনিধি
মানবিক মূল্যবোধসহ মানুষের সঙ্গে কীভাবে আচরণ করতে হবে তা নিয়ে পুলিশের বিভিন্ন পর্যায়ে কাউন্সিলিং শুরু হয়েছে। কারণ ইতোমধ্যেই অভিযোগ ওঠেছে মানুষের সঙ্গে তারা স্বাভাবিক আচরণের পরিবর্তে অস্বাভাবিক আচরণ করা হচ্ছে। মানুষের মৌলিক মানবাধিকার সুরক্ষার সাধারণ মানদণ্ডও মেনে চলছে না তারা। ব্যাংক কমকর্তা রাব্বি, সিটি করপোরেশনের পরিচ্ছন্ন কমকর্তা বিকাশকে বেদম মারপিট ও মানসিক নির্যাতনের পর সাধারণ মানুষের প্রতি পুলিশের আচরণ নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। মানুষের প্রতি পুলিশের মানবিক আচরণের দাবি উঠছে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে এই কাউন্সিলিং শুরু হলো।

জানা গেছে, প্রতিদিন দায়িত্ব বণ্টনের আগে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাগণ বাহিনীর ভাবমূর্তি অক্ষুন্ন রেখে কাজ করার বিষয়টি স্মরণ করিয়ে দিচ্ছেন। সদর দপ্তর থেকে নির্দেশনা পেয়েই ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা তাদের অধস্তনদের নির্দেশনা দেন সাধারণ মানুষের প্রতি কিভাবে আচরণ করতে হবে। সম্প্রতি কয়েক ব্যক্তিকে মানসিক ও শারীরিক নির্যাতনের পর তীব্র সমালোচনার মুখে পুলিশ সদর দপ্তর থেকে এ ব্যাপারে সারাদেশে পুলিশ কর্মকর্তাদের কাছে বিশেষ নির্দেশনা পাঠানো হয়। পুলিশের শীর্ষ পর্যায় থেকে বলা হয়েছে, কোনও পুলিশ সদস্যের ব্যক্তিগত দায় পুলিশ বাহিনী নেবে না।

কাউন্সিলিংয়ের বিষয়ে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) মুখপাত্র ও গোয়েন্দা পুলিশের যুগ্ম কমিশনার মনিরুল ইসলাম বলেন, থানা থেকে শুরু করে পুলিশ লাইন, পুলিশ ক্যাম্প, বিভাগ সবখানেই কাউন্সিলিং চলছে। দিনের শুরুতে পুলিশ সদস্যদের হাজিরা নেয়ার সময় সবাইকে একসঙ্গে করে সিনিয়র অফিসাররা এই কাউন্সিলিং করছেন। তল্লাশির নামে সাধারণ মানুষকে হয়রানি করা অবিলম্বে বন্ধ হওয়া প্রয়োজন বলেও মনে করেন তিনি।

কাউন্সিলিংয়ে পুলিশ সদস্যদের কী বলা হচ্ছে জানতে চাইলে মনিরুল ইসলাম বলেন, কোনও তল্লাশি চালাতে হলে কী নিয়ম মানতে হবে, কী ধরনের আচরণ করতে হবে তা জানানো হচ্ছে। সাধারণ মানুষকে যেন সম্মান দেয়া হয়, তাদের প্রতি যেন ভদ্র আচরণ করা হয় সেগুলো তাদের বলা হচ্ছে।

মনিরুল ইসলাম বলেন, সাম্প্রতিক কিছু ঘটনায় পুলিশের প্রতি সাধারণ মানুষের বিরূপ ধারণা হওয়ার আশঙ্কায় এই কাউন্সিলিংয়ের ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। তাদের বলা হচ্ছে, তল্লাশির সময় নাগরিকদের যেনো স্যার সম্বোধন করা হয়। এছাড়া, সাধারণ মানুষের অনুমতি নিয়েই আইন অনুযায়ী তল্লাশি করার কথাও পুলিশ সদস্যদের আবার স্মরণ করিয়ে দেয়া হচ্ছে। মানবাধিকারে বিষয়টিও থাকছে কাউন্সিলিংয়ে।

পুলিশের কাউন্সিলিংয়ের বিষয়ে জানতে চাইলে জাতীয় মানসিক ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ডা. তাজুল ইসলাম বলেন, কেবল মনস্তাত্ত্বিক প্রশিক্ষণ দিলে হবে না, পুলিশের পেশাগত কাজের মানোন্নয়নে রাষ্ট্রকেই দায়িত্ব নিতে হবে। কারণ, পুলিশ হচ্ছে রাষ্ট্রের একটি অঙ্গ। রাষ্ট্র যদি জবাবদিহিতা ও স্বচ্ছতার ব্যবস্থা না করে সেখানে কেবল কাউন্সিলিং দিয়ে হবে না।

তিনি আরও বলেন, পুলিশ সদস্যদের প্রত্যেকটি কাজের সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য থাকতে হবে এবং তার কাজের সার্বক্ষণিক মনিটরিং করতে হবে। মনিটরিংয়ের দায়িত্ব বাহিনী বা প্রতিষ্ঠানেরই দায়িত্ব। সেটা করতে ব্যর্থ হলে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে। এটাই হচ্ছে মূল কথা।

ডা. তাজুল ইসলাম আরও বলেন, রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের একটি বিষয় এখানে রয়েছে। পুলিশকে যদি রাজনৈতিকভাবে ও টাকা দিয়ে ব্যবহার করা যায় সেক্ষেত্রেও বাহিনীর শৃঙ্খলা নষ্ট হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। তখন পুলিশ মনে করবে আমাকে যখন অন্যায় কাজ এমনিতেই করতে হয়, তাহলে আমিও দু-চারটি কাজ করে লাভবান হই। এক্ষেত্রে যদি পুলিশকে রাজনৈতিক কাজে ব্যবহার করা না হয়, নিয়োগের সময় সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির অতীত কর্মকাণ্ড দেখে নিতে হবে। বিশেষ করে ছাত্রাবস্থায় তিনি সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড করতেন কি না। সবশেষে একটাই কথা, কিভাবে মানুষের সঙ্গে আচরণ করতে হবে এবং মানবিক মূল্যবোধ নিয়ে কাজ করতে হবে সেটা প্রশিক্ষণকালে শিখাতে হবে। তাদের মধ্যে মানবিক মূল্যবোধগুলো জাগ্রত করে তুলতে হবে।

বাংলাদেশ মানবাধিকার ফাউন্ডেশনের প্রধান নির্বাহী অ্যাডভোকেট এলিনা খান বলেন, আইনের শাসন ও বাহিনীর সদস্যদের নিবিড় মনিটরিং না থাকায় পুলিশ বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। রাজনৈতিকভাবে ব্যবহারের কারণেও পুলিশ সাধারণ নাগরিকদের প্রতি এমন আচরণ করছে। বিগত সময়ে যেসব পুলিশ সদস্য অন্যায় আচরণ ও অপরাধ করেছেন, সেগুলোর সঠিক তদন্ত ও বিচার হয়নি। ফলে প্রতিদিন অন্য সদস্যরা মানবাধিকার লঙ্ঘনে উৎসাহিত হচ্ছেন। এগুলো যতক্ষণ কঠোর হস্তে দমন করা না হবে, ততক্ষণ পুলিশের মানবাধিকার লঙ্ঘন থামবে না।


সোনালীনিউজ/এমএইউ

Wordbridge School
Link copied!